শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দেশে সিনোফার্মের টিকা দেওয়া শুরু

ঢাকা ব্যুরো ##মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চীন সরকারের উপহার দেওয়া ১১ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শনিবার (১৯ জুন) সকালে রাজধানীসহ সারাদেশে দ্বিতীয় পর্যায়ের গণটিকাদান শুরু হয়েছে।ঢাকা জেলায় সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হচ্ছে চারটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেগুলো হচ্ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

সিনোফার্মের টিকা পেতে এ পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৭২ লাখ ৪৮ হাজার ৮২৯ জন। তাদের মধ্যে ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন। এই টিকার দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় আছেন প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। তাদের দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে সিনোফার্ম বা ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে কি না, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

এবার, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ সদস্যরা যারা আগে টিকা নেননি, তারা পাবেন। এ ছাড়া অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিদেশগামী বাংলাদেশি কর্মীসহ মেডিকেল, ডেন্টাল ও নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীরা এ টিকা পাবেন।

প্রথম ডোজের চার সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া যাবে। ইতোমধ্যে টিকাকেন্দ্রগুলোর ব্যবস্থাপনা আগের মতো প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দিয়েছে অধিদপ্তর। এ টিকা পর্যায়ক্রমে দেশের সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সরকারি জেনারেল হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল এবং ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের নির্দিষ্ট কেন্দ্র থেকে দেওয়া হবে।

গত ১৪ জুন সিনোফার্ম ও ফাইজারের টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চীনের উপহার হিসেবে দেওয়া সিনোফার্ম এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফাইজার টিকা দিয়েই আবারো প্রথম ডোজ শুরু হচ্ছে। হাতে যতটুকু টিকা পাওয়া গেছে তা দিয়ে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম আবার চালু হবে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনা আবার বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, এখন থেকেই সবাইকে আবার সচেতন হতে হবে। হাসপাতালে শয্যা কম। করোনা বাড়লে সেবাও ব্যাহত হবে। তাই প্রতিরোধের ওপর জোর দিতে হবে, নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

এদিকে চীনের সিনোফার্মের ৯১ হাজার ২০০ ডোজ চট্টগ্রামে পৌঁছেছে। শুক্রবার (১৮ জুন) সকাল ৭টায় সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি তার দপ্তরে টিকাগুলো গ্রহণ করেন। সিনোফার্মের এই টিকাগুলো একটি ফ্রিজার ভ্যানে করে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর টিকাগুলো সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ইপিআই কক্ষে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখা হয়।

সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘শনিবার থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ টিকাকেন্দ্রে টিকার প্রয়োগ শুরু হবে। মেডিকেল শিক্ষার্থীরা টিকা গ্রহণে অগ্রাধিকার পাবেন।’

এ ছাড়া সিলেটে পৌঁছেছে চীনের তৈরি সিনোফার্মের ৩৭ হাজার ২০০ ডোজ করোনা ভ্যাকসিন। শুক্রবার ভ্যাকসিনগুলো সিলেটে পৌঁছানোর পর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ইপিআই কোল্ডস্টোরে রাখা হয়।

সিলেট সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এদিন চীনের টিকার ৩৭ হাজার ভ্যাকসিন পৌঁছেছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, শনিবার সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের দিয়ে এ টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হবে। টিকা পেতে ভোটার আইডি কার্ড কিংবা কলেজের আইডি কার্ড নিয়ে আসতে হবে।

গত ১২ মে চীন সরকারের উপহারের প্রথম দফার ৫ লাখ ডোজ ঢাকায় আসে। দ্বিতীয় দফায় ১৩ জুন ৬ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশে আসে। এর আগে দুই দফায় চট্টগ্রামে প্রায় ৮ লাখ টিকা এসেছিল। আগে আসা টিকাগুলো ছিল অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা কোভিশিল্ড দিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে সারা দেশে গণটিকাদান শুরু হয়। ১০ ক্যাটাগরির ব্যক্তিদের চীনের সিনোফার্মের টিকা দেওয়ার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তারা হলেন-

১. টিকার জন্য নির্ধারিত কেন্দ্রে ইতোমধ্যে যারা ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো টিকা পাননি, তাদের এ টিকা দেওয়া হবে।

২. অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারী স্বাস্থ্যকর্মী।
৩. পুলিশ সদস্যরা যারা আগে টিকা নেননি।
৪. অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিদেশগামী বাংলাদেশি কর্মী, যাদের বিএমইটি নিবন্ধন কিংবা কার্ড আছে।
৫. সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থীরা, সরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি, সরকারি ম্যাটস ও সরকারি আইএইচটির শিক্ষার্থীরা।
৬. সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা।
৭. বিডার আওতাধীন ও অন্যান্য জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক সরকারি প্রকল্পে (পদ্মা সেতু প্রকল্প, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, এক্সপ্রেস হাইওয়ে প্রকল্প, রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র) সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
৮. ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।
৯. সারাদেশে কোভিড-১৯ মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত ওয়ার্ড/পৌরসভার কর্মীরা।
১০. বাংলাদেশে বসবাসরত চীনা নাগরিকরা পাবেন সিনোফার্মের এ টিকা।

দেশে সিনোফার্মের টিকা দেওয়া শুরু

প্রকাশের সময় : ০২:৪২:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৯ জুন ২০২১
ঢাকা ব্যুরো ##মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চীন সরকারের উপহার দেওয়া ১১ লাখ ডোজ সিনোফার্মের টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। শনিবার (১৯ জুন) সকালে রাজধানীসহ সারাদেশে দ্বিতীয় পর্যায়ের গণটিকাদান শুরু হয়েছে।ঢাকা জেলায় সিনোফার্মের টিকা দেওয়া হচ্ছে চারটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেগুলো হচ্ছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।

