শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

লালমনিরহাটে যৌতুক না দেওয়ায় নববঁধুকে নির্যাতন করে তালাক

মোস্তাফিজুর রহমান,  লালমনিরহাট।। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় স্বামী ও শ্বশুড়ের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগ দেয়ায় মনজিলা পারভিন তিন্নি (১৯) নামে এক নববধু’কে প্রথম তালাক দিয়েছেন যৌতুক লোভী স্বামী।নববধু মোছা. মনজিলা পারভিন তিন্নি উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের দক্ষিণ বত্রিশ হাজারী গ্রামের মো. ফরহাদ হোসেনের স্ত্রী।

অভিযোগে সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের বনচৌকী গ্রামের বাসিন্দা মো. মনিরুজ্জামানের কণ্যা মনজিলা পারভিন তিন্নির সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন দক্ষিণ বত্রিশ হাজারী গ্রামের মো. আব্দুল মতিনের ছেলে ফরহাদ হোসেন। গত ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারী প্রেম পরিনয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন প্রেমিক যুগল। বিয়ের কিছু দিন না যেতেই বেকার যুবক স্বামী ফরহাদ ও তার পরিবার যৌতুক হিসেবে দুই লাখ টাকা দাবি করেন। প্রেম পরিনয়ে বিয়ের কারনে মনজিলার বাবা যৌতুক দিতে অস্বীকার করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মনজিলার উপর চলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। গত ১০ আগস্ট যৌতুকের ২ লাখ টাকা বাবার বাড়ি থেকে নিয়ে আসার জন্য চাপ দিলে নববধু মনজিলা যেতে অনীহা প্রকাশ করেন।এদিকে, যৌতুক লোভী স্বামীর নির্দেশ না মানায় স্বামী ফরহাদ ও তার বাবা মা মিলে তাকে মারপিট করে ঘরে আটকায়ে রাখে।

পরদিন তাকে জোরপুর্বক বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে দাবিকৃত টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ দেয়। অবশেষে নিরুপায় নববধু মনজিলা বাধ্য হয়ে বাবার বাড়ি চলে যান।এ ঘটনায় বিচার চেয়ে আদিতমারী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নববধু মনজিলা। তার গরীব বাবা মেয়ের সুখের জন্য যৌতুকের টাকা জোগার করতে জমি বিক্রির ঘোষনা দেন।এরই মাঝে গত সপ্তাহে হঠাৎ ডাকযোগে আসা চিঠি খুলে মনিরুজ্জামান দেখতে পান চিঠিটি মেয়ের প্রথম তালাকের খবর। মুহুর্তেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয় গরীব বাবা মনিরুজ্জামানের। উপায়ন্তর না পেয়ে থানায় ও স্থানীয়দের স্মরনাপন্ন হন তিনি।বিষয়টি আপোষ করতে উভয়পক্ষকে নিয়ে  বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) ভাদাই ইউনিয়ন পরিষদে বৈঠকে বসেন ওই ইউপি চেয়ারম্যান রোকনুজ্জামান রোকন। বৈঠকে স্বামী ফরহাদ ও শ্বশুড় মতিনের পা ধরে কয়েক দিনের সময় চেয়ে  কান্না করে জীবন ভিক্ষা চান নববধু মনজিলা। কিন্তু যৌতুক লোভী স্বামী শ্বশুড়ের মন গলেনি। তালাক দিতেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন তারা। এ সময় নববধুকে দেনমোহর পরিশোধ স্বাপেক্ষে খোলা তালাকের সিদ্ধান্ত নেন মাতব্বররা। এ খবর শুনে বৈঠকেই সজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন নববধূ মনজিলা। বৈঠক অসমাপ্ত রেখে আহত নববধুকে নেয়া হয় আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

