শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাফায়েল নিয়ে ভারতের শর্ত পূরণ করছে না ফ্রান্স

মো: ইদ্রিস আলী #

ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’ (ডিআরডিও)-র সঙ্গে সম্পাদিত ‘অফসেট চুক্তি’র শর্ত পালন করছে না ফ্রান্সের দাসো অ্যাভিয়েশন। সম্প্রতি, ভারতের সংসদে জমা দেয়া এক রিপোর্টে এই তথ্য জানিয়েছে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি)।ফরাসি বিমান নির্মাতা সংস্থা দাসো অ্যাভিয়েশনের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি সরকারের ‘অফসেট চুক্তি’ (দেশীয় সংস্থাকে প্রযুক্তি হস্তান্তর করে যন্ত্রাংশ নির্মাণ) সংক্রান্ত প্রক্রিয়া কেন এখনো সম্পন্ন হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে সিএজি রিপোর্টে।

রাফায়েল কেনার শর্ত অনুযায়ী চুক্তির মোট অঙ্কের একাংশ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ হিসেবে ভারতে আসার কথা। কিন্তু ফরাসি সংস্থাটির তরফে ‌সেই প্রতিশ্রুতি পালনের উদ্যোগ দেখা যায়নি।সংসদে অধিবেশনের অন্তিম পর্বে এই রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। ফলে এ বিষয়ে সংসদে বিতর্কের অবকাশ আর নেই।

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে ৩৬টি রাফায়েল যুদ্ধবিমান ও তাতে ব্যবহৃত অস্ত্র কেনার জন্য দাসো অ্যাভিয়েশন ও ইউরোপীয় ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাতা সংস্থা এমবিডিএর সঙ্গে কেন্দ্রের আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছিল। এরপর সই হয় চুক্তি।

সিএজি তার রিপোর্টে বলেছে, দাসো এবং এমবিডিএ সংস্থা প্রাথমিকভাবে প্রস্তাব দিয়েছিল, চুক্তির শর্তের ৩০ শতাংশ পূরণ করতে তারা ডিআরডিও-কে উন্নত মানের প্রযুক্তি দেবে। ডিআরডিও হালকা ওজনের যুদ্ধবিমানের জন্য ‘কাবেরি’ নামক ইঞ্জিন তৈরি করতে এই প্রযুক্তিগত সাহায্য চেয়েছিল। সংসদে পেশ করা রিপোর্টে সিএজি জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত দাসো এই প্রযুক্তিগত সাহায্য দেয়নি। এমনকি, এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলেওনি।

বহু ক্ষেত্রেই বিদেশি সংস্থা চুক্তি সইয়ের সময় দেশীয় সংস্থাকে বরাত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও সে বিষয়ে দায়বদ্ধতা দেখায় না বলে সিএজির অভিযোগ।

এই পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে চুক্তির সময় তার বাস্তবায়নের সম্ভাবনা ভালোভাবে পর্যালোচনার পরামর্শ দেয়া হয়েছে রিপোর্টে।

যদিও ভারতরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে অফসেট-বাধ্যবাধকতা পূরণে কিছুটা দেরি হচ্ছে বলে দাসোর পক্ষ থেকেই ইতিমধ্যেই ‘বার্তা’ দেয়া হয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই ফ্রান্স থেকে উড়ে এসে ভারতীয় বিমানবাহিনীতে যোগ দিয়েছে পাঁচটি রাফায়েল।

প্রসঙ্গত, রাফায়েল চুক্তির পরেই তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছিলেন, মোদি সরকারের সুপারিশেই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘হ্যাল’কে বঞ্চিত করে অনিল আম্বানীর রিলায়্যান্স ডিফেন্সের সঙ্গে একটি অফসেট চুক্তি করেছে দাসো। এই পরিস্থিতিকে সিএজি রিপোর্ট সামনে আসায় বিষয়টি নিয়ে ফের রাজনীতিতে বিতর্ক হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

ইসরায়েল ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আক্রমণ’ও চালায়,তার জবাব হবে কঠোর-ইরানের প্রেসিডেন্ট

