মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নয় বছরের মেয়েকে শ্মশানঘাটে ধর্ষণ, পুড়িয়ে হত্যা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে মাত্র নয় বছরের একটি মেয়েকে শ্মশানঘাটে ধর্ষণ করার পর ধর্ষণকারীরাই জোর করে তার দেহ জ্বালিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নিহতের পরিবার ও এলাকার বাসিন্দারা এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলে ঘটনার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর দিল্লি পুলিশ অভিযুক্ত একজন পুরোহিত ও তার তিনজন সঙ্গীকে গ্রেফতার করেছে। দিল্লি সরকারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এই ঘটনার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা হবে।

তবে বিভিন্ন দলিত সংগঠন বলছে, ধর্ষিতা মেয়েটি যেহেতু দলিত বা নিম্নবর্ণীয় সমাজের তাই এই ঘৃণ্য অপরাধের বিরুদ্ধেও তেমন জোরালো প্রতিবাদ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

দক্ষিণ-পশ্চিম দিল্লিতে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার পাশ ঘেঁষেই রয়েছে একটি বাল্মিকী বস্তি, যে সম্প্রদায়ের লোকজন মূলত সাফাইকর্মী হিসেবেই জীবন ধারণ করেন।

মেয়েটির বাড়ির পাশে শ্মশান। সেখানে কুলার থেকে ঠান্ডা জল আনতে গিয়েছিল নয় বছরের মেয়েটি। শ্মশানেই তাকে ধরে ধর্ষণ ও হত্যা করে কয়েকজন দুষ্কৃতী। তারপর তড়িঘড়ি করে শ্মশানের পুরোহিত মেয়েটির দেহ পরিবারের বিনা অনুমতিতে চিতায় তুলে দেয়। তার বাড়ির মানুষ এসে যখন চিতার আগুন নেভান, তখন কেবল তার পা পুড়তে বাকি।

ওই মেয়েটির মা বলেন, ‘আমরা সেদিন গাঁয়ে গিয়েছিলাম – আর আমাদের মেয়েটা শ্মশানঘাটের ওয়াটার কুলার থেকে খাবার জল নিতে গিয়েছিল। শ্মশানের মন্দিরের পুরোহিত বা পন্ডিতজি আমাদের ফোন করে হঠাৎ খবর দেয়, কুলার থেকে জল নিতে গিয়ে আমাদের মেয়ে নাকি কারেন্ট খেয়ে মারা গেছে। সে রাতেই তাড়াহুড়ো করে ওর সৎকার করে দেয়া হয়। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস পন্ডিতজি আর ওর দলবল আমাদের মেয়েকে জীবন্ত পুড়িয়ে দিয়েছে।’

রাধেশ্যাম নামে মূল অভিযুক্ত ওই পুরোহিতকে গত সোমবার রাতেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে, সাথে আটক করা হয়েছে লক্ষ্মীনারায়ণ, কুলদীপ ও সালিম নামে তার তিনজন সঙ্গীকেও। তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে ধর্ষণ, হত্যা, ভয় দেখানো ও প্রমাণ লোপাট করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ।

পুরানা নাঙ্গাল নামে ওই এলাকায় অবশ্য এখনো পুলিশের বিরুদ্ধে অসন্তোষ তীব্র। অনেকেই বলছিলেন, চারজন অভিযুক্তকে পুলিশই জিপে করে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে এবং তারা গরিব ও বাল্মিকী বলেই বিচার পাচ্ছেন না। কেউ কেউ আবার জানাচ্ছেন, নিহত মেয়েটির মা-বাবাকে থানার ভেতরেই উল্টে মারধর করা হয়েছিল।

তারা আরো বলেন, ‘আর পুলিশের মদতেই ওই শ্মশানঘাটে বহুদিন ধরে চলছিল জুয়া, মদ্যপান ও নানা অসামাজিক কাজকর্মের আখড়া।’এই মুহুর্তে অভিযুক্তদের মৃত্যুদন্ড ছাড়া তারা যে কোনও শাস্তিতেই সন্তুষ্ট হবেন না বাল্মিকীরা সেটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন।

এদিকে  দলিত সংগঠনগুলো এই প্রশ্নও তুলছে যে, এরকম পাশবিক ঘটনাতেও দিল্লির প্রতিবাদ স্তিমিত কেন।

ভীম আর্মির নেতা হিমাংশু বাল্মিকী বলেন, ‘এদেশে একটা গরু মরলেও মিডিয়া থেকে আরএসএস হইচই শুরু করে দেয়, কিন্তু এখন তারা চুপ কেন? অভিযুক্তরা মুসলিম হলে বিজেপি এতক্ষণে কী করত ভাবুন তো? দশ মাইল দূরে পার্লামেন্টের অধিবেশন চলছে, কারও মুখে একটা আওয়াজ পর্যন্ত নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই মেয়েটি দলিত না-হলে সব বড় দলের নেতাদের তো এখানে এসে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করার হিড়িক পড়ে যেত! আমাদের বস্তিতে আসতে ওনাদের কী নাকে দুর্গন্ধ লাগে?’

