শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

সতর্ক করা হবে ৬২ মন্ত্রী-এমপিকে

আব্দুল লতিফ ।। 

সদ্য অনুষ্ঠিত পাঁচ ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া ৬২ জন মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে আওয়ামী লীগ। তবে তাদের কঠোরভাবে সতর্ক করে দেওয়া হবে।

এসব মন্ত্রী-এমপি উপজেলার নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার পর এবার দলের তৃণমূল সম্মেলনেও বিরোধিতা করছেন। তাদের বিরুদ্ধে নিজ বলয় ভারী করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে ত্যাগী ও পরিশ্রমী নেতাদের বাদ দিয়ে নিজ আত্মীয়স্বজন-কেন্দ্রিক কমিটি তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে তাদের কঠোরভাবে সতর্ক করে দেওয়াসহ করণীয় ঠিক করতে আজ বৃহস্পতিবার দলের সংসদীয় দল এবং আগামীকাল শুক্রবার দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠক দুটিতে সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতাকারী ৬২ জন মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে আওয়ামী লীগ। সাংগঠনিক শাস্তির বিষয়ে আওয়ামী লীগের এই শৈথিল্য দেখানোর সুযোগে এবার এমপিরা তৃণমূলের সম্মেলনেও আওয়ামী লীগের বিরোধিতা শুরু করেছেন। কাউন্সিলরদের মতামত উপেক্ষা করে দলের তৃণমূলে চাপিয়ে দেওয়া কমিটি গঠন করতে চাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় জাতীয় সংসদ ভবনের নবমতলায় অবস্থিত সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের এই বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপজেলা নির্বাচনসহ সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রাথী হওয়া এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থনকারী দলের মন্ত্রী-এমপিরা বৈঠকে তোপের মুখে পড়তে পারেন বলেও আভাস পাওয়া গেছে। দলের তৃণমূল শাখাগুলোর সম্মেলনে এমপিদের হস্তক্ষেপ না করারও নির্দেশনা আসতে পারে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে আগামীকাল শুক্রবার বিকাল ৪টায় গণভবনে দলের উপদেষ্টা পরিষদের ও বিকাল সাড়ে ৪টায় কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথা সময়ে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ জানিয়েছেন। সভায় সাংগঠনিক সম্পাদকেরা তাদের বিভাগীয় জেলাগুলোতে কারা নৌকার বিরোধিতা করেছেন, কারা বিদ্রোহীদের সহায়তা করেছেন এবং তৃণমূলের সম্মেলনে প্রভাব বিস্তার করছেন তার বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত পেশ করবেন। বৈঠকে তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

পাঁচ ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ১৪৩ জন দলীয় প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে এই নির্বাচনে বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এর আগে কোন কোন এমপি-মন্ত্রী অথবা কেন্দ্রীয় বা জেলা নেতা নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছেন তা জানতে চেয়ে তৃণমূলের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছিল কেন্দ্র। সেই রিপোর্টের আলোকে সাংগঠনিক সম্পাদকেরা প্রমাণাদিসহ প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন এবং তা গত ৫ এপ্রিল দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতে উপস্থাপনও করা হয়েছিল। সে সময় নৌকাবিরোধী এমপি-মন্ত্রীদের শোকজ করার সিদ্ধান্তও হয়। কিন্তু পরে তা বিভিন্ন কারণে হয়নি। এ নিয়ে অবশ্য কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছিলেন, আরো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হুটহাট করে শোকজ করা ঠিক হবে না। ইতিমধ্যে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকেরা।

 

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

সতর্ক করা হবে ৬২ মন্ত্রী-এমপিকে

প্রকাশের সময় : ১০:১১:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জুলাই ২০১৯

আব্দুল লতিফ ।। 

সদ্য অনুষ্ঠিত পাঁচ ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া ৬২ জন মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তি প্রদানের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে আওয়ামী লীগ। তবে তাদের কঠোরভাবে সতর্ক করে দেওয়া হবে।

এসব মন্ত্রী-এমপি উপজেলার নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার পর এবার দলের তৃণমূল সম্মেলনেও বিরোধিতা করছেন। তাদের বিরুদ্ধে নিজ বলয় ভারী করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে ত্যাগী ও পরিশ্রমী নেতাদের বাদ দিয়ে নিজ আত্মীয়স্বজন-কেন্দ্রিক কমিটি তৈরি করার অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে তাদের কঠোরভাবে সতর্ক করে দেওয়াসহ করণীয় ঠিক করতে আজ বৃহস্পতিবার দলের সংসদীয় দল এবং আগামীকাল শুক্রবার দলের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠক দুটিতে সভাপতিত্ব করবেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার বিরোধিতাকারী ৬২ জন মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে আওয়ামী লীগ। সাংগঠনিক শাস্তির বিষয়ে আওয়ামী লীগের এই শৈথিল্য দেখানোর সুযোগে এবার এমপিরা তৃণমূলের সম্মেলনেও আওয়ামী লীগের বিরোধিতা শুরু করেছেন। কাউন্সিলরদের মতামত উপেক্ষা করে দলের তৃণমূলে চাপিয়ে দেওয়া কমিটি গঠন করতে চাচ্ছেন। এমন পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় জাতীয় সংসদ ভবনের নবমতলায় অবস্থিত সরকারি দলের সভাকক্ষে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। দেশের সর্বশেষ পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের এই বৈঠক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। উপজেলা নির্বাচনসহ সব স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে বিদ্রোহী প্রাথী হওয়া এবং বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থনকারী দলের মন্ত্রী-এমপিরা বৈঠকে তোপের মুখে পড়তে পারেন বলেও আভাস পাওয়া গেছে। দলের তৃণমূল শাখাগুলোর সম্মেলনে এমপিদের হস্তক্ষেপ না করারও নির্দেশনা আসতে পারে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।

এদিকে আগামীকাল শুক্রবার বিকাল ৪টায় গণভবনে দলের উপদেষ্টা পরিষদের ও বিকাল সাড়ে ৪টায় কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথা সময়ে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ জানিয়েছেন। সভায় সাংগঠনিক সম্পাদকেরা তাদের বিভাগীয় জেলাগুলোতে কারা নৌকার বিরোধিতা করেছেন, কারা বিদ্রোহীদের সহায়তা করেছেন এবং তৃণমূলের সম্মেলনে প্রভাব বিস্তার করছেন তার বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত পেশ করবেন। বৈঠকে তাদের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

পাঁচ ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ১৪৩ জন দলীয় প্রার্থীর পরাজয় হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জনের মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে এই নির্বাচনে বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছে পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এর আগে কোন কোন এমপি-মন্ত্রী অথবা কেন্দ্রীয় বা জেলা নেতা নৌকার বিপক্ষে কাজ করেছেন তা জানতে চেয়ে তৃণমূলের কাছে প্রতিবেদন চেয়েছিল কেন্দ্র। সেই রিপোর্টের আলোকে সাংগঠনিক সম্পাদকেরা প্রমাণাদিসহ প্রতিবেদন তৈরি করেছিলেন এবং তা গত ৫ এপ্রিল দলের কার্যনির্বাহী কমিটিতে উপস্থাপনও করা হয়েছিল। সে সময় নৌকাবিরোধী এমপি-মন্ত্রীদের শোকজ করার সিদ্ধান্তও হয়। কিন্তু পরে তা বিভিন্ন কারণে হয়নি। এ নিয়ে অবশ্য কেন্দ্রীয় নেতারা বলেছিলেন, আরো তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হুটহাট করে শোকজ করা ঠিক হবে না। ইতিমধ্যে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন প্রস্তুত করেছেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদকেরা।