শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জ্যামিতি বক্সে করে ইয়াবা বহন করতেন পিতা-পুত্র

টেকনাফ প্রতিনিধিঃ
জ্যামিতি বক্স। চকচকে নতুন। প্রথম দেখায় মনে হবে সন্তানকে অংক শেখানোর জন্য বাবা অনেক গুরুত্ব দেন। কিন্তু একেবারেই তা নয়। নতুন জ্যামিতি বক্স কিনে এনে ভেতর থেকে কাঁটা-কম্পাস ফেলে দিতেন ঝুড়িতে। সেই বক্সে বাবা-ছেলে মিলে ভরতেন ছোট ছোট ইয়াবার প্যাকেট।
তারপর তা কায়দা করে মিনি ট্রাকের পেছনের পাটাতনের নিচে ঢুকিয়ে কাঠ বা অন্য যেকোনও মালামাল তুলে নিয়ে আসতেন ঢাকায়। মালামাল নামিয়ের ফাঁকে পাটাতন থেকে বের করে তুলে দিতেন রাজধানী ঢাকার এক মাদক ব্যবসায়ীর হাতে। এভাবে প্রায় প্রতি মাসেই একাধিক মাদকের চালান আনতেন বাবা-ছেলে। কিন্তু এবার তারা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল জোনাল টিমের হাতে ধরা পড়েছেন। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১৪ হাজার ৪০০ পিস ইয়াবা।
গ্রেফতারকৃত এই বাবা-ছেলে হলো কক্সবাজারের টেকনাফ থানাধীন রঙ্গীখালী এলাকার বাসিন্দা শাকের (৫০) ও তার ছেলে জিহাদ (২০)। সোমবার (২১ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার রমনা থানাধীন হলিফ্যামিলী হাসপাতালের পাশের রাস্তা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। জ্যামিতি বক্সের মধ্যে ইয়াবা রেখে যে মিনি ট্রাকের পাটাতনের নিচে লুকিয়ে আনতেন, সেই মিনি ট্রাকটিও (চট্টগ্রাম মেট্রো ন-১১-৫৫৭৬) জব্দ করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আতিকুল ইসলাম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন একটি মিনি ট্রাকের মাধ্যমে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ইয়াবা আনা হচ্ছে। ট্রাকটি রমনা থানাধীন হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সামনে দিয়ে অতিক্রম করবে। এই তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল জোনাল টিমের সদস্যরা হাসপাতালের পাশের সড়কে অবস্থান নিয়ে ট্রাকটি আটক করে।
গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, ট্রাকে ইয়াবা বহন করা হচ্ছে এই তথ্য তাদের কাছে ছিল। কিন্তু তারা প্রথমে ট্রাক তল্লাশি করে ইয়াবা ট্যাবলেট খুঁজে পাচ্ছিলেন না। ট্রাকে থাকা শাকের ও তার ছেলে জিহাদ নিজেদের বাবা-ছেলে পরিচয় দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। এক পর্যায়ে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে তারা ট্রাকের পেছনের পাটাতনের নিচে বিশেষ কায়দায় ইয়াবা রাখা আছে বলে স্বীকার করে। পরে কড়াত দিয়ে পাটাতন কেটে ১২টি জ্যামিতি বক্স থেকে ১৪ হাজার ৪০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাকের ও তার ছেলে জিহাদ দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার থেকে বিশেষ কায়দায় ঢাকায় ইয়াবা আনার কথা স্বীকার করেছে। কক্সবাজারের এক মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তারা বিভিন্ন পরিমাণ ইয়াবা নিয়ে বাসায় জ্যামিতি বক্সে ঢুকিয়ে ট্রাকের মাধ্যমে ঢাকায় আনতেন। ঢাকার মোহাম্মদপুরের এক মাদক ব্যবসায়ীর কাছে তারা ইয়াবাগুলো পৌঁছে দিতেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাকের ও জিহাদ জানিয়েছে, তারা প্রতিটি ইয়াবা চালানের জন্য ৫০ হাজার টাকা পেতেন। একারণে ট্রাকে করে যেসব মালামালা ঢাকায় আনতেন সেগুলোর ভাড়া নিতেন কম। ভাড়া কম নেওয়ার কারণে স্থানীয় গ্রাহকদের কাছে ঢাকায় মালামাল পাঠানোর জন্য তাদের ট্রাকটির কদর ছিল বেশি।
জিজ্ঞাসাবাদে শাকের জানিয়েছে, মিনি ট্রাকটি তার নিজের। তার ছেলে জিহাদ স্থানীয় একটি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ে। নিজের ট্রাক চালানো ও ছেলের পড়াশোনার পাশাপাশি অধিক অর্থ আয়ের লোভে তারা মাদক পরিবহনে জড়িয়েছেন। ছেলেকে নিজেই কক্সবাজারের স্থানীয় ভাষায় ‘ওয়াই ব্যবসায়’ জড়িত করেছেন বলে জানান।
গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মাদক আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই বাবা-ছেলে কক্সবাজারে যার কাছ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করতেন এবং ঢাকার মোহাম্মদপুরের যে মাদক ব্যবসায়ীর কাছে ইয়াবা পৌঁছে দিতেন তাদেরকেও গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।

