শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পরিত্যক্ত রাঙ্গুনিয়ায় সুলতান আল নাহিয়ানের স্বপ্নের উপশহর

এম.মতিন, চট্টগ্রাম ব্যুরো।। 
৯৮৪ সালের কথা। তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের আমন্ত্রণে তৎকালীন  মধ্যপ্রাচ্য থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের  বাদশা শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান বাংলাদেশ সফরে এসে  হেলিকপ্টারযোগে চট্টগ্রাম ও কাপ্তাই সফর করেন। এসময় বাদশা শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলা পরিদর্শন করতে গিয়ে তার চোখ আটকে যায় রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কর্ণফুলী নদী তীরবর্তী কাপ্তাই সড়ক সংলগ্ন পোমরা এলাকায়। দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়, নদীর স্রোতধারা, বৃক্ষরাজীর অপরুপ সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হন বাদশা সুললতান। তিনি ওই এলাকায় বিশ্রামাগার ও বিনোদন কেন্দ্রসহ একটি উপশহর গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন।
সুলতানের প্রস্তাবে রাজী হয়ে তৎকালীন এরশাদ সরকার মাত্র ১০১ টাকা প্রতীকী  মূল্যে বাদশা আল নাহিয়ানকে পোমরার ১২০ একর একর পাহাড়ি জমি উপহার দেন। পরে সুলতান উপশহর নির্মাণে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন এবং কাজও শুরু হয়। কিন্তু নানা জটিলতায় উপশহর নির্মাণের কাজ তেমন এগোয়নি। উপশহরের কাজ আদৌ হবে কিনা এ ব্যাপারে কিছুই বলতে পারেনি নির্মাণ কাজের স্থানীয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ এজাজ উদ্দিন।
তিনি জানান, ২০০৫ সালে শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান মারা যান। এতে উপশহর নির্মাণের কাজ  অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এর আগে ১৯৯৪ সালে প্রথম পর্যায়ে প্রায় ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২০ একর পাহাড়ি জমিতে এই উপশহরের অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ শুরু হয। আবুধাবীর টি এস আই কনস্ট্রাকশন কোম্পানী এ উপশহর নির্মাণের কাজ পায়। বাংলাদেশের হিরামন এসোসিয়েট হোল্ডিং কোম্পানি এ নির্মাণকাজ তদারকির দায়িত্ব নেন।
এজাজ উদ্দিন আরো জানান, উপশহরে বিশ্রামাগার হিসেবে একটি রাজপ্রাসাদ নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল সুলতানের। ফলে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ছোটবড় ২৮টি বুলডোজার দিয়ে ১৩ টি উচু পাহাড় কেটে সমতল ভুমিতে পরিণত করা হয়। চারপাশে প্রায় ১২ হাজার ফুট দীর্ঘ সীমানা দেয়াল দিয়ে নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করা হয়। স্থাপন করা হয় গ্যাস ট্রান্সমিশন। বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। তাছাড়া মুল প্রসাদের সাথে কর্ণফুলী নদীপথে যোগাযোগের সুবিধার্থে প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক ও ঘাট নির্মাণ করা হয়। চট্টগ্রাম কাপ্তাই সড়ক দিয়ে যোগাযোগের জন্য প্রায় তিন কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়। সড়ক মুখ ও রাজপ্রাসাদের প্রধান গেইট হিসেবে মূল ভবনের সামনে নির্মাণ করা হয় সুবিশাল দুটি তোরন। তোরনের সাথে রয়েছে নিরাপত্তা ভবন। যেখানে সার্বক্ষনিক নিয়োজিত রয়েছে ৪ জন নিরাপত্তারক্ষী।
নিরাপত্তারক্ষী কমান্ডার আবু তালেব জানান, ১৯৯৭ সালের শেষের দিকে উপশহর নির্মাণের প্রথম পর্যায়ে কাজ সম্পন্ন করা হয়। যা আরব আমিরাতের তিন সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দল পরিদর্শনে আসেন ওই সময়। তারা নির্মাণ কাজে নানা অনিয়ম ও কারচুপি দেখে অসন্তুষ্ট হয়ে ফিরে যান। সেই থেকে বন্ধ হয়ে যায় উপশহরের নির্মাণ কাজ। ২০০৫ সালে সুলতান আল নাহিয়ান মারা যান । ফলে মুখ থুবরে পরে সুলতান আল নাহিয়ানের স্বপ্নের উপশহর নির্মাণের কাজ।
তিনি বলেন, উপশহরের কাজ বন্ধ থাকায় সংশ্লিষ্টরা কেউ এখানে আসেন না। ফলে উপশহরে নির্মিত অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া নিরাপত্তা রক্ষী সংকটের কারনে উপশহরের মুল্যবান জিনিসপত্র চুরি ও ডাকাতি হচ্ছে।
