শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৩০ বছর টানা গবেষণায় ম্যালেরিয়ার ভ্যাকসিন আবিষ্কার বাংলাদেশের

ঢাকা ব্যুরো।।৩০ বছরের টানা গবেষণা আর প্রাণান্তকর চেষ্টার পর অবশেষে মশাবাহিত প্রাণঘাতী রোগ ম্যালেরিয়ার প্রথম ভ্যাকসিন আবিষ্কারে সফলতার মুখ দেখলেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাজ্যের ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি গ্ল্যাক্সোস্মিথ ক্লাইন বিশ্বে প্রথমবারের মতো এই রোগের টিকা আবিষ্কারে সক্ষম হয়েছে বলে বুধবার (৬ অক্টোবর) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার-ডব্লিউএইচও ঘোষণা দিয়েছে।

ম্যালেরিয়া রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্বের প্রথম টিকার অনুমোদন দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, যার মধ্য দিয়ে প্রতিবছর আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশে লাখ লাখ শিশুসহ মানুষের মৃত্যু ঠেকানোর পথ তৈরি হল।

বিবিসি, গার্ডিয়ান ও নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, একশ বছরের বেশি সময় ধরে চেষ্টার পর ম্যালেরিয়ার একটি কার্যকর টিকা তৈরির বিষয়টি চিকিত্সা শাস্ত্রের জন্যই বড় এক অর্জন। বিশ্বের অন্যতম পুরনো এবং অন্যতম প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগ এই ম্যালেরিয়া। মশাবাহিত এ রোগে প্রতি বছর কমপক্ষে ৫ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়, যাদের বেশিরভাগই সাব সাহারা আফ্রিকার। তাদের মধ্যে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা ২ লাখ ৬০ হাজার জনের বেশি।

নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, গ্ল্যাক্সোস্মিথ ক্লাইনের তৈরি করা আরটিএস, এস নামের এই টিকা কেবল ম্যালেরিয়া নয়, যে কোনো পরজীবীঘটিত রোগের বিরুদ্ধে মানুষের তৈরি করা প্রথম কার্যকর টিকা। মশা থেকেই ডেংগু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন মশা বাহিত রোগ ছড়ায়।

ক্লিনিকাল পরীক্ষায় প্রথম বছরে মারাত্মক ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা প্রায় ৫০ শতাংশ ছিল, কিন্তু চতুর্থ বছরে শূন্যের কাছাকাছি নেমে আসে। ম্যালেরিয়ার মৃত্যুর অর্ধেক পর্যন্ত এবং এটিকে ‘মৃত্যুর একটি নির্ভরযোগ্য প্রক্সিমাল ইন্ডিকেটর’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ডব্লিউএইচও’র জানায়, আশা করি আমরা ভ্যাকসিনটির কার্যকর প্রভাব দেখতে পাব।

গত বছর একটি মডেলিং স্টাডিতে অনুমান করা হয়েছিল যে, যদি ম্যালেরিয়ার সর্বোচ্চ প্রাদুর্ভাবের দেশগুলোতে টিকা প্রেরণ করা হয়, তাহলে এটি প্রতি বছর ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৫৪ লাখ কেস এবং ২৩ হাজার মৃত্যুর ঘটনা রোধ করতে পারে। ভ্যাকসিনের সাম্প্রতিক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যু রোধে দ্বৈত পদ্ধতি অনেক বেশি কার্যকর ছিল।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র খবরে বলা হয়েছে, আরটিএস, এস নামের এই টিকাটি কার্যকর বলে প্রমাণিত হয় ছয় বছর আগে। ঘানা, কেনিয়া ও মালাউয়িতে পাইলট টিকাদান কর্মসূচির সফলতার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, টিকাটি সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলে প্রয়োগ করা উচিত।

ডব্লিউএইচও’র মহাপরিচালক ড. টেড্রোস আডানম ঘেব্রেয়াসিস বলছেন, এটি ছিল একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত শিশুদের জন্য ম্যালেরিয়া টিকা বিজ্ঞান, শিশু স্বাস্থ্য ও ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। তিনি আরও বলেন, প্রচলিত ওষুধের পাশাপাশি এই টিকা প্রয়োগের ফলে প্রতি বছর লাখো শিশুর জীবন বাঁচানো যাবে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক সংক্রামক রোগগুলোর অন্যতম ম্যালেরিয়া। প্রতি বছর অন্তত ৬ লাখ মানুষ এ রোগে মারা যায়। ২০১৩ সালে বিশ্বব্যাপী ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ২০ কোটি। কার্যকর প্রতিষেধকের অভাবে মশাবাহিত এ রোগে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়।

৩০ বছর টানা গবেষণায় ম্যালেরিয়ার ভ্যাকসিন আবিষ্কার বাংলাদেশের

প্রকাশের সময় : ০৮:০০:২২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ অক্টোবর ২০২১

