শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রূপগঞ্জে বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব, একদিনে কামড়ে আহত ৫

মুরাদ হাসান, রূপগঞ্জ।। 
বার বার বলা সত্ত্বেও কুকুর নিধন কার্যক্রম শুরু করে নি প্রশাসন। অল্প কিছু সংখ্যক কুকুরকে ভ্যাকসিন দেয়া হলেও উপজেলার বেশির ভাগ এলাকায়ই কুকুরের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। ১৭ অক্টোবর রোববার একদিনেই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অন্তত ৫ জনকে কামড়িয়েছে কুকুর। যন্ত্রণা নিয়ে অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এ নিয়ে গোটা রূপগঞ্জজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
রোববার রাতে কুকুরের কামড়ে আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন নগরপাড়া এলাকার বিল্লাল হোসেন। তিনি বলেন, রাত সাগে ৮ টার দিকে উপজেলার কামশাইর এলাকায় হাটাহাটির সময় হঠাৎ করেই একটি কুকুর আমাকে ঝাপটে ধরে। মুখে ও উরুতে কাবলে মাংস ছিড়ে নেয়। ব্যথায় জালায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।
বেওয়ারিশ কুকুরের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে রূপগঞ্জবাসী। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার কারণে কুকুর নিধন বন্ধ থাকায় ও নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে ক্রমেই কুকুরের সংখ্যা বেড়ে চলছে। উপজেলায় প্রায় তিন হাজার বেওয়ারিশ কুকুর রয়েছে। জলাতঙ্কে আক্রান্ত কুকুরের কামড়ে ও আঁচড়ে গড়ে প্রতিদিন ৫ জন আক্রান্ত হচ্ছে। গত এক বছরে ৪ হাজার মানুষ জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে টিকা নিয়েছে। তবে আশ্চর্যের বিষয়, গ্রামেগঞ্জে এখনো জলাতঙ্কের টিকা না নিয়ে কবিরাজের দাওয়াই নিচ্ছে। বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রবে পথচারী থেকে শুরু করে বাজারে-বন্দরে লোকজন রীতিমতো আতঙ্ক নিয়ে চলাফেরা করে। গত তিনমাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কুকুরের কামড়ে প্রায় শতাধিক ব্যাক্তি আক্রান্ত হয়েছে।
 জানা গেছে, প্রতিদিনই উপজেলার কোথাও না কোথাও জলাতঙ্ক কুকুড়ের কামড়ে ও আঁচড়ে আক্রান্ত হওয়ার খবর রয়েছে। একদিনে ৫ জন কুকুড়ের কামড়ে দিয়েছে। প্রায় তিন হাজার বেওয়ারিশ পথ কুকুড় রাস্তা-ঘাট, পথ-ঘাট ও অলিগলি দখলে রেখেছে। গোটা উপজেলায় হাট-বাজার রয়েছে দেড়’শ উপড়ে। আর এসব এলাকায় প্রায় ৩০০০ হাজার বেওয়ারিশ কুকুর অবাধ বিচরণ করছে।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারী হাসপাতালগুলোর দেওয়া তথ্যমতে, সপ্তাহে অন্তত ২/৩ জন কুকুড়ে কামড়ে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। আবার অনেক জটিল রোগীকে মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ভোক্তভুগি মহসিন মিয়া বলেন, ৬ মাসে আমার ৮ টি ছাগলকে কামড়ে মেওে ফেলেছে এ কুকুরদল। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে বার বার জানালেও কিছুই করেন নি তারা। দু’একদিন কিছু এলাকায় লোক দেখানো ফটোশেসন ভ্যাকসিন প্রদান করেই তাদের দায় শেষ করেছেন।
 উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাস্তাঘাটে বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব বেড়ে গেছে। কুকুরের যন্ত্রণায় ঘর থেকে বের হওয়া দায়। প্রত্যেক গ্রামে ও হাট-বাজারে কুকুরের অবাধ বিচরণ রয়েছে। গত কয়েক মাসে কুকুরের কামড়ে প্রায় শতাধিক লোক আক্রান্ত হয়েছে। বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব বেড়ে গেলেও সরকারীভাবে কুকুর নিধণের কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনি। কথা হয় নগরপাড়া এলাকার ছলিম হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভাই এত কুকুর। রাস্তায় বের হলেই ঘেউ-ঘেউ করে তেড়ে আসে। আর রাত হলেতো কথাই নেই। কুকুর নিধণ কাযক্রম সর্¤úকে বলেন, গত কয়েক মাসে কুকুর মেরেছে এমন ঘটনা ঘটেনি। তারাবো বাজারে কথা হয় পারবেজ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ৪/৫ টা করে কুকুর দোকানের সামনে এসে বসে থাকে। অনেক সময় ক্রেতারা ভয়ে আসতে চায় না। কুকুর নিয়ে সবাই আতঙ্ক আর ভোগান্তিতে আছে। অথচ কুকুর নিধণে কোন কাযক্রম নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক কর্মকর্তা ডাঃ ফয়সাল আহমেদ বলেন, সাধারণ কুকুরের কামড়ে সংক্রমণ, টিটেনাস রোগের আশঙ্কা থাকে। শিশুদের নাকে-মুখে কুকুর কামড়ালে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই তারা মারা যায়। র‌্যাবিস ভাইরাসে আক্রান্ত কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, বেজি, বানর ও চিকার মাধ্যমেও জলাতঙ্ক রোগ ছড়ায়। আমাদের দেশে মূলত কুকুরের কামড়ে বা আচঁড়ে ( রক্ত বের না হলেও ) জলাতঙ্ক রোগ বেশি হয়।
 অন্ধ মিয়াজুদ্দিন বলেন, আমাকে কামড়েছে , আমি বুঝি এর কি জ¦ালা। শুনেছি কুকুর নিধন বা ভ্যাকসিন প্রদানের জন্য বরাদ্ধ আসে। তাইলে ওই টাকা যায় কই? কুকুর নিধন বা ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রমতো চোখেই দেখলাম না আজ অবধি।
বেসরকারী হাসপাতাল আল-রাফি হসপিটালের চেয়ারম্যান, কলামিষ্ট ও গবেষক মীর আব্দুল আলীম বলেন, কুকুর আতঙ্কের প্রাণী। নিধন না হওয়ার কারণে কুকুরের উপদ্রব বেড়েই চলছে। আল-রাফি হাসপাতালে এসব রোগীদের গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ ডাঃ রিগ্যান মোল্লা বলেন, আসলে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার কারণে কুকুর নিধণ সম্ভব হচ্ছে না। উপজেলার প্রতিটি এলাকায় কুকুরকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। সমস্যা হওয়ার কথা না। তারপরও কুকুরের উপদ্রব যে হারে বাড়ছে তাতে সমাজের ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হবে। তবে জেলা থেকে ভ্যাকসিনের মাধ্যমে কুকুর নিধন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বার্তাকণ্ঠ /এন

২৮ ঘন্টা বাঘের ডেরায়, রাত কেটেছে উচুঁ কেওড়া গাছের ডালে

রূপগঞ্জে বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব, একদিনে কামড়ে আহত ৫

প্রকাশের সময় : ০৪:৪৭:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ অক্টোবর ২০২১
মুরাদ হাসান, রূপগঞ্জ।। 
বার বার বলা সত্ত্বেও কুকুর নিধন কার্যক্রম শুরু করে নি প্রশাসন। অল্প কিছু সংখ্যক কুকুরকে ভ্যাকসিন দেয়া হলেও উপজেলার বেশির ভাগ এলাকায়ই কুকুরের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়নি বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। ১৭ অক্টোবর রোববার একদিনেই উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে অন্তত ৫ জনকে কামড়িয়েছে কুকুর। যন্ত্রণা নিয়ে অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এ নিয়ে গোটা রূপগঞ্জজুড়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে।
রোববার রাতে কুকুরের কামড়ে আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন নগরপাড়া এলাকার বিল্লাল হোসেন। তিনি বলেন, রাত সাগে ৮ টার দিকে উপজেলার কামশাইর এলাকায় হাটাহাটির সময় হঠাৎ করেই একটি কুকুর আমাকে ঝাপটে ধরে। মুখে ও উরুতে কাবলে মাংস ছিড়ে নেয়। ব্যথায় জালায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি।
বেওয়ারিশ কুকুরের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে রূপগঞ্জবাসী। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার কারণে কুকুর নিধন বন্ধ থাকায় ও নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণে ক্রমেই কুকুরের সংখ্যা বেড়ে চলছে। উপজেলায় প্রায় তিন হাজার বেওয়ারিশ কুকুর রয়েছে। জলাতঙ্কে আক্রান্ত কুকুরের কামড়ে ও আঁচড়ে গড়ে প্রতিদিন ৫ জন আক্রান্ত হচ্ছে। গত এক বছরে ৪ হাজার মানুষ জলাতঙ্কে আক্রান্ত হয়ে টিকা নিয়েছে। তবে আশ্চর্যের বিষয়, গ্রামেগঞ্জে এখনো জলাতঙ্কের টিকা না নিয়ে কবিরাজের দাওয়াই নিচ্ছে। বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রবে পথচারী থেকে শুরু করে বাজারে-বন্দরে লোকজন রীতিমতো আতঙ্ক নিয়ে চলাফেরা করে। গত তিনমাসে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কুকুরের কামড়ে প্রায় শতাধিক ব্যাক্তি আক্রান্ত হয়েছে।
 জানা গেছে, প্রতিদিনই উপজেলার কোথাও না কোথাও জলাতঙ্ক কুকুড়ের কামড়ে ও আঁচড়ে আক্রান্ত হওয়ার খবর রয়েছে। একদিনে ৫ জন কুকুড়ের কামড়ে দিয়েছে। প্রায় তিন হাজার বেওয়ারিশ পথ কুকুড় রাস্তা-ঘাট, পথ-ঘাট ও অলিগলি দখলে রেখেছে। গোটা উপজেলায় হাট-বাজার রয়েছে দেড়’শ উপড়ে। আর এসব এলাকায় প্রায় ৩০০০ হাজার বেওয়ারিশ কুকুর অবাধ বিচরণ করছে।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ, স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারী হাসপাতালগুলোর দেওয়া তথ্যমতে, সপ্তাহে অন্তত ২/৩ জন কুকুড়ে কামড়ে আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। আবার অনেক জটিল রোগীকে মহাখালী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে পাঠানো হয়।
ভোক্তভুগি মহসিন মিয়া বলেন, ৬ মাসে আমার ৮ টি ছাগলকে কামড়ে মেওে ফেলেছে এ কুকুরদল। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে বার বার জানালেও কিছুই করেন নি তারা। দু’একদিন কিছু এলাকায় লোক দেখানো ফটোশেসন ভ্যাকসিন প্রদান করেই তাদের দায় শেষ করেছেন।
 উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাস্তাঘাটে বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব বেড়ে গেছে। কুকুরের যন্ত্রণায় ঘর থেকে বের হওয়া দায়। প্রত্যেক গ্রামে ও হাট-বাজারে কুকুরের অবাধ বিচরণ রয়েছে। গত কয়েক মাসে কুকুরের কামড়ে প্রায় শতাধিক লোক আক্রান্ত হয়েছে। বেওয়ারিশ কুকুরের উপদ্রব বেড়ে গেলেও সরকারীভাবে কুকুর নিধণের কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনি। কথা হয় নগরপাড়া এলাকার ছলিম হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ভাই এত কুকুর। রাস্তায় বের হলেই ঘেউ-ঘেউ করে তেড়ে আসে। আর রাত হলেতো কথাই নেই। কুকুর নিধণ কাযক্রম সর্¤úকে বলেন, গত কয়েক মাসে কুকুর মেরেছে এমন ঘটনা ঘটেনি। তারাবো বাজারে কথা হয় পারবেজ মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, ৪/৫ টা করে কুকুর দোকানের সামনে এসে বসে থাকে। অনেক সময় ক্রেতারা ভয়ে আসতে চায় না। কুকুর নিয়ে সবাই আতঙ্ক আর ভোগান্তিতে আছে। অথচ কুকুর নিধণে কোন কাযক্রম নেই।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক কর্মকর্তা ডাঃ ফয়সাল আহমেদ বলেন, সাধারণ কুকুরের কামড়ে সংক্রমণ, টিটেনাস রোগের আশঙ্কা থাকে। শিশুদের নাকে-মুখে কুকুর কামড়ালে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই তারা মারা যায়। র‌্যাবিস ভাইরাসে আক্রান্ত কুকুর, বিড়াল, শিয়াল, বেজি, বানর ও চিকার মাধ্যমেও জলাতঙ্ক রোগ ছড়ায়। আমাদের দেশে মূলত কুকুরের কামড়ে বা আচঁড়ে ( রক্ত বের না হলেও ) জলাতঙ্ক রোগ বেশি হয়।
 অন্ধ মিয়াজুদ্দিন বলেন, আমাকে কামড়েছে , আমি বুঝি এর কি জ¦ালা। শুনেছি কুকুর নিধন বা ভ্যাকসিন প্রদানের জন্য বরাদ্ধ আসে। তাইলে ওই টাকা যায় কই? কুকুর নিধন বা ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রমতো চোখেই দেখলাম না আজ অবধি।
বেসরকারী হাসপাতাল আল-রাফি হসপিটালের চেয়ারম্যান, কলামিষ্ট ও গবেষক মীর আব্দুল আলীম বলেন, কুকুর আতঙ্কের প্রাণী। নিধন না হওয়ার কারণে কুকুরের উপদ্রব বেড়েই চলছে। আল-রাফি হাসপাতালে এসব রোগীদের গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হয়।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ ডাঃ রিগ্যান মোল্লা বলেন, আসলে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার কারণে কুকুর নিধণ সম্ভব হচ্ছে না। উপজেলার প্রতিটি এলাকায় কুকুরকে ভ্যাকসিন দেয়া হয়েছে। সমস্যা হওয়ার কথা না। তারপরও কুকুরের উপদ্রব যে হারে বাড়ছে তাতে সমাজের ও পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হবে। তবে জেলা থেকে ভ্যাকসিনের মাধ্যমে কুকুর নিধন করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বার্তাকণ্ঠ /এন