রোকনুজ্জামান রিপন ।।
বেনাপোল এক্সপ্রেস । পেছনের এক গল্প ,অনুপ্রেরণা সংক্রামক!মনমোহন চেয়েছিলেন আমাকে তাঁর সংস্থায় নিতে। এডিবি’র চাকরিতে আমার গররাজি দেখে অন্তত তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে একটা সেশন করতে। আমি চেয়েছি তাঁকে বেনাপোল আনতে। বার হাজার এশীয় যাত্রীর দুর্দশা দেখাতে। পঁয়ত্রিশ হাজার কোটি টাকা বাণিজ্যের বন্দর বেনাপোলের ভাগ্য ফেরাতে।
কথা না দিলেও তিনি সম্মত হলেন। আলাপে জানালেন, বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য এশীয় উন্নয়ন ব্যংকের ২.৭বিলিয়ান মা. ডলার আছে। তিনি আমাদের জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা করছেন। দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, ফলিপাইন, মঙ্গোলিয়ার পর তিনি বাংলাদেশ রাঙাতে এসেছেন।
দেশের চার জায়গায় ঢাকা থেকে বুলেট ট্রেন যাচ্ছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, দিনাজপুর। কিছু না ভেবেই বললাম, আমাকে বেনাপোল একটা দাও। নিষ্পলক তাকালেন, বললেন ‘দেরী হয়ে গেছে’! প্রকল্প অনুমোদন শেষ পর্যায়ে। তাঁর চোখে ‘না দিতে পারার’ আক্ষেপ স্পষ্ট! ফ্লাইটে বসে এমন অনেক কথা! ব্যাংকক থেকে ঢাকা ফিরছিলাম। গত ৭ জুলাই ২০১৮ প্রথম ও অদ্যাবধি শেষ সাক্ষাত!জাহাজ অবতরণের আগে কি মনে করে বললেন ‘পিএমওতে বুলেট ট্রেন চেয়ে স্টেকহোল্ডাদের দিয়ে লেখো’।
এডিবি’র কান্ট্রি ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশ! যিনি নিয়ত ‘কিছু দিতে পারার’ তৃষ্ণায় ! যিনি অভ্যস্ত ‘না’ দিয়ে বাক্য নাবলায়! মনকে মোহনীয় করতে পারঙ্গম সেকেন্ডে মিনিটে ঘন্টায়! অন্যের ওপর প্রভাব ফেলার কারিশমায়। সেরা এশীয় মহাদেশপ্রেমিকের ভূমিকায়! গত ১৭ জুলাই উদ্বোধন হলো দ্রুতগামী ট্রেন বেনাপোল এক্সপ্রেস। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সর্বস্তরের বেনাপোলবাসীর সামনে ভিডিও কনফারোন্সের মাধ্যমে পতাকা নেড়ে বাঁশি বাজিয়ে যাত্রা ঘোষণা করলেন।
সশ্রদ্ধ ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা উপকারভোগীদের পক্ষ থেকে, দেশের আধুনিক উন্নয়নের সাহসী অগ্রযাত্রার অবিকল্প পথিকৃত এই মহামানবীকে! কৃতজ্ঞতা ডক্টর মসিউর রহমান স্যার, আমার চেয়ারম্যান মহোদয় Mosharraf Bhuiyan, পিএমও’র মহাপরিচালক Akhter Neelimaকে।
উদ্বোধনের আগের দিন মনমোহনকে ধন্যবাদ জানিয়ে মোবাইলে ক্ষুদেবার্তা দিলাম। বললাম, তাঁর অনুপ্রেণায় ‘বিলাসী আশার বুলেট ট্রেন সেই চকিৎ চাওয়া; সে পথ ধরে বেনাপোল এক্সপ্রেস এক বছরে পাওয়া’!
