শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অভয়নগরে নারী পাচারের অভিযোগে দুই মহিলা গ্রেফতার

যশোর ব্যুরো ।।

বিদেশে নারী পাচারের অভিযোগে যশোরের অভয়নগর থানা পুলিশ দুই মহিলাকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতার হওয়া মহিলা দু’জন হলো উপজেলার সরখোলা গ্রামের মঈনুল ইসলামের স্ত্রী কেয়া বেগম (২৮) ও বাগদাহ গ্রামের ওমর আলীর স্ত্রী রহিমা বেগম (৫০)। সোমবার ভোর রাতে নিজ বাড়ি থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। চক্রের মুল হোতা মঈনুল ইসলাম পলাতক রয়েছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, গ্রেফতার হওয়া ওই চক্রটি দীর্ঘ দিন ধরে এলাকার দরিদ্র অসহায় নারীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাচার করে আসছে। এক বছর আগে তারা উপজেলার বাগদহ গ্রামের গৃহ বধূ আঁখি বেগমকে বোম্বে পাচার করেছে।

আঁখি বেগমের স্বামী লুৎফর রহমান জানান, প্রায় এক বছর পূর্বে তার স্ত্রী নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুজি করে কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। রবিবার (৭ জুলাই ) রাত সাড়ে ১০ টার সময় ভারতীয় নম্বার থেকে তার কাছে একটি ফোন আসে। ফোনে তার স্ত্রী আখি জানায়, মঈনুল ও তার স্ত্রী কেয়া এবং প্রতিবেশী রহিমা বেগম ডাক্তার দেখানোর কথা বলে তাকে প্রথমে যশোরে নিয়ে যায়। এরপর যশোর থেকে কৌশলে ভারতে নিয়ে একটি ঘরে তাকে আটকিয়ে রাখে। সেখানে তাকে অনৈতিক কাজ করতে চাপ সৃষ্টি করা হয়। বর্তমানে সে চরম সমস্যার মধ্যে বোম্বে শহরে অবস্থান করছে। সেখানে তার মত অসংখ্য বাংলাদেশী নারী অবরুদ্ধ আছে।

লুৎফর রহমান আরো জানান, ওই রাতেই মোবাইল ফোনে রেকর্ডিং হওয়া কথাগুলো অভয়নগর থানার ওসিকে শোনানো হয়। বিষয়টি অবগত হয়ে পুলিশ মঈনুলের স্ত্রী কেয়া ও রহিমাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।

একই গ্রামের রজিনা বেগম জানান, তার মেয়ে সুমাইয়ার বয়স ১৭ বছর। প্রতিবেশী মঈনুল ও তার স্ত্রী বিদেশে পাঠানোর কথা বলে তার মেয়েকে নিয়ে যায়। প্রায় ৬ মাস হতে চলেছে মেয়ের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। মঈনুলের স্ত্রীর কাছে মেয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, সে ভালো আছে। বেশী জানাজানি করলে মেয়েকে ফিরে পাওয়া যাবেনা।

একই গ্রামের রিয়াজুল ইসলাম বলেন, তার শিশু কণ্যা খাদিজাকে (১৩) মঈনুল ও তার স্ত্রী একটি বাড়িতে ভালো চাকুরী দেওয়ার কথা বলে গত ১৫ দিন আগে নিয়ে যায়। এখন জানতে পেরেছেন তার মেয়েকে ভারতে বিক্রি করা হয়েছে।

এলাকাবাসী কয়েক জনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভালো বেতনে কাজ দেওয়ার নাম করে মঈনুল দরিদ্র পরিবারের মেয়ে ও শিশুদের ভারতে পাচার করে আসছেন। এলাকাবাসী কয়েকবার মঈনুলকে পুলিশে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। মঈনুল কখন গ্রামে আসে, আর কখন-কিভাবে গ্রাম থেকে পালিয়ে যান তা কেউ বলতে পারেননি। গ্রামবাসী মঈনুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেন।

এ ব্যাপারে অভয়নগর থানার অফিসার ইনচার্য মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, রবিবার মধ্যরাতে মোবাইল ফোনের কথোপকথন শুনে অভিযুক্ত দুই নারীকে আটক করা হয়েছে। মূলহোতা মঈনুলকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তদন্ত চলছে, অভিযুক্তরা দোষী হলে মামলা দায়ের করা হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

অভয়নগরে নারী পাচারের অভিযোগে দুই মহিলা গ্রেফতার

প্রকাশের সময় : ০৬:৫১:৪৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ জুলাই ২০১৯

