শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দেশ হারানো মর্যাদা ফিরে পেয়েছেঃ প্রধানমন্ত্রী

রোকনুজ্জামান রিপন ##  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশ আজ সব দিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এবং হারানো মর্যাদা ফিরে পেয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে যারা ব্যর্থ করতে চেয়েছিল, আজকে তারা ব্যর্থ হয়েছে।

রোববার বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক ভাষণে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা আরও বলেন, স্বাধীন দেশ হিসাবে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ যে মর্যাদা পেয়েছে, সেই মর্যাদা ধরে রেখে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব। জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবই।

জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলব ইনশাআল্লাহ।

শেখ হাসিনা বলেন, যে জাতির জন্য মহান নেতা বঙ্গবন্ধু আজীবন লড়াই-সংগ্রাম করেছেন, বছরের পর বছর কারাগারে নির্যাতন সহ্য করেছেন, এ জাতির জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করে গেছেন।

সেই বাংলাদেশের জনগণকে একটু সুন্দর ও উন্নত জীবন দেওয়া আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের যদি অতীত ইতিহাস দেখেন, তাহলে একমাত্র ভূমিপুত্র বলতে; এ মাটির সন্তান বলতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই প্রথম এ দেশের শাসনভার হাতে নিয়েছিলেন।

এর আগে যারা ক্ষমতা নিয়েছিলেন এ দেশে কিন্তু তাদের জন্ম ছিল না। এ দেশকে বঙ্গবন্ধু চিনতেন, জানতেন, ভালোবাসতেন। দেশের কল্যাণেই তিনি তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে যে দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন, সেটা বাস্তবায়ন করতে পারলে পরবর্তী পাঁচ বছরেই বাংলাদেশ ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশ হিসাবে গড়ে উঠতে পারত।

এতে কোনো সন্দেহ নেই। দেশ পরিচালনা করতে বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। এ স্বল্প সময়ে জাতির পিতা এত কাজ করে গেছেন, তা সত্যিই বিস্ময়কর। এটা গবেষণা করলেই বেরিয়ে আসবে মাত্র সাড়ে তিন বছরে বঙ্গবন্ধু সব কিছুই করেছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা জাতিকে চিরদিন ভালোবেসেছেন, আত্মত্যাগ করেছেন। আমাদের একটাই লক্ষ্য, আমাদের মহান নেতা যে জাতির জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত দিয়ে গেছেন, সেই জাতির কল্যাণ করা, তাদের জীবন সুন্দর করা।

সেই লক্ষ্য নিয়ে আমি কাজ করে যাচ্ছি। নতুন প্রজন্মের সুন্দর জীবন নিশ্চিত ও সমৃদ্ধ আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে বর্তমান সরকারের দেওয়া আগামী ১০০ বছরের ডেল্টা প্ল্যান ঘোষণার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ২১০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের উন্নয়ন কীভাবে হবে, নতুন প্রজন্মের জীবন উন্নত হবে- সেই পরিকল্পনা নিয়ে আমরা ১০০ বছরের ডেল্টা প্ল্যান করে দিয়েছি। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ সালে বাংলাদেশ কেমন হবে সেটাও দিয়েছি।

২০৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতার শতবর্ষ উদযাপন হবে। আমাদের আগামী প্রজন্ম কীভাবে সেটা উদযাপন করবে, সেই কথা চিন্তা করে আমরা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। সেগুলো আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

জাতির পিতার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি পরিবারের সদস্য হিসাবে শুধু এইটুকুই বলব- আমার আব্বা (বঙ্গবন্ধু) দেশে ফিরে প্রথমে আমাদের কাছে আসেননি।

তিনি পরিবারের কাছে না গিয়ে সবার আগে তার প্রিয় জনগণের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন। কারণ তিনি বাংলার মানুষকে সব থেকে বেশি ভালোবাসতেন। সেই মানুষের কাছেই তিনি ছুটে গিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, দীর্ঘ নয়টা মাস বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। সেখানে তার উপর অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে। এতে তার প্রায় ৪০ পাউন্ড ওজন কমে যায়।

এরপর সেই কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি লন্ডনে চলে যান। সেখানে তিনি প্রেস কনফারেন্স করেন। দিল্লি হয়ে ঢাকায় এসে সরাসরি তিনি রেসকোর্স ময়দানে তার প্রিয় জনগণের কাছে চলে যান।

আবেগজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একজন মানুষ (বঙ্গবন্ধু), একটা জাতি ও মানুষের প্রতি কতটা নিবেদিত হলে এবং কতটা ভালোবাসতে পারলে এভাবে জীবনে এতটা আত্মত্যাগ করতে পারেন।

আর এভাবে মানুষের কথা বলতে পারেন। তিনি বলেন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, এরপর ১০ জানুয়ারির ভাষণ; আমি বলব, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সবারই সেই ভাষণগুলো আবার শোনা উচিত।

আমাদের নতুন প্রজন্মেরও শোনা উচিত। তাহলে রাজনীতি করার একটা প্রেরণা এবং দিক-নির্দেশনা সবাই পাবেন।

স্বাধীনতাপরবর্তী কিছু মানুষের বিরোধিতা ও ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশ পরিচালনায় মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন।

এর মধ্যে একটা বিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে উন্নীত করেন। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে সবাইকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু পাঁচ বছরের একটা কর্মসূচি নিয়েছিলেন।

কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, আমাদের দেশের কিছু মানুষ এত বেশি বুঝে গেল, অপপ্রচার ও অপকর্মে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ল এবং বঙ্গবন্ধু যা কিছু করতে যান সেখানেই বাধা দেওয়া হলো।

তিনি বলেন, ওই সময় স্বাধীনতাবিরোধীরা তো সব সময় সক্রিয় ছিল। যারা স্বাধীনতাবিরোধী-মানবতাবিরোধী কাজ করেছিল, সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন।

কিন্তু মাত্র সাড়ে তিন বছর একটা জাতির জন্য তো কিছুই না। যে জাতি ২৪ বছর ছিল শোষিত-বঞ্চিত।

করোনাভাইরাস মহামারির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস আমাদের অগ্রযাত্রায় কিছুটা বাধার সৃষ্টি করেছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।

আমরা মুজিববর্ষ উদযাপন করছি। আর কিছুদিন পর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। ২৬ মার্চ জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেই স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমরা পালন করব।

যেভাবে করার কথা করোনাভাইরাসের জন্য সেভাবে করতে পারছি না। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে জাতির জন্য বঙ্গবন্ধু এত ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন, সেই বাঙালি জাতির প্রত্যেকের একটা ঠিকানা, প্রত্যেক গৃহহীন মানুষকে আমরা ঘর করে দেব।

দেশের একটি মানুষও ভূমিহীন বা গৃহহীন থাকবে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, যুব মহিলা লীগ আমাদের যত সংগঠন আছে প্রত্যেককে আমি অনুরোধ করব আপনার বাড়ির পাশে যদি কেউ ভূমিহীন থাকে, গৃহহীন থাকে, নিঃস্ব কেউ থাকে তাদের কথা আমাদের জানাবেন।

তাদের আমরা সরকারের পক্ষ থেকে বিনা পয়সায় ঘর করে দেব। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের সেবক। আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। এ সরকার মানে জনগণের সেবক।

করোনার মধ্যে দেশের সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন কেনার সব ব্যবস্থা আমরা করে ফেলেছি।

ইনশাআল্লাহ ভ্যাকসিন এসে যাবে। সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে নিজেকে রক্ষা করতে হবে, অপরকে রক্ষা করতে হবে। এটাই হচ্ছে সব থেকে বড়।

যত ভ্যাকসিন আমরা নেই না কেন, এরপরও কিন্তু সবাইকে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, ভিটামিন সি এবং ডি’ এ ধরনের খাবার খাওয়া, এগুলো আমাদের সবাইকে মানতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এগুলো মেনেই কিন্তু আমরা করোনাভাইরাস কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। কাজেই এটা আমাদের ধরে রাখতে হবে।

কারণ মনে রাখতে হবে, মার্চে করোনা সব থেকে বেশি ক্ষতি করেছিল আমাদের। কাজেই সেই সময় হয়তো আবার একটা ধাক্কা দিতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্তে প্রথমে স্বাগত বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

এতে বক্তব্য দেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, রমেশ চন্দ্র সেন, অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।

গণভবন প্রান্ত থেকে আলোচনা সভা পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

দেশ হারানো মর্যাদা ফিরে পেয়েছেঃ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ১১:১৭:০৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ জানুয়ারী ২০২১

রোকনুজ্জামান রিপন ##  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশ আজ সব দিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে এবং হারানো মর্যাদা ফিরে পেয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে যারা ব্যর্থ করতে চেয়েছিল, আজকে তারা ব্যর্থ হয়েছে।

