বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

নিউ ইয়র্কে ব্যবসায়ী শাহ নেওয়াজের অনৈতিক কর্মকান্ডে প্রবাসীরা হতবাক!  

বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক ।।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের হোম কেয়ার ব্যবসায়ী শাহ নেওয়াজের অনৈতিক কর্মকান্ডে হতবাক হয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তার দু’টি হোম কেয়ার ব্যবসায় প্রাপ্ত পে-চেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম (পিপিপি) ঋণের (মওকুফযোগ্য) তথ্য একজন অংশীদারের কাছে গোপন রেখে প্রতারণার আশ্রয় নেন। ঋণের সঠিক পরিমাণ ও হিসাব চাওয়ায় তিনি উক্ত অংশীদারকে হয়রানির উদ্দেশ্যে তাকে মারধর ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে পুলিশে নালিশ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে সাবেক অংশীদার ও নিউ ইয়র্কের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পরিচিত মুখ যন্ত্রশিল্পী (কিবোর্ড বাদক) পার্থ গুপ্তকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ স্টেশনে আটকে রাখার খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে হতবাক হয়ে পড়েন নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এ ঘটনায় নিউ ইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের বাংলাদেশ কমিউনিটিতে বইছে নিন্দার ঝড়। মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।
গত ১০ সেপ্টেম্বর রাত ১টা ২৯ মিনিটে নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের জ্যাকসন হাইটসের নর্দার্ন ব্লুভার্ড-১১৫ এলাকার পুলিশের কাছে গিয়ে শাহ নেওয়াজ (ওরফে শাহ মোহাম্মদ নেওয়াজ, ওরফে শাহ এম নেওয়াজ, ওরফে মোহাম্মদ এস নেওয়াজ) অভিযোগ করেন যে, তার ব্যবসার সাবেক অংশীদার পার্থ গুপ্ত তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে তার ফোনে লিখিত বার্তা পাঠিয়েছেন। দুই মাস আগে ২৯ আগষ্ট জ্যাকসন হাইটসের ৭৬-৩৭ স্ট্রিটের ওপর বাংলাদেশিদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত একটি পথমেলায় তার গোল্ডেন এজ হোম কেয়ারের সাবেক অংশীদার পার্থ গুপ্তসহ কয়েকজন মিলে সন্ধ্যা ৬টা/সাড়ে ৬টার দিকে তাকে মারধর করেন। এ সময় তার জীবন নাশের উদ্দেশ্যে তারা বিপজ্জনক যন্ত্র (পিস্তল, রিভলভার, রাইফেল, শর্টগান কিংবা মেশিনগান) প্রদর্শন করেন (ডকেট নম্বর-‘সিআর-০২০৫৬০-২১ কিউএন’)। এজন্য তার জীবনের নিরাপত্তার জন্য তিনি পুলিশের সাহায্য চান। তার অভিযোগের সূত্র ধরে গত ৪ অক্টোবর (সোমবার) সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের নর্দার্ন ব্লুভার্ড-১১৫ এলাকার পুলিশ কর্মকর্তা টেলর স্কালা পার্থকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ষ্টেশনে যাবার জন্য আহবান জানান। ফোন পেয়ে পার্থ স্বেচ্ছায় পুলিশ ষ্টেশনে গেলে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত পর্যন্ত তাকে সেখানে আটক রাখেন।
পরদিন ৫ অক্টোবর (মঙ্গলবার) ক্রিমিনাল কোর্টের বিজ্ঞ বিচারক পার্থের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। মামলার বাদী শাহনেওয়াজ কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখারও নির্দেশ দেন আদালত। অতি সাম্প্রতি তিনি আরও একজন সঙ্গীতশিল্পীকে একই পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে হয়রানীর চেষ্টা করেন। রাজীব নামের এ সঙ্গীতশিল্পী তার গোল্ডেন এজ হোম কেয়ারের একজন কর্মচারি ছিলেন। পার্থ গুপ্তের ‘মাটি ব্যান্ডে’র সঙ্গীতানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার কারণে করোনা মহামারিকালীন সময়ে চলতি বছরের ৭ জুলাই রাত ২টা ৪৯ মিনিটে টেক্সট ম্যাসেস পাঠিয়ে রাজীবকে চাকুরিচ্যুত করেন শাহ নেওয়াজ। দূরত্ব বজায় রাখার আদালতের নির্দেশ সংক্রান্ত কাগজের ভয় দেখিয়ে শাহ নেওয়াজ পার্থকে পুনঃরায় গ্রেপ্তার করানোর হুমকি দিচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।
