মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

৪৪ হাজার কোটি অলস টাকা পড়ে আছে ব্যাংকে

ঢাকা ব্যুরো ##  এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে নতুন করে জমা হয়েছে ৭৫ হাজার কোটি টাকার অলস অর্থ। এর মধ্যে সরকারি বন্ড ও ট্রেজারিতে বিনিয়োগ করা সম্ভব হয়েছে মাত্র ৩০ হাজার কোটি টাকা। অবশিষ্ট ৪৪ হাজার কোটি টাকা পড়ে রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকে। অলস অর্থ বিনিয়োগে ঋণগ্রহীতা খুঁজে ফিরছে ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমন তথ্য। একাধিক দায়িত্বশীল ব্যাংকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের মার্চ থেকে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর ঋণ চাহিদা কমে গেছে ব্যবসায়ীদের। প্রথম ঢেউ শেষে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে এখন দেশে। সীমিত পরিসরে চলছে সবকিছু। সরকারি বিধি-নিষেধ এখনও শেষ হয়নি।

ব্যবসা টিকিয়ে রাখতেই মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। কারণ উদ্যোক্তারা মনে করছেন, এখন নিতান্তই প্রয়োজন ছাড়া কেউ কোনো পণ্য কিনছে না। এজন্য ভোগ্যপণ্য ছাড়া অন্য খাতের উদ্যোক্তারা তেমন একটা ভালো নেই। নতুন করে তারা ব্যবসা সম্প্রসারণে যাচ্ছেন না। ফলে ঋণ চাহিদাও কমে গেছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, মূলধনি যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে ঋণ বেশি নেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু করোনায় এ দু খাতেই স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের জুন মাসের তুলনায় মার্চ শেষে চার দশমিক ৮৩ শতাংশ ঋণ বেড়েছে, অথচ আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল সাত দশমিক ২৯ শতাংশ।

ঋণ বিতরণ কমে যাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মূলত বেসরকারি খাতে ঋণ চাহিদা কমে গেছে। একইসঙ্গে কমেছে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণ। ২০২০ সালের জুন থেকে গত মার্চ পর্যন্ত সময়ে সরকারের নেয়া ঋণ আগের বছরের চেয়ে প্রায় এক শতাংশ কমেছে। অথচ আগের বছরের আলোচিত সময়ে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এর প্রভাবে কমেছে সামগ্রিক ঋণ বিতরণ চিত্র।

ঋণ চাহিদা কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোয় জমছে অলস অর্থের পাহাড়। গত বছরের জুন শেষে ব্যাংকগুলোয় তারল্যর পরিমাণ ছিল তিন লাখ ৩৫ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। গত মার্চে তা দাঁড়িয়েছে চার লাখ ১২ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা।

এ নগদ অর্থের মধ্যে সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে দুই লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। অবশিষ্ট অর্থের মধ্যে সিআরআর বাদ দিয়ে থাকা অর্থই অতিরিক্ত তারল্য। ঋণ দিতে না পেরে ব্যাংকগুলো এই অতিরিক্ত অর্থ সরকারের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছে সিকিউরিটিজ, বন্ড হিসেবে। এর পরও অলস পড়ে রয়েছে ৪৪ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। গত এক বছরে অলস অর্থের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

ঋণ চাহিদার এ খরায় ব্যাংকগুলো খুঁজছে ভালো মানের গ্রাহক। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি একটি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক জানান, বিতরণকৃত ঋণ এখন সেভাবে ফিরে আসছে না। খেলাপি ঋণের পরিমাণ কত হবে তাও বলা যাচ্ছে না। চলতি জুন মাস শেষে একটি ধারণা পাওয়া যেতে পারে মাত্র। এজন্য নতুন ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো সতর্ক থাকছে। শুধু ভালো মানের গ্রাহকদের ঋণ দেয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকাররাই গ্রাহক খুঁজে বের করছেন।

অবশ্য ঋণ চাহিদা কয়েক মাসের মধ্যেই বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন অনেক ব্যাংকার। কারণ হিসেবে বলছেন, রপ্তানিনির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলো এখন নতুন ক্রয়াদেশ পাচ্ছে। এতে উদ্যোক্তাদের এলসি খুলতে ঋণ প্রয়োজন হবে। এছাড়া প্রতিষ্ঠান চালাতে প্রয়োজন হবে চলতি মূলধন।

এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘রপ্তানির উৎস দেশগুলোয় করোনা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। সামনে কয়েকটি উৎসব রয়েছে, এসময় তাদের পণ্যর চাহিদা বাড়বে। বিশেষ করে তৈরি পোশাকের। অনেক প্রতিষ্ঠানেরই মজুত শেষ হয়ে আসছে। তখন আমাদের রপ্তানি বাড়বে। রপ্তানি ঘিরেই কাঁচামাল আমদানি বাড়বে। এতে ঋণ চাহিদা তৈরি হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের গত ১১ মাসে (জুলাই ’২০-মে ’২১) রপ্তানি হয়েছে তিন হাজার ৫১৮ কোটি ডলারের পণ্য। এই সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরের আলোচিত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। একই সময়ে আমদানির ধারাও ইতিবাচক প্রবণতায় ফিরেছে। গত এপ্রিল শেষে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ শতাংশের ওপরে।

Save

Share

আজকের আ. লীগের নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ মানেন না: কাদের

৪৪ হাজার কোটি অলস টাকা পড়ে আছে ব্যাংকে

প্রকাশের সময় : ০৮:৫২:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুন ২০২১

