শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চট্টগ্রাম বন্দরে কাঁচামাল খালাসে ধীরগতি, ক্ষতির মুখে তৈরি পোশাক শিল্প

নজরুল ইসলাম ।। 

আমদানি কাঁচামাল খালাসে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউসে নানা জটিলতার কারণে তৈরি পোশাক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, বন্দর থেকে যথাসময়ে তারা আমদানিকৃত কাঁচামাল ডেলিভারি নিতে পারছেন না।

যথাসময়ে কাঁচামাল হাতে পাওয়া না গেলে তৈরি পোশাক সময়মতো বিদেশি ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। তখন অর্ডার বাতিলসহ নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি করা কাঁচামাল ছাড়িয়ে নিতে যেসব জটিলতা দেখা দিচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম হল পণ্যের শতভাগ কায়িক পরীক্ষা ও কাস্টমস ল্যাবে রাসায়নিক পরীক্ষা। এ দুটি পরীক্ষার নামে হয়রানি ও পণ্য ছাড়ে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে- এমন অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে শোনা গেলেও বর্তমানে তা প্রকট আকার ধারণ করেছে বলে তৈরি পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তারা জানান, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে অন্তত ৪শ’টি চালান কাস্টমস ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

পরীক্ষা শেষ করে কোনো কোনো চালান খালাস নিতে ৮-১০ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যাচ্ছে। এভাবে কাঁচামালের চালানের নমুনা পরীক্ষাগারে যেতে থাকলে পোশাক রফতানিতে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে। বিষয়টি নিয়ে আজ চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্মকর্তাদের সঙ্গে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি এমএ সালাম যুগান্তরকে বলেন, ‘কাস্টম হাউসের নতুন কমিশনারের সঙ্গে আমরা বসতে চেয়েছি। তিনি বৃহস্পতিবার (আজ) সময় দিয়েছেন। এটা সৌজন্য বৈঠক। তিনি (কাস্টম কমিশনার) যোগ দেয়ার পর এ প্রথম আমরা দেখা করতে যাচ্ছি। বৈঠকে কায়িক পরীক্ষা ও ল্যাব টেস্টের কারণে আমাদের সেক্টরের আমদানি পণ্য ডেলিভারিতে যে ধীরগতি দেখা দিয়েছে, তা তুলে ধরব। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রফতানি হওয়া পণ্যের প্রায় ৭০ শতাংশই তৈরি পোশাক। তাই আমাদের পণ্য আমদানি-রফতানিতে কাস্টমসংশ্লিষ্ট যেসব সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তা জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করতে হবে।’

চট্টগ্রাম বিজিএমইএ সূত্র জানায়, পোশাক শিল্পের আমদানিকৃত চালান খালাসের সময় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এআইআর শাখা আটক করে শতভাগ কায়িক পরীক্ষাসহ কাস্টম ল্যাবে পরীক্ষা করছে।

এছাড়াও সংশ্লিষ্ট আমদানি শুল্কায়ন গ্রুপে শুল্কায়ন ও কায়িক পরীক্ষা পরে পুনঃপরীক্ষণের জন্য কাঁচামাল কাস্টম ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। কাস্টম ল্যাবের পরীক্ষা রিপোর্টের যথার্থতা ও সক্ষমতা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের ল্যাব টেস্টের সঙ্গে যার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মিল থাকে না। ল্যাবে পরীক্ষায় কাপড়ের বর্ণনার অন্যরকম প্রতিবেদন এলে এইচএস কোড পরিবর্তনসহ বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।

