শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রত্যেক মা-বাবাই সন্তানের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবীর কথা ভাবেন

শিক্ষক ও কলামিস্ট

কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম ।।
যেদিন (২২ ডিসেম্বর, ২০২১, বুধবার) আমার ছেলে কাজী আবদুল্লাহ নাবহান জন্মেছে সেদিন ভেবেছি কীভাবে তাকে একটি নিরাপদ পরিবেশ দিতে পারবো। মেয়েদের জন্মের সময়ও ভেবেছি। আমার মতো প্রত্যেক বাবা-মাই হয়তো তাদের সন্তান জন্মের সময় ভেবেছেন কীভাবে তাকে একটি বাসযোগ্য নিরাপদ পৃথিবী দেবেন।
অথচ একটি শিশু জন্মের সময় আমরা কী সেই বাসযোগ্য ও নিরাপদ পৃথিবীর নিশ্চয়তা দিতে পারছি? খবরের কাগজে প্রায় সময় শিশুহত্যা ও নির্যাতনের সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে। পৃথিবীর নানা জায়গায়ও শিশুদের উপর অমানবিক আচরণ করা হয়। মাতা-পিতা, অভিভাবক তাদের সন্তানদের নিয়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় দিন কাটান। নিষ্পাপ এসব শিশুর উপর নির্যাতন ও হত্যায় আঁৎকে উঠেন সচেতন সব মানুষ। বিভিন্নভাবে শিশুরা নির্যাতনের শিকার হয় । তাতে জড়িত থাকে পারিবারিক ও সামাজিক বিরোধের ভয়াবহতা। মানুষ কীভাবে যে এত নির্দয় ও পাষণ্ড হতে পারে তা ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। এসব নির্যাতনের পাশাপাশি তারা বঞ্চিত হয় শিক্ষাসহ সব মৌলিক অধিকার থেকে। ঠিকমত খাবার, পোশাকও পায়না। অভিভাবকহীন শিশুরা বেড়ে উঠে বিভিন্ন ঘাতপ্রতিঘাতে। অনেকে দুষ্টলোকের হাতে পড়ে বড় হয়ে বিপথগামী হয়। সংঘটিত করে নানা অপরাধ। সঙ্গদোষে নষ্ট হয় বহু ধনীর দুলাল!
বিশ্বসংস্থাসহ দেশ-বিদেশের নানা সংগঠন, সরকার ও ব্যক্তি শিশুদের নিয়ে কাজ করে চলেছেন। শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ আবাস গড়তে চলছে নিরন্তর প্রচেষ্টা। অথচ এসব কিছুর মাঝেও শিশুদের উপর অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে। যে অবস্থা চলছে তাতে শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ কীভাবে তৈরি হবে তা বলাই মুশকিল। যেখানে মা-বাবার কোলও শিশুর জন্য নিরাপদ হচ্ছেনা! মানুষ ব্যক্তিস্বার্থে শিশুদের উপর কেমন করে এত বর্বর নির্যাতন চালাতে পারে?
প্রতিটি শিশুর নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের সকলের। এই দায়িত্ব এড়ানোর কোন সুযোগ নেই। নিজের পায়ে না দাঁড়ানো পর্যন্ত শিশুকে গড়ে তোলার দায়িত্ব নিতে হবে মা, বাবা, অভিভাবক, রাষ্ট্রসহ সর্বোপরি সমাজের সকল মানুষকে। সব ধরনের ভীতিকর পরিবেশ থেকে শিশুকে মুক্ত রাখতে হবে। শিশুর মানুষ হয়ে গড়ে ওঠার জন্য যা যা করণীয় তার সবটুকু করতে হবে। যে শিশুরা আগামীদিনের ভবিষ্যৎ, তাদের অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেবার কোন সুযোগ নেই। দিতে হবে তাকে সব মৌলিক অধিকার।  শিশু হত্যা ও নির্যাতনের সাথে জড়িত অপরাধীদের কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি দিতে হবে। ভবিষ্যতে যেন কেউ শিশুদের উপর কোন ধরনের অত্যাচার করতে না পারে সে ধরনের আইন প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন করতে হবে। শিশুর প্রতি ভালোবাসা আমাদের দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাদের প্রতি হিংস্রতা ও নিষ্ঠুরতার মাত্রা বাড়ছে। এ অবস্থার অবসান না হলে বিপন্ন হবে শিশুর ভবিষ্যৎ জীবন। গোটা মানবসমাজকেই যা গ্রাস করতে পারে। রাষ্ট্রকে এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