রাফায়েল নিয়ে ভারতের শর্ত পূরণ করছে না ফ্রান্স

প্রকাশের সময় : ০৭:০০:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

মো: ইদ্রিস আলী #

ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন’ (ডিআরডিও)-র সঙ্গে সম্পাদিত ‘অফসেট চুক্তি’র শর্ত পালন করছে না ফ্রান্সের দাসো অ্যাভিয়েশন। সম্প্রতি, ভারতের সংসদে জমা দেয়া এক রিপোর্টে এই তথ্য জানিয়েছে কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি)।ফরাসি বিমান নির্মাতা সংস্থা দাসো অ্যাভিয়েশনের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদি সরকারের ‘অফসেট চুক্তি’ (দেশীয় সংস্থাকে প্রযুক্তি হস্তান্তর করে যন্ত্রাংশ নির্মাণ) সংক্রান্ত প্রক্রিয়া কেন এখনো সম্পন্ন হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে সিএজি রিপোর্টে।

রাফায়েল কেনার শর্ত অনুযায়ী চুক্তির মোট অঙ্কের একাংশ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ হিসেবে ভারতে আসার কথা। কিন্তু ফরাসি সংস্থাটির তরফে ‌সেই প্রতিশ্রুতি পালনের উদ্যোগ দেখা যায়নি।সংসদে অধিবেশনের অন্তিম পর্বে এই রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে। ফলে এ বিষয়ে সংসদে বিতর্কের অবকাশ আর নেই।

২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে প্রায় ৫৮ হাজার কোটি টাকার বিনিময়ে ৩৬টি রাফায়েল যুদ্ধবিমান ও তাতে ব্যবহৃত অস্ত্র কেনার জন্য দাসো অ্যাভিয়েশন ও ইউরোপীয় ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাতা সংস্থা এমবিডিএর সঙ্গে কেন্দ্রের আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছিল। এরপর সই হয় চুক্তি।

সিএজি তার রিপোর্টে বলেছে, দাসো এবং এমবিডিএ সংস্থা প্রাথমিকভাবে প্রস্তাব দিয়েছিল, চুক্তির শর্তের ৩০ শতাংশ পূরণ করতে তারা ডিআরডিও-কে উন্নত মানের প্রযুক্তি দেবে। ডিআরডিও হালকা ওজনের যুদ্ধবিমানের জন্য ‘কাবেরি’ নামক ইঞ্জিন তৈরি করতে এই প্রযুক্তিগত সাহায্য চেয়েছিল। সংসদে পেশ করা রিপোর্টে সিএজি জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত দাসো এই প্রযুক্তিগত সাহায্য দেয়নি। এমনকি, এ বিষয়ে নিশ্চিত করে কিছু বলেওনি।

বহু ক্ষেত্রেই বিদেশি সংস্থা চুক্তি সইয়ের সময় দেশীয় সংস্থাকে বরাত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও সে বিষয়ে দায়বদ্ধতা দেখায় না বলে সিএজির অভিযোগ।

এই পরিস্থিতিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে চুক্তির সময় তার বাস্তবায়নের সম্ভাবনা ভালোভাবে পর্যালোচনার পরামর্শ দেয়া হয়েছে রিপোর্টে।

যদিও ভারতরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, করোনা পরিস্থিতির কারণে অফসেট-বাধ্যবাধকতা পূরণে কিছুটা দেরি হচ্ছে বলে দাসোর পক্ষ থেকেই ইতিমধ্যেই ‘বার্তা’ দেয়া হয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির মধ্যেই ফ্রান্স থেকে উড়ে এসে ভারতীয় বিমানবাহিনীতে যোগ দিয়েছে পাঁচটি রাফায়েল।

প্রসঙ্গত, রাফায়েল চুক্তির পরেই তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী অভিযোগ করেছিলেন, মোদি সরকারের সুপারিশেই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘হ্যাল’কে বঞ্চিত করে অনিল আম্বানীর রিলায়্যান্স ডিফেন্সের সঙ্গে একটি অফসেট চুক্তি করেছে দাসো। এই পরিস্থিতিকে সিএজি রিপোর্ট সামনে আসায় বিষয়টি নিয়ে ফের রাজনীতিতে বিতর্ক হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।