এছাড়াও পণ্য চালানগুলো কেজিতে ওজন করা হচ্ছে। এতে তারতম্য দেখা দিলে উচ্চ হারে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানি ঋণপত্র, ইনভয়েস ও বিজিএমইএ কর্তৃক ইস্যু করা ইউডিতে পণ্য চালানের পরিমাপ গজ-মিটারে উল্লেখ করে থাকে। কাঁচামাল খালাসে দেরি হওয়ার কারণে বন্দর, শিপিং এজেন্ট ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিজিএমইএ নেতা এমএ সালাম বলেন, ‘পণ্য খালাসে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমসে বিভিন্ন জটিলতার কারণে যথাসময়ে তৈরি পোশাক রফতানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে ব্যবসায়িক ব্যয় বাড়ছে। আমদানি-রফতানি কার্যক্রম সহজীকরণ করা না হলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত রূপকল্প অনুযায়ী ২০২১ সালে তৈরি পোশাক খাত থেকে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। বন্দরে কনটেইনার রাখার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। ঘূর্ণিঝড় ফণী এবং এরপর ঈদের সময় বন্দরে যে কনটেইনার জট সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য পণ্য খালাস স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অন্তত ৭ দিন বিলম্বিত হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে কাস্টম হাউসের কিছু সমস্যা। চলতি বছর যে হারে আমদানি পণ্য ল্যাব টেস্টের জন্য পাঠানো হচ্ছে, তেমনটি গত ২-৩ বছরে দেখা যায়নি। একটি চালান যদি রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়, তাতে ২-৩ দিন এমনকি কখনও কখনও আরও বেশি সময় খালাস বিলম্বিত হয়। এছাড়া শতভাগ কায়িক পরীক্ষার কারণেও অনেক চালান খালাসে সময় বেশি লাগছে। আমরা যে কাঁচামাল নিয়ে আসি তার নমুনা কাস্টমসে জমা দিতে হয়। রফতানির সময় যদি তারা সেই একই নমুনা ঠিক আছে কিনা যাচাই করে দেখে, তাহলে ল্যাব টেস্টের কোনো প্রয়োজনই পড়ে না।’

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

চট্টগ্রাম বন্দরে কাঁচামাল খালাসে ধীরগতি, ক্ষতির মুখে তৈরি পোশাক শিল্প

প্রকাশের সময় : ০৫:০৭:৩০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০১৯

নজরুল ইসলাম ।। 

আমদানি কাঁচামাল খালাসে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউসে নানা জটিলতার কারণে তৈরি পোশাক শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, বন্দর থেকে যথাসময়ে তারা আমদানিকৃত কাঁচামাল ডেলিভারি নিতে পারছেন না।

যথাসময়ে কাঁচামাল হাতে পাওয়া না গেলে তৈরি পোশাক সময়মতো বিদেশি ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। তখন অর্ডার বাতিলসহ নানা ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি করা কাঁচামাল ছাড়িয়ে নিতে যেসব জটিলতা দেখা দিচ্ছে তার মধ্যে অন্যতম হল পণ্যের শতভাগ কায়িক পরীক্ষা ও কাস্টমস ল্যাবে রাসায়নিক পরীক্ষা। এ দুটি পরীক্ষার নামে হয়রানি ও পণ্য ছাড়ে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে- এমন অভিযোগ দীর্ঘদিন ধরে শোনা গেলেও বর্তমানে তা প্রকট আকার ধারণ করেছে বলে তৈরি পোশাক শিল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। তারা জানান, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৬ মাসে অন্তত ৪শ’টি চালান কাস্টমস ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।

পরীক্ষা শেষ করে কোনো কোনো চালান খালাস নিতে ৮-১০ দিন পর্যন্ত সময় লেগে যাচ্ছে। এভাবে কাঁচামালের চালানের নমুনা পরীক্ষাগারে যেতে থাকলে পোশাক রফতানিতে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে। বিষয়টি নিয়ে আজ চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্মকর্তাদের সঙ্গে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর একটি প্রতিনিধি দলের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।

বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি এমএ সালাম যুগান্তরকে বলেন, ‘কাস্টম হাউসের নতুন কমিশনারের সঙ্গে আমরা বসতে চেয়েছি। তিনি বৃহস্পতিবার (আজ) সময় দিয়েছেন। এটা সৌজন্য বৈঠক। তিনি (কাস্টম কমিশনার) যোগ দেয়ার পর এ প্রথম আমরা দেখা করতে যাচ্ছি। বৈঠকে কায়িক পরীক্ষা ও ল্যাব টেস্টের কারণে আমাদের সেক্টরের আমদানি পণ্য ডেলিভারিতে যে ধীরগতি দেখা দিয়েছে, তা তুলে ধরব। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রফতানি হওয়া পণ্যের প্রায় ৭০ শতাংশই তৈরি পোশাক। তাই আমাদের পণ্য আমদানি-রফতানিতে কাস্টমসংশ্লিষ্ট যেসব সমস্যা দেখা দিচ্ছে, তা জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করতে হবে।’

চট্টগ্রাম বিজিএমইএ সূত্র জানায়, পোশাক শিল্পের আমদানিকৃত চালান খালাসের সময় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এআইআর শাখা আটক করে শতভাগ কায়িক পরীক্ষাসহ কাস্টম ল্যাবে পরীক্ষা করছে।

এছাড়াও সংশ্লিষ্ট আমদানি শুল্কায়ন গ্রুপে শুল্কায়ন ও কায়িক পরীক্ষা পরে পুনঃপরীক্ষণের জন্য কাঁচামাল কাস্টম ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। কাস্টম ল্যাবের পরীক্ষা রিপোর্টের যথার্থতা ও সক্ষমতা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠানের ল্যাব টেস্টের সঙ্গে যার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মিল থাকে না। ল্যাবে পরীক্ষায় কাপড়ের বর্ণনার অন্যরকম প্রতিবেদন এলে এইচএস কোড পরিবর্তনসহ বিভিন্ন জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে।

এছাড়াও পণ্য চালানগুলো কেজিতে ওজন করা হচ্ছে। এতে তারতম্য দেখা দিলে উচ্চ হারে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানি ঋণপত্র, ইনভয়েস ও বিজিএমইএ কর্তৃক ইস্যু করা ইউডিতে পণ্য চালানের পরিমাপ গজ-মিটারে উল্লেখ করে থাকে। কাঁচামাল খালাসে দেরি হওয়ার কারণে বন্দর, শিপিং এজেন্ট ও পরিবহন খরচ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বিজিএমইএ নেতা এমএ সালাম বলেন, ‘পণ্য খালাসে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমসে বিভিন্ন জটিলতার কারণে যথাসময়ে তৈরি পোশাক রফতানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এতে ব্যবসায়িক ব্যয় বাড়ছে। আমদানি-রফতানি কার্যক্রম সহজীকরণ করা না হলে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত রূপকল্প অনুযায়ী ২০২১ সালে তৈরি পোশাক খাত থেকে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। বন্দরে কনটেইনার রাখার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। ঘূর্ণিঝড় ফণী এবং এরপর ঈদের সময় বন্দরে যে কনটেইনার জট সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য পণ্য খালাস স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অন্তত ৭ দিন বিলম্বিত হচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে কাস্টম হাউসের কিছু সমস্যা। চলতি বছর যে হারে আমদানি পণ্য ল্যাব টেস্টের জন্য পাঠানো হচ্ছে, তেমনটি গত ২-৩ বছরে দেখা যায়নি। একটি চালান যদি রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়, তাতে ২-৩ দিন এমনকি কখনও কখনও আরও বেশি সময় খালাস বিলম্বিত হয়। এছাড়া শতভাগ কায়িক পরীক্ষার কারণেও অনেক চালান খালাসে সময় বেশি লাগছে। আমরা যে কাঁচামাল নিয়ে আসি তার নমুনা কাস্টমসে জমা দিতে হয়। রফতানির সময় যদি তারা সেই একই নমুনা ঠিক আছে কিনা যাচাই করে দেখে, তাহলে ল্যাব টেস্টের কোনো প্রয়োজনই পড়ে না।’