মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে সাংগঠনিক গতিশীলতা বাড়ানোর তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর

ঢাকা ব্যুরো।। তৃণমূলকে শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তুলতে সাংগঠনিক গতিশীলতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ক্ষেত্রে দলের যেসব নেতা নির্বাচিত সংসদ সদস্য রয়েছেন, তাদের সাংগঠনিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। সংসদ সদস্য কিংবা জেলা-উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক পদে থেকেও অনেক আওয়ামী লীগ নেতা স্থানীয়ভাবে দ্বন্দ্ব-কলহে জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব এলাকায় সাংগঠনিক কাঠামো বিলুপ্ত ঘোষণা ও সম্মেলন প্রস্তুত আহবায়ক কমিটি করে দ্রুত সম্মেলন আয়োজনেরও নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে শেখ হাসিনা এসব নির্দেশনা দিয়েছেন। বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানিয়েছে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূলকে কীভাবে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা যায়, সে বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি বৈঠকে সাংগঠনিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সংসদ সদস্যদের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, সব এমপিদের যদি দলের গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক পদ দিতে হয়, তাহলে তো সংগঠনের ভারসাম্য থাকে না। ভোটের রাজনীতিতে অনেককেই এমপি মনোনয়ন দিতে হয়। তাই বলে সবাইকে দলের গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক পদ দিতে হবে কেন? সবাইকে সংগঠনের সভাপতি-সেক্রেটারি বানাতে হবে-এটা তো করা যাবে না। এতে তৃণমূলে দলের ভারসাম্য থাকবে না। এমপিদের তো সরকারিভাবেই অনেক দায়িত্ব থাকে। সে কারণে তাদের অনেকে সেভাবে দলে সময়ও দিতে পারেন না।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, কোথাও যদি সাংগঠনিক ভারসাম্য বজায় রাখতে অথবা সাংগঠনিক গতিশীলতার জোরদার করতে কোনো দলীয় এমপিকে গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক পদ দিতে হয়, সেটি ভিন্ন বিষয়। কিন্তু অনেক এমপি জেলা-উপজেলায় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও আছেন। তারপরও তাদের আবার কেন (পদ) দিতে হবে? তারপরও কেন তারা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-ফ্যাসাদে জড়িয়ে পড়ছে? অনেকে তো দুই-তিনটি পদের সঙ্গেই এমপি হিসেবে আছেন। তাদেরকেই কেন সব দিতে হবে? তাহলে দলের অন্যরা করবে কী?

‘যারা এমপি আছেন, এমপি থাকবে। যারা এমপি হতে চান, এমপি হবেন। এসব জায়গায় প্রয়োজনে অন্য কাউকে দায়িত্ব দিয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হয়। এ বিষয়ে আর কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না, বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

বৈঠকে রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামালের এ সংক্রান্ত বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ওখানে তো তারা দু’জনেই এমপি। দু’জনের একজন সভাপতি, আরেকজন সেক্রেটারি। তারপরও নিজেদের মধ্যে এত ঝামেলা কেন? দ্বন্দ্ব কেন? প্রয়োজনে ওখানে কমিটি বিলুপ্ত করে দিয়ে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করে সম্মেলন আয়োজন করো।

পরে এস এম কামাল আওয়ামী লীগ সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আগামী ৬ ও ৭ নভেম্বর পাবনা ও নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের সম্ভাব্য তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক এবং বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বসে সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত করে সংশ্লিষ্ট জেলার নেতাদের জানিয়ে দেয়া বলে অবহিত করেন তিনি। সেই তারিখ চূড়ান্ত করতে আগামী মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) পাবনা জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ চার উপজেলার নেতাদের ঢাকায় তলব করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বৈঠকে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সাংগঠনিক প্রতিবেদন এবং বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা-উপজেলা, তথা তৃণমূল পর্যায়ে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব-কলহ তৈরি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। মাদারীপুর জেলা-উপজেলার দলের মধ্যেকার অন্তর্কোন্দল নিয়ে তিনি সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মাদারীপুরের সংসদ সদস্য শাজাহান খানের উদ্দেশে বলেন, আপনি এখনো আওয়ামী লীগ হতে পারলেন না। আপনি আওয়ামী লীগ হয়ে যান। আপনি তো ওই এলাকার সিনিয়র নেতা। কয়েকবারের এমপি। আপনার ওখানে কেন সবার সঙ্গে সবার ঝামেলা থাকবে? সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করেন।

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিমের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আমি তো চেয়েছিলাম উনি (শাজাহান খান) জাসদে থেকেই আমার সঙ্গে কাজ করুক। তোমরাই তো সবাই মিলে আমাদের দলে নিয়ে আসলে। এখন আবার এত সমস্যা কেন তোমাদের?

দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও মাদারীপুরের আরেক সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান গোলাপের বিরুদ্ধেও তার সংসদীয় এলাকার এক উপজেলায় কমিটি অনুমোদন নিয়ে অভিযোগের কথা বলা হয় বৈঠকে। তবে আবদুস সোবহান গোলাপ সে অভিযোগ অস্বীকার করেন।

সাংগঠনিক এসব নির্দেশনা ছাড়াও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও আগামী বছরের জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে সাংগঠনিক রোডম্যাপ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেন দলীয় সভাপতি।

বৈঠকে বিভাগীয় সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন এবং বক্তব্য রাখেন। চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন দেশের বাইরে অবস্থান করায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ তার বিভাগের রিপোর্ট উপস্থাপন করেন। এসব রিপোর্টে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সাংগঠনিক বিভিন্ন কোন্দলের তথ্যও উঠে আসে। কোথায় কোন কোন নেতাদের মধ্যে বিরোধ-দ্বন্দ্ব রয়েছে কিংবা কোথায় এমপিরা ‘মাইম্যান’দের সংগঠনের নেতা বানাতে প্রভাব বিস্তার করছে, কোথায় কোন কোন নেতাদের নেতৃত্বে গ্রুপিং আছে— এসব তথ্যও স্থান পেয়েছে এসব রিপোর্টে।

বৈঠক সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সাংগঠনিক নেতাদের বক্তব্য অনুযায়ী কিছু কিছু জেলা-উপজেলার সমস্যা সমাধানের পথ তাৎক্ষণিকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বাতলে দেন। এছাড়া বৈঠকে সমসাময়িক ইস্যুসহ নানা বিষয়ে সাংগঠনিক রোডম্যাপ নির্ধারণ করে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে তৃণমূল থেকে সংগঠনকে সুসংগঠিত করার লক্ষ্য বিভিন্ন নির্দেশনাও দেন দলীয় সভাপতি।

এর আগে, সকাল ১১টায় গণভবনে শুরু হয় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠক বিকেল সাড়ে ৩টায় শেষ হয়। বৈঠকে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। গত বছরের ৩ অক্টোবরের পর এই প্রথম আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী এই সংসদের বৈঠক হলো।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত হয় এই সভা। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ প্রায় ৫৩ জন নেতা বৈঠকে আমন্ত্রিত ছিলেন। এর মধ্যে দু’জন দেশের বাইরে অবস্থান করায় বৈঠকে থাকতে পারেননি। বৈঠক শেষে গণভবনের বাইরে গেটের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

জনপ্রিয়

তৃণমূলকে শক্তিশালী করতে সাংগঠনিক গতিশীলতা বাড়ানোর তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশের সময় : ০৭:৩৭:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১

