শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে গণঅনশনে নামছে বিএনপি

ঢাকা ব্যুরো ।।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।তিনি খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার দাবিতে দলীয় কর্মসূচিও ঘোষণা করেছেন।  সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল জানান, ২০ নভেম্বর সারা দেশে গণঅনশন পালন করবেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

বৃহস্পতিবার দলের সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বিদেশে নিয়ে গিয়ে তার জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন।  আমরা আবারও সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, অনতিবিলম্বে তাকে বিদেশ নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হোক।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ২০ নভেম্বর (শনিবার) খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা ও তাকে মুক্তির দাবিতে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত গণঅনশন কর্মসূচি পালন করা হবে। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে সারা দেশে এ কর্মসূচি পালন করা হবে।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘এ মহীয়সী নারী গ্রাম থেকে গ্রামে চারণ কবির মতো গান গেয়ে গণতন্ত্রের জন্য জনগণকে উজ্জীবিত করেছেন। ১৯৯১ সালে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সরকার গঠন করেন। আজীবন সংগ্রামী নেত্রী লড়াই সংগ্রাম করে কাটিয়েছেন তার সারাটা জীবন। ২০০৭ সালের সেনা সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বিএনপি ও জিয়া পরিবারকে ধ্বংসের কাজ শুরু হয়।’

তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার আবেদন করার পরও সরকার সেই সুযোগ দিচ্ছে না। আমরা অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠিয়ে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। কারণ এটি সম্পূর্ণভাবে সরকারের এখতিয়ার।’

তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বেশ কয়েকবার সাফ বলে দিয়েছেন, খালেদা জিয়ার করা আবেদনটি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী আগেই নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশ যেতে অনুমতি দেওয়ার আইনি কোনো সুযোগ নেই। তিনিও কয়েকবার এও বলেছেন, সাজা স্থগিতের পর শর্ত সাপেক্ষে মুক্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে চাইলে জেলে গিয়ে তাকে নতুন করে আবার আবেদন করতে হবে।

আজ (১৮ নভেম্বর) জাতীয় সংসদে আবারও আইনমন্ত্রী বলেছেন, ‘৪০১ ধারায় নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়া বিষয় নিয়ে পুনরায় বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশের আইনের বইয়ে এটা নেই। ওনারা যদি দেখাতে পারেন, আমরা তো বিবেচনা করতে পারি। কিন্তু এটা আইনের বইয়ে নাই, ওনারাও দেখাতে পারবেন না, বিবেচনার প্রশ্নই আসে না।’

এদিকে গ্লাসগোতে কপ-২৬ সম্মেলন, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে সদ্যসমাপ্ত সফর নিয়ে গতকাল (১৭ নভেম্বর) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি চেয়ারপারসনকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিতে সুযোগ না দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমার কাছে চান কীভাবে বলেন তো? খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বাসায় থাকতে দিয়েছি, চিকিৎসা করতে দিয়েছি, এটাই কি বেশি নয়?’ তিনি এও বলেন, ‘আপনাকে কেউ যদি হত্যা করার চেষ্টা করত, আপনি তাকে গলায় ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসতেন?

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে তাকে বাইরে পাঠানো নিয়ে যে আলোচনা চলছে, সে বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার বক্তব্য জানতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে মারতে অনেক চেষ্টা করেছে। এরপর খালেদার ওপর আমায় মায়া দেখাতে বলেন। আমার হাতে যেটুকু আছে, তার মাধ্যমে তাকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেছি।এখন এটা সম্পূর্ণ বিচার বিভাগের বিষয়।’

উল্লেখ্য, দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে খালেদা জিয়া ২০০৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান। করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে গত বছরের ২৫ মার্চ সরকার শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। এ পর্যন্ত তিন দফায় খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে বিএনপির নেতারা খালেদা জিয়ার শর্তসাপেক্ষে এ মুক্তিকে ‘গৃহবন্দি’ বলছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার আবেদন করা হলেও সরকার তা নাকচ করে দেয়। তাকে দেশে থেকেই চিকিৎসা নিতে হবে বলে শর্তও দেওয়া হয়েছে।

 বার্তাকণ্ঠ/এন

খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিতে গণঅনশনে নামছে বিএনপি

প্রকাশের সময় : ০৫:২৯:৩৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ নভেম্বর ২০২১