পাল্টা বার্তায় জানালেন ‘এ ট্রেনের তেরশ কোটি টাকা তাঁরই সংস্থার দেয়া’! আমাকে সময়মতো জানাতে পারেননি। সেজন্য দু:খও করলেন। অসীম হৃদ্যতা ও কৃতজ্ঞতায় হৃদয় সিক্ত আপ্লুত! তিনি কথা না দিয়েও রেখেছেন। বুলেট ট্রেন বিলম্ব হবে বলে এক্সপ্রেসের টাকা দিয়েছেন।
এডিবি’র অর্থায়নে আনীত ইন্দোনেশিয়া থেকে সম্পূর্ণ নতুন ১২টি বগি। ইউরোরেল টাইপের! প্রতিবন্ধী ও রোগী বান্ধব। আছে বায়ো টয়লেট। দেশে দূর যাত্রার এ মুহূর্তে সবচেয়ে আনকোরা, পরিচ্ছন্ন, যাত্রীবান্ধব, আধুনিক প্রসাধনীর বিলাসী রেলবাহন!বেনাপোলে আমার সহকর্মীরা জানে। কিছু ক্ষেত্রে আমার প্রাত্যহিক অংশীজন সিএন্ডএফ অংশীজনরাও মনে করতে পারেন (যদিও তাঁদের দাবী ছিল, মৈত্রী ও বন্ধন ট্রেনের ‘দিন ও বিরতি’ বাড়ানো):
৭ জুলাই ২০১৮ এডিবির কান্ট্র ডিরেক্টর মনমোহন প্রকাশের সাথে সাক্ষাত ও বুলেট ট্রেন ধারণার সূত্রপাত; ১০ জুলাই ২০১৮ আমার ফেসবুক পোস্ট ‘একটি উড়াল রেলের স্বপ্ন’ ,১২ জুলাই সিএন্ডএফ, নেতৃবৃন্দের সাথে বুলেট ট্রেন নিয়ে প্রথম আলোচনা ‘বিলাসী’ ‘দু:স্বপ্ন’ ‘হবেনা’ প্রশ্নবোধক মন নিয়েও তাঁদের পিএমওতে চিঠি লিখতে সম্মত হওয়া, পিএমওতে সংশ্লিষ্ট উইংয়ে অনুরোধ জানাতে একটা চিঠি খসড়া করে দেই ,৭ আগস্ট ২০১৮ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে বুলেট ট্রেন চেয়ে সিএন্ডএফ সমিতির পত্র প্রেরণ; পরবর্তীকালে মাননীয় উপদেষ্টা ড: মসিউর রহমান স্যারের কাছে চিঠির কপি প্রেরণ ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৮ মাননীয় উপদেষ্টা থেকে আশ্বাস সম্বলিত ফিরতি জবাব, তিনি আরো বিস্তৃত করে দুদেশের রেল যোগাযোগ ইস্যু সম্পৃক্ত করেন ,পরবর্তীকালে বুলেট ট্রেন দেরী হলে বিরতিহীন একটা ট্রেনের জন্য তদ্বির ও চেষ্টা চলমান , মাননীয় অর্থ উপদেষ্টার ঐকান্তিক চেষ্টা ট্রেন সংগ্রাম আগুয়ান, চলমান
১০ এপ্রিল ২০১৯ মানীয় উপদেষ্টার দপ্তরে রেলের ডিজিসহ আমি ও বেনাপোল সিএন্ডএফ এর কয়জন নেতাকে পিএমওতে ডাকেন, ১০ এপ্রিল ২০১৯ ‘এক্সপ্রেস ট্রেন’ দেয়ার ঘোষণা দেন এবং আমি ফেসবুকে পোস্ট দেই, ১৭ রমযান উদ্বোধনের তারিখ ছিল
৬ জুলাই ২০১৯ মাননীয় উপদেষ্টাকে তাঁর অবিরত চেষ্টায় অর্জিত সাফল্যের জন্য কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন , জবাবে তিনি লেখেন, “আমাকে মনে করবার জন্য ধন্যবাদ। উভয় রেল কর্তৃপক্ষকে রাজী করাতে বত্সরাধিক সময় লেগেছে।” ৬ জুলাই ২০১৯ ‘ইছামতি’র পরিবর্তে ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ নামকরণের জন্য লেগে থাকা ও সাফল্য ,১৩ জুলাই ২০১৯ ‘বুলেট ট্রেন ধারনার সূত্রে এক্সপ্রেস ট্রেনের আগমনে’ মনমোহন প্রকাশকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন, একই দিনে জবাবে এ ট্রেনের টাকা এডিবির অর্থায়ন বলে তথ্য দেন
১৫ জুলাই বেনাপোলে নতুন ট্রেন আগমন , ১৭ জুলাই শুভ উদ্বোধন, ঢাকার পথে যাত্রা বিনোদন….
বেনাপোলে আমাদের অসংখ্য গল্প। এ গল্প কেবলই উদাহরণ শেয়ারের জন্য। দেশের সক্ষম অগ্রজ অনুজদের অনেকের ইচ্ছাশক্তি আমার চেয়ে বেশী বলে আমার বিশ্বাস! এ অভিজ্ঞতা যদি কারো আরো বড় কিছু চিন্তার ছোট খোরাক হয়। কোন নিয়ামক হয়.
আমি এডিবি যাইনি। মনমোহনও বেনাপোলে আসেননি। এডিবি দিয়েছে, বেনাপোল পেয়েছে। মনমোহনের অনুপ্রেরণা সংক্রমিত হয়ে বেনাপোলে। আধুনিক স্থলবন্দর নির্মাণেও এডিবি কথা দিয়েছে। কেবল পরিকল্পনা চেয়েছে। একইভাবে কার্গো রেল, বুলেট ট্রেনও পথে আছে। আছে আরো কত কী…..
জেনেছি, মনমোহন যেখানে গিয়েছেন সে জাতিকে অকাতরে দিয়েছেন। নিজ অভিজ্ঞতায় সেদেশের উপযোগী প্রকল্প বানিয়ে দিয়েছেন। এশিয়ার মানুষকে দেশের মতো ভালোবাসেন। অহিংস নেতৃত্বে বহুজাতিক ধারণা জাগিয়ে তোলেন। এমন মানুষগুলো ক্ষণজন্মা ও বিরল। তাঁর পরিকল্পনা ও হৃদ্যতায় বর্ণিল হোক বাংলার রেল, রাস্তাঘাট, সেতু অঢেল! বাংলাদেশ, আমার দেশ হোক সকল কলায় রোলমডেল…