শাহ নেওয়াজ ও পার্থ গুপ্তের হোম কেয়ার ব্যবসা সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের প্রকৃত ঘটনা অনুসন্ধান করে জানা যায়, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে করোনা মহামারি ভয়াবহ আকার ধারন করায় কেন্দ্রিয় (ফেডারেল) সরকার কর্তৃক ক্ষুদ্রসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে পে-চেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম (পিপিপি) ঋণ প্রদানের ঘোষনা দেন। তিনি তার দু’টি হোম কেয়ার (বেঙ্গল হোম কেয়ার ইঙ্ক ও গোল্ডেন এজ  হোম কেয়ার) ব্যবসায় ১৪০ জন কর্মাচারি দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রিয় সরকারের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ ২৪ হাজার ৭২৯ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ কোটি ৪৬ লাখ ১ হাজার ৯৬৫ টাকা) পে-চেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম (পিপিপি) ঋণ গ্রহণ করেন।
২০১৭ সালের শেষের দিকে বেঙ্গল হোম কেয়ার ইঙ্ক-এর পরিচালনা পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়। পরিচালনা পরিষদে পার্থ গুপ্তকে ডাইরেক্টর নির্বাচন করা হয়। এ সময় লভ্যাংশ নীতি নির্ধারনের মাধ্যমে শাহ নেওয়াজ ও অন্য আরেকজন অংশীদার প্র্যতেকে শতকরা ৪৫ শতাংশ এবং পার্থ গুপ্তকে শতকরা ১০ শতাংশ লভ্যাংশ বন্টনের কথা উল্লেখ করা হয়। পরিচালনা পরিষদ পুনর্গঠনের পর এ প্রতিষ্ঠানের শতকরা ৮০ শতাংশ রোগী সংগ্রহ করেন পার্থ গুপ্ত। তার মেধা ও দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রতিষ্ঠানটিকে অগ্রগামী ও জনপ্রিয় করে তোলেন, কিন্তু কাজের তুলনায় তার লভ্যাংশের পরিমাণ খুবই কম। পার্থ বুঝতে পারেন তিনি যে পরিমাণ পরিশ্রম করছেন সে তুলনায় তার অর্থ অর্জন হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছিলেন পার্থ। এমন সময় শাহ নেওয়াজের প্রতারণার ফাঁদে পড়েন পার্থ। ২০২০ সালের মার্চে মার্কিন ব্যবসায়ী ম্যারিয়েন হার্নেনের কাছ থেকে গোল্ডেন এজ হোম কেয়ার যৌথভাবে কেনার জন্য প্রথম কিস্তিতে পার্থের কাছ থেকে ২৫ হাজার ডলার এবং দ্বিতীয় কিস্তিতে আরো ৫১ হাজার ডলার নেন শাহ নেওয়াজ। মৌখিক চুক্তি মোতাবেক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ব্যাংক একাউন্টসহ অন্য কোন দাপ্তরিক কাজে পার্থের নাম সংযুক্ত করার কথা থাকলেও তা করেননি শাহ নেওয়াজ। এ নিয়ে বারবার প্রশ্ন তোলেন পার্থ। আজ হবে কাল হবে সময় কাটান শাহ নেওয়াজ। গোল্ডেন এজ হোম কেয়ার ইঙ্ক চালুর আগে এ প্রতিষ্ঠানে শাহ নেওয়াজ প্রেসিডেন্ট ও সিইও এবং পার্থ গুপ্তকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এক মাসের মাথায় পার্থের অগোচরে শাহ নেওয়াজ অত্যন্ত সুকৌশলে তার স্ত্রী আমেনা নেওয়াজ ওরফে রানো নেওয়াজকে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেন। এতে আপত্তি করেও পার্থ কোন ফল পায়নি। পার্থ গুপ্তকে ২৫ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দেবার কথা বলেন শাহ নেওয়াজ। কিন্তু সুকৌশলে স্ত্রীকে পরিচালনা পরিষদে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগ দিয়ে আমেনা নেওয়াজকে ২০ শতাংশ, পার্থ গুপ্তকে ২০ শতাংশ আর শাহ নেওয়াজ শতকরা ৬০ শতাংশ লভ্যাংশ নেবার সিদ্ধান্ত নেন। এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই শাহ নেওয়াজের প্রতারণার শিকার হয়েছেন পার্থ। ব্যবসা পুরোপুরি চালু হলেও শাহনেওয়াজ কোন হিসাব-নিকেশ দিতেন না পার্থকে। এ প্রতিষ্ঠানেও পার্থ শতকরা ৮০ শতাংশ রোগী সংগ্রহ করেন এবং ৭৬ হাজার ডলার বিনিয়োগ করেন। গোল্ডেন এজ হোম কেয়ারে শাওহ নেওয়াজ কী পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছেন তা জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে পার্থের অংশীদারিত্ব অর্থের পরিমাণই বেশি এবং লভ্যাংশ কম। এসব নানা বিষয় নিয়ে উভয়ের মাঝে দ্বন্দ্ব ও মনোমালিন্য দেখা দেয়। যোগাযোগ সীমিত হয়ে পড়ে এবং দীর্ঘদিন কোন কথাবার্তাও হয়নি বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
এদিকে, নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের নামে পে-চেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম (পিপিপি) ঋণ পেতে শুরু করেছে। খবর পেয়ে বেঙ্গল হোম কেয়ার ইঙ্ক ও গোল্ডেন এজ হোম কেয়ার ইঙ্ক পিপিপি ঋণ পেয়েছে কিনা শাহ নেওয়াজের কাছে জানতে চান পার্থ। জবাবে তিনি বলেন এখনও আবেদন করা হয় নাই। চলতি বছরের ১৯ মে গোল্ডেন এজ হোম কেয়ারের ৩১ জন কর্মচারির বিপরীতে ৮০ হাজার ৬৯০ ডলার এবং বেঙ্গল হোম কেয়ার ইঙ্কের ১০৯ জন কর্মচারি দেখিয়ে তাদের বিপরীতে ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৩৯ ডলার পিপিপি ঋণ বরাদ্দের অনুমোদন পান। ঋণ অনুমোদনের চিঠি পাবার পর হটাৎ করেই শাহ নেওয়াজ পার্থকে বলেন, অপর অংশীদারের সাথে ইচ্ছাকৃত ঝগড়ায় লিপ্ত হতে। তখনও