ঢাকা ব্যুরো।। তৃণমূলকে শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তুলতে সাংগঠনিক গতিশীলতা বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ক্ষেত্রে দলের যেসব নেতা নির্বাচিত সংসদ সদস্য রয়েছেন, তাদের সাংগঠনিক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে অব্যাহতির ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। সংসদ সদস্য কিংবা জেলা-উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক পদে থেকেও অনেক আওয়ামী লীগ নেতা স্থানীয়ভাবে দ্বন্দ্ব-কলহে জড়িয়ে পড়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এসব এলাকায় সাংগঠনিক কাঠামো বিলুপ্ত ঘোষণা ও সম্মেলন প্রস্তুত আহবায়ক কমিটি করে দ্রুত সম্মেলন আয়োজনেরও নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।

গতকাল বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে শেখ হাসিনা এসব নির্দেশনা দিয়েছেন। বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানিয়েছে, আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তৃণমূলকে কীভাবে শক্তিশালী করে গড়ে তোলা যায়, সে বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন তিনি।

বৈঠকে উপস্থিত একাধিক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি বৈঠকে সাংগঠনিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সংসদ সদস্যদের সাংগঠনিক দায়িত্ব পালন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

বৈঠকে শেখ হাসিনা বলেন, সব এমপিদের যদি দলের গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক পদ দিতে হয়, তাহলে তো সংগঠনের ভারসাম্য থাকে না। ভোটের রাজনীতিতে অনেককেই এমপি মনোনয়ন দিতে হয়। তাই বলে সবাইকে দলের গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক পদ দিতে হবে কেন? সবাইকে সংগঠনের সভাপতি-সেক্রেটারি বানাতে হবে-এটা তো করা যাবে না। এতে তৃণমূলে দলের ভারসাম্য থাকবে না। এমপিদের তো সরকারিভাবেই অনেক দায়িত্ব থাকে। সে কারণে তাদের অনেকে সেভাবে দলে সময়ও দিতে পারেন না।

শেখ হাসিনা আরো বলেন, কোথাও যদি সাংগঠনিক ভারসাম্য বজায় রাখতে অথবা সাংগঠনিক গতিশীলতার জোরদার করতে কোনো দলীয় এমপিকে গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক পদ দিতে হয়, সেটি ভিন্ন বিষয়। কিন্তু অনেক এমপি জেলা-উপজেলায় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও আছেন। তারপরও তাদের আবার কেন (পদ) দিতে হবে? তারপরও কেন তারা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-ফ্যাসাদে জড়িয়ে পড়ছে? অনেকে তো দুই-তিনটি পদের সঙ্গেই এমপি হিসেবে আছেন। তাদেরকেই কেন সব দিতে হবে? তাহলে দলের অন্যরা করবে কী?

‘যারা এমপি আছেন, এমপি থাকবে। যারা এমপি হতে চান, এমপি হবেন। এসব জায়গায় প্রয়োজনে অন্য কাউকে দায়িত্ব দিয়ে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে হয়। এ বিষয়ে আর কোনোভাবেই ছাড় দেয়া হবে না, বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

বৈঠকে রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামালের এ সংক্রান্ত বক্তব্যের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ওখানে তো তারা দু’জনেই এমপি। দু’জনের একজন সভাপতি, আরেকজন সেক্রেটারি। তারপরও নিজেদের মধ্যে এত ঝামেলা কেন? দ্বন্দ্ব কেন? প্রয়োজনে ওখানে কমিটি বিলুপ্ত করে দিয়ে সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি করে সম্মেলন আয়োজন করো।

