শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশি গরুতেই কোরবানি

স্টাফ রিপোর্টার ##

এবার দেশের খামারে উৎপাদিত গবাদি পশু দিয়ে কোরবানির প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে গবাদি পশুর উৎপাদন বাড়ায় কোরবানিতে চাহিদার সবটুকু পূরণ হবে দেশি গরু-ছাগল দিয়ে। এ কারণে গরু-ছাগল আমদানি পুরোপুরি নিরুৎসাহিত করে কোরবানির আগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে।

পৃথিবীর শীর্ষ মাংস উৎপাদনকারী দেশ ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার গরু রফতানির প্রস্তাবও এ কারণে নাকচ করে দিয়েছে সরকার। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকেও কয়েক বছর যাবত গরু আমদানি করা হচ্ছে না। উৎপাদন বৃদ্ধি ও দেশের খামার বিকশিত করার লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ভাল দাম পাওয়া, খামার মালিকদের প্রণোদনা প্রদান এবং সরকারি নীতিগত সহায়তা অব্যাহত থাকায় গবাদি পশুতে বর্তমানে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। কোরবানিতে ৪৫-৫০ লাখ গরু এবং ৭০-৭৫ লাখ ছাগল ও ভেড়ার চাহিদা রয়েছে। চাহিদার প্রায় সোয়া কোটি পশুর পুরোটাই অভ্যন্তরীণ উৎপাদন থেকে মেটানো হবে। দেড় মাস বাকি থাকতেই এবার কোরবানির গরু-ছাগল ও ভেড়া বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেন খামার মালিকরা। এবার কোরবানিতে গবাদি পশু সঙ্কটের কোন আশঙ্কা নেই বলে দাবি করেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

সূত্রমতে, করোনা পরিস্থিতির কারণে অর্থনীতির অন্যান্য খাত যখন চাপের মুখে ঠিক তার বিপরীত অবস্থা বিরাজ করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে। প্রতিবছর এ খাতে যুক্ত হচ্ছেন নতুন নতুন উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী। প্রতিনিয়ত বাড়ছে গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়ার খামারের সংখ্যা। চাকরির পেছনে না ঘুরে এখন শিক্ষিত বেকাররা খামার করে পশু লালন-পালনে এগিয়ে আসছেন। এ কারণেই গবাদি পশু উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সম্ভব হয়েছে। শুধু কোরবানি নয়, সারাবছরের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে মাংস রফতানি করারও উদ্যোগ নিচ্ছেন এ খাতের বিনিয়োগকারীরা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে হালাল মাংস আমদানির আগ্রহ দেখিয়েছে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ।

শুধু তাই নয়, পশু পালনের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা ও শক্তিশালী হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ খাতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। কয়েক বছর আগে মাংসের চাহিদা মেটাতে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বছরে ৫৫-৬০ হাজার কোটি টাকার গরু ও ফ্রোজেন মাংস আমদানি করা হতো। নিজস্ব উৎপাদন বাড়ায় এখন আর আমদানির তেমন প্রয়োজন হয় না। ফলে আমদানিতে ব্যয়কৃত অর্থের পুরো অংশ দেশেই থাকছে। প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল কৃষি খাতে সর্বোচ্চ ভর্তুকি ও প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। বিশেষ করে সরাসরি ফ্রোজেন মাংস ও গরু আমদানি পুরোপুরি নিরুৎসাহিত করে এর ওপর অতিরিক্ত শুল্কারোপ করা হয়েছে। এতে করে মাংস আমদানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। সরকারের নতুন এই নীতি সহায়তার কারণে দেশিয় খামার বৃদ্ধির পাশাপাশি পশুপালন বাড়বে বলে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত এক বৈঠকে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

করোনা পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে সরকার করোনা মোকাবেলায় ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে নগদ সহায়তা দেয়া হয়েছে খামার মালিকদের। এছাড়া ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার গরু ও মাংস রফতানির প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ গণমাধ্যমকে বলেন, আমদানি নয়, দেশিয় গরুতে এবার কোরবানি ঈদ পালিত হবে। কোরবানি সামনে রেখে পর্যাপ্ত গরু উৎপাদন ও প্রস্তুত রেখেছেন খামার মালিকরা। এ কারণে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের গরু রফতানির প্রস্তাব সম্প্রতি নাকচ করে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশ গবাদি পশু উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ কারণে আর আমদানির প্রয়োজন নেই। ভারত থেকেও আর গরু আনা হবে না। এতে করে দেশিয় গবাদি পশু খামার বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাবে। কোরবানি করার মতো পর্যাপ্ত গরু ও ছাগল দেশে আছে, এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতে কেনাবেচা হয় সেদিকটিতে বেশি নজর দেয়া হচ্ছে। শীঘ্রই কোরবানি গরু, কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ ও কেনাবেচা নিয়ে সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে একটি বৈঠক করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