সিনোফার্মের টিকা পেতে এ পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৭২ লাখ ৪৮ হাজার ৮২৯ জন। তাদের মধ্যে ৫৮ লাখ ২০ হাজার ১৫ জন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছেন। এই টিকার দ্বিতীয় ডোজের অপেক্ষায় আছেন প্রায় ১৫ লাখ মানুষ। তাদের দ্বিতীয় ডোজ হিসেবে সিনোফার্ম বা ফাইজারের টিকা দেওয়া হবে কি না, তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

এবার, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ সদস্যরা যারা আগে টিকা নেননি, তারা পাবেন। এ ছাড়া অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিদেশগামী বাংলাদেশি কর্মীসহ মেডিকেল, ডেন্টাল ও নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থীরা এ টিকা পাবেন।

প্রথম ডোজের চার সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেওয়া যাবে। ইতোমধ্যে টিকাকেন্দ্রগুলোর ব্যবস্থাপনা আগের মতো প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দিয়েছে অধিদপ্তর। এ টিকা পর্যায়ক্রমে দেশের সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সরকারি জেনারেল হাসপাতাল, জেলা সদর হাসপাতাল এবং ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের নির্দিষ্ট কেন্দ্র থেকে দেওয়া হবে।

গত ১৪ জুন সিনোফার্ম ও ফাইজারের টিকা প্রয়োগ কার্যক্রম শুরু হবে জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চীনের উপহার হিসেবে দেওয়া সিনোফার্ম এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফাইজার টিকা দিয়েই আবারো প্রথম ডোজ শুরু হচ্ছে। হাতে যতটুকু টিকা পাওয়া গেছে তা দিয়ে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম আবার চালু হবে।

দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনা আবার বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেছিলেন, এখন থেকেই সবাইকে আবার সচেতন হতে হবে। হাসপাতালে শয্যা কম। করোনা বাড়লে সেবাও ব্যাহত হবে। তাই প্রতিরোধের ওপর জোর দিতে হবে, নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

এদিকে চীনের সিনোফার্মের ৯১ হাজার ২০০ ডোজ চট্টগ্রামে পৌঁছেছে। শুক্রবার (১৮ জুন) সকাল ৭টায় সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি তার দপ্তরে টিকাগুলো গ্রহণ করেন। সিনোফার্মের এই টিকাগুলো একটি ফ্রিজার ভ্যানে করে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর টিকাগুলো সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ইপিআই কক্ষে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় রাখা হয়।

সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘শনিবার থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ টিকাকেন্দ্রে টিকার প্রয়োগ শুরু হবে। মেডিকেল শিক্ষার্থীরা টিকা গ্রহণে অগ্রাধিকার পাবেন।’

এ ছাড়া সিলেটে পৌঁছেছে চীনের তৈরি সিনোফার্মের ৩৭ হাজার ২০০ ডোজ করোনা ভ্যাকসিন। শুক্রবার ভ্যাকসিনগুলো সিলেটে পৌঁছানোর পর সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ইপিআই কোল্ডস্টোরে রাখা হয়।

সিলেট সিভিল সার্জন ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, এদিন চীনের টিকার ৩৭ হাজার ভ্যাকসিন পৌঁছেছে।

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. জাহিদুল ইসলাম বলেন, শনিবার সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের দিয়ে এ টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হবে। টিকা পেতে ভোটার আইডি কার্ড কিংবা কলেজের আইডি কার্ড নিয়ে আসতে হবে।

গত ১২ মে চীন সরকারের উপহারের প্রথম দফার ৫ লাখ ডোজ ঢাকায় আসে। দ্বিতীয় দফায় ১৩ জুন ৬ লাখ ডোজ টিকা বাংলাদেশে আসে। এর আগে দুই দফায় চট্টগ্রামে প্রায় ৮ লাখ টিকা এসেছিল। আগে আসা টিকাগুলো ছিল অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি। ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত

অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি করোনাভাইরাসের টিকা কোভিশিল্ড দিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে সারা দেশে গণটিকাদান শুরু হয়। ১০ ক্যাটাগরির ব্যক্তিদের চীনের সিনোফার্মের টিকা দেওয়ার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। তারা হলেন-

১. টিকার জন্য নির্ধারিত কেন্দ্রে ইতোমধ্যে যারা ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছেন কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো টিকা পাননি, তাদের এ টিকা দেওয়া হবে।

২. অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারী স্বাস্থ্যকর্মী।
৩. পুলিশ সদস্যরা যারা আগে টিকা নেননি।
৪. অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিদেশগামী বাংলাদেশি কর্মী, যাদের বিএমইটি নিবন্ধন কিংবা কার্ড আছে।
৫. সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থীরা, সরকারি নার্সিং ও মিডওয়াইফারি, সরকারি ম্যাটস ও সরকারি আইএইচটির শিক্ষার্থীরা।
৬. সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের শিক্ষার্থীরা।
৭. বিডার আওতাধীন ও অন্যান্য জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নমূলক সরকারি প্রকল্পে (পদ্মা সেতু প্রকল্প, মাতারবাড়ি বিদ্যুৎ প্রকল্প, মেট্রোরেল প্রকল্প, এক্সপ্রেস হাইওয়ে প্রকল্প, রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র) সম্পৃক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
৮. ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকার পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা।
৯. সারাদেশে কোভিড-১৯ মৃতদেহ সৎকারে নিয়োজিত ওয়ার্ড/পৌরসভার কর্মীরা।
১০. বাংলাদেশে বসবাসরত চীনা নাগরিকরা পাবেন সিনোফার্মের এ টিকা।