শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ফের মিথ্যাচার আনন্দবাজার পত্রিকার

সাজেদুর রহমান: সিনিয়র রিপোর্টার:/=

সম্প্রতি বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ ও ঋণ নিয়ে অনাকাঙ্খিত প্রতিবেদন করে বেশ কিছু ভারতীয় গণমাধ্যম। সেখানে বাংলাদেশকে খয়রাতি বলায় ওই সব প্রতিবেদন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল নিন্দার ঝড় ওঠে। পরে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা নিঃশর্ত ক্ষমা চায়।

তবে ক্ষমা চাওয়ার পরে আবারও বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যাচার করছে সংবাদমাধ্যমটি। এবার তারা সীমান্তে বাংলাদেশিদের ও দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) নিয়ে অপপ্রচারমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সোমবার পত্রিকাটির ভারতের রানি নগর প্রতিনিধি সুজাউদ্দীন বিশ্বাসের পাঠানো একটি প্রতিবেদন ‘অরক্ষিত জমিতে পা পড়ছে বাংলাদেশির’ শিরোনামে প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, ভারতের মুর্শিদাবাদের ডোমকল মহকুমার সীমান্তে কয়েক হাজার একর জমি বিজিবির সহায়তায় বাংলাদেশিরা দখল করছে।

আনন্দবাজার তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ নাকি স্থানীয় আবাদি মানুষদের চাষাবাদ করতে না দেয়ায় বাংলাদেশিরা বিনা বাধায় জমি দখল করে চলেছে। তাদের অভিযোগ ভারতীয় চাষিদের ওই জমিতে চাষ করাই লাটে উঠেছে।

আনন্দবাজারের খবরে আরো বলা হয়েছে, অনেক সময়ে মাঠ থেকে ভারতীয় চাষীদের তুলে নিয়ে গিয়ে বিজিবি নাকি আটকে রাখছে।

প্রতিবেদনে স্থানীয় গ্রামবাসীর উদ্ধৃতির নামে বিজিবির বিরুদ্ধে বিষেদগার করা হয়েছে। তারা এক গ্রামবাসীর বক্তব্যের মাধ্যমে লিখেছে, পদ্মায় মাছ ধরার ক্ষেত্রেও বাধা দিচ্ছে বিজিবি।

এছাড়া মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির ইরফান আলি নামক এক স্থানীয় গ্রামবাসী বক্তব্য হিসেবে উল্লেখ করেছে, ‘‘বিজিবি সব সময়ে বাংলাদেশি গ্রামবাসীদের পাশে থাকে। ঠিক উল্টো ব্যবহারটা করে বিএসএফ, আমরাই যেন অনুপ্রবেশকারী!’’

উল্লেখ্য, এর আগে ভারত-চীন উত্তেজনার মধ্যে বাংলাদেশকে দেয়া চীনের শুল্কমুক্ত সুবিধাকে ‘খয়রাতি’ শব্দ ব্যবহার করে সংবাদ প্রকাশের পর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো যে সমালোচনার মুখে পড়েছিল; সেই ঘটনায় নিজেদের ভুল স্বীকার করে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছিল আনন্দবাজার পত্রিকা।

গত ২৩ জুন সংবাদমাধ্যমটির প্রিন্ট ভার্সনে চতুর্থ পৃষ্ঠায় এ ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়। এদিকে সংবাদ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আনন্দবাজার ভুল করেছিল, ক্ষমা চেয়ে তারা সঠিক কাজটি করেছে।

‘ভ্রম সংশোধন’ শিরোনামে ক্ষমা প্রার্থনা করে সংবাদমাধ্যমটি লেখে, ‘লাদাখের পরে ঢাকাকে পাশে টানছে বেজিং’ শীর্ষক খবরে (২০-৬, পৃ ৮) খয়রাতি শব্দের ব্যবহারে অনেক পাঠক আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থী।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, আনন্দবাজার ওই শব্দ ব্যবহার করে খারাপ সাংবাদিকতার নজির গড়েছিল। তবে এই ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে তারা আবারও ভালো সাংবাদিকতায় ফিরল। সাংবাদিকতায় ভুল হতে পারে কিন্তু ভুল করে তা স্বীকার করা সাংবাদিকতার একটি আর্ট। আমি মনে করি আনন্দবাজার ভুল স্বীকার করে সঠিক কাজটি করেছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ১৯ জুন জানায়, চীনের বাজারে আরও পাঁচ হাজার ১৬১টি পণ্যের শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা পেয়েছে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে দেশটিতে মোট শুল্কমুক্ত পণ্যের সংখ্যা দাঁড়াল আট হাজার ২৫৬টি। এর ফলে চীনে বাংলাদেশের মোট রফতানি পণ্যের ৯৭ শতাংশই শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় এলো।

এরপরই ওই শব্দ ব্যবহার করে সংবাদ প্রকাশ করে আনন্দবাজারসহ ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম। তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বিষয়টিকে তেমন পাত্তাই দেননি। বরং সোমবার (২২ জুন) পররাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, এ বিষয়ে ভারতীয় কয়েকটি পত্রিকার প্রতিবেদন আমাদের নজরে এসেছে। চীনের দেয়া সুবিধা সম্পর্কে যে শব্দের ব্যবহার তারা করেছে তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। তবে এর বিরুদ্ধে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে চাই না।

এর আগের সপ্তাহে লাদাখ সীমান্তে চীন ও ভারতীয় সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ২০ ভারতীয় সেনা নিহত ও শতাধিক গুরুতর আহত হয়।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ফের মিথ্যাচার আনন্দবাজার পত্রিকার

প্রকাশের সময় : ০৮:০৭:৫৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জুলাই ২০২০

সাজেদুর রহমান: সিনিয়র রিপোর্টার:/=

সম্প্রতি বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ ও ঋণ নিয়ে অনাকাঙ্খিত প্রতিবেদন করে বেশ কিছু ভারতীয় গণমাধ্যম। সেখানে বাংলাদেশকে খয়রাতি বলায় ওই সব প্রতিবেদন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল নিন্দার ঝড় ওঠে। পরে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা নিঃশর্ত ক্ষমা চায়।

তবে ক্ষমা চাওয়ার পরে আবারও বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যাচার করছে সংবাদমাধ্যমটি। এবার তারা সীমান্তে বাংলাদেশিদের ও দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) নিয়ে অপপ্রচারমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

সোমবার পত্রিকাটির ভারতের রানি নগর প্রতিনিধি সুজাউদ্দীন বিশ্বাসের পাঠানো একটি প্রতিবেদন ‘অরক্ষিত জমিতে পা পড়ছে বাংলাদেশির’ শিরোনামে প্রকাশ করা হয়েছে।

প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, ভারতের মুর্শিদাবাদের ডোমকল মহকুমার সীমান্তে কয়েক হাজার একর জমি বিজিবির সহায়তায় বাংলাদেশিরা দখল করছে।

আনন্দবাজার তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী বিএসএফ নাকি স্থানীয় আবাদি মানুষদের চাষাবাদ করতে না দেয়ায় বাংলাদেশিরা বিনা বাধায় জমি দখল করে চলেছে। তাদের অভিযোগ ভারতীয় চাষিদের ওই জমিতে চাষ করাই লাটে উঠেছে।

আনন্দবাজারের খবরে আরো বলা হয়েছে, অনেক সময়ে মাঠ থেকে ভারতীয় চাষীদের তুলে নিয়ে গিয়ে বিজিবি নাকি আটকে রাখছে।

প্রতিবেদনে স্থানীয় গ্রামবাসীর উদ্ধৃতির নামে বিজিবির বিরুদ্ধে বিষেদগার করা হয়েছে। তারা এক গ্রামবাসীর বক্তব্যের মাধ্যমে লিখেছে, পদ্মায় মাছ ধরার ক্ষেত্রেও বাধা দিচ্ছে বিজিবি।

এছাড়া মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির ইরফান আলি নামক এক স্থানীয় গ্রামবাসী বক্তব্য হিসেবে উল্লেখ করেছে, ‘‘বিজিবি সব সময়ে বাংলাদেশি গ্রামবাসীদের পাশে থাকে। ঠিক উল্টো ব্যবহারটা করে বিএসএফ, আমরাই যেন অনুপ্রবেশকারী!’’

উল্লেখ্য, এর আগে ভারত-চীন উত্তেজনার মধ্যে বাংলাদেশকে দেয়া চীনের শুল্কমুক্ত সুবিধাকে ‘খয়রাতি’ শব্দ ব্যবহার করে সংবাদ প্রকাশের পর ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো যে সমালোচনার মুখে পড়েছিল; সেই ঘটনায় নিজেদের ভুল স্বীকার করে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছিল আনন্দবাজার পত্রিকা।

গত ২৩ জুন সংবাদমাধ্যমটির প্রিন্ট ভার্সনে চতুর্থ পৃষ্ঠায় এ ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়। এদিকে সংবাদ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আনন্দবাজার ভুল করেছিল, ক্ষমা চেয়ে তারা সঠিক কাজটি করেছে।

‘ভ্রম সংশোধন’ শিরোনামে ক্ষমা প্রার্থনা করে সংবাদমাধ্যমটি লেখে, ‘লাদাখের পরে ঢাকাকে পাশে টানছে বেজিং’ শীর্ষক খবরে (২০-৬, পৃ ৮) খয়রাতি শব্দের ব্যবহারে অনেক পাঠক আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। অনিচ্ছাকৃত এই ভুলের জন্য আমরা দুঃখিত ও নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থী।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, আনন্দবাজার ওই শব্দ ব্যবহার করে খারাপ সাংবাদিকতার নজির গড়েছিল। তবে এই ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে তারা আবারও ভালো সাংবাদিকতায় ফিরল। সাংবাদিকতায় ভুল হতে পারে কিন্তু ভুল করে তা স্বীকার করা সাংবাদিকতার একটি আর্ট। আমি মনে করি আনন্দবাজার ভুল স্বীকার করে সঠিক কাজটি করেছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত ১৯ জুন জানায়, চীনের বাজারে আরও পাঁচ হাজার ১৬১টি পণ্যের শুল্কমুক্ত রফতানি সুবিধা পেয়েছে বাংলাদেশ। এর মাধ্যমে দেশটিতে মোট শুল্কমুক্ত পণ্যের সংখ্যা দাঁড়াল আট হাজার ২৫৬টি। এর ফলে চীনে বাংলাদেশের মোট রফতানি পণ্যের ৯৭ শতাংশই শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতায় এলো।

এরপরই ওই শব্দ ব্যবহার করে সংবাদ প্রকাশ করে আনন্দবাজারসহ ভারতের একাধিক সংবাদমাধ্যম। তবে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বিষয়টিকে তেমন পাত্তাই দেননি। বরং সোমবার (২২ জুন) পররাষ্ট্রমন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেন, এ বিষয়ে ভারতীয় কয়েকটি পত্রিকার প্রতিবেদন আমাদের নজরে এসেছে। চীনের দেয়া সুবিধা সম্পর্কে যে শব্দের ব্যবহার তারা করেছে তা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। তবে এর বিরুদ্ধে আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে চাই না।

এর আগের সপ্তাহে লাদাখ সীমান্তে চীন ও ভারতীয় সেনাদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ২০ ভারতীয় সেনা নিহত ও শতাধিক গুরুতর আহত হয়।