ছোট বড় মিলিয়ে দেশে এখন সাড়ে ১২ লাখ খামারে গবাদি পশু লালন পালন করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। ভাল দাম পাওয়া এবং সরকারি নীতিগত সহায়তার কারণে প্রতিবছর প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ হারে গবাদি পশু পালনের জন্য খামার বাড়ছে। আর এক্ষেত্রে এগিয়ে আসছে শিক্ষিণ তরুণ বেকাররা। চাকরির পেছনে না ছুটে তারা এখন নিজেরাই কিছু করার চেষ্টা করছেন। এক্ষেত্রে সফল হওয়ার দৃষ্টান্তও উল্লেখযোগ্য। আগে পাবনা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, নাটোর এবং সীমান্ত জেলাগুলোতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গবাদি পশু পালন করা হলেও এখন সারাদেশে খামার গড়ে উঠেছে। গ্রামাঞ্চলের বাড়িগুলোতে ছোট ছোট খামার গড়ে তুলছেন সাধারণ মানুষ। এসব খামারে গরু, মহিষ ও ছাগল লালন-পালন করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স এ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি শাহ ইমরান গণমাধ্যমকে বলেন, গবাদি পশু উৎপাদনে দেশে বিপ্লব ঘটে গেছে। এ কারণে আর আমদানির প্রয়োজন নেই। দেশিয় খামারে গবাদি পশু উৎপাদন করা হলেও এগুলো উন্নত বিদেশি জাতের। বকনা বাছুর প্রজননের জন্য বিদেশি উন্নত জাতের ষাঁড়ের সিমেন ব্যবহার করা হচ্ছে। এ কারণে দেশিয়ভাবে লালন পালন করা হলেও মূলত এগুলো বাইরের জাত।

চাহিদার তুলনায় বেশি পশু রয়েছে, এবার কোরবানির চাহিদার তুলনায় দেশে গরু ও ছাগল বেশি উৎপাদন হয়েছে বলে দাবি করেছেন খামার মালিকরা। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছর ১ কোটি ২০ লাখ গবাদি পশুর কোরবানি হলেও এবার বেশি হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স এ্যাসোসিয়েশন। সংস্থাটির তথ্যমতে, দেশে এবার কোরবানিযোগ্য গবাদি পশু রয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ। এর মধ্যে কোরবানিযোগ্য গরু রয়েছে ৫৫ লাখ এবং ছাগল ভেড়া ও মহিষ রয়েছে ৯৫ লাখ। যদিও করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছর ১ কোটি ২০ লাখ গবাদি পশু কোরবানি করা হয়েছিল। এবার পরিস্থিতির উন্নতি হলে কোরবানির পরিমাণ কিছুটা বাড়তে পারে। তবে হাটে গরুর কোন সঙ্কট হবে না বলে জানিয়েছেন খামার মালিকরা। ফরিদপুরের নগরকান্দায় গরু ও ছাগলের খামার গড়ে তুলেছেন জুলেখা বেগম। তিনি জানান, কোরবানি সামনে রেখে গরু-ছাগল লালন পালন করা হচ্ছে। খামার বাড়াতে হলে গবাদিপশুর ভাল দাম নিশ্চিত করার পাশাপাশি সরকারি নীতিগত সহায়তা ও প্রণোদনা বাড়ানো প্রয়োজন। উদ্যোক্তাদের মতে, সারাদেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন এবং গ্রাম পর্যায়ে খামার গড়ে তোলা হচ্ছে।

ক্রেতাদের সুবিধার্থে এবার অনলাইনেও বিপুল পরিমাণ গরু কেনাবেচা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অনলাইনে গরু কেনাবেচায় প্রতারণা ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান ও অতিরিক্ত সচিব মোঃ হাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, অন্য পণ্যসামগ্রীর মতো কোরবানির সময় অনলাইনে গরু, ছাগল ও অন্যান্য পশু বেচাকেনা হয়ে থাকে। তবে কোরবানির পশু কিনে কেউ যাতে প্রতারিত না হন সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখবে সরকার। অনলাইনে প্রদর্শিত গরু বিক্রি, নির্দিষ্ট সময়ে সরবরাহ এবং নির্ধারিত দামের বাইরে প্রতারণা করে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার সুযোগ নেয়া হলে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

ইসরায়েল ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আক্রমণ’ও চালায়,তার জবাব হবে কঠোর-ইরানের প্রেসিডেন্ট

দেশি গরুতেই কোরবানি

প্রকাশের সময় : ০২:২১:২৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৩ জুন ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার ##