শিশুরা ফুলের মতো। আবার তারা অসহায়ও। অন্যের সাহায্য ও ভালোবাসা ছাড়া সে বেড়ে উঠতে পারে না। তার জীবনের গাঁথুনি নির্ভর করে অভিভাবক, নিকটাত্মীয় ও সচেতন মানুষের ভূমিকার উপর।
শিশুর অধিকার, তার গড়ে ওঠা, নিরাপত্তা ইত্যাদি নিয়ে সরব দেখা যায় অনেক সংগঠনকে। সরকারের সহযোগিতা না পেলে তারা কার্যকর তেমন কোনকিছুই করতে পারে না। সমাজের প্রভাবশালী ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে শিশুদের অধিকার এবং তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবেও শিশুদের অধিকার রক্ষার ব্যাপারে নানামুখী উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়। কিন্তু এরপরেও পৃথিবীর বহু দেশে শিশুরা নানা বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। পাচ্ছেনা অধিকার। বিশেষ করে যুদ্ধের সময় শিশুরা সবচেয়ে বেশি মৃত্যুঝঁকিতে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিবাসী হতে গিয়ে কত শিশুর সাগরে ডুবে মৃত্যু হয়েছে তার কোন হিসাব নেই। সিরিয়ান শিশু এক আয়লানের মৃত্যুতে কেঁদেছিল গোটা বিশ্বের মানুষ।
শিশুদের নিয়োগ করা হচ্ছে নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজেও। আমাদের দেশে এ ধরনের কাজে নিয়োজিত শিশুদের প্রতি নির্দয়
ব্যবহার করা হয়, তাদের মজুরিও অনেক কম, বিশ্রাম বিনোদনের কোন সুযোগ নেই।
আর একটি শিশুও যেন হত্যা ও নির্যাতনের শিকার না হয় সে ব্যাপারে সচেতন মানুষ ও রাষ্ট্রের ভূমিকাই প্রধান। রাষ্ট্র যদি শিশুদের অধিকার ও নিরাপত্তার ব্যাপারে আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালায় তাহলে কারো কোন সাধ্য নেই শিশুদের উপর অমানবিক আচরণ করার।
আমরা চাই প্রত্যেক শিশু ফিরে পাক তার মৌলিক অধিকার ও নিরাপদ পরিবেশ। সব মা ও অভিভাবকের কোল হোক শিশুর নিরাপদ আশ্রয়স্থল। আগামীদিনের তারাই কর্ণধার। এই শিশুর জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলাই হোক আমাদের সবার অংগীকার।
  নজরুল/বার্তাকণ্ঠ

প্রত্যেক মা-বাবাই সন্তানের জন্য বাসযোগ্য পৃথিবীর কথা ভাবেন

প্রকাশের সময় : ০৮:১৯:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২২
কাজী আবু মোহাম্মদ খালেদ নিজাম ।।
যেদিন (২২ ডিসেম্বর, ২০২১, বুধবার) আমার ছেলে কাজী আবদুল্লাহ নাবহান জন্মেছে সেদিন ভেবেছি কীভাবে তাকে একটি নিরাপদ পরিবেশ দিতে পারবো। মেয়েদের জন্মের সময়ও ভেবেছি। আমার মতো প্রত্যেক বাবা-মাই হয়তো তাদের সন্তান জন্মের সময় ভেবেছেন কীভাবে তাকে একটি বাসযোগ্য নিরাপদ পৃথিবী দেবেন।
অথচ একটি শিশু জন্মের সময় আমরা কী সেই বাসযোগ্য ও নিরাপদ পৃথিবীর নিশ্চয়তা দিতে পারছি? খবরের কাগজে প্রায় সময় শিশুহত্যা ও নির্যাতনের সংবাদ শিরোনাম হচ্ছে। পৃথিবীর নানা জায়গায়ও শিশুদের উপর অমানবিক আচরণ করা হয়। মাতা-পিতা, অভিভাবক তাদের সন্তানদের নিয়ে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠায় দিন কাটান। নিষ্পাপ এসব শিশুর উপর নির্যাতন ও হত্যায় আঁৎকে উঠেন সচেতন সব মানুষ। বিভিন্নভাবে শিশুরা নির্যাতনের শিকার হয় । তাতে জড়িত থাকে পারিবারিক ও সামাজিক বিরোধের ভয়াবহতা। মানুষ কীভাবে যে এত নির্দয় ও পাষণ্ড হতে পারে তা ভাবতেই গা শিউরে ওঠে। এসব নির্যাতনের পাশাপাশি তারা বঞ্চিত হয় শিক্ষাসহ সব মৌলিক অধিকার থেকে। ঠিকমত খাবার, পোশাকও পায়না। অভিভাবকহীন শিশুরা বেড়ে উঠে বিভিন্ন ঘাতপ্রতিঘাতে। অনেকে দুষ্টলোকের হাতে পড়ে বড় হয়ে বিপথগামী হয়। সংঘটিত করে নানা অপরাধ। সঙ্গদোষে নষ্ট হয় বহু ধনীর দুলাল!