ঢাকা ব্যুরো ##  এক বছরের ব্যবধানে ব্যাংক খাতে নতুন করে জমা হয়েছে ৭৫ হাজার কোটি টাকার অলস অর্থ। এর মধ্যে সরকারি বন্ড ও ট্রেজারিতে বিনিয়োগ করা সম্ভব হয়েছে মাত্র ৩০ হাজার কোটি টাকা। অবশিষ্ট ৪৪ হাজার কোটি টাকা পড়ে রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকে। অলস অর্থ বিনিয়োগে ঋণগ্রহীতা খুঁজে ফিরছে ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে এমন তথ্য। একাধিক দায়িত্বশীল ব্যাংকারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের মার্চ থেকে করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর ঋণ চাহিদা কমে গেছে ব্যবসায়ীদের। প্রথম ঢেউ শেষে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে এখন দেশে। সীমিত পরিসরে চলছে সবকিছু। সরকারি বিধি-নিষেধ এখনও শেষ হয়নি।

ব্যবসা টিকিয়ে রাখতেই মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। কারণ উদ্যোক্তারা মনে করছেন, এখন নিতান্তই প্রয়োজন ছাড়া কেউ কোনো পণ্য কিনছে না। এজন্য ভোগ্যপণ্য ছাড়া অন্য খাতের উদ্যোক্তারা তেমন একটা ভালো নেই। নতুন করে তারা ব্যবসা সম্প্রসারণে যাচ্ছেন না। ফলে ঋণ চাহিদাও কমে গেছে।

ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, মূলধনি যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে ঋণ বেশি নেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু করোনায় এ দু খাতেই স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা। গত বছরের জুন মাসের তুলনায় মার্চ শেষে চার দশমিক ৮৩ শতাংশ ঋণ বেড়েছে, অথচ আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল সাত দশমিক ২৯ শতাংশ।

ঋণ বিতরণ কমে যাওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, মূলত বেসরকারি খাতে ঋণ চাহিদা কমে গেছে। একইসঙ্গে কমেছে সরকারের ঋণ নেয়ার পরিমাণ। ২০২০ সালের জুন থেকে গত মার্চ পর্যন্ত সময়ে সরকারের নেয়া ঋণ আগের বছরের চেয়ে প্রায় এক শতাংশ কমেছে। অথচ আগের বছরের আলোচিত সময়ে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১৯ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এর প্রভাবে কমেছে সামগ্রিক ঋণ বিতরণ চিত্র।

ঋণ চাহিদা কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোয় জমছে অলস অর্থের পাহাড়। গত বছরের জুন শেষে ব্যাংকগুলোয় তারল্যর পরিমাণ ছিল তিন লাখ ৩৫ হাজার ৭৯৭ কোটি টাকা। গত মার্চে তা দাঁড়িয়েছে চার লাখ ১২ হাজার ১৪৩ কোটি টাকা।

এ নগদ অর্থের মধ্যে সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে দুই লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। অবশিষ্ট অর্থের মধ্যে সিআরআর বাদ দিয়ে থাকা অর্থই অতিরিক্ত তারল্য। ঋণ দিতে না পেরে ব্যাংকগুলো এই অতিরিক্ত অর্থ সরকারের বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করেছে সিকিউরিটিজ, বন্ড হিসেবে। এর পরও অলস পড়ে রয়েছে ৪৪ হাজার ১৮২ কোটি টাকা। গত এক বছরে অলস অর্থের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৮৬ শতাংশ।

ঋণ চাহিদার এ খরায় ব্যাংকগুলো খুঁজছে ভালো মানের গ্রাহক। এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি একটি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক জানান, বিতরণকৃত ঋণ এখন সেভাবে ফিরে আসছে না। খেলাপি ঋণের পরিমাণ কত হবে তাও বলা যাচ্ছে না। চলতি জুন মাস শেষে একটি ধারণা পাওয়া যেতে পারে মাত্র। এজন্য নতুন ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো সতর্ক থাকছে। শুধু ভালো মানের গ্রাহকদের ঋণ দেয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাংকাররাই গ্রাহক খুঁজে বের করছেন।

অবশ্য ঋণ চাহিদা কয়েক মাসের মধ্যেই বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন অনেক ব্যাংকার। কারণ হিসেবে বলছেন, রপ্তানিনির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলো এখন নতুন ক্রয়াদেশ পাচ্ছে। এতে উদ্যোক্তাদের এলসি খুলতে ঋণ প্রয়োজন হবে। এছাড়া প্রতিষ্ঠান চালাতে প্রয়োজন হবে চলতি মূলধন।

এ বিষয়ে অগ্রণী ব্যাংংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘রপ্তানির উৎস দেশগুলোয় করোনা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। সামনে কয়েকটি উৎসব রয়েছে, এসময় তাদের পণ্যর চাহিদা বাড়বে। বিশেষ করে তৈরি পোশাকের। অনেক প্রতিষ্ঠানেরই মজুত শেষ হয়ে আসছে। তখন আমাদের রপ্তানি বাড়বে। রপ্তানি ঘিরেই কাঁচামাল আমদানি বাড়বে। এতে ঋণ চাহিদা তৈরি হবে।’

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের গত ১১ মাসে (জুলাই ’২০-মে ’২১) রপ্তানি হয়েছে তিন হাজার ৫১৮ কোটি ডলারের পণ্য। এই সময়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ, যা আগের অর্থবছরের আলোচিত সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। একই সময়ে আমদানির ধারাও ইতিবাচক প্রবণতায় ফিরেছে। গত এপ্রিল শেষে এ খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৩ শতাংশের ওপরে।

Save

Share