শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভাসমান বাজারে ডিঙি নৌকায় লেবুর হাট!

ডিঙি নৌকায় লেবুর হাট!
ঝালকাঠি প্রতিনিধি।।
ঝালকাঠির শহর থেকে কীর্তিপাশা হয়ে সরু সড়ক ধরে এগিয়ে গেলেই বিখ্যাত ভীমরুলী বাজার। খালের পাড় ঘেঁষে বিখ্যাত ভাসমান বাজারে যেতে যেতে ধরা দেবে চিরায়ত গ্রাম-বাংলার মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য। যদিও এক সময়ের মেঠোপথ এখন পিচঢালা সড়ক। মোটরসাইকেলযোগে শহর থেকে মাত্র ৩০ মিনিটেই পৌঁছা যায় ভীমরুলী বাজারে।
পেয়ারার জন্য বিখ্যাত হলেও এখন ভীমরুলীর ভাসমান হাটে লেবুর রাজত্ব। আগস্ট মাস থেকে বসবে পেয়ারার হাট। এখন ব্রিজের উপরে দাঁড়ালে দেখা যাবে শত শত ছোট ডিঙি নৌকায় করে হাটে আসছে লেবু। খালের মধ্যে যেন সবুজের এক সমারোহ। লেবু চাষিরা খুব সকালে বিভিন্ন বাগানের গাছ থেকে লেবু সংগ্রহ করে নৌকায় নিয়ে আসছে ভীমরুলী খালের ভাসমান হাটে।
আশপাশের ২২ গ্রামের চাষিরা প্রতিদিন মিলিত হন এই হাটে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা এখান থেকে লেবু নিয়ে যান। ভাসমান লেবু বাজারের বেচা-কেনা দেখতে দেশি- বিদেশি অনেক পর্যটকও ভিড় করতেন।
তবে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণ পাইকার ও পর্যটকদের সংখ্যা এখন কম। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এই হাট জমে থাকে লেবু চাষি, পাইকার ও দর্শনার্থীদের কোলাহলে।
এখানে শুধু লেবুর বেচাকেনাই হয় না। ভাসমান হাটের সঙ্গে জড়িতরা জানান, পেয়েরার মৌসুমে পর্যটকের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। আগস্ট মাসের শেষের দিকে একই নৌকায় করে আমড়া চাষিরা ভাসমান হাটে পসরা বসান। পেয়ার, আমড়া, লেবুসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি বেচাকানার জন্য বিখ্যাত ভীমরুলীর ভাসমান হাট।
সরেজমিন ভীমরুলীর ভাসমান হাটে গিয়ে দেখা যায় লেবু চাষিরা ভীমরুলীর খালে ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় লেবু নিয়ে পাইকারদের আশায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিছু কিছু পাইকারও দেখা গেলো খাল পাড়ে। তারা নৌকা ডেকে কিনারে এনে লেবুর দরদাম করছেন। লেবু চাষিরা লেবু বিক্রি করছেন পোন হিসেবে। ৮০টি লেবুতে এক পোন হয়।
ঝালকাঠির সদর উপজেলার ডুমুরিয়া, খেজুরা, কীর্তিপাশা, মিরাকাঠি, বাউকাঠি, শতদশকাঠি, ভিমরুলী, কাফুরকাঠি, আটঘর, গাভারামচন্দ্রপুর, পোষন্ডাসহ ২২ গ্রামের চাষিরা এই হাটে লেবু বিক্রি করেন। কাগজি লেবুই এখানে বেশি জনপ্রিয়। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ সুগন্ধ ও রসে ভরা এই লেবুর চাহিদাও বেশি। এসব এলাকায় শুধু লেবু চাষ করেই অনেকে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন।
জেলার কৃষি বিভাগ জানায় ঝালকাঠি জেলায় ২৫০ হেক্টর জমিতে লেবুর চাষ হয়। বছরে জেলায় ১৮৭৫ মে.টন লেবু উৎপাদন হয়। লেবুর উৎপাদন খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় চাষিরা লেবু চাষে বেশ আগ্রহী।
লেবু চাষিরা জানান, এক পোন (৮০টি) লেবু তারা চারশ’ টাকা বিক্রি করেন। তবে লকডাউনের কারণে জেলার বাইরে তাদের পণ্য পরিবহনে সমস্যা হওয়ায় এখন দাম কমে গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও আগের দরে লেবু বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন চাষিরা।
লেবু চাষি তৈয়বুর রহমান বলেন, আমি চার বিঘা জমিতে কাগজি লেবুর চাষ করেছি। উৎপাদন খরচ ছিল ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু বছরে বিক্রি করেছি প্রায় ৪ লাখ টাকার লেবু।
ভাসমান হাটে আসা কয়েকজন লেবু চাষি জানান সার সংকট, সরকারি ঋণ ও কৃষি বিভাগের প্রয়োজনীয় পরামর্শ না পাওয়ার কথা। চাষিরা বলেন, সারের অভাবে অনেক সময় লেবু গাছের পাতা সাদা হয়ে যায়। এ কারণে ফলন ব্যহত হয়। এ বিষয়ে কৃষি বিভাগের সহায়তা চেয়েছেন তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. ফজলুল হক বলেন, লেবু মানুষের শরীরে লেবু ভিটামিন সি’র ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে। লেবু চাষের পরিধি বাড়াতে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং সার ও ঋণের সংকট দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

ভাসমান বাজারে ডিঙি নৌকায় লেবুর হাট!

