শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

প্রাণের তৃষ্ণা মেটায় পবিত্র জমজমের পানি

অফসরাহ মহসিন ।। 

সৃষ্টিকর্তার অফুরন্ত রহমত-বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতের অমিয় বার্তা নিয়ে পবিত্র রমজান হাজির হলেই ধু ধু মরুভূমি, সর্বপুণ্যময় ভূমি, পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল মক্কা নগরীতে অবস্থিত বায়তুল্লাহ শরিফ/মসজিদুল হারামে অপূর্ব আধ্যাত্মিক আবহের সৃষ্টি হয়।

পবিত্রতা ও বৈশিষ্ট্যে জমজম কূপের পানি পৃথিবীর সকল পানির চেয়ে উত্তম। কাবাঘরের ফজিলতের সঙ্গে জমজম কূপের মাহাত্ম্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মসজিদুল হারামে ইফতারে লাখো রোজাদারের তৃষ্ণা মেটায় জমজমের পানি। এ কূপের পানি মানুষের প্রাণ ভরিয়ে দেয়। হৃদয়ে ছড়ায় প্রশান্তি। পবিত্র ওমরাহ করতে আসা বিশ্বের লাখো লাখো মুসল্লি ইফতারে জমজমের পানিতেই খুশি।

বরকতময় এ পানি সম্পর্কে আমাদের পেয়ারে নবীজি মুহম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘জমজমের পানি যে যেই নিয়তে পান করবে, তার সেই নিয়ত পূরণ হবে। যদি তুমি এই পানি রোগমুক্তির জন্য পান করো, তা হলে আল্লাহ তোমাকে আরোগ্য দান করবেন। যদি তুমি পিপাসা মেটানোর জন্য পান করো, তা হলে আল্লাহ তোমার পিপাসা দূর করবেন। যদি তুমি ক্ষুধা দূর করার উদ্দেশ্যে তা পান করো, তা হলে আল্লাহ তোমার ক্ষুধা দূর করে তৃপ্তি দান করবেন। এটি জিবরাইল (আ.)-এর পায়ের গোড়ালির আঘাতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পানীয় হিসেবে সৃষ্টি হয়েছে।’ (ইবনে মাজাহ ও আল-আজরাকি)

আমাদের পেয়ারে নবীজি নিজ হাতে জমজমের পানি উত্তোলন করতেন এবং পান করতেন। এ পানি শুধু তৃষ্ণাই নিবারণ করে না, এর মধ্যে ক্ষুধাও নিবারণের যোগ্যতা রয়েছে। মানুষের শরীরের স্বস্তিও প্রবৃদ্ধি করে এবং হজমে সহায়তা করে।

এ ছাড়া জমজমের পানির বাহ্যিক বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ পানি সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত। জমজম কূপের আরও একটি অসাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- এ থেকে লাখ লাখ লিটার পানি উত্তোলন করলেও এর পানিতে কখনও স্বল্পতা দেখা যায় না। মূলত জমজম কূপ মহান আল্লাহতায়ালার এক কুদরতের নিদর্শন।

মক্কায় হজ ও ওমরাহ করতে আসা লাখো লাখো মানুষ প্রতিবছর কোটি কোটি টন পানি পান করে ও বাড়ি নিয়ে যায়। কিন্তু কখনও পানির স্বল্পতা দেখা যায়নি। বস্তুত এ কথা দিবালোকের ন্যায় সত্য যে, জমজম কূপ মানুষের জন্য, বিশেষ করে রোজাদার এবং হাজীদের জন্য আল্লাহর এক অপূর্ব নেয়ামত ও বরকতময় উপহার।

বিজ্ঞান এবং গবেষকরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অনুসন্ধানের পর জানিয়েছেন যে, জমজমের পানি পান করলে স্বাস্থ্য ভালো হয়। তারা বলেছেন, জমজম-এর পানি খাবার এবং পানীয় হিসেবে পৃথকভাবে সামর্থ্য, জমজমের পানি স্বাস্থ্য সুবিধারও তারিফ করা হয়। রাসুল বলেছিলেন, অসুস্থতা থেকে এটি একটি আরোগ্য/শেফা। জমজমের পানি কোন লবন যুক্ত বা তরলায়িত পানি নয়, তবে এ পানি পান করলে এটার একটি স্বতন্ত্র স্বাদ অনুভুত হয়, যা কেবল পানকারী অনুভব করতে পারে। জমজম কুপের পানি হচ্ছে এমন একটি পানি, যা কখনো জীবানু দ্বারা আক্রান্ত হয়নি।

১৯৭৯ সালে (জামাদিউল উলা মাসের ১৭ তারিখ ১৩৯৯ হিজরী) ভালো করে পাক পবিত্রকরে একজনকে নামান হয়, এ পানির ভিতর পরিস্কার করার জন্য। তিনি জমজম কুপের নিচ থেকে বিভিন্ন প্রকার আসবাব (থালা, বাটি), ধাতব পদার্থ(মুদ্রা), মাটির পাত্র পান, কিন্তু বিভিন্ন প্রকার জিনিস ফেলার পরও এ পানি কুদরতী ভাবে সম্পুর্ন দোষন মুক্ত ছিল।

জমজম কূপের কাহিনী ঐতিহাসিক। এ কূপ শুষ্ক ও মরুময় মক্ক নগরীকে করেছে জনবসতিপূর্ণ একটি শহরে। এ কূপের কাহিনী শুরু হজরত ইব্রাহিম আ. এবং তার স্ত্রী হাজেরা ও তাদের সন্তান ইসমাইলকে কেন্দ্র করে। নবী ইব্রাহিম আ. তার দ্বিতীয় স্ত্রী হাজেরা আ. ‪শিশুপুত্র ইসমাইল আ.-কে আল্লাহর আদেশে মক্কার বিরান মরুভুমিতে রেখে আসেন। তার রেখে যাওয়া খাদ্য ও পানীয় শেষ হয়ে গেলে হাজেরা আ. পানির সন্ধানে পার্শ্ববর্তী সাফা ও মারওয়া ‪‎পাহাড়ের মাঝে সাতবার ছোটাছুটি করেছিলেন।

এ সময় শিশুপুত্র ‪ইসমাইল (আ.)-এর ‪পায়ের আঘাতে মাটি ফেটে ‪পানি ধারা বেরিয়ে আসে। ফিরে এসে এই দৃশ্য দেখে হাজেরা (আ.) পাথর দিয়ে পানির ধারা আবদ্ধকরলে তা কূপ বা কুয়ায় রূপ নেয়। জমজম কূপটি মসজিদ হারামের ভেতরে অবস্থিত।

পরিশেষে মাওলার কাছে মাগফিরাতের দিনে আরাধনা করে বলছি- ‘ওগো সৃষ্টিজীবের আশ্রয়দাতা, রিজিকদাতা। জীবনে একবার হলেও মসজিদুল হারামে গিয়ে তোমার ঘরের দিকে তাকিয়ে জমজমের পানি পান করার তাওফিক দিও। হৃদয়ের তৃষ্ণা মিটিয়ে দাও। আমার এ বাসনা কবুল করে নাও।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

রাজনীতিতে নাম লেখাতে যাচ্ছেন সানিয়া মির্জা

প্রাণের তৃষ্ণা মেটায় পবিত্র জমজমের পানি

প্রকাশের সময় : ০৮:২৮:৩০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ অগাস্ট ২০১৯
অফসরাহ মহসিন ।। 

সৃষ্টিকর্তার অফুরন্ত রহমত-বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতের অমিয় বার্তা নিয়ে পবিত্র রমজান হাজির হলেই ধু ধু মরুভূমি, সর্বপুণ্যময় ভূমি, পৃথিবীর কেন্দ্রস্থল মক্কা নগরীতে অবস্থিত বায়তুল্লাহ শরিফ/মসজিদুল হারামে অপূর্ব আধ্যাত্মিক আবহের সৃষ্টি হয়।

পবিত্রতা ও বৈশিষ্ট্যে জমজম কূপের পানি পৃথিবীর সকল পানির চেয়ে উত্তম। কাবাঘরের ফজিলতের সঙ্গে জমজম কূপের মাহাত্ম্য ওতপ্রোতভাবে জড়িত। মসজিদুল হারামে ইফতারে লাখো রোজাদারের তৃষ্ণা মেটায় জমজমের পানি। এ কূপের পানি মানুষের প্রাণ ভরিয়ে দেয়। হৃদয়ে ছড়ায় প্রশান্তি। পবিত্র ওমরাহ করতে আসা বিশ্বের লাখো লাখো মুসল্লি ইফতারে জমজমের পানিতেই খুশি।

বরকতময় এ পানি সম্পর্কে আমাদের পেয়ারে নবীজি মুহম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘জমজমের পানি যে যেই নিয়তে পান করবে, তার সেই নিয়ত পূরণ হবে। যদি তুমি এই পানি রোগমুক্তির জন্য পান করো, তা হলে আল্লাহ তোমাকে আরোগ্য দান করবেন। যদি তুমি পিপাসা মেটানোর জন্য পান করো, তা হলে আল্লাহ তোমার পিপাসা দূর করবেন। যদি তুমি ক্ষুধা দূর করার উদ্দেশ্যে তা পান করো, তা হলে আল্লাহ তোমার ক্ষুধা দূর করে তৃপ্তি দান করবেন। এটি জিবরাইল (আ.)-এর পায়ের গোড়ালির আঘাতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পানীয় হিসেবে সৃষ্টি হয়েছে।’ (ইবনে মাজাহ ও আল-আজরাকি)

