শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

একদিনে ১২৬ বার ‘দিদি’ ডাকলেন মোদি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ## পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে বিজেপি। নির্বাচনী রাজ্যের দুই সমাবেশে অংশ নেন বিজেপি নেতা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শিলিগুড়িতে বক্তব্য রাখেন ৪৪ মিনিট আর কৃষ্ণনগরে ৩৪ মিনিট। সব মিলিয়ে ৭৮ মিনিট। আর এরমধ্যেই মোট ১২৬ বার মোদির গলায় শোনা যায় ‘দিদি’ ডাক।

বিজেপি-র আরেক নেতা ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-র পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে গিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ‘মমতা দিদি’ বলে সম্বোধন করেন। এরপরই মমতার বিরুদ্ধে সুর চড়ান তিনি।

মোদি-র গলায় ‘দিদি’ ডাক শুনতে অবশ্য মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গেছে। সেই ২০১৪ সাল থেকে বাংলায় রাজনৈতিক মঞ্চ পেলেই ‘দিদি’, ‘দিদি’ করেন মোদি। রাজ্যের বাইরে সভা থাকলেও বাংলার প্রসঙ্গ এলে ‘দিদি’, ‘দিদির দল’, ‘দিদির সরকার’ বলেন তিনি। কিন্ত বাংলা সফরে তার আক্রমণের মূল লক্ষ্যটাই যেহেতু মমতা, তাই ‘দিদি’ উচ্চারণ আরও বেড়ে যায়।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার০১৪ সালের লোকসভা, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে ‘দিদি’ ডাক শোনা গেলেও ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচার পর্বে নতুন সংযোজন হয় নানা সুরে ‘দিদি-ই-ই-ই’ বলা। তবে ২০২১-এর নির্বাচনি লড়াইয়ে বাংলায় সেই ডাক ও সুর যেন নতুন মাত্রা পেয়েছে। আবার প্রতি দফায় ভোটগ্রহণ পর্ব যত এগোচ্ছে ততই যেন বক্তৃতায় ‘দিদি’ ডাক বাড়ছে। চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণের দিন যেন সেটা সবচেয়ে বেশি শোনা গেল।

রাজ্যের দুই স্থানে বক্তব্যে কত বার দিদি বলেছেন মোদি তা গুণে দেখেছে আনন্দবাজার। দেখা গেছে, শিলিগুড়িতে ৪৪ মিনিটে ৬৮ বার আর কৃষ্ণনগরে ৩৪ মিনিটে ৫৮ বার দিদি ডেকেছেন তিনি।

মোদি-র এমন ডাক নিয়ে কটাক্ষ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গের এক জনসভায় দেওয়া ভাষণে মমতা বলেন, “উনি রোজ ‘দিদি’, ‘ও দিদি’ বলে ব্যঙ্গ করছেন। আমার তাতে কোনও সমস্যা নেই। আমার গুরুত্ব রয়েছে বলেই এসব করছেন।’’

মমতা নিজে কোনও সমস্যা নেই বলে উল্লেখ করলেও দলের নারী নেত্রীরা এ নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। শশী পাঁজা, জুন মালিয়া এবং অনন্যা চক্রবর্তীর মতো নেত্রীরা মোদির এমন সম্বোধনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তাদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীকে এমন ভঙ্গিতে ডেকে আদতে বাংলার নারীদের অসম্মান করছেন প্রধানমন্ত্রী। মেয়েদের টিপ্পনী কাটতে এই ধরনের বাচনভঙ্গি ব্যবহার করা হয় বলেও অভিযোগ করেন তারা।

বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে মোদির মুখে খুব বেশি শোনা যাচ্ছে যে শব্দগুলো তার মধ্যে কাটমানি, তোলাবাজি, সিন্ডিকেট, তুষ্টিকরণ প্রভৃতি থাকলেও সবকিছুকে ছাপিয়ে যাচ্ছে ‘দিদি’। শুধু ডাকাই নয়, নিত্য নতুন সুর ও ছন্দও আনছেন মোদি। একই বাক্যে তিন বার ‘দিদি’ বলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ‘দিদি, ও-দিদি, আদরণীয় দিদি’ বলে নানা অভিযোগ তুলেছেন বা প্রশ্ন করেছেন।

৩০ মিনিটের বক্তব্যে যদি ৫০ বার ‘দিদি’ বলেন তবে তার মধ্যে বার দশেক প্রথম ১০ মিনিটে। শেষ ১০ মিনিটেও বার দশেক। মাঝের সময়টা যেন ধ্রুপদী সঙ্গীতের ভাষায় ‘ঝালা’-য় ওঠে ‘দিদি’ ডাক। ওই ১০ মিনিটে বার তিরিশেক ‘দিদি’ ডেকে নেন।

মোদি-র বক্তব্য শুনে আরও একটা বিষয় স্পষ্ট যে, তিনি এই ‘দিদি’ বলায় বেশ মজাই পান। আর হাততালিও পান। কর্মী-সমর্থকদের সেই উচ্ছ্বাসও যে তিনি পছন্দ করছেন সেটাও বোঝা যায় শনিবারের দুই ভাষণে। যত বার তিনি সুর কেটে ‘দিদি, ও-দিদি, আদরণীয় দিদি’ বলেছেন তত বারই বক্তৃতায় লম্বা যতি এনেছেন। কথা থামিয়ে জনতাকে তালি দেওয়ার সময় দিয়েছেন। যেখানে থেমেছিলেন ফের যেন সেখান থেকেই শুরু করেন। সূত্র: আনন্দবাজার।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

একদিনে ১২৬ বার ‘দিদি’ ডাকলেন মোদি

প্রকাশের সময় : ০৩:৪৭:৩৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ১২ এপ্রিল ২০২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ## পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে বিজেপি। নির্বাচনী রাজ্যের দুই সমাবেশে অংশ নেন বিজেপি নেতা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শিলিগুড়িতে বক্তব্য রাখেন ৪৪ মিনিট আর কৃষ্ণনগরে ৩৪ মিনিট। সব মিলিয়ে ৭৮ মিনিট। আর এরমধ্যেই মোট ১২৬ বার মোদির গলায় শোনা যায় ‘দিদি’ ডাক।

বিজেপি-র আরেক নেতা ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ-র পশ্চিমবঙ্গে প্রচারে গিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ‘মমতা দিদি’ বলে সম্বোধন করেন। এরপরই মমতার বিরুদ্ধে সুর চড়ান তিনি।

মোদি-র গলায় ‘দিদি’ ডাক শুনতে অবশ্য মানুষ অভ্যস্ত হয়ে গেছে। সেই ২০১৪ সাল থেকে বাংলায় রাজনৈতিক মঞ্চ পেলেই ‘দিদি’, ‘দিদি’ করেন মোদি। রাজ্যের বাইরে সভা থাকলেও বাংলার প্রসঙ্গ এলে ‘দিদি’, ‘দিদির দল’, ‘দিদির সরকার’ বলেন তিনি। কিন্ত বাংলা সফরে তার আক্রমণের মূল লক্ষ্যটাই যেহেতু মমতা, তাই ‘দিদি’ উচ্চারণ আরও বেড়ে যায়।

গ্রাফিক: আনন্দবাজার০১৪ সালের লোকসভা, ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে ‘দিদি’ ডাক শোনা গেলেও ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের প্রচার পর্বে নতুন সংযোজন হয় নানা সুরে ‘দিদি-ই-ই-ই’ বলা। তবে ২০২১-এর নির্বাচনি লড়াইয়ে বাংলায় সেই ডাক ও সুর যেন নতুন মাত্রা পেয়েছে। আবার প্রতি দফায় ভোটগ্রহণ পর্ব যত এগোচ্ছে ততই যেন বক্তৃতায় ‘দিদি’ ডাক বাড়ছে। চতুর্থ দফার ভোটগ্রহণের দিন যেন সেটা সবচেয়ে বেশি শোনা গেল।

রাজ্যের দুই স্থানে বক্তব্যে কত বার দিদি বলেছেন মোদি তা গুণে দেখেছে আনন্দবাজার। দেখা গেছে, শিলিগুড়িতে ৪৪ মিনিটে ৬৮ বার আর কৃষ্ণনগরে ৩৪ মিনিটে ৫৮ বার দিদি ডেকেছেন তিনি।

মোদি-র এমন ডাক নিয়ে কটাক্ষ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গের এক জনসভায় দেওয়া ভাষণে মমতা বলেন, “উনি রোজ ‘দিদি’, ‘ও দিদি’ বলে ব্যঙ্গ করছেন। আমার তাতে কোনও সমস্যা নেই। আমার গুরুত্ব রয়েছে বলেই এসব করছেন।’’

মমতা নিজে কোনও সমস্যা নেই বলে উল্লেখ করলেও দলের নারী নেত্রীরা এ নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন। শশী পাঁজা, জুন মালিয়া এবং অনন্যা চক্রবর্তীর মতো নেত্রীরা মোদির এমন সম্বোধনের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। তাদের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রীকে এমন ভঙ্গিতে ডেকে আদতে বাংলার নারীদের অসম্মান করছেন প্রধানমন্ত্রী। মেয়েদের টিপ্পনী কাটতে এই ধরনের বাচনভঙ্গি ব্যবহার করা হয় বলেও অভিযোগ করেন তারা।

বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে মোদির মুখে খুব বেশি শোনা যাচ্ছে যে শব্দগুলো তার মধ্যে কাটমানি, তোলাবাজি, সিন্ডিকেট, তুষ্টিকরণ প্রভৃতি থাকলেও সবকিছুকে ছাপিয়ে যাচ্ছে ‘দিদি’। শুধু ডাকাই নয়, নিত্য নতুন সুর ও ছন্দও আনছেন মোদি। একই বাক্যে তিন বার ‘দিদি’ বলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ‘দিদি, ও-দিদি, আদরণীয় দিদি’ বলে নানা অভিযোগ তুলেছেন বা প্রশ্ন করেছেন।

৩০ মিনিটের বক্তব্যে যদি ৫০ বার ‘দিদি’ বলেন তবে তার মধ্যে বার দশেক প্রথম ১০ মিনিটে। শেষ ১০ মিনিটেও বার দশেক। মাঝের সময়টা যেন ধ্রুপদী সঙ্গীতের ভাষায় ‘ঝালা’-য় ওঠে ‘দিদি’ ডাক। ওই ১০ মিনিটে বার তিরিশেক ‘দিদি’ ডেকে নেন।

মোদি-র বক্তব্য শুনে আরও একটা বিষয় স্পষ্ট যে, তিনি এই ‘দিদি’ বলায় বেশ মজাই পান। আর হাততালিও পান। কর্মী-সমর্থকদের সেই উচ্ছ্বাসও যে তিনি পছন্দ করছেন সেটাও বোঝা যায় শনিবারের দুই ভাষণে। যত বার তিনি সুর কেটে ‘দিদি, ও-দিদি, আদরণীয় দিদি’ বলেছেন তত বারই বক্তৃতায় লম্বা যতি এনেছেন। কথা থামিয়ে জনতাকে তালি দেওয়ার সময় দিয়েছেন। যেখানে থেমেছিলেন ফের যেন সেখান থেকেই শুরু করেন। সূত্র: আনন্দবাজার।