শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ব্যাংকের মূলধন সংকট কেন বাড়ছে

বানিজ্য ডেস্ক ।।

দীর্ঘদিন ধরে মূলধন ঘাটতিতে ধুঁকছে বেশ কিছু ব্যাংক। সরকারি ব্যাংকগুলো ঘাটতির ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এর বাইরে বেসরকারি খাতের কিছু ব্যাংক ঘুরে-ফিরে ঘাটতি পড়ছে। করোনাকালীন নানা সুবিধার মধ্যেও ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণে কোনো উন্নতি নেই কয়েকটি ব্যাংকের। 

চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে নতুন করে একটিসহ মোট ১১টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি সঠিকভাবে পরিপালন করা হচ্ছে না বলে ঋণের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। এই কারণেই তৈরি হচ্ছে মূলধনের সংকট।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মূলধন ঘাটতিতে পড়া ১১টি ব্যাংকের মধ্যে সরকারি পাঁচটি, বিশেষায়িত দুটি ও বেসরকারি খাতের চারটি ব্যাংক রয়েছে। গত মার্চ পর্যন্ত এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিক ডিসেম্বরে ছিল প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে মূলধন ঘাটতি কমে এসেছে প্রায় ৪ হাজার ১৭০ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঋণের গুণগত মান বাড়ানো ছাড়া মূলধন পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। এজন্য ঋণের গুণগত মান বাড়াতে প্রথমত, খেলাপি ঋণ আদায়ে জোর দিতে হবে। একইসঙ্গে নতুন ঋণ বিতরণের আগে ভালোভাবে যাচাই করতে হবে। ঋণ সঠিক খাতে ব্যবহার হচ্ছে কি-না, তা নিখুঁতভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। এছাড়া সব ধরনের অপচয় রোধ করে আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে মূলধন পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে।

এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশে এখন সাতজন শীর্ষ গ্রহীতা ঋণ খেলাপি হলে ৩৫টি ব্যাংক এবং ১০ জন খেলাপি হলে ৩৭টি ব্যাংক মূলধন সংকটে পড়বে। ব্যাংকিং খাত খাদের কিনারে চলে এসেছে। সরকারি হিসাব ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, তিন লাখ কোটি টাকার মতো ঋণ খেলাপি হয়েছে। এটি বিশাল অংক। ব্যাংকিং খাতে এখনই যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া না হলে এই বোঝা জনগণের ওপরই পড়বে।

আন্তর্জাতিক ব্যাসেল-৩ নীতিমালা অনুযায়ী, ঝুঁকি বিবেচনায় ব্যাংকগুলোকে নিয়মিত মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। বর্তমান নিয়মে একটি ব্যাংকের মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ বা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যেটি বেশি, সেটি ন্যূনতম পরিমাণ হিসেবে মূলধন রাখতে হয়। কোনো ব্যাংক এ পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে মূলধন ঘাটতি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে মূলধন সংরক্ষণের এই শর্ত পূরণ করতে পারেনি ১১ ব্যাংক। তবে এ সময়ে বেশিরভাগ ব্যাংকের সার্বিক ব্যাংকিং খাতে মূলধন উদ্বৃত্ত রয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকে ১০টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে ছিল। এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ছিল আরও বেশি, প্রায় ২৮ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা।

মূলধন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলো হলো- বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও এবি ব্যাংক। ইতিপূর্বে সংঘটিত দুর্নীতির জের ধরে ব্যাংকগুলো এই বিরাট অঙ্কের মূলধন ঘাটতির মুখে পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক মার্চ পর্যন্ত ১১ হাজার ২২৯ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছে, যা আগের তিন মাসের চেয়ে চার শতাংশ বেশি। একই সময় সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি তিন হাজার ৬৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে তিন হাজার ৬৯৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, কৃষি ব্যাংকের তহবিল খরচের চেয়ে সুদহার কম। এ জন্য মূলধন ঘাটতিতে আছে। সরকার থেকে তহবিল না পেলে শিগগিরই এ ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব নয়।

এ দিকে আলোচিত বেসিক ব্যাংকের ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিতরণ করা ঋণের বড় অংশ এখন খেলাপি। এর প্রায় ৯০ শতাংশই আদায়যোগ্য নয়। এ সময়ের মধ্যে ব্যাংকটি থেকে অন্তত চার হাজার ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

তৎকালীন চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুসহ ব্যাংকটির আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও বোর্ড সদস্য এতে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ব্যাংকটি উচ্চ সুদে দীর্ঘমেয়াদি আমানত ব্যবস্থা নিয়েছিল। এসব আমানত এখন ব্যাংকের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই উচ্চ সুদ মূলধন ঘাটতির অন্যতম একটি কারণ।

বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনিসুর রহমান জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেসিক ব্যাংককে নিট ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। মূলধন ঘাটতি জের ধরে এই পরিস্থিতির উদ্ভব। আমরা খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছি। ঘাটতি কমাতে সহায়তা করবে এটি। এ ছাড়া ব্যাংকটি বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কাছে স্বল্প সুদে আমানত খোঁজ করছে। বেসিক ব্যাংক যদি সরকারি সংস্থাগুলোর কাছ থেকে স্বল্প খরচে আমানত পেতে সক্ষম হয়, তবে তারা সুন্দরভাবে ব্যালেন্সশিট ব্যবস্থাপনা করতে পারবে। পাশাপাশি তা মুনাফাও অর্জন সাহায্য করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ বিবেচনায় গত মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোর মূলধন রাখার কথা এক লাখ ১৮ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা। তবে আপৎকালীন সুরক্ষা সঞ্চয়সহ ব্যাংক খাতে মূলধন রয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। এতে করে সার্বিক উদ্বৃত্ত রয়েছে ১৬ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আগের প্রান্তিক গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল ১১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এদিকে ২০১৬ সাল থেকে ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফার বা আপৎকালীন সুরক্ষা সঞ্চয় হিসাবে ব্যাংকগুলোকে অতিরিক্ত মূলধন রাখতে হচ্ছে।

ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়নের আওতায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শূন্য দশমিক ৬২৫, ২০১৭ সালে ১ দশমিক ২৫, ২০১৮ সালে ১ দশমিক ৮৭৫ ও ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে এই বাড়তি পুঁজি সংরক্ষণের নির্দেশনা ছিল। এভাবে ন্যূনতম মূলধন এবং সংস্থান বজায় রেখে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততার হারের লক্ষ্যমাত্রা যথাক্রমে ১০ দশমিক ৬২৫, ১১ দশমিক ২৫, ১১ দশমিক ৮৭৫ ও ১২ দশমিক ৫০ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলা ছিল।

ব্যাংকের মূলধন সংকট কেন বাড়ছে

প্রকাশের সময় : ১২:১৮:৩৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ জুলাই ২০২১

বানিজ্য ডেস্ক ।।

দীর্ঘদিন ধরে মূলধন ঘাটতিতে ধুঁকছে বেশ কিছু ব্যাংক। সরকারি ব্যাংকগুলো ঘাটতির ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এর বাইরে বেসরকারি খাতের কিছু ব্যাংক ঘুরে-ফিরে ঘাটতি পড়ছে। করোনাকালীন নানা সুবিধার মধ্যেও ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে প্রয়োজনীয় মূলধন সংরক্ষণে কোনো উন্নতি নেই কয়েকটি ব্যাংকের। 

চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে নতুন করে একটিসহ মোট ১১টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে নিয়ম-নীতি সঠিকভাবে পরিপালন করা হচ্ছে না বলে ঋণের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে। এই কারণেই তৈরি হচ্ছে মূলধনের সংকট।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, মূলধন ঘাটতিতে পড়া ১১টি ব্যাংকের মধ্যে সরকারি পাঁচটি, বিশেষায়িত দুটি ও বেসরকারি খাতের চারটি ব্যাংক রয়েছে। গত মার্চ পর্যন্ত এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ২৪ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। আগের প্রান্তিক ডিসেম্বরে ছিল প্রায় ২৯ হাজার কোটি টাকা। তিন মাসের ব্যবধানে মূলধন ঘাটতি কমে এসেছে প্রায় ৪ হাজার ১৭০ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঋণের গুণগত মান বাড়ানো ছাড়া মূলধন পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। এজন্য ঋণের গুণগত মান বাড়াতে প্রথমত, খেলাপি ঋণ আদায়ে জোর দিতে হবে। একইসঙ্গে নতুন ঋণ বিতরণের আগে ভালোভাবে যাচাই করতে হবে। ঋণ সঠিক খাতে ব্যবহার হচ্ছে কি-না, তা নিখুঁতভাবে খতিয়ে দেখতে হবে। এছাড়া সব ধরনের অপচয় রোধ করে আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে মূলধন পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে।

এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেশে এখন সাতজন শীর্ষ গ্রহীতা ঋণ খেলাপি হলে ৩৫টি ব্যাংক এবং ১০ জন খেলাপি হলে ৩৭টি ব্যাংক মূলধন সংকটে পড়বে। ব্যাংকিং খাত খাদের কিনারে চলে এসেছে। সরকারি হিসাব ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের হিসাবে দেখা যাচ্ছে, তিন লাখ কোটি টাকার মতো ঋণ খেলাপি হয়েছে। এটি বিশাল অংক। ব্যাংকিং খাতে এখনই যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া না হলে এই বোঝা জনগণের ওপরই পড়বে।

