বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ছাড় নেই মন্ত্রী-এমপি হলেও কঠোর বার্তা দিলেন আ.লীগ সভাপতি

ফাইল ছবি

ঢাকা ব্যুরো ।।

উনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা বহাল রাখার পাশাপাশি বিদ্রোহীদের মদদদাতা বা পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন দলীয় সভাপতি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিদ্রোহীদের মদদদাতা হিসেবে নেতা, এমপি, মন্ত্রী যেই হোক, তারা যে পদেই থাকুক, মদদদাতা হিসেবে প্রমাণিত হলে আগামীতে তাদেরকে কোনো পদে পদায়ন করা হবে না বলে বৈঠকে কঠোর সতর্কবার্তা উচ্চারণ করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। একাধিক সূত্র এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। চারটার দিকে শুরু হয়ে রাত ৯টা অবধি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মাঝখানে কিছু সময় বিরতি প্রদান করা হয়।

বৈঠকে সাংগঠনিক বিষয় ছাড়াও সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। পরে সাংবাদিকদের সামনে বৈঠকের বিষয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের গেটে তা তুলে ধরেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সভার শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য নিয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে সম্প্রতি উইটসা এমিনেন্ট পারসনস অ্যাওয়ার্ড-২০২১’-এ ভূষিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ও অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এশিয়ান-ওশেনিয়ান কম্পিউটিং অর্গানাইজেশনের (অ্যাসোসিও) লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০২১ পুরস্কার পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি অভিনন্দন প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, যেসব জেলা-উপজেলায় জেলায় ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সে সকল জেলা-উপজেলা বাদ দিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ সকল জেলা-উপজেলা কমিটি করার জন্য তাগিদ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের উদ্দেশে বলেন, সম্মেলন করে শুধু প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি আর কয়েকজনের নাম ঘোষণা দিয়ে এলেই হবে না। কেনো দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে তারা পারে না, যারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে বিলম্ব করবে প্রয়োজনে তাদের বলে দিতে হবে, তোমরা ৭ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে না পারলে আমরা কেন্দ্র করে কমিটি করে দিচ্ছি।

তিনি দলের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের শাসনছলে বলেন, সম্মেলন করতে গিয়ে শুধু রুটি-মাংস খেয়ে আসলেই হবে না। কেনো পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দ্রুত করা হয় না। সে বিষয়গুলো খেয়াল করতে হবে। দলের ভেতরে যারা বিতর্কিত, আদর্শচ্যুত, যারা সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আছে তাদেরকে কমিটিতে জায়গা দেয়া যাবে না।

যারা নতুন আছে, গ্রহণযোগ্য আছে, দলের প্রতি কমিটমেন্ট আছে, এমন আদর্শিক কর্মীদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা দেন। আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা আগামী দুই মাসের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলার সম্মেলন করার বিষয়ে অবহিত করেন।

বৈঠক সূত্র আরো জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভাগীয় নেতাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড তৃণমূল পর্যায়ে জোরদার করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কঠোর মনিটরিং করার নির্দেশনা দেন। তিনি এ ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের উদ্দেশে বলেন, যারা বিদ্রোহী তাদের ব্যাপারে আমাদের যে চলমান সিদ্ধান্ত রয়েছে সেটা বহাল থাকবে আর যারা বিদ্রোহীদের মদদদাতা, তারা জেলা নেতা হোক উপজেলা নেতা হোক, মন্ত্রী-এমপি হোক, তদন্তসাপেক্ষে যদি প্রমাণিত হয় বিদ্রোহীদের মদদ দিয়েছে, তাহলে আগামীতে তাদের কোনো পদে রাখা রাখবো না, কোনো এমপি মদদদাতা হিসাবে প্রমাণিত হলে তাদের মনোনয়নও দেবো না।

