শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

উত্তরে আতিক, দক্ষিণে বিকল্প না পেলে খোকন

আলহাজ্ব হাফিজুর রহমান :=

নতুন বছরের ৩০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে নানাভাবে তদবির করছেন একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিশেষ কিছু না ঘটলে উত্তরে আবার প্রার্থী হবেন বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম। তবে দক্ষিণের প্রার্থী নিয়ে দলে নতুন করে চিন্তাভাবনা চলছে। পুরান ঢাকাকেন্দ্রিক গ্রহণযোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে বহাল থাকতে পারেন বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন।

আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতার ভাষ্য, ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে কারা অংশ নিচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করছে প্রার্থী বাছাই। বিরোধী পক্ষ নির্বাচনে অংশ নিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পরিবেশ তৈরি হবে। তখন নগরবাসীর সুযোগ-সুবিধা পাওয়া-না পাওয়ার বিষয়গুলো ইস্যু হিসেবে নির্বাচনের মাঠে উত্তাপ ছড়াবে।

দলের নেতারা মনে করেন, চলতি বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকবেলায় সিটি করপোরেশনের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে,  যা মেয়রদের পাশাপাশি সরকারের ভাবমূর্তিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় ঘাটতির কারণে নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। তার সঙ্গে নগরীতে চলমান উন্নয়ন প্রকল্প ও পরিবহন খাতের বিশৃঙ্খলায় যানজটের ভোগান্তিও ছিল অসহনীয়। খোঁড়াখুঁড়ির নামে বছরজুড়ে নানা যন্ত্রণার ভোগান্তি তো ছিলই। এসব বিষয় ভোটের মাঠে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে পারে ক্ষমতাসীনদের প্রার্থীদের সামনে।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এসব চ্যালেঞ্জের বিষয় বিবেচনা করেই দুই সিটিতে প্রার্থী দেয়া হবে। তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম বলে মনে করেন তারা। দক্ষিণের প্রার্থীর পরিবর্তনের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

উত্তরের মেয়র আতিকুল নিজের যোগ্যতা প্রমাণে সময় পেয়েছেন কম। এটা তার মেয়র পদে আবার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনার বড় কারণ। অন্যদিকে পুরো পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনকালে নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনকে। এটাই তার জন্য অনিশ্চয়তার দিক। তবে অভিজ্ঞতার বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত তার ওপর আবার ভরসা রাখতে পারে ক্ষমতাসীন দল।

নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়ার কথাও মাথায় রাখছে আওয়ামী লীগ। নেতারা মনে করেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে ভোটের প্রতিযোগিতা কঠিন হবে। প্রার্থী বাছাইয়ে কোনো ভুল করতে চান না তারা।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলামকে বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে দ্বিতীয় দফায় তাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে। বিশেষ ওই বিবেচনাটি হলো তিনি চলতি বছর উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন।  নিজের দক্ষতা প্রমাণে তিনি তেমন সময় পাননি। তার কর্মদক্ষতা প্রমাণে তাকে আরও সময় দিতে চান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

উত্তরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় আরও রয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য মোফাজ্জাল হোসেন চৌধুরী মায়া, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এ কে এম রহমত উল্লাহ, ব্যবসায়ী আদম তমিজি হক। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের পরিবার থেকেও কাউকে বিবেচনা করা হতে পারে।

দক্ষিণে মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপস, দলের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজের ছেলে কাউন্সিলির ওমর বিন আব্দুল আজিজ, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সফিউল আলম মহিউদ্দিন, পুরান ঢাকার নবাব পরিবারের সন্তান ফয়সাল আহসানউল্লাহ। এ ছাড়া আলোচনায় আছে ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর নাম।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘প্রতিটি নির্বাচনই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। ঢাকা সিটি নির্বাচন তো আরও বেশি চ্যালেঞ্জের, কারণ এখনকার ভোটারদের অধিকাংশ হলেন শিক্ষিত, তারা সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে ভোট দেবেন।’

বিএনপির নির্বাচনে আসাটাও দলের প্রার্থীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ দেখছেন ফারুক খান। বলেন, ‘বিএনপির মতো একটা বিরোধী দল ভোটের মাঠে থাকাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আমরা অতীতের মতো সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আবার জনগণের রায় নিয়ে বিজয়ী হব ইনশাআল্লাহ।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

উত্তরে আতিক, দক্ষিণে বিকল্প না পেলে খোকন

প্রকাশের সময় : ১০:৩২:৫০ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৯
আলহাজ্ব হাফিজুর রহমান :=