ঢাকা ব্যুরো।।৩০ বছরের টানা গবেষণা আর প্রাণান্তকর চেষ্টার পর অবশেষে মশাবাহিত প্রাণঘাতী রোগ ম্যালেরিয়ার প্রথম ভ্যাকসিন আবিষ্কারে সফলতার মুখ দেখলেন বিজ্ঞানীরা। যুক্তরাজ্যের ওষুধ প্রস্তুতকারক কোম্পানি গ্ল্যাক্সোস্মিথ ক্লাইন বিশ্বে প্রথমবারের মতো এই রোগের টিকা আবিষ্কারে সক্ষম হয়েছে বলে বুধবার (৬ অক্টোবর) বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার-ডব্লিউএইচও ঘোষণা দিয়েছে।

ম্যালেরিয়া রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিশ্বের প্রথম টিকার অনুমোদন দিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, যার মধ্য দিয়ে প্রতিবছর আফ্রিকাসহ বিভিন্ন দেশে লাখ লাখ শিশুসহ মানুষের মৃত্যু ঠেকানোর পথ তৈরি হল।

বিবিসি, গার্ডিয়ান ও নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায়, একশ বছরের বেশি সময় ধরে চেষ্টার পর ম্যালেরিয়ার একটি কার্যকর টিকা তৈরির বিষয়টি চিকিত্সা শাস্ত্রের জন্যই বড় এক অর্জন। বিশ্বের অন্যতম পুরনো এবং অন্যতম প্রাণঘাতী সংক্রামক রোগ এই ম্যালেরিয়া। মশাবাহিত এ রোগে প্রতি বছর কমপক্ষে ৫ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়, যাদের বেশিরভাগই সাব সাহারা আফ্রিকার। তাদের মধ্যে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা ২ লাখ ৬০ হাজার জনের বেশি।

নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, গ্ল্যাক্সোস্মিথ ক্লাইনের তৈরি করা আরটিএস, এস নামের এই টিকা কেবল ম্যালেরিয়া নয়, যে কোনো পরজীবীঘটিত রোগের বিরুদ্ধে মানুষের তৈরি করা প্রথম কার্যকর টিকা। মশা থেকেই ডেংগু, চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন মশা বাহিত রোগ ছড়ায়।

ক্লিনিকাল পরীক্ষায় প্রথম বছরে মারাত্মক ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা প্রায় ৫০ শতাংশ ছিল, কিন্তু চতুর্থ বছরে শূন্যের কাছাকাছি নেমে আসে। ম্যালেরিয়ার মৃত্যুর অর্ধেক পর্যন্ত এবং এটিকে ‘মৃত্যুর একটি নির্ভরযোগ্য প্রক্সিমাল ইন্ডিকেটর’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ডব্লিউএইচও’র জানায়, আশা করি আমরা ভ্যাকসিনটির কার্যকর প্রভাব দেখতে পাব।

গত বছর একটি মডেলিং স্টাডিতে অনুমান করা হয়েছিল যে, যদি ম্যালেরিয়ার সর্বোচ্চ প্রাদুর্ভাবের দেশগুলোতে টিকা প্রেরণ করা হয়, তাহলে এটি প্রতি বছর ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের ৫৪ লাখ কেস এবং ২৩ হাজার মৃত্যুর ঘটনা রোধ করতে পারে। ভ্যাকসিনের সাম্প্রতিক পরীক্ষায় দেখা গেছে যে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যু রোধে দ্বৈত পদ্ধতি অনেক বেশি কার্যকর ছিল।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি’র খবরে বলা হয়েছে, আরটিএস, এস নামের এই টিকাটি কার্যকর বলে প্রমাণিত হয় ছয় বছর আগে। ঘানা, কেনিয়া ও মালাউয়িতে পাইলট টিকাদান কর্মসূচির সফলতার পর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলছে, টিকাটি সাব-সাহারান আফ্রিকা অঞ্চলে প্রয়োগ করা উচিত।

ডব্লিউএইচও’র মহাপরিচালক ড. টেড্রোস আডানম ঘেব্রেয়াসিস বলছেন, এটি ছিল একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। দীর্ঘ প্রতীক্ষিত শিশুদের জন্য ম্যালেরিয়া টিকা বিজ্ঞান, শিশু স্বাস্থ্য ও ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে একটি যুগান্তকারী ঘটনা। তিনি আরও বলেন, প্রচলিত ওষুধের পাশাপাশি এই টিকা প্রয়োগের ফলে প্রতি বছর লাখো শিশুর জীবন বাঁচানো যাবে।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক সংক্রামক রোগগুলোর অন্যতম ম্যালেরিয়া। প্রতি বছর অন্তত ৬ লাখ মানুষ এ রোগে মারা যায়। ২০১৩ সালে বিশ্বব্যাপী ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা ছিল প্রায় ২০ কোটি। কার্যকর প্রতিষেধকের অভাবে মশাবাহিত এ রোগে শিশুরাই বেশি আক্রান্ত হয়।