বৈঠক সূত্র জানায়, বিদ্রোহী ও বিদ্রোহীদের মদদদাতাদের ব্যাপারে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা নিজ নিজ প্রতিবেদন তুলে ধরেন এবং তদন্তসাপেক্ষে এই প্রতিবেদন প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। তদন্তে সাপেক্ষে বিদ্রোহী ও বিদ্রোহীদের নেপথ্য মদদদাতা বা পৃষ্ঠপোষক হিসাবে প্রমাণিত হলে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হবে এবং চিঠির জবাব যথার্থ না হলে পরবর্তীতে দলের কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্তের আলোকে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার একমত পোষণ করা হয়।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকা প্রতীক থাকবে কি থাকবে না এ বিষয়ে জানতে চাইলে একাধিক সূত্র জানায়, এটা তো আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তের বিষয় নয়, এটি নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয়। আর নির্বাচন কমিশন এটি আরপিওতে করেছে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হবে। সেই সেক্ষেত্রে সকল রাজনৈতিক দল যদি নির্বাচন কমিশনে আলাপ করে এটার বিরোধিতা করে তখন আমরা আলাপ করে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবো। একইসঙ্গে সারাদেশে ইউপি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হস্তে সহিংসতা দমন এবং দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কঠোর মনিটরিং বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইউপি নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ ও ভোটাধিকার হার প্রয়োগের মাত্রা নিয়েও বৈঠকে সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দলের পক্ষ থেকে যে বার্তা দেয়া হয়, সেট হলো ব্যক্তি যত শক্তিশালীই হোক, দলের আদর্শের পরিপন্থী হলে কেউ দলের উর্ধ্বে নয়- এমনটাই মনে করছেন নেতারা। বৈঠকে উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতাদের তিন চারজন ব্যতীত সবাই ওই ইস্যুতে কথা বলেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সবার সম্মতিক্রমে গণতান্ত্রিকভাবে জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে উপনীত হন। মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের কারণ দর্শানোর চিঠির জবাবে চিঠিটি পড়ে শোনান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

বৈঠকের আলোচনা ও সিদ্ধান্তের বিষয়ে পরে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবে আমাদের পার্টির সভাপতি বরাবর আত্মপক্ষ সমর্থনে তার বক্তব্য পেশ করেছে। সেটি আমি পড়ে শুনিয়েছি। কিন্তু গোটা হাউজ কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পক্ষে মতামত দিয়েছে এবং আমাদের সভাপতি সবার মতামত নিয়েছেন। সবাই তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানায় এবং সে পরিপ্রেক্ষিতে জাহাঙ্গীর আলমকে মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তো বটেই এ ছাড়া তাকে প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক সদস্য থেকে বহিষ্কার হলে সেক্ষেত্রে স্থায়ী/অস্থায়ীর প্রশ্ন থাকে না। বহিষ্কার, বহিষ্কারই।

তার বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। আজকে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে অফিসিয়ালি জানানো হবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা নির্বাচন সম্পর্কে রিপোর্ট দিয়েছে, সে রিপোর্টে তারা নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী ছিলো এবং বিদ্রোহীদের যারা মদদদাতা ছিলো তাদের সম্পর্কেও রিপোর্ট দিয়েছে। লিখিত রিপোর্ট এবং তারা নিজেরা মৌখিকভাবেও যার যার এলাকায় কতটা আসন পেলো, কতজন বিদ্রোহী হলো, কারা কারা মদদ দিলো, এ রকম অনেক নাম এসেছে। কাজেই এইগুলো কাগজপত্র গুলো দেখে যেটা সিদ্ধান্ত সেটা হচ্ছে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত আগে ছিলো সেটা তো থাকবেই। কিন্তু বিদ্রোহীদের যারা মদদ দিয়েছে তারা নেতা হলে কোনো জেলার নেতা, উপজেলার নেতা তাদেরকেও শাস্তি পেতে হবে। তাদের জন্য শাস্তি রয়েছে। এমন কী জনপ্রতিনিধি হলে, মন্ত্রী হোক, এমপি হোক প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন প্রতীক বিহীন হবে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, হয়তো কোনো বিশেষ বিশেষ এলাকা হতে পারে বিশেষ কারণে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে ওপেন করার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্রোহী ও বিদ্রোহীদের মদদদাতাদের ব্যাপারে কঠোর সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তদন্তসাপেক্ষে এসব বিষয়ে আমাদের পরবর্তী কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। বিদ্রোহী ও তাদের মদদদাতাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে। নোটিশের জবাব উপযুক্ত না হলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। সকল মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা কমিটির সম্মেলন করারও তাগিদ ও গাইডলাইন দিয়েছেন আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