প্রায় নয় বছর আগে দিল্লিতে নির্ভয়া কাণ্ডে নামে পরিচিত ধর্ষণ মামলায় মৃত মেয়েটি যে উচ্চবর্ণের ছিল এবং গোটা দিল্লি যে প্রায় সাথে সাথেই প্রতিবাদে মুখর হয়েছিল, দলিত নেতারা সেটাও আজ মনে করিয়ে দিচ্ছেন। সূত্র: বিবিসি

ওয়ানডে তিন ম্যাচের সিরিজে শেষখেলায় শ্রীলংকাকে ৪ উইকেটে হারাল বাংলাদেশ

নয় বছরের মেয়েকে শ্মশানঘাটে ধর্ষণ, পুড়িয়ে হত্যা

প্রকাশের সময় : ০৪:৩৭:১৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৪ অগাস্ট ২০২১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।।

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে মাত্র নয় বছরের একটি মেয়েকে শ্মশানঘাটে ধর্ষণ করার পর ধর্ষণকারীরাই জোর করে তার দেহ জ্বালিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

নিহতের পরিবার ও এলাকার বাসিন্দারা এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করলে ঘটনার প্রায় ২৪ ঘণ্টা পর দিল্লি পুলিশ অভিযুক্ত একজন পুরোহিত ও তার তিনজন সঙ্গীকে গ্রেফতার করেছে। দিল্লি সরকারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এই ঘটনার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা হবে।

তবে বিভিন্ন দলিত সংগঠন বলছে, ধর্ষিতা মেয়েটি যেহেতু দলিত বা নিম্নবর্ণীয় সমাজের তাই এই ঘৃণ্য অপরাধের বিরুদ্ধেও তেমন জোরালো প্রতিবাদ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

দক্ষিণ-পশ্চিম দিল্লিতে ক্যান্টনমেন্ট এলাকার পাশ ঘেঁষেই রয়েছে একটি বাল্মিকী বস্তি, যে সম্প্রদায়ের লোকজন মূলত সাফাইকর্মী হিসেবেই জীবন ধারণ করেন।

মেয়েটির বাড়ির পাশে শ্মশান। সেখানে কুলার থেকে ঠান্ডা জল আনতে গিয়েছিল নয় বছরের মেয়েটি। শ্মশানেই তাকে ধরে ধর্ষণ ও হত্যা করে কয়েকজন দুষ্কৃতী। তারপর তড়িঘড়ি করে শ্মশানের পুরোহিত মেয়েটির দেহ পরিবারের বিনা অনুমতিতে চিতায় তুলে দেয়। তার বাড়ির মানুষ এসে যখন চিতার আগুন নেভান, তখন কেবল তার পা পুড়তে বাকি।

ওই মেয়েটির মা বলেন, ‘আমরা সেদিন গাঁয়ে গিয়েছিলাম – আর আমাদের মেয়েটা শ্মশানঘাটের ওয়াটার কুলার থেকে খাবার জল নিতে গিয়েছিল। শ্মশানের মন্দিরের পুরোহিত বা পন্ডিতজি আমাদের ফোন করে হঠাৎ খবর দেয়, কুলার থেকে জল নিতে গিয়ে আমাদের মেয়ে নাকি কারেন্ট খেয়ে মারা গেছে। সে রাতেই তাড়াহুড়ো করে ওর সৎকার করে দেয়া হয়। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস পন্ডিতজি আর ওর দলবল আমাদের মেয়েকে জীবন্ত পুড়িয়ে দিয়েছে।’

রাধেশ্যাম নামে মূল অভিযুক্ত ওই পুরোহিতকে গত সোমবার রাতেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে, সাথে আটক করা হয়েছে লক্ষ্মীনারায়ণ, কুলদীপ ও সালিম নামে তার তিনজন সঙ্গীকেও। তাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে ধর্ষণ, হত্যা, ভয় দেখানো ও প্রমাণ লোপাট করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ।

পুরানা নাঙ্গাল নামে ওই এলাকায় অবশ্য এখনো পুলিশের বিরুদ্ধে অসন্তোষ তীব্র। অনেকেই বলছিলেন, চারজন অভিযুক্তকে পুলিশই জিপে করে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে এবং তারা গরিব ও বাল্মিকী বলেই বিচার পাচ্ছেন না। কেউ কেউ আবার জানাচ্ছেন, নিহত মেয়েটির মা-বাবাকে থানার ভেতরেই উল্টে মারধর করা হয়েছিল।

তারা আরো বলেন, ‘আর পুলিশের মদতেই ওই শ্মশানঘাটে বহুদিন ধরে চলছিল জুয়া, মদ্যপান ও নানা অসামাজিক কাজকর্মের আখড়া।’এই মুহুর্তে অভিযুক্তদের মৃত্যুদন্ড ছাড়া তারা যে কোনও শাস্তিতেই সন্তুষ্ট হবেন না বাল্মিকীরা সেটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন।

এদিকে  দলিত সংগঠনগুলো এই প্রশ্নও তুলছে যে, এরকম পাশবিক ঘটনাতেও দিল্লির প্রতিবাদ স্তিমিত কেন।

ভীম আর্মির নেতা হিমাংশু বাল্মিকী বলেন, ‘এদেশে একটা গরু মরলেও মিডিয়া থেকে আরএসএস হইচই শুরু করে দেয়, কিন্তু এখন তারা চুপ কেন? অভিযুক্তরা মুসলিম হলে বিজেপি এতক্ষণে কী করত ভাবুন তো? দশ মাইল দূরে পার্লামেন্টের অধিবেশন চলছে, কারও মুখে একটা আওয়াজ পর্যন্ত নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘এই মেয়েটি দলিত না-হলে সব বড় দলের নেতাদের তো এখানে এসে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করার হিড়িক পড়ে যেত! আমাদের বস্তিতে আসতে ওনাদের কী নাকে দুর্গন্ধ লাগে?’

প্রায় নয় বছর আগে দিল্লিতে নির্ভয়া কাণ্ডে নামে পরিচিত ধর্ষণ মামলায় মৃত মেয়েটি যে উচ্চবর্ণের ছিল এবং গোটা দিল্লি যে প্রায় সাথে সাথেই প্রতিবাদে মুখর হয়েছিল, দলিত নেতারা সেটাও আজ মনে করিয়ে দিচ্ছেন। সূত্র: বিবিসি