মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

পাবজি, ফ্রি-ফায়ার গেমস ধ্বংস করছে ভবিষ্যৎ যুব সমাজকে

নজরুল ইসলাম ##কিশোর গ্যাংয়ের মতো সমাজের আরেক ব্যাধি পাবজি, ফ্রি-ফায়ারের মতো গেমস। এসবে আসক্ত হয়ে অনেক সময় মাদকসহ অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়ছে শিশু ও যুব সমাজ। অনলাইন গেমস যুব সমাজের ভবিষ্যৎ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে অনলাইন গেম শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করলেও মনোবিজ্ঞানীরা এটি বন্ধ না করে বিকল্প উপায় খোঁজার পরামর্শ দিয়েছেন।

যেন গেমই নেশা, গেমই পেশা। বর্তমানে অনলাইন গেমে মজে থাকে বেশিরভাগ শিশু-কিশোর। তাজমহল রোড, ঈদগাহ মাঠের পাশের পার্কে নিয়মিত আড্ডা দেয় কিছু যুবক। সবার হাতেই স্মার্ট ফোন। সবার মনোযোগও সেই ফোনকে ঘিরে। খেলছেন পাবজি অথবা ফ্রি-ফায়ার। আলাদা দলে ভাগ হয়ে আক্রমণ করছেন ভিন্ন কোনো দেশের গ্রুপের ওপর। প্রতিপক্ষকে দমনে ব্যবহার হচ্ছে পিস্তলসহ বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র।

অনলাইনে গেমস খেলার বিষয়ে একজন খেলোয়াড় বলেন, বেশিরভাগ আমরা গ্রুপ খেলি। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে। যেমন পাকিস্তান, ভারত। ওদের চারজনের একটি দল থাকে আর আমাদের বাংলাদেশি চারজনের দল থাকে। যাদের সামর্থ্য বেশি তারাই জিতে যায়। তাই মাঝে মাঝে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টাকা খরচ করেও কিনছে এসব অস্ত্র। শুধুমাত্র এখানেই নয়, বাড়িতেও একই কাজ চলে। গেম খেলেই বেশিরভাগ সময় কাটে এসব শিশু-কিশোর।এ বিষয়ে একজন খেলোয়াড় বলেন, রাতের বেলা ৩/৪টা পর্যন্ত গেম খেলে ঘুমিয়ে পড়ি। পাবজি বা ফ্রি-ফায়ার গেমগুলো খেলতে গিয়ে মাদকে আসক্ত হচ্ছে অনেকেই, বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে পরিবার থেকে। কখনও কখনও জড়িয়ে পড়ছে অপরাধ জগতে।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, এই গেমগুলো আসলে যারা খেলে- শিশু হোক, বড় হোক তাদের মস্তিষ্কে কিছু কেমিক্যাল পদার্থ নিঃসরণ হয়। বারবার সেই গেমটি খেলার জন্য তাকে প্ররোচিত করে। যেটাকে আমরা বলি নির্ভরশীলতা বা আসক্তি। শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। তাদের আক্রমণাত্মক করে তোলে।

ভয়াবহতা বুঝতে পেরে ইতিমধ্যে নেপাল ও ভারতের কয়েকটি রাজ্য অনলাইন গেমস পাবজি ও ফ্রি-ফায়ার বন্ধ করে দিয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশেও একই পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ ও অপরাধ গবেষক তৌহিদুল হক  বলেন, ৬/৭ মিলে গেম খেলছে একসঙ্গে। এই যে আসক্ত। দিনের অধিকাংশ সময় কিংবা যেখানেই সে যাচ্ছে সে কিন্তু ওই আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। আমাদের টিকটক, লাইকি কিংবা এসব গেম বন্ধ করতে হবে। তবে ভিন্নমত পোষণ করেছেন মনোবিজ্ঞানীরা।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, কোনো গেম বন্ধ করা সেই গেমের আসক্ত থেকে বের করার কোনো সমাধান হতে পারে না। এই সমস্যা সমাধানে আমাদের হতে হবে সক্রিয়। সক্রিয়ভাবে আমাদের শিশু-কিশোরকে মানুষ গঠনে, তাদের মনের বিকাশে ভূমিকা নেব, বাড়িতে ইনডোর গেমের ব্যবস্থা করবো।

করোনায় পড়ালেখা চালাতে শিশুদের হাতে বাধ্য হয়ে স্মার্টফোন তুলে দিয়েছেন অভিভাবকরা। এ অবস্থায় পাবজি আর ফ্রি-ফায়ারের মতো গেমগুলো নতুন আতঙ্কের মধ্যে ফেলেছে অভিভাবকদের।