এস এম কামাল আরো বলেন, আমরা মনে করি, আজকের এই ম্যাসেজ যাওয়ার পর যারা বিদ্রোহী হয়েছেন তারা প্রত্যাহার করে নেবেন এবং যারা বিদ্রোহীদের মদদ দেবে, তারা মদদ থেকে সরে আসবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও যদি কোনো বিদ্রোহীকে মদদ দেয়, সেখান থেকে সরে আসবে।

বৈঠকে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার দাবি নিয়ে বিএনপির দাবির বিষয়েও আলোচনা হয়। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী তার অভিমত জানান। তিনি বলেন, আমি তাদের প্রতি মানবিক আচরণ করছি। জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া তারেক জিয়া যে আচরণ করেছে, আমরা তো সেই প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না। তারা যে আচরণ করেছে সেই আচরণ তো আমরা করিনি। তারা তো সবচেয়ে জঘন্য প্রতিহিংসার রাজনীতি করেছে।

বার্তাকণ্ঠ/এন

ছাড় নেই মন্ত্রী-এমপি হলেও কঠোর বার্তা দিলেন আ.লীগ সভাপতি

প্রকাশের সময় : ১১:২০:৪৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ নভেম্বর ২০২১

ঢাকা ব্যুরো ।।

উনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা বহাল রাখার পাশাপাশি বিদ্রোহীদের মদদদাতা বা পৃষ্ঠপোষকদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন দলীয় সভাপতি আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিদ্রোহীদের মদদদাতা হিসেবে নেতা, এমপি, মন্ত্রী যেই হোক, তারা যে পদেই থাকুক, মদদদাতা হিসেবে প্রমাণিত হলে আগামীতে তাদেরকে কোনো পদে পদায়ন করা হবে না বলে বৈঠকে কঠোর সতর্কবার্তা উচ্চারণ করা হয়েছে।

শুক্রবার (১৯ নভেম্বর) বিকেলে গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে এমন আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। একাধিক সূত্র এ সব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। চারটার দিকে শুরু হয়ে রাত ৯টা অবধি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মাঝখানে কিছু সময় বিরতি প্রদান করা হয়।

বৈঠকে সাংগঠনিক বিষয় ছাড়াও সমসাময়িক রাজনৈতিক বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। পরে সাংবাদিকদের সামনে বৈঠকের বিষয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের গেটে তা তুলে ধরেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সভার শুরুতে সূচনা বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের দুই-তৃতীয়াংশ সদস্য নিয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে সম্প্রতি উইটসা এমিনেন্ট পারসনস অ্যাওয়ার্ড-২০২১’-এ ভূষিত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং দেশের তথ্য-প্রযুক্তি খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ও অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এশিয়ান-ওশেনিয়ান কম্পিউটিং অর্গানাইজেশনের (অ্যাসোসিও) লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০২১ পুরস্কার পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানানো হয়েছে। দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি অভিনন্দন প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, যেসব জেলা-উপজেলায় জেলায় ইউপি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সে সকল জেলা-উপজেলা বাদ দিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ সকল জেলা-উপজেলা কমিটি করার জন্য তাগিদ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের উদ্দেশে বলেন, সম্মেলন করে শুধু প্রেসিডেন্ট-সেক্রেটারি আর কয়েকজনের নাম ঘোষণা দিয়ে এলেই হবে না। কেনো দ্রুত পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করতে তারা পারে না, যারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে বিলম্ব করবে প্রয়োজনে তাদের বলে দিতে হবে, তোমরা ৭ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে না পারলে আমরা কেন্দ্র করে কমিটি করে দিচ্ছি।

তিনি দলের বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের শাসনছলে বলেন, সম্মেলন করতে গিয়ে শুধু রুটি-মাংস খেয়ে আসলেই হবে না। কেনো পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দ্রুত করা হয় না। সে বিষয়গুলো খেয়াল করতে হবে। দলের ভেতরে যারা বিতর্কিত, আদর্শচ্যুত, যারা সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আছে তাদেরকে কমিটিতে জায়গা দেয়া যাবে না।

যারা নতুন আছে, গ্রহণযোগ্য আছে, দলের প্রতি কমিটমেন্ট আছে, এমন আদর্শিক কর্মীদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার নির্দেশনা দেন। আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা আগামী দুই মাসের মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলার সম্মেলন করার বিষয়ে অবহিত করেন।

বৈঠক সূত্র আরো জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভাগীয় নেতাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড তৃণমূল পর্যায়ে জোরদার করার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কঠোর মনিটরিং করার নির্দেশনা দেন। তিনি এ ব্যাপারে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের উদ্দেশে বলেন, যারা বিদ্রোহী তাদের ব্যাপারে আমাদের যে চলমান সিদ্ধান্ত রয়েছে সেটা বহাল থাকবে আর যারা বিদ্রোহীদের মদদদাতা, তারা জেলা নেতা হোক উপজেলা নেতা হোক, মন্ত্রী-এমপি হোক, তদন্তসাপেক্ষে যদি প্রমাণিত হয় বিদ্রোহীদের মদদ দিয়েছে, তাহলে আগামীতে তাদের কোনো পদে রাখা রাখবো না, কোনো এমপি মদদদাতা হিসাবে প্রমাণিত হলে তাদের মনোনয়নও দেবো না।

বৈঠক সূত্র জানায়, বিদ্রোহী ও বিদ্রোহীদের মদদদাতাদের ব্যাপারে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা নিজ নিজ প্রতিবেদন তুলে ধরেন এবং তদন্তসাপেক্ষে এই প্রতিবেদন প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। তদন্তে সাপেক্ষে বিদ্রোহী ও বিদ্রোহীদের নেপথ্য মদদদাতা বা পৃষ্ঠপোষক হিসাবে প্রমাণিত হলে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হবে এবং চিঠির জবাব যথার্থ না হলে পরবর্তীতে দলের কেন্দ্রীয় সংসদের সিদ্ধান্তের আলোকে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার একমত পোষণ করা হয়।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকা প্রতীক থাকবে কি থাকবে না এ বিষয়ে জানতে চাইলে একাধিক সূত্র জানায়, এটা তো আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তের বিষয় নয়, এটি নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তের বিষয়। আর নির্বাচন কমিশন এটি আরপিওতে করেছে। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হবে। সেই সেক্ষেত্রে সকল রাজনৈতিক দল যদি নির্বাচন কমিশনে আলাপ করে এটার বিরোধিতা করে তখন আমরা আলাপ করে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবো। একইসঙ্গে সারাদেশে ইউপি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কঠোর হস্তে সহিংসতা দমন এবং দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের কঠোর মনিটরিং বাড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ইউপি নির্বাচনে জনগণের অংশগ্রহণ ও ভোটাধিকার হার প্রয়োগের মাত্রা নিয়েও বৈঠকে সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে দলের পক্ষ থেকে যে বার্তা দেয়া হয়, সেট হলো ব্যক্তি যত শক্তিশালীই হোক, দলের আদর্শের পরিপন্থী হলে কেউ দলের উর্ধ্বে নয়- এমনটাই মনে করছেন নেতারা। বৈঠকে উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতাদের তিন চারজন ব্যতীত সবাই ওই ইস্যুতে কথা বলেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সবার সম্মতিক্রমে গণতান্ত্রিকভাবে জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্তে উপনীত হন। মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের কারণ দর্শানোর চিঠির জবাবে চিঠিটি পড়ে শোনান দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