আন্তর্জাতিক ব্যাসেল-৩ নীতিমালা অনুযায়ী, ঝুঁকি বিবেচনায় ব্যাংকগুলোকে নিয়মিত মূলধন সংরক্ষণ করতে হয়। বর্তমান নিয়মে একটি ব্যাংকের মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ বা ৪০০ কোটি টাকার মধ্যে যেটি বেশি, সেটি ন্যূনতম পরিমাণ হিসেবে মূলধন রাখতে হয়। কোনো ব্যাংক এ পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণে ব্যর্থ হলে মূলধন ঘাটতি হিসাবে বিবেচনা করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে মূলধন সংরক্ষণের এই শর্ত পূরণ করতে পারেনি ১১ ব্যাংক। তবে এ সময়ে বেশিরভাগ ব্যাংকের সার্বিক ব্যাংকিং খাতে মূলধন উদ্বৃত্ত রয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর প্রান্তিকে ১০টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে ছিল। এসব ব্যাংকের মূলধন ঘাটতির পরিমাণ ছিল আরও বেশি, প্রায় ২৮ হাজার ৯৫২ কোটি টাকা।

মূলধন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংকগুলো হলো- বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, পদ্মা ব্যাংক ও এবি ব্যাংক। ইতিপূর্বে সংঘটিত দুর্নীতির জের ধরে ব্যাংকগুলো এই বিরাট অঙ্কের মূলধন ঘাটতির মুখে পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক মার্চ পর্যন্ত ১১ হাজার ২২৯ কোটি টাকার মূলধন ঘাটতির সম্মুখীন হয়েছে, যা আগের তিন মাসের চেয়ে চার শতাংশ বেশি। একই সময় সোনালী ব্যাংকের মূলধন ঘাটতি তিন হাজার ৬৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে তিন হাজার ৬৯৭ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া বলেন, কৃষি ব্যাংকের তহবিল খরচের চেয়ে সুদহার কম। এ জন্য মূলধন ঘাটতিতে আছে। সরকার থেকে তহবিল না পেলে শিগগিরই এ ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব নয়।

এ দিকে আলোচিত বেসিক ব্যাংকের ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বিতরণ করা ঋণের বড় অংশ এখন খেলাপি। এর প্রায় ৯০ শতাংশই আদায়যোগ্য নয়। এ সময়ের মধ্যে ব্যাংকটি থেকে অন্তত চার হাজার ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

তৎকালীন চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুসহ ব্যাংকটির আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ও বোর্ড সদস্য এতে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ আছে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে ব্যাংকটি উচ্চ সুদে দীর্ঘমেয়াদি আমানত ব্যবস্থা নিয়েছিল। এসব আমানত এখন ব্যাংকের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই উচ্চ সুদ মূলধন ঘাটতির অন্যতম একটি কারণ।

বেসিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আনিসুর রহমান জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেসিক ব্যাংককে নিট ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। মূলধন ঘাটতি জের ধরে এই পরিস্থিতির উদ্ভব। আমরা খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করছি। ঘাটতি কমাতে সহায়তা করবে এটি। এ ছাড়া ব্যাংকটি বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কাছে স্বল্প সুদে আমানত খোঁজ করছে। বেসিক ব্যাংক যদি সরকারি সংস্থাগুলোর কাছ থেকে স্বল্প খরচে আমানত পেতে সক্ষম হয়, তবে তারা সুন্দরভাবে ব্যালেন্সশিট ব্যবস্থাপনা করতে পারবে। পাশাপাশি তা মুনাফাও অর্জন সাহায্য করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের ১০ শতাংশ বিবেচনায় গত মার্চ শেষে ব্যাংকগুলোর মূলধন রাখার কথা এক লাখ ১৮ হাজার ৮৪৪ কোটি টাকা। তবে আপৎকালীন সুরক্ষা সঞ্চয়সহ ব্যাংক খাতে মূলধন রয়েছে এক লাখ ৩৫ হাজার ৪০৬ কোটি টাকা। এতে করে সার্বিক উদ্বৃত্ত রয়েছে ১৬ হাজার ৫৬২ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আগের প্রান্তিক গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল ১১ দশমিক ৯৪ শতাংশ। এদিকে ২০১৬ সাল থেকে ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফার বা আপৎকালীন সুরক্ষা সঞ্চয় হিসাবে ব্যাংকগুলোকে অতিরিক্ত মূলধন রাখতে হচ্ছে।

ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়নের আওতায় ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে শূন্য দশমিক ৬২৫, ২০১৭ সালে ১ দশমিক ২৫, ২০১৮ সালে ১ দশমিক ৮৭৫ ও ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ২ দশমিক ৫ শতাংশ হারে এই বাড়তি পুঁজি সংরক্ষণের নির্দেশনা ছিল। এভাবে ন্যূনতম মূলধন এবং সংস্থান বজায় রেখে ২০১৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ব্যাংকের মূলধন পর্যাপ্ততার হারের লক্ষ্যমাত্রা যথাক্রমে ১০ দশমিক ৬২৫, ১১ দশমিক ২৫, ১১ দশমিক ৮৭৫ ও ১২ দশমিক ৫০ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলা ছিল।