পাবজি, ফ্রি-ফায়ার গেমস ধ্বংস করছে ভবিষ্যৎ যুব সমাজকে

প্রকাশের সময় : ০৮:২৮:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুন ২০২১

নজরুল ইসলাম ##কিশোর গ্যাংয়ের মতো সমাজের আরেক ব্যাধি পাবজি, ফ্রি-ফায়ারের মতো গেমস। এসবে আসক্ত হয়ে অনেক সময় মাদকসহ অপরাধ জগতে জড়িয়ে পড়ছে শিশু ও যুব সমাজ। অনলাইন গেমস যুব সমাজের ভবিষ্যৎ ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে অনলাইন গেম শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত করলেও মনোবিজ্ঞানীরা এটি বন্ধ না করে বিকল্প উপায় খোঁজার পরামর্শ দিয়েছেন।

যেন গেমই নেশা, গেমই পেশা। বর্তমানে অনলাইন গেমে মজে থাকে বেশিরভাগ শিশু-কিশোর। তাজমহল রোড, ঈদগাহ মাঠের পাশের পার্কে নিয়মিত আড্ডা দেয় কিছু যুবক। সবার হাতেই স্মার্ট ফোন। সবার মনোযোগও সেই ফোনকে ঘিরে। খেলছেন পাবজি অথবা ফ্রি-ফায়ার। আলাদা দলে ভাগ হয়ে আক্রমণ করছেন ভিন্ন কোনো দেশের গ্রুপের ওপর। প্রতিপক্ষকে দমনে ব্যবহার হচ্ছে পিস্তলসহ বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্র।

অনলাইনে গেমস খেলার বিষয়ে একজন খেলোয়াড় বলেন, বেশিরভাগ আমরা গ্রুপ খেলি। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে। যেমন পাকিস্তান, ভারত। ওদের চারজনের একটি দল থাকে আর আমাদের বাংলাদেশি চারজনের দল থাকে। যাদের সামর্থ্য বেশি তারাই জিতে যায়। তাই মাঝে মাঝে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে টাকা খরচ করেও কিনছে এসব অস্ত্র। শুধুমাত্র এখানেই নয়, বাড়িতেও একই কাজ চলে। গেম খেলেই বেশিরভাগ সময় কাটে এসব শিশু-কিশোর।এ বিষয়ে একজন খেলোয়াড় বলেন, রাতের বেলা ৩/৪টা পর্যন্ত গেম খেলে ঘুমিয়ে পড়ি। পাবজি বা ফ্রি-ফায়ার গেমগুলো খেলতে গিয়ে মাদকে আসক্ত হচ্ছে অনেকেই, বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে পরিবার থেকে। কখনও কখনও জড়িয়ে পড়ছে অপরাধ জগতে।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, এই গেমগুলো আসলে যারা খেলে- শিশু হোক, বড় হোক তাদের মস্তিষ্কে কিছু কেমিক্যাল পদার্থ নিঃসরণ হয়। বারবার সেই গেমটি খেলার জন্য তাকে প্ররোচিত করে। যেটাকে আমরা বলি নির্ভরশীলতা বা আসক্তি। শিশু-কিশোরদের মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে। তাদের আক্রমণাত্মক করে তোলে।

ভয়াবহতা বুঝতে পেরে ইতিমধ্যে নেপাল ও ভারতের কয়েকটি রাজ্য অনলাইন গেমস পাবজি ও ফ্রি-ফায়ার বন্ধ করে দিয়েছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করে বাংলাদেশেও একই পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ ও অপরাধ গবেষক তৌহিদুল হক  বলেন, ৬/৭ মিলে গেম খেলছে একসঙ্গে। এই যে আসক্ত। দিনের অধিকাংশ সময় কিংবা যেখানেই সে যাচ্ছে সে কিন্তু ওই আসক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না। আমাদের টিকটক, লাইকি কিংবা এসব গেম বন্ধ করতে হবে। তবে ভিন্নমত পোষণ করেছেন মনোবিজ্ঞানীরা।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, কোনো গেম বন্ধ করা সেই গেমের আসক্ত থেকে বের করার কোনো সমাধান হতে পারে না। এই সমস্যা সমাধানে আমাদের হতে হবে সক্রিয়। সক্রিয়ভাবে আমাদের শিশু-কিশোরকে মানুষ গঠনে, তাদের মনের বিকাশে ভূমিকা নেব, বাড়িতে ইনডোর গেমের ব্যবস্থা করবো।

করোনায় পড়ালেখা চালাতে শিশুদের হাতে বাধ্য হয়ে স্মার্টফোন তুলে দিয়েছেন অভিভাবকরা। এ অবস্থায় পাবজি আর ফ্রি-ফায়ারের মতো গেমগুলো নতুন আতঙ্কের মধ্যে ফেলেছে অভিভাবকদের।