বৈঠকের আলোচনা ও সিদ্ধান্তের বিষয়ে পরে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবে আমাদের পার্টির সভাপতি বরাবর আত্মপক্ষ সমর্থনে তার বক্তব্য পেশ করেছে। সেটি আমি পড়ে শুনিয়েছি। কিন্তু গোটা হাউজ কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের পক্ষে মতামত দিয়েছে এবং আমাদের সভাপতি সবার মতামত নিয়েছেন। সবাই তার বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দাবি জানায় এবং সে পরিপ্রেক্ষিতে জাহাঙ্গীর আলমকে মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক তো বটেই এ ছাড়া তাকে প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেন, প্রাথমিক সদস্য থেকে বহিষ্কার হলে সেক্ষেত্রে স্থায়ী/অস্থায়ীর প্রশ্ন থাকে না। বহিষ্কার, বহিষ্কারই।

তার বিরুদ্ধে আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সে ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। আজকে যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে অফিসিয়ালি জানানো হবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা নির্বাচন সম্পর্কে রিপোর্ট দিয়েছে, সে রিপোর্টে তারা নির্বাচনে যারা বিদ্রোহী ছিলো এবং বিদ্রোহীদের যারা মদদদাতা ছিলো তাদের সম্পর্কেও রিপোর্ট দিয়েছে। লিখিত রিপোর্ট এবং তারা নিজেরা মৌখিকভাবেও যার যার এলাকায় কতটা আসন পেলো, কতজন বিদ্রোহী হলো, কারা কারা মদদ দিলো, এ রকম অনেক নাম এসেছে। কাজেই এইগুলো কাগজপত্র গুলো দেখে যেটা সিদ্ধান্ত সেটা হচ্ছে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত আগে ছিলো সেটা তো থাকবেই। কিন্তু বিদ্রোহীদের যারা মদদ দিয়েছে তারা নেতা হলে কোনো জেলার নেতা, উপজেলার নেতা তাদেরকেও শাস্তি পেতে হবে। তাদের জন্য শাস্তি রয়েছে। এমন কী জনপ্রতিনিধি হলে, মন্ত্রী হোক, এমপি হোক প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন প্রতীক বিহীন হবে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, হয়তো কোনো বিশেষ বিশেষ এলাকা হতে পারে বিশেষ কারণে। কিন্তু সামগ্রিকভাবে ওপেন করার ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধুকন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদ্রোহী ও বিদ্রোহীদের মদদদাতাদের ব্যাপারে কঠোর সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নেয়ার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তদন্তসাপেক্ষে এসব বিষয়ে আমাদের পরবর্তী কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। বিদ্রোহী ও তাদের মদদদাতাদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হবে। নোটিশের জবাব উপযুক্ত না হলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। সকল মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা কমিটির সম্মেলন করারও তাগিদ ও গাইডলাইন দিয়েছেন আমাদের নেত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

এস এম কামাল আরো বলেন, আমরা মনে করি, আজকের এই ম্যাসেজ যাওয়ার পর যারা বিদ্রোহী হয়েছেন তারা প্রত্যাহার করে নেবেন এবং যারা বিদ্রোহীদের মদদ দেবে, তারা মদদ থেকে সরে আসবে। দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারাও যদি কোনো বিদ্রোহীকে মদদ দেয়, সেখান থেকে সরে আসবে।

বৈঠকে, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দেশের বাইরে উন্নত চিকিৎসার দাবি নিয়ে বিএনপির দাবির বিষয়েও আলোচনা হয়। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী তার অভিমত জানান। তিনি বলেন, আমি তাদের প্রতি মানবিক আচরণ করছি। জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া তারেক জিয়া যে আচরণ করেছে, আমরা তো সেই প্রতিহিংসার রাজনীতি করি না। তারা যে আচরণ করেছে সেই আচরণ তো আমরা করিনি। তারা তো সবচেয়ে জঘন্য প্রতিহিংসার রাজনীতি করেছে।

বার্তাকণ্ঠ/এন