জ্যামিতি বক্সে করে ইয়াবা বহন করতেন পিতা-পুত্র

প্রকাশের সময় : ০৯:৫৫:০৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুন ২০২১
টেকনাফ প্রতিনিধিঃ
জ্যামিতি বক্স। চকচকে নতুন। প্রথম দেখায় মনে হবে সন্তানকে অংক শেখানোর জন্য বাবা অনেক গুরুত্ব দেন। কিন্তু একেবারেই তা নয়। নতুন জ্যামিতি বক্স কিনে এনে ভেতর থেকে কাঁটা-কম্পাস ফেলে দিতেন ঝুড়িতে। সেই বক্সে বাবা-ছেলে মিলে ভরতেন ছোট ছোট ইয়াবার প্যাকেট।
তারপর তা কায়দা করে মিনি ট্রাকের পেছনের পাটাতনের নিচে ঢুকিয়ে কাঠ বা অন্য যেকোনও মালামাল তুলে নিয়ে আসতেন ঢাকায়। মালামাল নামিয়ের ফাঁকে পাটাতন থেকে বের করে তুলে দিতেন রাজধানী ঢাকার এক মাদক ব্যবসায়ীর হাতে। এভাবে প্রায় প্রতি মাসেই একাধিক মাদকের চালান আনতেন বাবা-ছেলে। কিন্তু এবার তারা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল জোনাল টিমের হাতে ধরা পড়েছেন। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১৪ হাজার ৪০০ পিস ইয়াবা।
গ্রেফতারকৃত এই বাবা-ছেলে হলো কক্সবাজারের টেকনাফ থানাধীন রঙ্গীখালী এলাকার বাসিন্দা শাকের (৫০) ও তার ছেলে জিহাদ (২০)। সোমবার (২১ জুন) সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকার রমনা থানাধীন হলিফ্যামিলী হাসপাতালের পাশের রাস্তা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। জ্যামিতি বক্সের মধ্যে ইয়াবা রেখে যে মিনি ট্রাকের পাটাতনের নিচে লুকিয়ে আনতেন, সেই মিনি ট্রাকটিও (চট্টগ্রাম মেট্রো ন-১১-৫৫৭৬) জব্দ করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আতিকুল ইসলাম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তারা জানতে পারেন একটি মিনি ট্রাকের মাধ্যমে কক্সবাজার থেকে ঢাকায় ইয়াবা আনা হচ্ছে। ট্রাকটি রমনা থানাধীন হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের সামনে দিয়ে অতিক্রম করবে। এই তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা পুলিশের মতিঝিল জোনাল টিমের সদস্যরা হাসপাতালের পাশের সড়কে অবস্থান নিয়ে ট্রাকটি আটক করে।
গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা জানান, ট্রাকে ইয়াবা বহন করা হচ্ছে এই তথ্য তাদের কাছে ছিল। কিন্তু তারা প্রথমে ট্রাক তল্লাশি করে ইয়াবা ট্যাবলেট খুঁজে পাচ্ছিলেন না। ট্রাকে থাকা শাকের ও তার ছেলে জিহাদ নিজেদের বাবা-ছেলে পরিচয় দিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিল। এক পর্যায়ে জিজ্ঞাসাবাদের মুখে তারা ট্রাকের পেছনের পাটাতনের নিচে বিশেষ কায়দায় ইয়াবা রাখা আছে বলে স্বীকার করে। পরে কড়াত দিয়ে পাটাতন কেটে ১২টি জ্যামিতি বক্স থেকে ১৪ হাজার ৪০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাকের ও তার ছেলে জিহাদ দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজার থেকে বিশেষ কায়দায় ঢাকায় ইয়াবা আনার কথা স্বীকার করেছে। কক্সবাজারের এক মাদক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে তারা বিভিন্ন পরিমাণ ইয়াবা নিয়ে বাসায় জ্যামিতি বক্সে ঢুকিয়ে ট্রাকের মাধ্যমে ঢাকায় আনতেন। ঢাকার মোহাম্মদপুরের এক মাদক ব্যবসায়ীর কাছে তারা ইয়াবাগুলো পৌঁছে দিতেন।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাকের ও জিহাদ জানিয়েছে, তারা প্রতিটি ইয়াবা চালানের জন্য ৫০ হাজার টাকা পেতেন। একারণে ট্রাকে করে যেসব মালামালা ঢাকায় আনতেন সেগুলোর ভাড়া নিতেন কম। ভাড়া কম নেওয়ার কারণে স্থানীয় গ্রাহকদের কাছে ঢাকায় মালামাল পাঠানোর জন্য তাদের ট্রাকটির কদর ছিল বেশি।
জিজ্ঞাসাবাদে শাকের জানিয়েছে, মিনি ট্রাকটি তার নিজের। তার ছেলে জিহাদ স্থানীয় একটি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ে। নিজের ট্রাক চালানো ও ছেলের পড়াশোনার পাশাপাশি অধিক অর্থ আয়ের লোভে তারা মাদক পরিবহনে জড়িয়েছেন। ছেলেকে নিজেই কক্সবাজারের স্থানীয় ভাষায় ‘ওয়াই ব্যবসায়’ জড়িত করেছেন বলে জানান।
গোয়েন্দা পুলিশ কর্মকর্তা আতিকুল ইসলাম জানান, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে রমনা থানায় মাদক আইনে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই বাবা-ছেলে কক্সবাজারে যার কাছ থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করতেন এবং ঢাকার মোহাম্মদপুরের যে মাদক ব্যবসায়ীর কাছে ইয়াবা পৌঁছে দিতেন তাদেরকেও গ্রেফতারের জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।