পরে এস এম কামাল আওয়ামী লীগ সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, আগামী ৬ ও ৭ নভেম্বর পাবনা ও নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের সম্ভাব্য তারিখ চূড়ান্ত করা হয়েছে। দলের সাধারণ সম্পাদক এবং বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বসে সম্মেলনের তারিখ চূড়ান্ত করে সংশ্লিষ্ট জেলার নেতাদের জানিয়ে দেয়া বলে অবহিত করেন তিনি। সেই তারিখ চূড়ান্ত করতে আগামী মঙ্গলবার (১৪ সেপ্টেম্বর) পাবনা জেলার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ চার উপজেলার নেতাদের ঢাকায় তলব করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বৈঠকে বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের সাংগঠনিক প্রতিবেদন এবং বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা-উপজেলা, তথা তৃণমূল পর্যায়ে স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে প্রভাব বিস্তার নিয়ে দ্বন্দ্ব-কলহ তৈরি হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। মাদারীপুর জেলা-উপজেলার দলের মধ্যেকার অন্তর্কোন্দল নিয়ে তিনি সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও মাদারীপুরের সংসদ সদস্য শাজাহান খানের উদ্দেশে বলেন, আপনি এখনো আওয়ামী লীগ হতে পারলেন না। আপনি আওয়ামী লীগ হয়ে যান। আপনি তো ওই এলাকার সিনিয়র নেতা। কয়েকবারের এমপি। আপনার ওখানে কেন সবার সঙ্গে সবার ঝামেলা থাকবে? সবার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করেন।

দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিমের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আমি তো চেয়েছিলাম উনি (শাজাহান খান) জাসদে থেকেই আমার সঙ্গে কাজ করুক। তোমরাই তো সবাই মিলে আমাদের দলে নিয়ে আসলে। এখন আবার এত সমস্যা কেন তোমাদের?

দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও মাদারীপুরের আরেক সংসদ সদস্য আবদুস সোবহান গোলাপের বিরুদ্ধেও তার সংসদীয় এলাকার এক উপজেলায় কমিটি অনুমোদন নিয়ে অভিযোগের কথা বলা হয় বৈঠকে। তবে আবদুস সোবহান গোলাপ সে অভিযোগ অস্বীকার করেন।

সাংগঠনিক এসব নির্দেশনা ছাড়াও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও আগামী বছরের জাতীয় কাউন্সিলকে সামনে রেখে সাংগঠনিক রোডম্যাপ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেন দলীয় সভাপতি।

বৈঠকে বিভাগীয় সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করেন এবং বক্তব্য রাখেন। চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন দেশের বাইরে অবস্থান করায় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ তার বিভাগের রিপোর্ট উপস্থাপন করেন। এসব রিপোর্টে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় সাংগঠনিক বিভিন্ন কোন্দলের তথ্যও উঠে আসে। কোথায় কোন কোন নেতাদের মধ্যে বিরোধ-দ্বন্দ্ব রয়েছে কিংবা কোথায় এমপিরা ‘মাইম্যান’দের সংগঠনের নেতা বানাতে প্রভাব বিস্তার করছে, কোথায় কোন কোন নেতাদের নেতৃত্বে গ্রুপিং আছে— এসব তথ্যও স্থান পেয়েছে এসব রিপোর্টে।

বৈঠক সূত্র বলছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সাংগঠনিক নেতাদের বক্তব্য অনুযায়ী কিছু কিছু জেলা-উপজেলার সমস্যা সমাধানের পথ তাৎক্ষণিকভাবে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বাতলে দেন। এছাড়া বৈঠকে সমসাময়িক ইস্যুসহ নানা বিষয়ে সাংগঠনিক রোডম্যাপ নির্ধারণ করে আগামী জাতীয় নির্বাচনকে লক্ষ্য রেখে তৃণমূল থেকে সংগঠনকে সুসংগঠিত করার লক্ষ্য বিভিন্ন নির্দেশনাও দেন দলীয় সভাপতি।

এর আগে, সকাল ১১টায় গণভবনে শুরু হয় আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক। কয়েক ঘণ্টাব্যাপী এই বৈঠক বিকেল সাড়ে ৩টায় শেষ হয়। বৈঠকে শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। গত বছরের ৩ অক্টোবরের পর এই প্রথম আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী এই সংসদের বৈঠক হলো।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠিত হয় এই সভা। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দলীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ প্রায় ৫৩ জন নেতা বৈঠকে আমন্ত্রিত ছিলেন। এর মধ্যে দু’জন দেশের বাইরে অবস্থান করায় বৈঠকে থাকতে পারেননি। বৈঠক শেষে গণভবনের বাইরে গেটের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।