পার্থ জানেন না তাদের প্রতিষ্ঠানের ঋণ অনুমোদনের কথা। অন্য অংশীদারের সাথে পার্থের ঝগড়া বাধিয়ে দিয়ে শাহ নেওয়াজ গোপনে তার সাথে যুক্তি করে বেঙ্গল হোম কেয়ারের পে-চেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম (পিপিপি) ঋণের অর্থ সিটি ব্যাংক থেকে তুলে দু’জনেই ভাগ করে নেন। বেঙ্গল হোম কেয়ারের এ অর্থের লভ্যাংশ থেকে পার্থ গুপ্তকে বঞ্চিত করার জন্য শাহ নেওয়াজ নতুন এ কৌশল অবলম্বন করেন বলে জানা গেছে। চলতি বছরের মে মাসে বেঙ্গল হোম কেয়ারের ঋণের অর্থ তাদের মধ্যে ভাগাভাগি হবার পর গত ৭ জুন বেঙ্গল হোম কেয়ার পূর্বের মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া সংক্রান্ত কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেন পার্থ ও শাহ নেওয়াজ।
নিউ ইয়র্কের যন্ত্রশিল্পী (কিবোর্ড বাদক) পার্থ গুপ্ত কর্তৃক হোম কেয়ার ব্যবসায়ী শাহ নেওয়াজকে মারধর ও হত্যা চেষ্টার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশার মানুষের সাথে কথ হয় এ প্রতিবেদকের। তারা কেউই এ ঘটনাটিকে সহজভাবে মেনে নিতে পারছেন না। শাহ নেওয়াজের এ অভিযোগকে তারা মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে উল্লেখ করেন।
গত ২৯ আগষ্ট জ্যাকসন হাইটসের ৭৬-৩৭ স্ট্রিটের পথমেলার আয়োজক ও ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটস ডেভেলপমেন্ট ইউএসএ প্রেসিডেন্ট শাহ্ শহীদুল হক (সাঈদ) বলেন, এ ঘটনাটি একটি ন্যাক্কারজনক। শাহ নেওয়াজ নিজেকে একজন কমিউনিটির নেতার পরিচয় দিয়ে এজকন নিরীহ মানুষের নামে এ ধরনের একটি মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তিনি নিজেকেই ছোট করেছেন। তিনি বলেন, পুলিশের কাছে শাহ নেওয়াজ যে অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণই মিথ্যা, কারণ তিনি ওই পথমেলার আয়োজক ছিলেন। সেখানে সার্বক্ষনিক পুলিশি প্রহরার ব্যবস্থা ছিলো। পার্থ দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মঞ্চে কীবোর্ড বাজিয়েছেন। তিনিও সেখানে সার্বক্ষনিক উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে এমন একটি অপ্রীতিকর (মারধর ও বন্দুক প্রদর্শন) ঘটনা ঘটলে প্রথমেই জানতো পুলিশ এবং আয়োজকবৃন্দ। শাহ নেওয়াজ কারও কাছেই কোন অভিযোগ করেননি। এমনকি তিনি স্বেচ্ছায় পুলিশকেও ফোন করেননি। এতেই প্রমানিত হয় যে, ঘটনাটি মিথ্যা ও সাজানো।
পথমেলার শব্দ নিয়ন্ত্রক ও কন্ঠশিল্পী তানভীর শাহীন বলেন, তিনি সারাদিন উক্ত মেলায় ছিলেন, এমন কোন ঘটনার কথা শোনেননি তিনি। শাহ নেওয়াজ যেভাবে তার ব্যবসার অংশীদার পার্থকে ঘায়েল করতে মিথ্যা অভিযোগ সাজিয়েছেন সেটা প্রমাণ করতে না পারলে উল্টো তারই বিপদ হবে বলে মনে করেন শাহীন। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী কন্ঠযোদ্ধা শহীদ হাসান বলেন, তিনি পার্থ গুপ্তের আটকের কথা বিভিন্ন পত্রিকার খবর এবং লোক মুখে শুনেছেন। এমন একটি ঘটনায় পার্থ জড়িত তিনি তা বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করছেন না, কারন তিনি দীর্ঘদিন ধরে পার্থকে চেনেন। কাউকে মারধর ও বন্দুক দেখানো এ ধরেনের কাজ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তারা দু’জনের একই বিল্ডিং-এ থাকেন কিন্তু পার্থ আজ পর্যন্ত কাউকে গালি দিয়েছে বা কারো সাথে বেয়াদবি করেছে এ রকম কোন ঘটনার কথাও তিনি শোনেননি। শাহ নেওয়াজ যেভাবে অভিযোগ সাজিয়েছেন তা প্রমাণে ব্যর্থ হলে তার পরিণতি হবে ভায়াবহ।
কমিউনিটি এক্টিভিষ্ট ও ব্যবসায়ী ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার বলেন, যেহেতু পার্থ গুপ্ত ও শাহ নেওয়াজের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব রয়েছে। এ সমস্যা নিজেরাই মিটিয়ে নিতে পারতেন। এমন একটি অভিযোগ নিয়ে পুলিশ আদালত পর্যন্ত যাওয়া মোটেই ঠিক হয়নি। এখনো সময় আছে সমঝোতা করে তাদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব মেটানোর, তা নাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকেই যাবে বলে মনে করেন তিনি।
নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বিশিষ্ট চিকিৎসক খন্দকার মাসুদ রহমান বলেন, শাহ নেওয়াজের বাড়ি খুলনায়। তিনিও একই এলাকার মানুষ কিন্তু তাকে সেভাবে তিনি চেনেন না। নিউ ইয়র্কেই তার সাথে পরিচয়। মাঝে মাঝে দেখা হলে কথা হয়। দেশে খুলনায় তাকে কখনো দেখেননি। কোথায় লেখাপড়া করেছেন তাও তিনি জানেন না। তিনি বলেন আমাদের পারিবারিক ব্যক্তিত্ব ও অবস্থার ধারের কাছে আসার যোগ্যতা তার নেই। এ কারনেই তার সাথে কখনো সখ্যতা গড়ে ওঠেনি। তবে পার্থ গুপ্ত ও শাহ নেওয়াজের মধ্যে যে ঘটনা ঘটেছে তা সামাজের মানুষের কাছে মোটেও কাম্য নয়। এ ধরনের আর কোন ঘটনা যে না ঘটে এ প্রত্যাশা করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিউ ইয়র্কের একজন পরিচিত ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি এক্টিভিষ্ট বলেন, শাহ নেওয়াজ জ্যাকসন হাইটসের নর্দার্ন ব্লুভার্ড-১১৫ এলাকার পুলিশের চিফ কমান্ডিং অফিসার আল তাহেরিকে ভূল ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রভাবিত করে পার্থের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। শাহ নেওয়াজ পুলিশের কাছে বলেন তিনি জ্যাকসন হাইটসে একটি প্লাজার মালিক। তিনি কমিউনিটির একজন বড় নেতা। মার্কিন রাজনীতিবিদ ও সিটি কর্তৃপক্ষের সাথে তার বন্ধুত্ব ও ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। এ ধরনের পরিচয় দিয়ে ইনিয়ে বিনিয় একটি গল্প বানিয়েছেন। ঘটনা জানার পর ফাহাদ নিজেই পুলিশ কর্মকর্তা আল তাহেরির সাথে কথা বলেছেন। তিনি প্রশ্ন করে বলেন সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখ পার্থ গুপ্ত শাহ নেওয়াজকে ফোন থেকে লিখিত বার্তা পাঠিয়ে জীবন নাশের হুমকি দিলে শাহ নেওয়াজ জামাইকা পুলিশের কাছে না গিয়ে নর্দার্ন ব্লুভার্ড-১১৫ এলাকার পুলিশের কাছে কেন গেলেন? তার বাসা তো জামাইকায়। নিজের অপরাধ ঢাকতে গিয়ে নিজেই মহাবিপদের সম্মুখিন হতে যাচ্ছেন শাহ নেওয়াজ। অচিরেই প্রবাসী বাংলাদেশিরা তা দেখতে পাবেন।
নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পত্রিকার বেশ কয়েকজন সম্পাদক ও সাংবাদিকের কাছে পার্থ গুপ্ত ও শাহ নেওয়াজের মধ্যে সৃষ্ট ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রায় প্রতিটি বাংলাদেশি হোম কেয়ার ব্যবসায়ীদের মধ্যেই পে-চেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম (পিপিপি) ঋণ সংক্রান্ত প্রতারণা রয়েছে। এ ধরনের অপরাধকে ধামাচাপা দিতে শাহ নেওয়াজ পুলিশের তার সাবেক অংশীদারের বিরুদ্ধে যে ন্যাক্কার জনক অভিযোগ করেছে তা নিন্দনীয়। নিউ ইয়র্কের সাংবাদিক ও সম্পাদকদের ঘটনার গভীরে গিয়ে সত্য প্রকাশ করার সাহস নেই। কারণ বছর বছর ধরে শাহ নেওয়াজ তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিয়ে পত্রিকাগুলোর মুখ বন্ধ করে রেখেছে। এ ঘটনার বিস্তারিত খবর তারা প্রথম বাংলা প্রেস অনলাইনে দেখেছেন। এ ধরনের সাহসী সংবাদ প্রকাশ করার জন্য তারা বাংলা প্রেস’কে ধন্যবাদও জানান।
পার্থ গুপ্তের আইনিজীবি ক্যারী লন্ডন জানান, বিভিন্ন সময়ে পুলিশের কাছে এ ধরনের অভিযোগ অনেকেই দায়ের করেন, কিন্তু আদালতে গিয়ে বাদী তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন। এ মামলাটিও একই ধরনের বলে মনে করছেন তিনি। ক্যারী বলেন, আগামী ২০২২ সালের জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে আদালতে মামলাটির দিন ধার্য রয়েছে। ঐ দিনেই মামলা নিষ্পত্তি হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি। এরপর পার্থ গুপ্ত চাইলে বাদী শাহ নেওয়াজের বিরুদ্ধে পাল্টা সম্মানহানির মামলা করতে পারবেন বলে উল্লেখ করেন আইনিজীবি ক্যারী লন্ডন।
বাংলা প্রেস-এ প্রথম সংবাদ প্রকাশের আগেই বেঙ্গল হোম কেয়ার ও গোল্ডেন এজ হোম কেয়ারের প্রেসিডেন্ট ও সিইও শাহ নেওয়াজের সাথে ফেসবুক বার্তাবহের মাধ্যমে প্রশ্ন করা হয়- বেঙ্গল এন্ড গোল্ডেন হোম কেয়ারের পিপিপি লোনের অর্থের হিসাব চাওয়ায় আপনি একজন অংশীদারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন? সংবাদ সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে আপনার সুনির্দিষ্ট মতামত প্রয়োজন। আশা করি বিস্তারিত তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন। ধন্যবাদ-বাংলা প্রেস। তিনি এ প্রশ্নের কোন উত্তর দেননি। কয়েকদিন পর ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে অজ্ঞাতনামা পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ পাঠিয়ে তা প্রকাশ করার তাগিদ দেন। প্রতিবাদ প্রকাশ না করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন বা মামলা করারও হুমকি দেন শাহ নেওয়াজ।
 বার্তাকণ্ঠ/এন


কমান্ডার মোসলেম উদ্দীন ছিলেন মুক্ত চিন্তার মানুষ, স্মরণ সভায় বক্তারা… 

নিউ ইয়র্কে ব্যবসায়ী শাহ নেওয়াজের অনৈতিক কর্মকান্ডে প্রবাসীরা হতবাক!  