সেখানে চিকিৎসা চলছে তার। জ্ঞান ফিরে এলেই স্বামীর বাড়ি যেতে ডুকরে কান্না করছেন নববধু।হাসপাতালের বেডে চিকিৎসাধীন নববধূ মনজিলা পারভিন তিন্নি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, স্বামী ও শ্বশুড়ের পা ধরে কান্না করেছি একটু সময় চেয়েছি। তারা শুনেনি। আপোষে স্বাক্ষর নেয়ার কথা বলে খোলা তালাকের ঘোষনা দিয়েছে। তালাক দিলে আমি আত্নহত্যা করবো। এর দায় স্বামী ও শ্বশুড়কে নিতে হবে। অভিযুক্ত স্বামী ফরহাদ হোসেন  বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের বৈঠকে খোলা তালাক হয়েছে। তবে কোন নিকাহ রেজিস্টার খোলা তালাক কার্যকর করেছেন তার নাম পরিচয় তিনি দিতে পারেননি।

জানতে চাইলে ভাদাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. রোকনুজ্জামান রোকন  বলেন, উভয়পক্ষকে নিয়ে আপোষের জন্য বসেছিলাম। মেয়ে সংসার করার জন্য স্বামী ও শ্বশুড়ের কাছে প্রথমবারের মত ক্ষমা চেয়েছে। কিন্তু স্বামী কোন ভাবেই সংসার করবে না। তাই বৈঠকে উপস্থিত উভয়পক্ষের লোকজন দেনমোহরানার ০৫ (পাঁচ) লাখ টাকা পরিশোধ স্বাপেক্ষে খোলা তালাকের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত তালাক কার্যকর হয় আদিতমারী থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মো. মোক্তারুল ইসলাম জানান স্থানীয়দের মাধ্যমে বৈঠকের খবর শুনেছি। তবে বিস্তারিত কিছু জানি না। খোঁজখবর নিয়ে অবশ্যই আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

লালমনিরহাটে যৌতুক না দেওয়ায় নববঁধুকে নির্যাতন করে তালাক

প্রকাশের সময় : ০৩:৪৮:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

মোস্তাফিজুর রহমান,  লালমনিরহাট।। লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় স্বামী ও শ্বশুড়ের বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগ দেয়ায় মনজিলা পারভিন তিন্নি (১৯) নামে এক নববধু’কে প্রথম তালাক দিয়েছেন যৌতুক লোভী স্বামী।নববধু মোছা. মনজিলা পারভিন তিন্নি উপজেলার ভাদাই ইউনিয়নের দক্ষিণ বত্রিশ হাজারী গ্রামের মো. ফরহাদ হোসেনের স্ত্রী।

অভিযোগে সুত্রে জানা গেছে, উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের বনচৌকী গ্রামের বাসিন্দা মো. মনিরুজ্জামানের কণ্যা মনজিলা পারভিন তিন্নির সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন দক্ষিণ বত্রিশ হাজারী গ্রামের মো. আব্দুল মতিনের ছেলে ফরহাদ হোসেন। গত ২০২০ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারী প্রেম পরিনয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন প্রেমিক যুগল। বিয়ের কিছু দিন না যেতেই বেকার যুবক স্বামী ফরহাদ ও তার পরিবার যৌতুক হিসেবে দুই লাখ টাকা দাবি করেন। প্রেম পরিনয়ে বিয়ের কারনে মনজিলার বাবা যৌতুক দিতে অস্বীকার করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মনজিলার উপর চলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। গত ১০ আগস্ট যৌতুকের ২ লাখ টাকা বাবার বাড়ি থেকে নিয়ে আসার জন্য চাপ দিলে নববধু মনজিলা যেতে অনীহা প্রকাশ করেন।এদিকে, যৌতুক লোভী স্বামীর নির্দেশ না মানায় স্বামী ফরহাদ ও তার বাবা মা মিলে তাকে মারপিট করে ঘরে আটকায়ে রাখে।

