মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দুই ডোজ টিকা নিয়েও ডেল্টা থেকে সুরক্ষিত নয় মানুষ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার দুই ডোজ নেয়া থাকলেও মানুষ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থেকে সুরক্ষিত নয়; এই ধরন আক্রমণ করতে পারে শরীরে। বিশ্বের ১০ শীর্ষ কোভিড-বিশেষজ্ঞের সাক্ষাৎকার থেকে উঠে এসেছে এই তথ্য।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার আগের ধরনের তুলনায় এর ডেল্টা ধরন আরো বেশি হারে মানুষজনকে আক্রান্ত করতে পারে। এমনকি দুই ডোজ টিকা নেয়া মানুষদেরকেও আক্রান্ত করতে সক্ষম ডেল্টা। এমন প্রমাণ উত্তরোত্তরই মিলছে এবং এই আক্রান্তরা এই ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারে বলেও উদ্বেগ বাড়ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, এই মুহূর্তে সমগ্র বিশ্বের ১২৪টি অঞ্চলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ডেল্টা। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অন্তত ২০ কোটি মানুষ ডেল্টার শিকার হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সংস্থাটি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে প্রথম চিহ্নিত হওয়া এই ভ্যারিয়েন্টটির আক্রমণে মানুষ শুধু গুরুতর অসুস্থই হয়ে পড়ছেন না, এটি খুব দ্রুত এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে টিকা নেননি এমন ব্যক্তিদের দ্রুত আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যেমন অত্যন্ত বেশি, তেমনি টিকার দু’টি ডোজ সম্পূর্ণ হওয়ার পরেও ডেল্টায় আক্রান্ত হচ্ছেন এমন প্রমাণ অমিল নয়। বরং তা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে।

বিশেষজ্ঞেরা শুরুতেই বলেছেন, করোনার বাকি ভ্যারিয়েন্টগুলোর মধ্যে এখনো পর্যন্ত ডেল্টাই সব চেয়ে সংক্রামক ও প্রাণঘাতী।

যুক্তরাজ্যে করোনার ধরনের জিনোম সিকোয়েন্স নিয়ে কাজ করা মাইক্রোবায়োলজিস্ট শ্যারন পিকক বলেন, এ মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঝুঁকিটাই হচ্ছে ডেল্টা। করোনার এই ধরনকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ‘সবল ও অতিদ্রুত সংক্রামক’ বলে বর্ণনা করেছেন তিনি।

মিউটেশনের মধ্য দিয়ে ভাইরাস অনবরতই রূপ বদলায় ও নতুন নতুন ধরনের উদ্ভব ঘটে। কখনো কখনো এই ধরনগুলো মূল ভাইরাসের চেয়েও বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়।

ব্রিটেনের সংস্থা ‘পাবলিক হেল্থ ইংল্যান্ড’ সম্প্রতি জানিয়েছে, ব্রিটেনে ডেল্টা ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত ৩ হাজার ৬৯২ জন করোনারোগীর মধ্যে ৫৮.৩ শতাংশকে টিকা দেয়া হয়নি। তবে ২২.৮ শতাংশের টিকার দুই ডোজ সম্পূর্ণ হয়েছে।

 শীর্ষ ১০ কোভিড বিশেষজ্ঞ সাক্ষাৎকারে বলেছেন, করোনাভাইরাসের যেকোনো ধরনে গুরুতর অসুস্থতা ও হাসপাতালে যাওয়া থেকে সুরক্ষার ক্ষেত্রে টিকা অনেকখানি কাজে দেয় এবং এখনো টিকা না নেয়া মানুষেরা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন।

সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, টিকা নেয়ার পরও ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত হওয়া ও হাসপাতালে যাওয়া মানুষের সংখ্যা কম নয়।

সিঙ্গাপুরেও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপট সবচেয়ে বেশি এবং সরকারি তথ্য বলছে, আক্রান্তদের তিন-চতুর্থাংশই টিকা নিয়েছেন। যদিও তাদের কেউই গুরুতর অসুস্থ হননি।

ইসরায়েলের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে সে দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন এমন ৬০ শতাংশরই টিকা নেয়া আছে। যুক্তরাষ্ট্রের করোনা আক্রান্তদের ৮৩ শতাংশই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের শিকার। দেশটির শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউচি জানিয়েছেন, টিকাকরণের হার কম এমন এলাকাগুলোতে ডেল্টার সংক্রমণ বেশি।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চিকিৎসা উপদেষ্টা ফাউচির বক্তব্য, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাকসিন না নেয়া মানুষদের মধ্যে করোনা মহামারির আকার নিচ্ছে।’ ফ্লোরিডা, টেক্সাস, মিসৌরির মতো অঙ্গরাজ্যগুলোতে টিকাকরণের হার কম বলে সংক্রমণ ঊর্ধ্বগামী। সার্জেন জেনারেল বিবেক মূর্তি সম্প্রতি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃতদের ৯৯.৫ শতাংশের টিকা নেয়া ছিল না।