প্রকাশের সময় : ০১:২৯:৫৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২১ অক্টোবর ২০২১
বাংলা প্রেস, নিউ ইয়র্ক ।।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের হোম কেয়ার ব্যবসায়ী শাহ নেওয়াজের অনৈতিক কর্মকান্ডে হতবাক হয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। তার দু’টি হোম কেয়ার ব্যবসায় প্রাপ্ত পে-চেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম (পিপিপি) ঋণের (মওকুফযোগ্য) তথ্য একজন অংশীদারের কাছে গোপন রেখে প্রতারণার আশ্রয় নেন। ঋণের সঠিক পরিমাণ ও হিসাব চাওয়ায় তিনি উক্ত অংশীদারকে হয়রানির উদ্দেশ্যে তাকে মারধর ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগ এনে পুলিশে নালিশ করেন। অভিযোগের ভিত্তিতে সাবেক অংশীদার ও নিউ ইয়র্কের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পরিচিত মুখ যন্ত্রশিল্পী (কিবোর্ড বাদক) পার্থ গুপ্তকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ স্টেশনে আটকে রাখার খবর সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে হতবাক হয়ে পড়েন নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশিরা। এ ঘটনায় নিউ ইয়র্কসহ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের বাংলাদেশ কমিউনিটিতে বইছে নিন্দার ঝড়। মার্কিন সংবাদমাধ্যম বাংলা প্রেস এ খবর জানিয়েছে।
গত ১০ সেপ্টেম্বর রাত ১টা ২৯ মিনিটে নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের জ্যাকসন হাইটসের নর্দার্ন ব্লুভার্ড-১১৫ এলাকার পুলিশের কাছে গিয়ে শাহ নেওয়াজ (ওরফে শাহ মোহাম্মদ নেওয়াজ, ওরফে শাহ এম নেওয়াজ, ওরফে মোহাম্মদ এস নেওয়াজ) অভিযোগ করেন যে, তার ব্যবসার সাবেক অংশীদার পার্থ গুপ্ত তাকে হত্যার হুমকি দিয়ে তার ফোনে লিখিত বার্তা পাঠিয়েছেন। দুই মাস আগে ২৯ আগষ্ট জ্যাকসন হাইটসের ৭৬-৩৭ স্ট্রিটের ওপর বাংলাদেশিদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত একটি পথমেলায় তার গোল্ডেন এজ হোম কেয়ারের সাবেক অংশীদার পার্থ গুপ্তসহ কয়েকজন মিলে সন্ধ্যা ৬টা/সাড়ে ৬টার দিকে তাকে মারধর করেন। এ সময় তার জীবন নাশের উদ্দেশ্যে তারা বিপজ্জনক যন্ত্র (পিস্তল, রিভলভার, রাইফেল, শর্টগান কিংবা মেশিনগান) প্রদর্শন করেন (ডকেট নম্বর-‘সিআর-০২০৫৬০-২১ কিউএন’)। এজন্য তার জীবনের নিরাপত্তার জন্য তিনি পুলিশের সাহায্য চান। তার অভিযোগের সূত্র ধরে গত ৪ অক্টোবর (সোমবার) সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের নর্দার্ন ব্লুভার্ড-১১৫ এলাকার পুলিশ কর্মকর্তা টেলর স্কালা পার্থকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ষ্টেশনে যাবার জন্য আহবান জানান। ফোন পেয়ে পার্থ স্বেচ্ছায় পুলিশ ষ্টেশনে গেলে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে রাত পর্যন্ত তাকে সেখানে আটক রাখেন।
পরদিন ৫ অক্টোবর (মঙ্গলবার) ক্রিমিনাল কোর্টের বিজ্ঞ বিচারক পার্থের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। মামলার বাদী শাহনেওয়াজ কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখারও নির্দেশ দেন আদালত। অতি সাম্প্রতি তিনি আরও একজন সঙ্গীতশিল্পীকে একই পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে হয়রানীর চেষ্টা করেন। রাজীব নামের এ সঙ্গীতশিল্পী তার গোল্ডেন এজ হোম কেয়ারের একজন কর্মচারি ছিলেন। পার্থ গুপ্তের ‘মাটি ব্যান্ডে’র সঙ্গীতানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার কারণে করোনা মহামারিকালীন সময়ে চলতি বছরের ৭ জুলাই রাত ২টা ৪৯ মিনিটে টেক্সট ম্যাসেস পাঠিয়ে রাজীবকে চাকুরিচ্যুত করেন শাহ নেওয়াজ। দূরত্ব বজায় রাখার আদালতের নির্দেশ সংক্রান্ত কাগজের ভয় দেখিয়ে শাহ নেওয়াজ পার্থকে পুনঃরায় গ্রেপ্তার করানোর হুমকি দিচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে খবর পাওয়া গেছে।