এবার দেশের খামারে উৎপাদিত গবাদি পশু দিয়ে কোরবানির প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে গবাদি পশুর উৎপাদন বাড়ায় কোরবানিতে চাহিদার সবটুকু পূরণ হবে দেশি গরু-ছাগল দিয়ে। এ কারণে গরু-ছাগল আমদানি পুরোপুরি নিরুৎসাহিত করে কোরবানির আগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে।

পৃথিবীর শীর্ষ মাংস উৎপাদনকারী দেশ ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার গরু রফতানির প্রস্তাবও এ কারণে নাকচ করে দিয়েছে সরকার। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকেও কয়েক বছর যাবত গরু আমদানি করা হচ্ছে না। উৎপাদন বৃদ্ধি ও দেশের খামার বিকশিত করার লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ভাল দাম পাওয়া, খামার মালিকদের প্রণোদনা প্রদান এবং সরকারি নীতিগত সহায়তা অব্যাহত থাকায় গবাদি পশুতে বর্তমানে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। কোরবানিতে ৪৫-৫০ লাখ গরু এবং ৭০-৭৫ লাখ ছাগল ও ভেড়ার চাহিদা রয়েছে। চাহিদার প্রায় সোয়া কোটি পশুর পুরোটাই অভ্যন্তরীণ উৎপাদন থেকে মেটানো হবে। দেড় মাস বাকি থাকতেই এবার কোরবানির গরু-ছাগল ও ভেড়া বিক্রির প্রস্তুতি নিচ্ছেন খামার মালিকরা। এবার কোরবানিতে গবাদি পশু সঙ্কটের কোন আশঙ্কা নেই বলে দাবি করেছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ।

সূত্রমতে, করোনা পরিস্থিতির কারণে অর্থনীতির অন্যান্য খাত যখন চাপের মুখে ঠিক তার বিপরীত অবস্থা বিরাজ করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে। প্রতিবছর এ খাতে যুক্ত হচ্ছেন নতুন নতুন উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারী। প্রতিনিয়ত বাড়ছে গরু, ছাগল, মহিষ ও ভেড়ার খামারের সংখ্যা। চাকরির পেছনে না ঘুরে এখন শিক্ষিত বেকাররা খামার করে পশু লালন-পালনে এগিয়ে আসছেন। এ কারণেই গবাদি পশু উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সম্ভব হয়েছে। শুধু কোরবানি নয়, সারাবছরের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে মাংস রফতানি করারও উদ্যোগ নিচ্ছেন এ খাতের বিনিয়োগকারীরা। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে হালাল মাংস আমদানির আগ্রহ দেখিয়েছে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ।

শুধু তাই নয়, পশু পালনের মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা ও শক্তিশালী হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ খাতে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে। কয়েক বছর আগে মাংসের চাহিদা মেটাতে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে বছরে ৫৫-৬০ হাজার কোটি টাকার গরু ও ফ্রোজেন মাংস আমদানি করা হতো। নিজস্ব উৎপাদন বাড়ায় এখন আর আমদানির তেমন প্রয়োজন হয় না। ফলে আমদানিতে ব্যয়কৃত অর্থের পুরো অংশ দেশেই থাকছে। প্রস্তাবিত ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল কৃষি খাতে সর্বোচ্চ ভর্তুকি ও প্রণোদনা ঘোষণা করেছেন। বিশেষ করে সরাসরি ফ্রোজেন মাংস ও গরু আমদানি পুরোপুরি নিরুৎসাহিত করে এর ওপর অতিরিক্ত শুল্কারোপ করা হয়েছে। এতে করে মাংস আমদানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। সরকারের নতুন এই নীতি সহায়তার কারণে দেশিয় খামার বৃদ্ধির পাশাপাশি পশুপালন বাড়বে বলে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত এক বৈঠকে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।

করোনা পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে সরকার করোনা মোকাবেলায় ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে নগদ সহায়তা দেয়া হয়েছে খামার মালিকদের। এছাড়া ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার গরু ও মাংস রফতানির প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ গণমাধ্যমকে বলেন, আমদানি নয়, দেশিয় গরুতে এবার কোরবানি ঈদ পালিত হবে। কোরবানি সামনে রেখে পর্যাপ্ত গরু উৎপাদন ও প্রস্তুত রেখেছেন খামার মালিকরা। এ কারণে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের গরু রফতানির প্রস্তাব সম্প্রতি নাকচ করে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশ গবাদি পশু উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ কারণে আর আমদানির প্রয়োজন নেই। ভারত থেকেও আর গরু আনা হবে না। এতে করে দেশিয় গবাদি পশু খামার বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাবে। কোরবানি করার মতো পর্যাপ্ত গরু ও ছাগল দেশে আছে, এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে এবার স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাতে কেনাবেচা হয় সেদিকটিতে বেশি নজর দেয়া হচ্ছে। শীঘ্রই কোরবানি গরু, কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ ও কেনাবেচা নিয়ে সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে একটি বৈঠক করার প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।

ছোট বড় মিলিয়ে দেশে এখন সাড়ে ১২ লাখ খামারে গবাদি পশু লালন পালন করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। ভাল দাম পাওয়া এবং সরকারি নীতিগত সহায়তার কারণে প্রতিবছর প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ হারে গবাদি পশু পালনের জন্য খামার বাড়ছে। আর এক্ষেত্রে এগিয়ে আসছে শিক্ষিণ তরুণ বেকাররা। চাকরির পেছনে না ছুটে তারা এখন নিজেরাই কিছু করার চেষ্টা করছেন। এক্ষেত্রে সফল হওয়ার দৃষ্টান্তও উল্লেখযোগ্য। আগে পাবনা, রাজশাহী, কুষ্টিয়া, নাটোর এবং সীমান্ত জেলাগুলোতে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গবাদি পশু পালন করা হলেও এখন সারাদেশে খামার গড়ে উঠেছে। গ্রামাঞ্চলের বাড়িগুলোতে ছোট ছোট খামার গড়ে তুলছেন সাধারণ মানুষ। এসব খামারে গরু, মহিষ ও ছাগল লালন-পালন করা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স এ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি শাহ ইমরান গণমাধ্যমকে বলেন, গবাদি পশু উৎপাদনে দেশে বিপ্লব ঘটে গেছে। এ কারণে আর আমদানির প্রয়োজন নেই। দেশিয় খামারে গবাদি পশু উৎপাদন করা হলেও এগুলো উন্নত বিদেশি জাতের। বকনা বাছুর প্রজননের জন্য বিদেশি উন্নত জাতের ষাঁড়ের সিমেন ব্যবহার করা হচ্ছে। এ কারণে দেশিয়ভাবে লালন পালন করা হলেও মূলত এগুলো বাইরের জাত।

চাহিদার তুলনায় বেশি পশু রয়েছে, এবার কোরবানির চাহিদার তুলনায় দেশে গরু ও ছাগল বেশি উৎপাদন হয়েছে বলে দাবি করেছেন খামার মালিকরা। করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছর ১ কোটি ২০ লাখ গবাদি পশুর কোরবানি হলেও এবার বেশি হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স এ্যাসোসিয়েশন। সংস্থাটির তথ্যমতে, দেশে এবার কোরবানিযোগ্য গবাদি পশু রয়েছে ১ কোটি ৫০ লাখ। এর মধ্যে কোরবানিযোগ্য গরু রয়েছে ৫৫ লাখ এবং ছাগল ভেড়া ও মহিষ রয়েছে ৯৫ লাখ। যদিও করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছর ১ কোটি ২০ লাখ গবাদি পশু কোরবানি করা হয়েছিল। এবার পরিস্থিতির উন্নতি হলে কোরবানির পরিমাণ কিছুটা বাড়তে পারে। তবে হাটে গরুর কোন সঙ্কট হবে না বলে জানিয়েছেন খামার মালিকরা। ফরিদপুরের নগরকান্দায় গরু ও ছাগলের খামার গড়ে তুলেছেন জুলেখা বেগম। তিনি জানান, কোরবানি সামনে রেখে গরু-ছাগল লালন পালন করা হচ্ছে। খামার বাড়াতে হলে গবাদিপশুর ভাল দাম নিশ্চিত করার পাশাপাশি সরকারি নীতিগত সহায়তা ও প্রণোদনা বাড়ানো প্রয়োজন। উদ্যোক্তাদের মতে, সারাদেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন এবং গ্রাম পর্যায়ে খামার গড়ে তোলা হচ্ছে।

ক্রেতাদের সুবিধার্থে এবার অনলাইনেও বিপুল পরিমাণ গরু কেনাবেচা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। অনলাইনে গরু কেনাবেচায় প্রতারণা ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে যাচ্ছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান ও অতিরিক্ত সচিব মোঃ হাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, অন্য পণ্যসামগ্রীর মতো কোরবানির সময় অনলাইনে গরু, ছাগল ও অন্যান্য পশু বেচাকেনা হয়ে থাকে। তবে কোরবানির পশু কিনে কেউ যাতে প্রতারিত না হন সে বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখবে সরকার। অনলাইনে প্রদর্শিত গরু বিক্রি, নির্দিষ্ট সময়ে সরবরাহ এবং নির্ধারিত দামের বাইরে প্রতারণা করে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার সুযোগ নেয়া হলে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।