নতুন বছরের ৩০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হতে নানাভাবে তদবির করছেন একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, বিশেষ কিছু না ঘটলে উত্তরে আবার প্রার্থী হবেন বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম। তবে দক্ষিণের প্রার্থী নিয়ে দলে নতুন করে চিন্তাভাবনা চলছে। পুরান ঢাকাকেন্দ্রিক গ্রহণযোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে বহাল থাকতে পারেন বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন।

আওয়ামী লীগের একাধিক দায়িত্বশীল নেতার ভাষ্য, ঢাকার দুই সিটির নির্বাচনে কারা অংশ নিচ্ছেন তার ওপর নির্ভর করছে প্রার্থী বাছাই। বিরোধী পক্ষ নির্বাচনে অংশ নিলে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক পরিবেশ তৈরি হবে। তখন নগরবাসীর সুযোগ-সুবিধা পাওয়া-না পাওয়ার বিষয়গুলো ইস্যু হিসেবে নির্বাচনের মাঠে উত্তাপ ছড়াবে।

দলের নেতারা মনে করেন, চলতি বছরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকবেলায় সিটি করপোরেশনের দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে,  যা মেয়রদের পাশাপাশি সরকারের ভাবমূর্তিতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনায় ঘাটতির কারণে নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। তার সঙ্গে নগরীতে চলমান উন্নয়ন প্রকল্প ও পরিবহন খাতের বিশৃঙ্খলায় যানজটের ভোগান্তিও ছিল অসহনীয়। খোঁড়াখুঁড়ির নামে বছরজুড়ে নানা যন্ত্রণার ভোগান্তি তো ছিলই। এসব বিষয় ভোটের মাঠে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিতে পারে ক্ষমতাসীনদের প্রার্থীদের সামনে।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এসব চ্যালেঞ্জের বিষয় বিবেচনা করেই দুই সিটিতে প্রার্থী দেয়া হবে। তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম বলে মনে করেন তারা। দক্ষিণের প্রার্থীর পরিবর্তনের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

উত্তরের মেয়র আতিকুল নিজের যোগ্যতা প্রমাণে সময় পেয়েছেন কম। এটা তার মেয়র পদে আবার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনার বড় কারণ। অন্যদিকে পুরো পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনকালে নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়েছে দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকনকে। এটাই তার জন্য অনিশ্চয়তার দিক। তবে অভিজ্ঞতার বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত তার ওপর আবার ভরসা রাখতে পারে ক্ষমতাসীন দল।

নির্বাচনে বিএনপির অংশ নেওয়ার কথাও মাথায় রাখছে আওয়ামী লীগ। নেতারা মনে করেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে ভোটের প্রতিযোগিতা কঠিন হবে। প্রার্থী বাছাইয়ে কোনো ভুল করতে চান না তারা।

আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলামকে বিশেষ বিবেচনায় নিয়ে দ্বিতীয় দফায় তাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে। বিশেষ ওই বিবেচনাটি হলো তিনি চলতি বছর উপনির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন।  নিজের দক্ষতা প্রমাণে তিনি তেমন সময় পাননি। তার কর্মদক্ষতা প্রমাণে তাকে আরও সময় দিতে চান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

উত্তরে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তালিকায় আরও রয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য মোফাজ্জাল হোসেন চৌধুরী মায়া, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এ কে এম রহমত উল্লাহ, ব্যবসায়ী আদম তমিজি হক। প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের পরিবার থেকেও কাউকে বিবেচনা করা হতে পারে।

দক্ষিণে মনোনয়নপ্রত্যাশী আছেন ঢাকা-১০ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে নূর তাপস, দলের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজের ছেলে কাউন্সিলির ওমর বিন আব্দুল আজিজ, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সফিউল আলম মহিউদ্দিন, পুরান ঢাকার নবাব পরিবারের সন্তান ফয়সাল আহসানউল্লাহ। এ ছাড়া আলোচনায় আছে ঢাকা-৯ আসনের সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরীর নাম।

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান বলেন, ‘প্রতিটি নির্বাচনই আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। ঢাকা সিটি নির্বাচন তো আরও বেশি চ্যালেঞ্জের, কারণ এখনকার ভোটারদের অধিকাংশ হলেন শিক্ষিত, তারা সবকিছু বিচার-বিশ্লেষণ করে ভোট দেবেন।’

বিএনপির নির্বাচনে আসাটাও দলের প্রার্থীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ দেখছেন ফারুক খান। বলেন, ‘বিএনপির মতো একটা বিরোধী দল ভোটের মাঠে থাকাও একটা বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আমরা অতীতের মতো সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আবার জনগণের রায় নিয়ে বিজয়ী হব ইনশাআল্লাহ।