বিশ্বসংস্থাসহ দেশ-বিদেশের নানা সংগঠন, সরকার ও ব্যক্তি শিশুদের নিয়ে কাজ করে চলেছেন। শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ আবাস গড়তে চলছে নিরন্তর প্রচেষ্টা। অথচ এসব কিছুর মাঝেও শিশুদের উপর অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে। যে অবস্থা চলছে তাতে শিশুদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ কীভাবে তৈরি হবে তা বলাই মুশকিল। যেখানে মা-বাবার কোলও শিশুর জন্য নিরাপদ হচ্ছেনা! মানুষ ব্যক্তিস্বার্থে শিশুদের উপর কেমন করে এত বর্বর নির্যাতন চালাতে পারে?
প্রতিটি শিশুর নিরাপদ পরিবেশ গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদের সকলের। এই দায়িত্ব এড়ানোর কোন সুযোগ নেই। নিজের পায়ে না দাঁড়ানো পর্যন্ত শিশুকে গড়ে তোলার দায়িত্ব নিতে হবে মা, বাবা, অভিভাবক, রাষ্ট্রসহ সর্বোপরি সমাজের সকল মানুষকে। সব ধরনের ভীতিকর পরিবেশ থেকে শিশুকে মুক্ত রাখতে হবে। শিশুর মানুষ হয়ে গড়ে ওঠার জন্য যা যা করণীয় তার সবটুকু করতে হবে। যে শিশুরা আগামীদিনের ভবিষ্যৎ, তাদের অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেবার কোন সুযোগ নেই। দিতে হবে তাকে সব মৌলিক অধিকার।  শিশু হত্যা ও নির্যাতনের সাথে জড়িত অপরাধীদের কঠোর থেকে কঠোরতম শাস্তি দিতে হবে। ভবিষ্যতে যেন কেউ শিশুদের উপর কোন ধরনের অত্যাচার করতে না পারে সে ধরনের আইন প্রণয়ন ও তার বাস্তবায়ন করতে হবে। শিশুর প্রতি ভালোবাসা আমাদের দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাদের প্রতি হিংস্রতা ও নিষ্ঠুরতার মাত্রা বাড়ছে। এ অবস্থার অবসান না হলে বিপন্ন হবে শিশুর ভবিষ্যৎ জীবন। গোটা মানবসমাজকেই যা গ্রাস করতে পারে। রাষ্ট্রকে এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
শিশুরা ফুলের মতো। আবার তারা অসহায়ও। অন্যের সাহায্য ও ভালোবাসা ছাড়া সে বেড়ে উঠতে পারে না। তার জীবনের গাঁথুনি নির্ভর করে অভিভাবক, নিকটাত্মীয় ও সচেতন মানুষের ভূমিকার উপর।
শিশুর অধিকার, তার গড়ে ওঠা, নিরাপত্তা ইত্যাদি নিয়ে সরব দেখা যায় অনেক সংগঠনকে। সরকারের সহযোগিতা না পেলে তারা কার্যকর তেমন কোনকিছুই করতে পারে না। সমাজের প্রভাবশালী ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গকে শিশুদের অধিকার এবং তাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবেও শিশুদের অধিকার রক্ষার ব্যাপারে নানামুখী উদ্যোগ ও পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়। কিন্তু এরপরেও পৃথিবীর বহু দেশে শিশুরা নানা বঞ্চনার শিকার হচ্ছে। পাচ্ছেনা অধিকার। বিশেষ করে যুদ্ধের সময় শিশুরা সবচেয়ে বেশি মৃত্যুঝঁকিতে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অভিবাসী হতে গিয়ে কত শিশুর সাগরে ডুবে মৃত্যু হয়েছে তার কোন হিসাব নেই। সিরিয়ান শিশু এক আয়লানের মৃত্যুতে কেঁদেছিল গোটা বিশ্বের মানুষ।
শিশুদের নিয়োগ করা হচ্ছে নানা ঝুঁকিপূর্ণ কাজেও। আমাদের দেশে এ ধরনের কাজে নিয়োজিত শিশুদের প্রতি নির্দয়
ব্যবহার করা হয়, তাদের মজুরিও অনেক কম, বিশ্রাম বিনোদনের কোন সুযোগ নেই।
আর একটি শিশুও যেন হত্যা ও নির্যাতনের শিকার না হয় সে ব্যাপারে সচেতন মানুষ ও রাষ্ট্রের ভূমিকাই প্রধান। রাষ্ট্র যদি শিশুদের অধিকার ও নিরাপত্তার ব্যাপারে আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালায় তাহলে কারো কোন সাধ্য নেই শিশুদের উপর অমানবিক আচরণ করার।
আমরা চাই প্রত্যেক শিশু ফিরে পাক তার মৌলিক অধিকার ও নিরাপদ পরিবেশ। সব মা ও অভিভাবকের কোল হোক শিশুর নিরাপদ আশ্রয়স্থল। আগামীদিনের তারাই কর্ণধার। এই শিশুর জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ে তোলাই হোক আমাদের সবার অংগীকার।
  নজরুল/বার্তাকণ্ঠ