তিনি জানান, গত ২০০৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে উপশহরের সাথে সংযুক্ত বিদ্যুৎ লাইনের প্রায় সবকয়টি খুটির তার চুরি করে নিয়ে গেছে। এমনকি ২০০৭ সালের প্রথম দিকে সশস্ত্র ডাকাতদল নিরাপত্তা রক্ষিদের অস্ত্রের মুখে জিম্মী করে বিদ্যুৎ চার্জারের মূল্যবান ক্যাবল ডাকাতি করে নিয়ে গেছে। ফলে উপশহর প্রকল্প এখন বিদ্যুতহীন অন্ধকার নগরীতে পরিণত হয়েছে। এছাড়া উপশহর প্রকল্পের রাজপ্রাসাদ ভবন এলাকার চারপাশে নির্মিত দেওয়ালের প্রায় ১২০ ফটকের লোহার গ্রীল কেটে নিয়ে গেছে। এভাবে উপশহর প্রকল্প এখন হুমকির মুখে পড়েছে।
নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিরামন এসোসিয়েটস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুখ আহমদের কাছে উপশহরের ভবিষ্যত সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় বিশ্রামাগার ও বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা আপাতত সংযুক্ত আরব আমিরাতের বর্তমান খলিফার নেই। তবে এ উপশহর প্রকল্পে একটি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি নির্মাণের বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন আরব আমিরাতের বর্তমান খলিফা। যেখানে পুরো এশিয়া মহাদেশের প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যায়নের সুযোগ পাবে।
তবে, ২০১৪ সালের ১৮ অক্টোবর স্থানীয় সাংসদ ড. হাছান মাহমুদ এমপি পোমরায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রয়াত বাদশা শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের মালিকানাধীন ১২০ একর জমিতে বিশ্বমানের একটি হাসপাতাল করার ঘোষণা দেন। বাদশা পরিবারের পরিচালনাধীন নাহিয়ান ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে বাংলাদেশ সরকার এই হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প বাস্থবায়ন করবেন এবং এতে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা খরচ হবে বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সংসদ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা এলাকায় আরব আমিরাতের প্রয়াত বাদশা সুলতান আল নাহিয়ান পরিবারের মালিকানাধীন ১২০ একর জমি রয়েছে। ওই জমিতে একটি বিশ্বমানের হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘নাহিয়ান পরিবারের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে তাদেরকে এ ব্যাপারে রাজি করাতে আমি সক্ষম হয়েছি। এ ব্যাপারে নাহিয়ান ফাউন্ডেশনের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের একটি চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চুক্তিটি হয়ে গেলে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকা রাঙ্গুনিয়ার এই বিশাল জমিতে অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক সব সুবিধা সম্বলিত একটি হাসপাতাল নির্মাণকাজ শুরু হবে। এতে খরচের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা নাহিয়ান ফাউন্ডেশনই বিনিয়োগ করবে বলে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার ইউনুস এ প্রসঙ্গে বলেন, উপশহর বাস্তবায়নের বিষয়ে সঠিক কোন তথ্য আমার কাছে নেই। তবে উপশহর প্রকল্পের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের বরাবরে প্রতিবেদন পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে জায়গাটি বুঝে নিয়ে সেখানে প্রাসাদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন আবুধাবীর টি এস আই কনস্ট্রাকশন কোম্পানী এবং বাংলাদেশের হিরামন এসোসিয়েট হোল্ডিং কোম্পানি। মধ্যপ্রাচ্যের ধরনে সুবিশাল দুটি তোরণ নির্মাণ, যাতায়াতের জন্য প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ এবং চতুর্পাশে প্রাচীর নির্মাণ করে প্রাসাদ নির্মাণের উপযোগী করা হয় জমিটি। প্রায় তিন বছরের বেশি সময় প্রাসাদ নির্মাণের কাজ চলার পর নির্মাণ কাজে নানা অনিয়ম হওয়ার কারণে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন বাদশা আল নাহিয়ান। পরবর্তীতে বাদশা মারা গেলে প্রাসাদ নির্মাণ প্রকল্পটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নাহিয়ান পরিবার। ফলে বাদশা সুলতানের মৃত্যুর পর পরই রাঙ্গুনিয়ার সুলতান আল নাহিয়ানের স্বপ্নের উপশহর নির্মাণের অপমৃত্যু হয়।
 বার্তাকণ্ঠ /এন

পরিত্যক্ত রাঙ্গুনিয়ায় সুলতান আল নাহিয়ানের স্বপ্নের উপশহর

প্রকাশের সময় : ০৭:০৩:০২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৫ নভেম্বর ২০২১
এম.মতিন, চট্টগ্রাম ব্যুরো।। 
৯৮৪ সালের কথা। তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের আমন্ত্রণে তৎকালীন  মধ্যপ্রাচ্য থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের  বাদশা শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান বাংলাদেশ সফরে এসে  হেলিকপ্টারযোগে চট্টগ্রাম ও কাপ্তাই সফর করেন। এসময় বাদশা শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলা পরিদর্শন করতে গিয়ে তার চোখ আটকে যায় রাঙ্গুনিয়া উপজেলার কর্ণফুলী নদী তীরবর্তী কাপ্তাই সড়ক সংলগ্ন পোমরা এলাকায়। দিগন্ত বিস্তৃত পাহাড়, নদীর স্রোতধারা, বৃক্ষরাজীর অপরুপ সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হন বাদশা সুললতান। তিনি ওই এলাকায় বিশ্রামাগার ও বিনোদন কেন্দ্রসহ একটি উপশহর গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেন।
সুলতানের প্রস্তাবে রাজী হয়ে তৎকালীন এরশাদ সরকার মাত্র ১০১ টাকা প্রতীকী  মূল্যে বাদশা আল নাহিয়ানকে পোমরার ১২০ একর একর পাহাড়ি জমি উপহার দেন। পরে সুলতান উপশহর নির্মাণে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেন এবং কাজও শুরু হয়। কিন্তু নানা জটিলতায় উপশহর নির্মাণের কাজ তেমন এগোয়নি। উপশহরের কাজ আদৌ হবে কিনা এ ব্যাপারে কিছুই বলতে পারেনি নির্মাণ কাজের স্থানীয় প্রতিনিধি মোহাম্মদ এজাজ উদ্দিন।
তিনি জানান, ২০০৫ সালে শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ান মারা যান। এতে উপশহর নির্মাণের কাজ  অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। এর আগে ১৯৯৪ সালে প্রথম পর্যায়ে প্রায় ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২০ একর পাহাড়ি জমিতে এই উপশহরের অবকাঠামোর নির্মাণ কাজ শুরু হয। আবুধাবীর টি এস আই কনস্ট্রাকশন কোম্পানী এ উপশহর নির্মাণের কাজ পায়। বাংলাদেশের হিরামন এসোসিয়েট হোল্ডিং কোম্পানি এ নির্মাণকাজ তদারকির দায়িত্ব নেন।
এজাজ উদ্দিন আরো জানান, উপশহরে বিশ্রামাগার হিসেবে একটি রাজপ্রাসাদ নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল সুলতানের। ফলে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ছোটবড় ২৮টি বুলডোজার দিয়ে ১৩ টি উচু পাহাড় কেটে সমতল ভুমিতে পরিণত করা হয়। চারপাশে প্রায় ১২ হাজার ফুট দীর্ঘ সীমানা দেয়াল দিয়ে নিরাপত্তা বলয় সৃষ্টি করা হয়। স্থাপন করা হয় গ্যাস ট্রান্সমিশন। বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। তাছাড়া মুল প্রসাদের সাথে কর্ণফুলী নদীপথে যোগাযোগের সুবিধার্থে প্রায় এক কিলোমিটার সড়ক ও ঘাট নির্মাণ করা হয়। চট্টগ্রাম কাপ্তাই সড়ক দিয়ে যোগাযোগের জন্য প্রায় তিন কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়। সড়ক মুখ ও রাজপ্রাসাদের প্রধান গেইট হিসেবে মূল ভবনের সামনে নির্মাণ করা হয় সুবিশাল দুটি তোরন। তোরনের সাথে রয়েছে নিরাপত্তা ভবন। যেখানে সার্বক্ষনিক নিয়োজিত রয়েছে ৪ জন নিরাপত্তারক্ষী।
নিরাপত্তারক্ষী কমান্ডার আবু তালেব জানান, ১৯৯৭ সালের শেষের দিকে উপশহর নির্মাণের প্রথম পর্যায়ে কাজ সম্পন্ন করা হয়। যা আরব আমিরাতের তিন সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি দল পরিদর্শনে আসেন ওই সময়। তারা নির্মাণ কাজে নানা অনিয়ম ও কারচুপি দেখে অসন্তুষ্ট হয়ে ফিরে যান। সেই থেকে বন্ধ হয়ে যায় উপশহরের নির্মাণ কাজ। ২০০৫ সালে সুলতান আল নাহিয়ান মারা যান । ফলে মুখ থুবরে পরে সুলতান আল নাহিয়ানের স্বপ্নের উপশহর নির্মাণের কাজ।
তিনি বলেন, উপশহরের কাজ বন্ধ থাকায় সংশ্লিষ্টরা কেউ এখানে আসেন না। ফলে উপশহরে নির্মিত অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষনের অভাবে দিন দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া নিরাপত্তা রক্ষী সংকটের কারনে উপশহরের মুল্যবান জিনিসপত্র চুরি ও ডাকাতি হচ্ছে।