সান ডিয়াগোর ‘লা জোলা ইন্সটিটিউট ফর ইমিউনোলেজি’র এক ভাইরাস বিশেষজ্ঞের মতে, ডেল্টা ধরন যুক্তরাজ্যে প্রথম শনাক্ত আলফা ধরনের চেয়েও ৫০ শতাংশ বেশি সংক্রামক।

ইসরায়েলেও গত কয়েক মাস ধরে সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ডেল্টা স্ট্রেন। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, কোভিডে সর্বাপেক্ষা কার্যকর ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা বর্তমানে সে দেশে সংক্রমণ রুখতে মাত্র ৪১ শতাংশ কার্যকর হচ্ছে।

ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব পাবলিক হেলথের পরিচালক নাদাভ বলেন, ‘আমাদের সব সমস্যার জাদুকরী সমাধান হয়ে যাবে বলে ভ্রান্তি সব সময়ই আছে। করোনাভাইরাস আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে।’

চীনের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০১৯ সালে প্রথম চিহ্নিত হওয়া উহান স্ট্রেনের তুলনায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আক্রান্ত ব্যক্তির নাকে এক হাজার গুণ বেশি ভাইরাস থাকে।

মাইক্রোবায়োলজিস্ট শ্যারন পিকক বলেন, ডেল্টা আক্রান্তের ‘ভাইরাল লোড’ বেশি হওয়ায় সম্ভবত অন্যকে সংক্রামিত করার ক্ষমতা বেশি। তবে এই বিষয়টি নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে।’

দুই ডোজ টিকা নিয়েও ডেল্টা থেকে সুরক্ষিত নয় মানুষ

প্রকাশের সময় : ১২:৪৯:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ জুলাই ২০২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধী টিকার দুই ডোজ নেয়া থাকলেও মানুষ ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট থেকে সুরক্ষিত নয়; এই ধরন আক্রমণ করতে পারে শরীরে। বিশ্বের ১০ শীর্ষ কোভিড-বিশেষজ্ঞের সাক্ষাৎকার থেকে উঠে এসেছে এই তথ্য।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার আগের ধরনের তুলনায় এর ডেল্টা ধরন আরো বেশি হারে মানুষজনকে আক্রান্ত করতে পারে। এমনকি দুই ডোজ টিকা নেয়া মানুষদেরকেও আক্রান্ত করতে সক্ষম ডেল্টা। এমন প্রমাণ উত্তরোত্তরই মিলছে এবং এই আক্রান্তরা এই ভাইরাস ছড়িয়ে দিতে পারে বলেও উদ্বেগ বাড়ছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে, এই মুহূর্তে সমগ্র বিশ্বের ১২৪টি অঞ্চলে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ডেল্টা। আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই অন্তত ২০ কোটি মানুষ ডেল্টার শিকার হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সংস্থাটি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতে প্রথম চিহ্নিত হওয়া এই ভ্যারিয়েন্টটির আক্রমণে মানুষ শুধু গুরুতর অসুস্থই হয়ে পড়ছেন না, এটি খুব দ্রুত এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে ছড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে টিকা নেননি এমন ব্যক্তিদের দ্রুত আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যেমন অত্যন্ত বেশি, তেমনি টিকার দু’টি ডোজ সম্পূর্ণ হওয়ার পরেও ডেল্টায় আক্রান্ত হচ্ছেন এমন প্রমাণ অমিল নয়। বরং তা উত্তরোত্তর বেড়েই চলেছে।

বিশেষজ্ঞেরা শুরুতেই বলেছেন, করোনার বাকি ভ্যারিয়েন্টগুলোর মধ্যে এখনো পর্যন্ত ডেল্টাই সব চেয়ে সংক্রামক ও প্রাণঘাতী।

যুক্তরাজ্যে করোনার ধরনের জিনোম সিকোয়েন্স নিয়ে কাজ করা মাইক্রোবায়োলজিস্ট শ্যারন পিকক বলেন, এ মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ঝুঁকিটাই হচ্ছে ডেল্টা। করোনার এই ধরনকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ‘সবল ও অতিদ্রুত সংক্রামক’ বলে বর্ণনা করেছেন তিনি।