আমাদের পেয়ারে নবীজি নিজ হাতে জমজমের পানি উত্তোলন করতেন এবং পান করতেন। এ পানি শুধু তৃষ্ণাই নিবারণ করে না, এর মধ্যে ক্ষুধাও নিবারণের যোগ্যতা রয়েছে। মানুষের শরীরের স্বস্তিও প্রবৃদ্ধি করে এবং হজমে সহায়তা করে।

এ ছাড়া জমজমের পানির বাহ্যিক বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ পানি সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত। জমজম কূপের আরও একটি অসাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- এ থেকে লাখ লাখ লিটার পানি উত্তোলন করলেও এর পানিতে কখনও স্বল্পতা দেখা যায় না। মূলত জমজম কূপ মহান আল্লাহতায়ালার এক কুদরতের নিদর্শন।

মক্কায় হজ ও ওমরাহ করতে আসা লাখো লাখো মানুষ প্রতিবছর কোটি কোটি টন পানি পান করে ও বাড়ি নিয়ে যায়। কিন্তু কখনও পানির স্বল্পতা দেখা যায়নি। বস্তুত এ কথা দিবালোকের ন্যায় সত্য যে, জমজম কূপ মানুষের জন্য, বিশেষ করে রোজাদার এবং হাজীদের জন্য আল্লাহর এক অপূর্ব নেয়ামত ও বরকতময় উপহার।

বিজ্ঞান এবং গবেষকরা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও অনুসন্ধানের পর জানিয়েছেন যে, জমজমের পানি পান করলে স্বাস্থ্য ভালো হয়। তারা বলেছেন, জমজম-এর পানি খাবার এবং পানীয় হিসেবে পৃথকভাবে সামর্থ্য, জমজমের পানি স্বাস্থ্য সুবিধারও তারিফ করা হয়। রাসুল বলেছিলেন, অসুস্থতা থেকে এটি একটি আরোগ্য/শেফা। জমজমের পানি কোন লবন যুক্ত বা তরলায়িত পানি নয়, তবে এ পানি পান করলে এটার একটি স্বতন্ত্র স্বাদ অনুভুত হয়, যা কেবল পানকারী অনুভব করতে পারে। জমজম কুপের পানি হচ্ছে এমন একটি পানি, যা কখনো জীবানু দ্বারা আক্রান্ত হয়নি।

১৯৭৯ সালে (জামাদিউল উলা মাসের ১৭ তারিখ ১৩৯৯ হিজরী) ভালো করে পাক পবিত্রকরে একজনকে নামান হয়, এ পানির ভিতর পরিস্কার করার জন্য। তিনি জমজম কুপের নিচ থেকে বিভিন্ন প্রকার আসবাব (থালা, বাটি), ধাতব পদার্থ(মুদ্রা), মাটির পাত্র পান, কিন্তু বিভিন্ন প্রকার জিনিস ফেলার পরও এ পানি কুদরতী ভাবে সম্পুর্ন দোষন মুক্ত ছিল।

জমজম কূপের কাহিনী ঐতিহাসিক। এ কূপ শুষ্ক ও মরুময় মক্ক নগরীকে করেছে জনবসতিপূর্ণ একটি শহরে। এ কূপের কাহিনী শুরু হজরত ইব্রাহিম আ. এবং তার স্ত্রী হাজেরা ও তাদের সন্তান ইসমাইলকে কেন্দ্র করে। নবী ইব্রাহিম আ. তার দ্বিতীয় স্ত্রী হাজেরা আ. ‪শিশুপুত্র ইসমাইল আ.-কে আল্লাহর আদেশে মক্কার বিরান মরুভুমিতে রেখে আসেন। তার রেখে যাওয়া খাদ্য ও পানীয় শেষ হয়ে গেলে হাজেরা আ. পানির সন্ধানে পার্শ্ববর্তী সাফা ও মারওয়া ‪‎পাহাড়ের মাঝে সাতবার ছোটাছুটি করেছিলেন।

এ সময় শিশুপুত্র ‪ইসমাইল (আ.)-এর ‪পায়ের আঘাতে মাটি ফেটে ‪পানি ধারা বেরিয়ে আসে। ফিরে এসে এই দৃশ্য দেখে হাজেরা (আ.) পাথর দিয়ে পানির ধারা আবদ্ধকরলে তা কূপ বা কুয়ায় রূপ নেয়। জমজম কূপটি মসজিদ হারামের ভেতরে অবস্থিত।

পরিশেষে মাওলার কাছে মাগফিরাতের দিনে আরাধনা করে বলছি- ‘ওগো সৃষ্টিজীবের আশ্রয়দাতা, রিজিকদাতা। জীবনে একবার হলেও মসজিদুল হারামে গিয়ে তোমার ঘরের দিকে তাকিয়ে জমজমের পানি পান করার তাওফিক দিও। হৃদয়ের তৃষ্ণা মিটিয়ে দাও। আমার এ বাসনা কবুল করে নাও।