প্রকাশের সময় : ০৬:৩৪:০৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ জুলাই ২০২১
ডিঙি নৌকায় লেবুর হাট!
ঝালকাঠি প্রতিনিধি।।
ঝালকাঠির শহর থেকে কীর্তিপাশা হয়ে সরু সড়ক ধরে এগিয়ে গেলেই বিখ্যাত ভীমরুলী বাজার। খালের পাড় ঘেঁষে বিখ্যাত ভাসমান বাজারে যেতে যেতে ধরা দেবে চিরায়ত গ্রাম-বাংলার মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য। যদিও এক সময়ের মেঠোপথ এখন পিচঢালা সড়ক। মোটরসাইকেলযোগে শহর থেকে মাত্র ৩০ মিনিটেই পৌঁছা যায় ভীমরুলী বাজারে।
পেয়ারার জন্য বিখ্যাত হলেও এখন ভীমরুলীর ভাসমান হাটে লেবুর রাজত্ব। আগস্ট মাস থেকে বসবে পেয়ারার হাট। এখন ব্রিজের উপরে দাঁড়ালে দেখা যাবে শত শত ছোট ডিঙি নৌকায় করে হাটে আসছে লেবু। খালের মধ্যে যেন সবুজের এক সমারোহ। লেবু চাষিরা খুব সকালে বিভিন্ন বাগানের গাছ থেকে লেবু সংগ্রহ করে নৌকায় নিয়ে আসছে ভীমরুলী খালের ভাসমান হাটে।
আশপাশের ২২ গ্রামের চাষিরা প্রতিদিন মিলিত হন এই হাটে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা এখান থেকে লেবু নিয়ে যান। ভাসমান লেবু বাজারের বেচা-কেনা দেখতে দেশি- বিদেশি অনেক পর্যটকও ভিড় করতেন।
তবে বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির কারণ পাইকার ও পর্যটকদের সংখ্যা এখন কম। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এই হাট জমে থাকে লেবু চাষি, পাইকার ও দর্শনার্থীদের কোলাহলে।
এখানে শুধু লেবুর বেচাকেনাই হয় না। ভাসমান হাটের সঙ্গে জড়িতরা জানান, পেয়েরার মৌসুমে পর্যটকের ভিড় সামলাতে হিমশিম খেতে হয়। আগস্ট মাসের শেষের দিকে একই নৌকায় করে আমড়া চাষিরা ভাসমান হাটে পসরা বসান। পেয়ার, আমড়া, লেবুসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি বেচাকানার জন্য বিখ্যাত ভীমরুলীর ভাসমান হাট।
সরেজমিন ভীমরুলীর ভাসমান হাটে গিয়ে দেখা যায় লেবু চাষিরা ভীমরুলীর খালে ছোট ছোট ডিঙি নৌকায় লেবু নিয়ে পাইকারদের আশায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কিছু কিছু পাইকারও দেখা গেলো খাল পাড়ে। তারা নৌকা ডেকে কিনারে এনে লেবুর দরদাম করছেন। লেবু চাষিরা লেবু বিক্রি করছেন পোন হিসেবে। ৮০টি লেবুতে এক পোন হয়।
ঝালকাঠির সদর উপজেলার ডুমুরিয়া, খেজুরা, কীর্তিপাশা, মিরাকাঠি, বাউকাঠি, শতদশকাঠি, ভিমরুলী, কাফুরকাঠি, আটঘর, গাভারামচন্দ্রপুর, পোষন্ডাসহ ২২ গ্রামের চাষিরা এই হাটে লেবু বিক্রি করেন। কাগজি লেবুই এখানে বেশি জনপ্রিয়। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ সুগন্ধ ও রসে ভরা এই লেবুর চাহিদাও বেশি। এসব এলাকায় শুধু লেবু চাষ করেই অনেকে ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন।
জেলার কৃষি বিভাগ জানায় ঝালকাঠি জেলায় ২৫০ হেক্টর জমিতে লেবুর চাষ হয়। বছরে জেলায় ১৮৭৫ মে.টন লেবু উৎপাদন হয়। লেবুর উৎপাদন খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় চাষিরা লেবু চাষে বেশ আগ্রহী।
লেবু চাষিরা জানান, এক পোন (৮০টি) লেবু তারা চারশ’ টাকা বিক্রি করেন। তবে লকডাউনের কারণে জেলার বাইরে তাদের পণ্য পরিবহনে সমস্যা হওয়ায় এখন দাম কমে গেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবারও আগের দরে লেবু বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন চাষিরা।
লেবু চাষি তৈয়বুর রহমান বলেন, আমি চার বিঘা জমিতে কাগজি লেবুর চাষ করেছি। উৎপাদন খরচ ছিল ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু বছরে বিক্রি করেছি প্রায় ৪ লাখ টাকার লেবু।
ভাসমান হাটে আসা কয়েকজন লেবু চাষি জানান সার সংকট, সরকারি ঋণ ও কৃষি বিভাগের প্রয়োজনীয় পরামর্শ না পাওয়ার কথা। চাষিরা বলেন, সারের অভাবে অনেক সময় লেবু গাছের পাতা সাদা হয়ে যায়। এ কারণে ফলন ব্যহত হয়। এ বিষয়ে কৃষি বিভাগের সহায়তা চেয়েছেন তারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. ফজলুল হক বলেন, লেবু মানুষের শরীরে লেবু ভিটামিন সি’র ঘাটতি পূরণে সহায়তা করে। লেবু চাষের পরিধি বাড়াতে চাষিদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং সার ও ঋণের সংকট দূর করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।