মিউটেশনের মধ্য দিয়ে ভাইরাস অনবরতই রূপ বদলায় ও নতুন নতুন ধরনের উদ্ভব ঘটে। কখনো কখনো এই ধরনগুলো মূল ভাইরাসের চেয়েও বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়ায়।

ব্রিটেনের সংস্থা ‘পাবলিক হেল্থ ইংল্যান্ড’ সম্প্রতি জানিয়েছে, ব্রিটেনে ডেল্টা ভেরিয়েন্টে আক্রান্ত ৩ হাজার ৬৯২ জন করোনারোগীর মধ্যে ৫৮.৩ শতাংশকে টিকা দেয়া হয়নি। তবে ২২.৮ শতাংশের টিকার দুই ডোজ সম্পূর্ণ হয়েছে।

 শীর্ষ ১০ কোভিড বিশেষজ্ঞ সাক্ষাৎকারে বলেছেন, করোনাভাইরাসের যেকোনো ধরনে গুরুতর অসুস্থতা ও হাসপাতালে যাওয়া থেকে সুরক্ষার ক্ষেত্রে টিকা অনেকখানি কাজে দেয় এবং এখনো টিকা না নেয়া মানুষেরা ভাইরাস আক্রান্ত হওয়ার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছেন।

সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে, টিকা নেয়ার পরও ডেল্টা ধরনে আক্রান্ত হওয়া ও হাসপাতালে যাওয়া মানুষের সংখ্যা কম নয়।

সিঙ্গাপুরেও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের দাপট সবচেয়ে বেশি এবং সরকারি তথ্য বলছে, আক্রান্তদের তিন-চতুর্থাংশই টিকা নিয়েছেন। যদিও তাদের কেউই গুরুতর অসুস্থ হননি।

ইসরায়েলের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে সে দেশে করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন এমন ৬০ শতাংশরই টিকা নেয়া আছে। যুক্তরাষ্ট্রের করোনা আক্রান্তদের ৮৩ শতাংশই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের শিকার। দেশটির শীর্ষ সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অ্যান্থনি ফাউচি জানিয়েছেন, টিকাকরণের হার কম এমন এলাকাগুলোতে ডেল্টার সংক্রমণ বেশি।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের চিকিৎসা উপদেষ্টা ফাউচির বক্তব্য, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ভ্যাকসিন না নেয়া মানুষদের মধ্যে করোনা মহামারির আকার নিচ্ছে।’ ফ্লোরিডা, টেক্সাস, মিসৌরির মতো অঙ্গরাজ্যগুলোতে টিকাকরণের হার কম বলে সংক্রমণ ঊর্ধ্বগামী। সার্জেন জেনারেল বিবেক মূর্তি সম্প্রতি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় মৃতদের ৯৯.৫ শতাংশের টিকা নেয়া ছিল না।

সান ডিয়াগোর ‘লা জোলা ইন্সটিটিউট ফর ইমিউনোলেজি’র এক ভাইরাস বিশেষজ্ঞের মতে, ডেল্টা ধরন যুক্তরাজ্যে প্রথম শনাক্ত আলফা ধরনের চেয়েও ৫০ শতাংশ বেশি সংক্রামক।

ইসরায়েলেও গত কয়েক মাস ধরে সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ডেল্টা স্ট্রেন। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, কোভিডে সর্বাপেক্ষা কার্যকর ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা বর্তমানে সে দেশে সংক্রমণ রুখতে মাত্র ৪১ শতাংশ কার্যকর হচ্ছে।

ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব পাবলিক হেলথের পরিচালক নাদাভ বলেন, ‘আমাদের সব সমস্যার জাদুকরী সমাধান হয়ে যাবে বলে ভ্রান্তি সব সময়ই আছে। করোনাভাইরাস আমাদের শিক্ষা দিচ্ছে।’

চীনের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০১৯ সালে প্রথম চিহ্নিত হওয়া উহান স্ট্রেনের তুলনায় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট আক্রান্ত ব্যক্তির নাকে এক হাজার গুণ বেশি ভাইরাস থাকে।

মাইক্রোবায়োলজিস্ট শ্যারন পিকক বলেন, ডেল্টা আক্রান্তের ‘ভাইরাল লোড’ বেশি হওয়ায় সম্ভবত অন্যকে সংক্রামিত করার ক্ষমতা বেশি। তবে এই বিষয়টি নিয়ে এখনো গবেষণা চলছে।’