যশোর ব্যুরো ।।

বিদেশে নারী পাচারের অভিযোগে যশোরের অভয়নগর থানা পুলিশ দুই মহিলাকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতার হওয়া মহিলা দু’জন হলো উপজেলার সরখোলা গ্রামের মঈনুল ইসলামের স্ত্রী কেয়া বেগম (২৮) ও বাগদাহ গ্রামের ওমর আলীর স্ত্রী রহিমা বেগম (৫০)। সোমবার ভোর রাতে নিজ বাড়ি থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। চক্রের মুল হোতা মঈনুল ইসলাম পলাতক রয়েছে।

পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, গ্রেফতার হওয়া ওই চক্রটি দীর্ঘ দিন ধরে এলাকার দরিদ্র অসহায় নারীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে বিদেশে পাচার করে আসছে। এক বছর আগে তারা উপজেলার বাগদহ গ্রামের গৃহ বধূ আঁখি বেগমকে বোম্বে পাচার করেছে।

আঁখি বেগমের স্বামী লুৎফর রহমান জানান, প্রায় এক বছর পূর্বে তার স্ত্রী নিখোঁজ হয়। অনেক খোঁজাখুজি করে কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। রবিবার (৭ জুলাই ) রাত সাড়ে ১০ টার সময় ভারতীয় নম্বার থেকে তার কাছে একটি ফোন আসে। ফোনে তার স্ত্রী আখি জানায়, মঈনুল ও তার স্ত্রী কেয়া এবং প্রতিবেশী রহিমা বেগম ডাক্তার দেখানোর কথা বলে তাকে প্রথমে যশোরে নিয়ে যায়। এরপর যশোর থেকে কৌশলে ভারতে নিয়ে একটি ঘরে তাকে আটকিয়ে রাখে। সেখানে তাকে অনৈতিক কাজ করতে চাপ সৃষ্টি করা হয়। বর্তমানে সে চরম সমস্যার মধ্যে বোম্বে শহরে অবস্থান করছে। সেখানে তার মত অসংখ্য বাংলাদেশী নারী অবরুদ্ধ আছে।

লুৎফর রহমান আরো জানান, ওই রাতেই মোবাইল ফোনে রেকর্ডিং হওয়া কথাগুলো অভয়নগর থানার ওসিকে শোনানো হয়। বিষয়টি অবগত হয়ে পুলিশ মঈনুলের স্ত্রী কেয়া ও রহিমাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে।

একই গ্রামের রজিনা বেগম জানান, তার মেয়ে সুমাইয়ার বয়স ১৭ বছর। প্রতিবেশী মঈনুল ও তার স্ত্রী বিদেশে পাঠানোর কথা বলে তার মেয়েকে নিয়ে যায়। প্রায় ৬ মাস হতে চলেছে মেয়ের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। মঈনুলের স্ত্রীর কাছে মেয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, সে ভালো আছে। বেশী জানাজানি করলে মেয়েকে ফিরে পাওয়া যাবেনা।

একই গ্রামের রিয়াজুল ইসলাম বলেন, তার শিশু কণ্যা খাদিজাকে (১৩) মঈনুল ও তার স্ত্রী একটি বাড়িতে ভালো চাকুরী দেওয়ার কথা বলে গত ১৫ দিন আগে নিয়ে যায়। এখন জানতে পেরেছেন তার মেয়েকে ভারতে বিক্রি করা হয়েছে।

এলাকাবাসী কয়েক জনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ভালো বেতনে কাজ দেওয়ার নাম করে মঈনুল দরিদ্র পরিবারের মেয়ে ও শিশুদের ভারতে পাচার করে আসছেন। এলাকাবাসী কয়েকবার মঈনুলকে পুলিশে দেওয়ার চেষ্টা করেছে। মঈনুল কখন গ্রামে আসে, আর কখন-কিভাবে গ্রাম থেকে পালিয়ে যান তা কেউ বলতে পারেননি। গ্রামবাসী মঈনুলের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেন।

এ ব্যাপারে অভয়নগর থানার অফিসার ইনচার্য মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, রবিবার মধ্যরাতে মোবাইল ফোনের কথোপকথন শুনে অভিযুক্ত দুই নারীকে আটক করা হয়েছে। মূলহোতা মঈনুলকে আটক করা সম্ভব হয়নি। তদন্ত চলছে, অভিযুক্তরা দোষী হলে মামলা দায়ের করা হবে।