শাহ নেওয়াজ ও পার্থ গুপ্তের হোম কেয়ার ব্যবসা সংক্রান্ত দ্বন্দ্বের প্রকৃত ঘটনা অনুসন্ধান করে জানা যায়, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে করোনা মহামারি ভয়াবহ আকার ধারন করায় কেন্দ্রিয় (ফেডারেল) সরকার কর্তৃক ক্ষুদ্রসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে পে-চেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম (পিপিপি) ঋণ প্রদানের ঘোষনা দেন। তিনি তার দু’টি হোম কেয়ার (বেঙ্গল হোম কেয়ার ইঙ্ক ও গোল্ডেন এজ  হোম কেয়ার) ব্যবসায় ১৪০ জন কর্মাচারি দেখিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রিয় সরকারের কাছ থেকে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ ২৪ হাজার ৭২৯ ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ কোটি ৪৬ লাখ ১ হাজার ৯৬৫ টাকা) পে-চেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম (পিপিপি) ঋণ গ্রহণ করেন।
২০১৭ সালের শেষের দিকে বেঙ্গল হোম কেয়ার ইঙ্ক-এর পরিচালনা পরিষদ পুনর্গঠন করা হয়। পরিচালনা পরিষদে পার্থ গুপ্তকে ডাইরেক্টর নির্বাচন করা হয়। এ সময় লভ্যাংশ নীতি নির্ধারনের মাধ্যমে শাহ নেওয়াজ ও অন্য আরেকজন অংশীদার প্র্যতেকে শতকরা ৪৫ শতাংশ এবং পার্থ গুপ্তকে শতকরা ১০ শতাংশ লভ্যাংশ বন্টনের কথা উল্লেখ করা হয়। পরিচালনা পরিষদ পুনর্গঠনের পর এ প্রতিষ্ঠানের শতকরা ৮০ শতাংশ রোগী সংগ্রহ করেন পার্থ গুপ্ত। তার মেধা ও দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে প্রতিষ্ঠানটিকে অগ্রগামী ও জনপ্রিয় করে তোলেন, কিন্তু কাজের তুলনায় তার লভ্যাংশের পরিমাণ খুবই কম। পার্থ বুঝতে পারেন তিনি যে পরিমাণ পরিশ্রম করছেন সে তুলনায় তার অর্থ অর্জন হচ্ছে না। প্রতিষ্ঠান ছেড়ে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছিলেন পার্থ। এমন সময় শাহ নেওয়াজের প্রতারণার ফাঁদে পড়েন পার্থ। ২০২০ সালের মার্চে মার্কিন ব্যবসায়ী ম্যারিয়েন হার্নেনের কাছ থেকে গোল্ডেন এজ হোম কেয়ার যৌথভাবে কেনার জন্য প্রথম কিস্তিতে পার্থের কাছ থেকে ২৫ হাজার ডলার এবং দ্বিতীয় কিস্তিতে আরো ৫১ হাজার ডলার নেন শাহ নেওয়াজ। মৌখিক চুক্তি মোতাবেক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ব্যাংক একাউন্টসহ অন্য কোন দাপ্তরিক কাজে পার্থের নাম সংযুক্ত করার কথা থাকলেও তা করেননি শাহ নেওয়াজ। এ নিয়ে বারবার প্রশ্ন তোলেন পার্থ। আজ হবে কাল হবে সময় কাটান শাহ নেওয়াজ। গোল্ডেন এজ হোম কেয়ার ইঙ্ক চালুর আগে এ প্রতিষ্ঠানে শাহ নেওয়াজ প্রেসিডেন্ট ও সিইও এবং পার্থ গুপ্তকে ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে রাখার সিদ্ধান্ত হয়। এক মাসের মাথায় পার্থের অগোচরে শাহ নেওয়াজ অত্যন্ত সুকৌশলে তার স্ত্রী আমেনা নেওয়াজ ওরফে রানো নেওয়াজকে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দেন। এতে আপত্তি করেও পার্থ কোন ফল পায়নি। পার্থ গুপ্তকে ২৫ শতাংশ হারে লভ্যাংশ দেবার কথা বলেন শাহ নেওয়াজ। কিন্তু সুকৌশলে স্ত্রীকে পরিচালনা পরিষদে সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে নিয়োগ দিয়ে আমেনা নেওয়াজকে ২০ শতাংশ, পার্থ গুপ্তকে ২০ শতাংশ আর শাহ নেওয়াজ শতকরা ৬০ শতাংশ লভ্যাংশ নেবার সিদ্ধান্ত নেন। এভাবে প্রতিটি ক্ষেত্রেই শাহ নেওয়াজের প্রতারণার শিকার হয়েছেন পার্থ। ব্যবসা পুরোপুরি চালু হলেও শাহনেওয়াজ কোন হিসাব-নিকেশ দিতেন না পার্থকে। এ প্রতিষ্ঠানেও পার্থ শতকরা ৮০ শতাংশ রোগী সংগ্রহ করেন এবং ৭৬ হাজার ডলার বিনিয়োগ করেন। গোল্ডেন এজ হোম কেয়ারে শাওহ নেওয়াজ কী পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছেন তা জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে পার্থের অংশীদারিত্ব অর্থের পরিমাণই বেশি এবং লভ্যাংশ কম। এসব নানা বিষয় নিয়ে উভয়ের মাঝে দ্বন্দ্ব ও মনোমালিন্য দেখা দেয়। যোগাযোগ সীমিত হয়ে পড়ে এবং দীর্ঘদিন কোন কথাবার্তাও হয়নি বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
এদিকে, নিউ ইয়র্কের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের নামে পে-চেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম (পিপিপি) ঋণ পেতে শুরু করেছে। খবর পেয়ে বেঙ্গল হোম কেয়ার ইঙ্ক ও গোল্ডেন এজ হোম কেয়ার ইঙ্ক পিপিপি ঋণ পেয়েছে কিনা শাহ নেওয়াজের কাছে জানতে চান পার্থ। জবাবে তিনি বলেন এখনও আবেদন করা হয় নাই। চলতি বছরের ১৯ মে গোল্ডেন এজ হোম কেয়ারের ৩১ জন কর্মচারির বিপরীতে ৮০ হাজার ৬৯০ ডলার এবং বেঙ্গল হোম কেয়ার ইঙ্কের ১০৯ জন কর্মচারি দেখিয়ে তাদের বিপরীতে ৪ লাখ ৪৪ হাজার ৩৯ ডলার পিপিপি ঋণ বরাদ্দের অনুমোদন পান। ঋণ অনুমোদনের চিঠি পাবার পর হটাৎ করেই শাহ নেওয়াজ পার্থকে বলেন, অপর অংশীদারের সাথে ইচ্ছাকৃত ঝগড়ায় লিপ্ত হতে। তখনও পার্থ জানেন না তাদের প্রতিষ্ঠানের ঋণ অনুমোদনের কথা। অন্য অংশীদারের সাথে পার্থের ঝগড়া বাধিয়ে দিয়ে শাহ নেওয়াজ গোপনে তার সাথে যুক্তি করে বেঙ্গল হোম কেয়ারের পে-চেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম (পিপিপি) ঋণের অর্থ সিটি ব্যাংক থেকে তুলে দু’জনেই ভাগ করে নেন। বেঙ্গল হোম কেয়ারের এ অর্থের লভ্যাংশ থেকে পার্থ গুপ্তকে বঞ্চিত করার জন্য শাহ নেওয়াজ নতুন এ কৌশল অবলম্বন করেন বলে জানা গেছে। চলতি বছরের মে মাসে বেঙ্গল হোম কেয়ারের ঋণের অর্থ তাদের মধ্যে ভাগাভাগি হবার পর গত ৭ জুন বেঙ্গল হোম কেয়ার পূর্বের মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া সংক্রান্ত কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেন পার্থ ও শাহ নেওয়াজ।
নিউ ইয়র্কের যন্ত্রশিল্পী (কিবোর্ড বাদক) পার্থ গুপ্ত কর্তৃক হোম কেয়ার ব্যবসায়ী শাহ নেওয়াজকে মারধর ও হত্যা চেষ্টার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশার মানুষের সাথে কথ হয় এ প্রতিবেদকের। তারা কেউই এ ঘটনাটিকে সহজভাবে মেনে নিতে পারছেন না। শাহ নেওয়াজের এ অভিযোগকে তারা মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক বলে উল্লেখ করেন।
গত ২৯ আগষ্ট জ্যাকসন হাইটসের ৭৬-৩৭ স্ট্রিটের পথমেলার আয়োজক ও ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটস ডেভেলপমেন্ট ইউএসএ প্রেসিডেন্ট শাহ্ শহীদুল হক (সাঈদ) বলেন, এ ঘটনাটি একটি ন্যাক্কারজনক। শাহ নেওয়াজ নিজেকে একজন কমিউনিটির নেতার পরিচয় দিয়ে এজকন নিরীহ মানুষের নামে এ ধরনের একটি মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে তিনি নিজেকেই ছোট করেছেন। তিনি বলেন, পুলিশের কাছে শাহ নেওয়াজ যে অভিযোগ করেছেন তা সম্পূর্ণই মিথ্যা, কারণ তিনি ওই পথমেলার আয়োজক ছিলেন। সেখানে সার্বক্ষনিক পুলিশি প্রহরার ব্যবস্থা ছিলো। পার্থ দুপুর ১২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মঞ্চে কীবোর্ড বাজিয়েছেন। তিনিও সেখানে সার্বক্ষনিক উপস্থিত ছিলেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে এমন একটি অপ্রীতিকর (মারধর ও বন্দুক প্রদর্শন) ঘটনা ঘটলে প্রথমেই জানতো পুলিশ এবং আয়োজকবৃন্দ। শাহ নেওয়াজ কারও কাছেই কোন অভিযোগ করেননি। এমনকি তিনি স্বেচ্ছায় পুলিশকেও ফোন করেননি। এতেই প্রমানিত হয় যে, ঘটনাটি মিথ্যা ও সাজানো।
পথমেলার শব্দ নিয়ন্ত্রক ও কন্ঠশিল্পী তানভীর শাহীন বলেন, তিনি সারাদিন উক্ত মেলায় ছিলেন, এমন কোন ঘটনার কথা শোনেননি তিনি। শাহ নেওয়াজ যেভাবে তার ব্যবসার অংশীদার পার্থকে ঘায়েল করতে মিথ্যা অভিযোগ সাজিয়েছেন সেটা প্রমাণ করতে না পারলে উল্টো তারই বিপদ হবে বলে মনে করেন শাহীন। তিনি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী কন্ঠযোদ্ধা শহীদ হাসান বলেন, তিনি পার্থ গুপ্তের আটকের কথা বিভিন্ন পত্রিকার খবর এবং লোক মুখে শুনেছেন। এমন একটি ঘটনায় পার্থ জড়িত তিনি তা বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করছেন না, কারন তিনি দীর্ঘদিন ধরে পার্থকে চেনেন। কাউকে মারধর ও বন্দুক দেখানো এ ধরেনের কাজ করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। তারা দু’জনের একই বিল্ডিং-এ থাকেন কিন্তু পার্থ আজ পর্যন্ত কাউকে গালি দিয়েছে বা কারো সাথে বেয়াদবি করেছে এ রকম কোন ঘটনার কথাও তিনি শোনেননি। শাহ নেওয়াজ যেভাবে অভিযোগ সাজিয়েছেন তা প্রমাণে ব্যর্থ হলে তার পরিণতি হবে ভায়াবহ।
কমিউনিটি এক্টিভিষ্ট ও ব্যবসায়ী ফখরুল ইসলাম দেলোয়ার বলেন, যেহেতু পার্থ গুপ্ত ও শাহ নেওয়াজের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবসা সংক্রান্ত দ্বন্দ্ব রয়েছে। এ সমস্যা নিজেরাই মিটিয়ে নিতে পারতেন। এমন একটি অভিযোগ নিয়ে পুলিশ আদালত পর্যন্ত যাওয়া মোটেই ঠিক হয়নি। এখনো সময় আছে সমঝোতা করে তাদের ব্যবসায়িক দ্বন্দ্ব মেটানোর, তা নাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকেই যাবে বলে মনে করেন তিনি।