ঢাকা ব্যুরো ।।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।তিনি খালেদা জিয়াকে বিদেশ নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার দাবিতে দলীয় কর্মসূচিও ঘোষণা করেছেন।  সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল জানান, ২০ নভেম্বর সারা দেশে গণঅনশন পালন করবেন বিএনপি নেতাকর্মীরা।

বৃহস্পতিবার দলের সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। বিদেশে নিয়ে গিয়ে তার জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন।  আমরা আবারও সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি, অনতিবিলম্বে তাকে বিদেশ নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হোক।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ২০ নভেম্বর (শনিবার) খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা ও তাকে মুক্তির দাবিতে সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত গণঅনশন কর্মসূচি পালন করা হবে। এ ছাড়া স্থানীয়ভাবে সারা দেশে এ কর্মসূচি পালন করা হবে।

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘এ মহীয়সী নারী গ্রাম থেকে গ্রামে চারণ কবির মতো গান গেয়ে গণতন্ত্রের জন্য জনগণকে উজ্জীবিত করেছেন। ১৯৯১ সালে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে তিনি সরকার গঠন করেন। আজীবন সংগ্রামী নেত্রী লড়াই সংগ্রাম করে কাটিয়েছেন তার সারাটা জীবন। ২০০৭ সালের সেনা সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে বিএনপি ও জিয়া পরিবারকে ধ্বংসের কাজ শুরু হয়।’

তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার আবেদন করার পরও সরকার সেই সুযোগ দিচ্ছে না। আমরা অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠিয়ে উন্নত চিকিৎসার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। কারণ এটি সম্পূর্ণভাবে সরকারের এখতিয়ার।’

তবে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বেশ কয়েকবার সাফ বলে দিয়েছেন, খালেদা জিয়ার করা আবেদনটি ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী আগেই নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ায় তাকে বিদেশ যেতে অনুমতি দেওয়ার আইনি কোনো সুযোগ নেই। তিনিও কয়েকবার এও বলেছেন, সাজা স্থগিতের পর শর্ত সাপেক্ষে মুক্ত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে চাইলে জেলে গিয়ে তাকে নতুন করে আবার আবেদন করতে হবে।

আজ (১৮ নভেম্বর) জাতীয় সংসদে আবারও আইনমন্ত্রী বলেছেন, ‘৪০১ ধারায় নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়া বিষয় নিয়ে পুনরায় বিবেচনার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশের আইনের বইয়ে এটা নেই। ওনারা যদি দেখাতে পারেন, আমরা তো বিবেচনা করতে পারি। কিন্তু এটা আইনের বইয়ে নাই, ওনারাও দেখাতে পারবেন না, বিবেচনার প্রশ্নই আসে না।’

এদিকে গ্লাসগোতে কপ-২৬ সম্মেলন, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে সদ্যসমাপ্ত সফর নিয়ে গতকাল (১৭ নভেম্বর) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি চেয়ারপারসনকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিতে সুযোগ না দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমার কাছে চান কীভাবে বলেন তো? খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বাসায় থাকতে দিয়েছি, চিকিৎসা করতে দিয়েছি, এটাই কি বেশি নয়?’ তিনি এও বলেন, ‘আপনাকে কেউ যদি হত্যা করার চেষ্টা করত, আপনি তাকে গলায় ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসতেন?

খালেদা জিয়ার চিকিৎসার বিষয়ে তাকে বাইরে পাঠানো নিয়ে যে আলোচনা চলছে, সে বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার বক্তব্য জানতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে মারতে অনেক চেষ্টা করেছে। এরপর খালেদার ওপর আমায় মায়া দেখাতে বলেন। আমার হাতে যেটুকু আছে, তার মাধ্যমে তাকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেছি।এখন এটা সম্পূর্ণ বিচার বিভাগের বিষয়।’

উল্লেখ্য, দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত হয়ে খালেদা জিয়া ২০০৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি কারাগারে যান। করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে গত বছরের ২৫ মার্চ সরকার শর্তসাপেক্ষে তাকে সাময়িক মুক্তি দেয়। এ পর্যন্ত তিন দফায় খালেদা জিয়ার মুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়। তবে বিএনপির নেতারা খালেদা জিয়ার শর্তসাপেক্ষে এ মুক্তিকে ‘গৃহবন্দি’ বলছেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে বারবার আবেদন করা হলেও সরকার তা নাকচ করে দেয়। তাকে দেশে থেকেই চিকিৎসা নিতে হবে বলে শর্তও দেওয়া হয়েছে।

 বার্তাকণ্ঠ/এন