তিনি জানান, গত ২০০৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে উপশহরের সাথে সংযুক্ত বিদ্যুৎ লাইনের প্রায় সবকয়টি খুটির তার চুরি করে নিয়ে গেছে। এমনকি ২০০৭ সালের প্রথম দিকে সশস্ত্র ডাকাতদল নিরাপত্তা রক্ষিদের অস্ত্রের মুখে জিম্মী করে বিদ্যুৎ চার্জারের মূল্যবান ক্যাবল ডাকাতি করে নিয়ে গেছে। ফলে উপশহর প্রকল্প এখন বিদ্যুতহীন অন্ধকার নগরীতে পরিণত হয়েছে। এছাড়া উপশহর প্রকল্পের রাজপ্রাসাদ ভবন এলাকার চারপাশে নির্মিত দেওয়ালের প্রায় ১২০ ফটকের লোহার গ্রীল কেটে নিয়ে গেছে। এভাবে উপশহর প্রকল্প এখন হুমকির মুখে পড়েছে।
নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিরামন এসোসিয়েটস এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফারুখ আহমদের কাছে উপশহরের ভবিষ্যত সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় বিশ্রামাগার ও বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলার পরিকল্পনা আপাতত সংযুক্ত আরব আমিরাতের বর্তমান খলিফার নেই। তবে এ উপশহর প্রকল্পে একটি এশিয়ান ইউনিভার্সিটি নির্মাণের বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন আরব আমিরাতের বর্তমান খলিফা। যেখানে পুরো এশিয়া মহাদেশের প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যায়নের সুযোগ পাবে।
তবে, ২০১৪ সালের ১৮ অক্টোবর স্থানীয় সাংসদ ড. হাছান মাহমুদ এমপি পোমরায় সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রয়াত বাদশা শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের মালিকানাধীন ১২০ একর জমিতে বিশ্বমানের একটি হাসপাতাল করার ঘোষণা দেন। বাদশা পরিবারের পরিচালনাধীন নাহিয়ান ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে বাংলাদেশ সরকার এই হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্প বাস্থবায়ন করবেন এবং এতে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা খরচ হবে বলে জানান তিনি।
এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সংসদ তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা এলাকায় আরব আমিরাতের প্রয়াত বাদশা সুলতান আল নাহিয়ান পরিবারের মালিকানাধীন ১২০ একর জমি রয়েছে। ওই জমিতে একটি বিশ্বমানের হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘নাহিয়ান পরিবারের সঙ্গে ব্যক্তিগত যোগাযোগের মাধ্যমে তাদেরকে এ ব্যাপারে রাজি করাতে আমি সক্ষম হয়েছি। এ ব্যাপারে নাহিয়ান ফাউন্ডেশনের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের একটি চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চুক্তিটি হয়ে গেলে দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকা রাঙ্গুনিয়ার এই বিশাল জমিতে অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক সব সুবিধা সম্বলিত একটি হাসপাতাল নির্মাণকাজ শুরু হবে। এতে খরচের প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা নাহিয়ান ফাউন্ডেশনই বিনিয়োগ করবে বলে।
রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফতেখার ইউনুস এ প্রসঙ্গে বলেন, উপশহর বাস্তবায়নের বিষয়ে সঠিক কোন তথ্য আমার কাছে নেই। তবে উপশহর প্রকল্পের বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের বরাবরে প্রতিবেদন পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে জায়গাটি বুঝে নিয়ে সেখানে প্রাসাদ নির্মাণের কাজ শুরু করেন আবুধাবীর টি এস আই কনস্ট্রাকশন কোম্পানী এবং বাংলাদেশের হিরামন এসোসিয়েট হোল্ডিং কোম্পানি। মধ্যপ্রাচ্যের ধরনে সুবিশাল দুটি তোরণ নির্মাণ, যাতায়াতের জন্য প্রায় দুই কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ এবং চতুর্পাশে প্রাচীর নির্মাণ করে প্রাসাদ নির্মাণের উপযোগী করা হয় জমিটি। প্রায় তিন বছরের বেশি সময় প্রাসাদ নির্মাণের কাজ চলার পর নির্মাণ কাজে নানা অনিয়ম হওয়ার কারণে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন বাদশা আল নাহিয়ান। পরবর্তীতে বাদশা মারা গেলে প্রাসাদ নির্মাণ প্রকল্পটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে নাহিয়ান পরিবার। ফলে বাদশা সুলতানের মৃত্যুর পর পরই রাঙ্গুনিয়ার সুলতান আল নাহিয়ানের স্বপ্নের উপশহর নির্মাণের অপমৃত্যু হয়।
 বার্তাকণ্ঠ /এন