নিউ ইয়র্ক প্রবাসী বিশিষ্ট চিকিৎসক খন্দকার মাসুদ রহমান বলেন, শাহ নেওয়াজের বাড়ি খুলনায়। তিনিও একই এলাকার মানুষ কিন্তু তাকে সেভাবে তিনি চেনেন না। নিউ ইয়র্কেই তার সাথে পরিচয়। মাঝে মাঝে দেখা হলে কথা হয়। দেশে খুলনায় তাকে কখনো দেখেননি। কোথায় লেখাপড়া করেছেন তাও তিনি জানেন না। তিনি বলেন আমাদের পারিবারিক ব্যক্তিত্ব ও অবস্থার ধারের কাছে আসার যোগ্যতা তার নেই। এ কারনেই তার সাথে কখনো সখ্যতা গড়ে ওঠেনি। তবে পার্থ গুপ্ত ও শাহ নেওয়াজের মধ্যে যে ঘটনা ঘটেছে তা সামাজের মানুষের কাছে মোটেও কাম্য নয়। এ ধরনের আর কোন ঘটনা যে না ঘটে এ প্রত্যাশা করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিউ ইয়র্কের একজন পরিচিত ব্যবসায়ী ও কমিউনিটি এক্টিভিষ্ট বলেন, শাহ নেওয়াজ জ্যাকসন হাইটসের নর্দার্ন ব্লুভার্ড-১১৫ এলাকার পুলিশের চিফ কমান্ডিং অফিসার আল তাহেরিকে ভূল ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রভাবিত করে পার্থের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেছেন। শাহ নেওয়াজ পুলিশের কাছে বলেন তিনি জ্যাকসন হাইটসে একটি প্লাজার মালিক। তিনি কমিউনিটির একজন বড় নেতা। মার্কিন রাজনীতিবিদ ও সিটি কর্তৃপক্ষের সাথে তার বন্ধুত্ব ও ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। এ ধরনের পরিচয় দিয়ে ইনিয়ে বিনিয় একটি গল্প বানিয়েছেন। ঘটনা জানার পর ফাহাদ নিজেই পুলিশ কর্মকর্তা আল তাহেরির সাথে কথা বলেছেন। তিনি প্রশ্ন করে বলেন সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখ পার্থ গুপ্ত শাহ নেওয়াজকে ফোন থেকে লিখিত বার্তা পাঠিয়ে জীবন নাশের হুমকি দিলে শাহ নেওয়াজ জামাইকা পুলিশের কাছে না গিয়ে নর্দার্ন ব্লুভার্ড-১১৫ এলাকার পুলিশের কাছে কেন গেলেন? তার বাসা তো জামাইকায়। নিজের অপরাধ ঢাকতে গিয়ে নিজেই মহাবিপদের সম্মুখিন হতে যাচ্ছেন শাহ নেওয়াজ। অচিরেই প্রবাসী বাংলাদেশিরা তা দেখতে পাবেন।
নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পত্রিকার বেশ কয়েকজন সম্পাদক ও সাংবাদিকের কাছে পার্থ গুপ্ত ও শাহ নেওয়াজের মধ্যে সৃষ্ট ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রায় প্রতিটি বাংলাদেশি হোম কেয়ার ব্যবসায়ীদের মধ্যেই পে-চেক প্রোটেকশন প্রোগ্রাম (পিপিপি) ঋণ সংক্রান্ত প্রতারণা রয়েছে। এ ধরনের অপরাধকে ধামাচাপা দিতে শাহ নেওয়াজ পুলিশের তার সাবেক অংশীদারের বিরুদ্ধে যে ন্যাক্কার জনক অভিযোগ করেছে তা নিন্দনীয়। নিউ ইয়র্কের সাংবাদিক ও সম্পাদকদের ঘটনার গভীরে গিয়ে সত্য প্রকাশ করার সাহস নেই। কারণ বছর বছর ধরে শাহ নেওয়াজ তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দিয়ে পত্রিকাগুলোর মুখ বন্ধ করে রেখেছে। এ ঘটনার বিস্তারিত খবর তারা প্রথম বাংলা প্রেস অনলাইনে দেখেছেন। এ ধরনের সাহসী সংবাদ প্রকাশ করার জন্য তারা বাংলা প্রেস’কে ধন্যবাদও জানান।
পার্থ গুপ্তের আইনিজীবি ক্যারী লন্ডন জানান, বিভিন্ন সময়ে পুলিশের কাছে এ ধরনের অভিযোগ অনেকেই দায়ের করেন, কিন্তু আদালতে গিয়ে বাদী তা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন। এ মামলাটিও একই ধরনের বলে মনে করছেন তিনি। ক্যারী বলেন, আগামী ২০২২ সালের জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে আদালতে মামলাটির দিন ধার্য রয়েছে। ঐ দিনেই মামলা নিষ্পত্তি হতে পারে বলে মনে করছেন তিনি। এরপর পার্থ গুপ্ত চাইলে বাদী শাহ নেওয়াজের বিরুদ্ধে পাল্টা সম্মানহানির মামলা করতে পারবেন বলে উল্লেখ করেন আইনিজীবি ক্যারী লন্ডন।
বাংলা প্রেস-এ প্রথম সংবাদ প্রকাশের আগেই বেঙ্গল হোম কেয়ার ও গোল্ডেন এজ হোম কেয়ারের প্রেসিডেন্ট ও সিইও শাহ নেওয়াজের সাথে ফেসবুক বার্তাবহের মাধ্যমে প্রশ্ন করা হয়- বেঙ্গল এন্ড গোল্ডেন হোম কেয়ারের পিপিপি লোনের অর্থের হিসাব চাওয়ায় আপনি একজন অংশীদারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন? সংবাদ সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে আপনার সুনির্দিষ্ট মতামত প্রয়োজন। আশা করি বিস্তারিত তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করবেন। ধন্যবাদ-বাংলা প্রেস। তিনি এ প্রশ্নের কোন উত্তর দেননি। কয়েকদিন পর ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে অজ্ঞাতনামা পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ পাঠিয়ে তা প্রকাশ করার তাগিদ দেন। প্রতিবাদ প্রকাশ না করলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন বা মামলা করারও হুমকি দেন শাহ নেওয়াজ।
 বার্তাকণ্ঠ/এন