রোববার বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক ভাষণে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে শেখ হাসিনা আরও বলেন, স্বাধীন দেশ হিসাবে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ যে মর্যাদা পেয়েছে, সেই মর্যাদা ধরে রেখে বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাব। জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবই।

জাতির পিতার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা আমরা গড়ে তুলব ইনশাআল্লাহ।

শেখ হাসিনা বলেন, যে জাতির জন্য মহান নেতা বঙ্গবন্ধু আজীবন লড়াই-সংগ্রাম করেছেন, বছরের পর বছর কারাগারে নির্যাতন সহ্য করেছেন, এ জাতির জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করে গেছেন।

সেই বাংলাদেশের জনগণকে একটু সুন্দর ও উন্নত জীবন দেওয়া আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশের যদি অতীত ইতিহাস দেখেন, তাহলে একমাত্র ভূমিপুত্র বলতে; এ মাটির সন্তান বলতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই প্রথম এ দেশের শাসনভার হাতে নিয়েছিলেন।

এর আগে যারা ক্ষমতা নিয়েছিলেন এ দেশে কিন্তু তাদের জন্ম ছিল না। এ দেশকে বঙ্গবন্ধু চিনতেন, জানতেন, ভালোবাসতেন। দেশের কল্যাণেই তিনি তার জীবন উৎসর্গ করেছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে যে দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন, সেটা বাস্তবায়ন করতে পারলে পরবর্তী পাঁচ বছরেই বাংলাদেশ ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশ হিসাবে গড়ে উঠতে পারত।

এতে কোনো সন্দেহ নেই। দেশ পরিচালনা করতে বঙ্গবন্ধু মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। এ স্বল্প সময়ে জাতির পিতা এত কাজ করে গেছেন, তা সত্যিই বিস্ময়কর। এটা গবেষণা করলেই বেরিয়ে আসবে মাত্র সাড়ে তিন বছরে বঙ্গবন্ধু সব কিছুই করেছিলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা জাতিকে চিরদিন ভালোবেসেছেন, আত্মত্যাগ করেছেন। আমাদের একটাই লক্ষ্য, আমাদের মহান নেতা যে জাতির জন্য নিজের জীবন পর্যন্ত দিয়ে গেছেন, সেই জাতির কল্যাণ করা, তাদের জীবন সুন্দর করা।

সেই লক্ষ্য নিয়ে আমি কাজ করে যাচ্ছি। নতুন প্রজন্মের সুন্দর জীবন নিশ্চিত ও সমৃদ্ধ আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে বর্তমান সরকারের দেওয়া আগামী ১০০ বছরের ডেল্টা প্ল্যান ঘোষণার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ২১০০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের উন্নয়ন কীভাবে হবে, নতুন প্রজন্মের জীবন উন্নত হবে- সেই পরিকল্পনা নিয়ে আমরা ১০০ বছরের ডেল্টা প্ল্যান করে দিয়েছি। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ সালে বাংলাদেশ কেমন হবে সেটাও দিয়েছি।

২০৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতার শতবর্ষ উদযাপন হবে। আমাদের আগামী প্রজন্ম কীভাবে সেটা উদযাপন করবে, সেই কথা চিন্তা করে আমরা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। সেগুলো আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

জাতির পিতার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসের কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি পরিবারের সদস্য হিসাবে শুধু এইটুকুই বলব- আমার আব্বা (বঙ্গবন্ধু) দেশে ফিরে প্রথমে আমাদের কাছে আসেননি।

তিনি পরিবারের কাছে না গিয়ে সবার আগে তার প্রিয় জনগণের কাছে ছুটে গিয়েছিলেন। কারণ তিনি বাংলার মানুষকে সব থেকে বেশি ভালোবাসতেন। সেই মানুষের কাছেই তিনি ছুটে গিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, দীর্ঘ নয়টা মাস বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি ছিলেন। সেখানে তার উপর অত্যাচার-নির্যাতন করা হয়েছে। এতে তার প্রায় ৪০ পাউন্ড ওজন কমে যায়।

এরপর সেই কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে তিনি লন্ডনে চলে যান। সেখানে তিনি প্রেস কনফারেন্স করেন। দিল্লি হয়ে ঢাকায় এসে সরাসরি তিনি রেসকোর্স ময়দানে তার প্রিয় জনগণের কাছে চলে যান।

আবেগজড়িত কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, একজন মানুষ (বঙ্গবন্ধু), একটা জাতি ও মানুষের প্রতি কতটা নিবেদিত হলে এবং কতটা ভালোবাসতে পারলে এভাবে জীবনে এতটা আত্মত্যাগ করতে পারেন।

আর এভাবে মানুষের কথা বলতে পারেন। তিনি বলেন, ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ, এরপর ১০ জানুয়ারির ভাষণ; আমি বলব, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীসহ সবারই সেই ভাষণগুলো আবার শোনা উচিত।

আমাদের নতুন প্রজন্মেরও শোনা উচিত। তাহলে রাজনীতি করার একটা প্রেরণা এবং দিক-নির্দেশনা সবাই পাবেন।

স্বাধীনতাপরবর্তী কিছু মানুষের বিরোধিতা ও ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশ পরিচালনায় মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন।

এর মধ্যে একটা বিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলে বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধু স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে উন্নীত করেন। দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে সবাইকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু পাঁচ বছরের একটা কর্মসূচি নিয়েছিলেন।

কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, আমাদের দেশের কিছু মানুষ এত বেশি বুঝে গেল, অপপ্রচার ও অপকর্মে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ল এবং বঙ্গবন্ধু যা কিছু করতে যান সেখানেই বাধা দেওয়া হলো।

তিনি বলেন, ওই সময় স্বাধীনতাবিরোধীরা তো সব সময় সক্রিয় ছিল। যারা স্বাধীনতাবিরোধী-মানবতাবিরোধী কাজ করেছিল, সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারও বঙ্গবন্ধু শুরু করেছিলেন।

কিন্তু মাত্র সাড়ে তিন বছর একটা জাতির জন্য তো কিছুই না। যে জাতি ২৪ বছর ছিল শোষিত-বঞ্চিত।

করোনাভাইরাস মহামারির কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাস আমাদের অগ্রযাত্রায় কিছুটা বাধার সৃষ্টি করেছে। এতে কোনো সন্দেহ নেই।

আমরা মুজিববর্ষ উদযাপন করছি। আর কিছুদিন পর স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। ২৬ মার্চ জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন, সেই স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উৎসব আমরা পালন করব।

যেভাবে করার কথা করোনাভাইরাসের জন্য সেভাবে করতে পারছি না। কিন্তু আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে জাতির জন্য বঙ্গবন্ধু এত ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন, সেই বাঙালি জাতির প্রত্যেকের একটা ঠিকানা, প্রত্যেক গৃহহীন মানুষকে আমরা ঘর করে দেব।

দেশের একটি মানুষও ভূমিহীন বা গৃহহীন থাকবে না। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগসহ ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ, যুব মহিলা লীগ আমাদের যত সংগঠন আছে প্রত্যেককে আমি অনুরোধ করব আপনার বাড়ির পাশে যদি কেউ ভূমিহীন থাকে, গৃহহীন থাকে, নিঃস্ব কেউ থাকে তাদের কথা আমাদের জানাবেন।

তাদের আমরা সরকারের পক্ষ থেকে বিনা পয়সায় ঘর করে দেব। কারণ আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের সেবক। আওয়ামী লীগ জাতির পিতার হাতে গড়া সংগঠন। এ সরকার মানে জনগণের সেবক।

করোনার মধ্যে দেশের সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষাবিধি মেনে চলার অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন কেনার সব ব্যবস্থা আমরা করে ফেলেছি।

ইনশাআল্লাহ ভ্যাকসিন এসে যাবে। সবাইকে স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে চলতে হবে। স্বাস্থ্য সুরক্ষা মেনে নিজেকে রক্ষা করতে হবে, অপরকে রক্ষা করতে হবে। এটাই হচ্ছে সব থেকে বড়।

যত ভ্যাকসিন আমরা নেই না কেন, এরপরও কিন্তু সবাইকে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা, ভিটামিন সি এবং ডি’ এ ধরনের খাবার খাওয়া, এগুলো আমাদের সবাইকে মানতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এগুলো মেনেই কিন্তু আমরা করোনাভাইরাস কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। কাজেই এটা আমাদের ধরে রাখতে হবে।

কারণ মনে রাখতে হবে, মার্চে করোনা সব থেকে বেশি ক্ষতি করেছিল আমাদের। কাজেই সেই সময় হয়তো আবার একটা ধাক্কা দিতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্তে প্রথমে স্বাগত বক্তব্য দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

এতে বক্তব্য দেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, রমেশ চন্দ্র সেন, অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, এসএম কামাল হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সবুর, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক এসএম মান্নান কচি, দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।

গণভবন প্রান্ত থেকে আলোচনা সভা পরিচালনা করেন কেন্দ্রীয় প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।