পরদিন তাকে জোরপুর্বক বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে দাবিকৃত টাকা নিয়ে আসার জন্য চাপ দেয়। অবশেষে নিরুপায় নববধু মনজিলা বাধ্য হয়ে বাবার বাড়ি চলে যান।এ ঘটনায় বিচার চেয়ে আদিতমারী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নববধু মনজিলা। তার গরীব বাবা মেয়ের সুখের জন্য যৌতুকের টাকা জোগার করতে জমি বিক্রির ঘোষনা দেন।এরই মাঝে গত সপ্তাহে হঠাৎ ডাকযোগে আসা চিঠি খুলে মনিরুজ্জামান দেখতে পান চিঠিটি মেয়ের প্রথম তালাকের খবর। মুহুর্তেই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয় গরীব বাবা মনিরুজ্জামানের। উপায়ন্তর না পেয়ে থানায় ও স্থানীয়দের স্মরনাপন্ন হন তিনি।বিষয়টি আপোষ করতে উভয়পক্ষকে নিয়ে  বুধবার (২২ সেপ্টেম্বর) ভাদাই ইউনিয়ন পরিষদে বৈঠকে বসেন ওই ইউপি চেয়ারম্যান রোকনুজ্জামান রোকন। বৈঠকে স্বামী ফরহাদ ও শ্বশুড় মতিনের পা ধরে কয়েক দিনের সময় চেয়ে  কান্না করে জীবন ভিক্ষা চান নববধু মনজিলা। কিন্তু যৌতুক লোভী স্বামী শ্বশুড়ের মন গলেনি। তালাক দিতেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন তারা। এ সময় নববধুকে দেনমোহর পরিশোধ স্বাপেক্ষে খোলা তালাকের সিদ্ধান্ত নেন মাতব্বররা। এ খবর শুনে বৈঠকেই সজ্ঞাহীন হয়ে পড়েন নববধূ মনজিলা। বৈঠক অসমাপ্ত রেখে আহত নববধুকে নেয়া হয় আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

সেখানে চিকিৎসা চলছে তার। জ্ঞান ফিরে এলেই স্বামীর বাড়ি যেতে ডুকরে কান্না করছেন নববধু।হাসপাতালের বেডে চিকিৎসাধীন নববধূ মনজিলা পারভিন তিন্নি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, স্বামী ও শ্বশুড়ের পা ধরে কান্না করেছি একটু সময় চেয়েছি। তারা শুনেনি। আপোষে স্বাক্ষর নেয়ার কথা বলে খোলা তালাকের ঘোষনা দিয়েছে। তালাক দিলে আমি আত্নহত্যা করবো। এর দায় স্বামী ও শ্বশুড়কে নিতে হবে। অভিযুক্ত স্বামী ফরহাদ হোসেন  বলেন, ইউনিয়ন পরিষদের বৈঠকে খোলা তালাক হয়েছে। তবে কোন নিকাহ রেজিস্টার খোলা তালাক কার্যকর করেছেন তার নাম পরিচয় তিনি দিতে পারেননি।

জানতে চাইলে ভাদাই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. রোকনুজ্জামান রোকন  বলেন, উভয়পক্ষকে নিয়ে আপোষের জন্য বসেছিলাম। মেয়ে সংসার করার জন্য স্বামী ও শ্বশুড়ের কাছে প্রথমবারের মত ক্ষমা চেয়েছে। কিন্তু স্বামী কোন ভাবেই সংসার করবে না। তাই বৈঠকে উপস্থিত উভয়পক্ষের লোকজন দেনমোহরানার ০৫ (পাঁচ) লাখ টাকা পরিশোধ স্বাপেক্ষে খোলা তালাকের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এখন পর্যন্ত তালাক কার্যকর হয় আদিতমারী থানার পুলিশ পরিদর্শক (ওসি) মো. মোক্তারুল ইসলাম জানান স্থানীয়দের মাধ্যমে বৈঠকের খবর শুনেছি। তবে বিস্তারিত কিছু জানি না। খোঁজখবর নিয়ে অবশ্যই আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে।