শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বারবার বমি পাওয়া বড় রোগের লক্ষণ হতে পারে

সাজেদুর রহমান ।। 

বমি এমন একটা রোগ যা করার আগে সারা শরীর যেন উথাল-পাতাল করতে থাকে। তবে যাদের এটা ঘনঘন হয়ে থাকে তাঁদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। খাদ্যরসিক বাঙালির বদহজমে গা গুলানোর কষ্ট তো অতি পরিচিত অস্বস্তি। তবে এই বমি ভাব লক্ষণের পিছনে লুকিয়ে থাকতে পারে নানা ধরনের অসুখ। মস্তিষ্কে সিটিজেড (কেমোরিসেপ্টর ট্রিজার জোন) উপস্থিত স্নায়ু দ্বারাই বমি অনুভূতি তৈরি হয়। যখন সিটিজেড অংশে উপস্থিত স্নায়ুগুলি উত্তেজিত হয় তখনই আমরা বমি ভাব অনুভব করি। কি কারণে দেখা যায়- মাথাব্যথা এবং চোখের সমস্যার সঙ্গে গা বমিভাব থাকলে তা চোখের সমস্যা থেকেও হতে পারে। বিশেষত চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ বাড়লে এমন সমস্যা হতে পারে।

১) মোশন সিকনেস- এক্ষেত্রে গাড়ি, বাস, ট্রেনে চলন্ত অবস্থায়, পাহাড়ে চড়লে বা নাগরদোলা জাতীয় ঘূর্ণায়মান পরিস্থিতিতে শুধু গা বমি করে তা নয়, অনেক ক্ষেত্রে বমিও হয়। পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়ার পথে গা-বমি ভাবের আতঙ্কে কাঁটা হয়ে থাকেন অনেকে। কারও আবার রোজ যাতায়াতের পথে ট্যাক্সি, বাসে উঠলেই শরীরে তোলপাড় শুরু।
২) গর্ভাবস্থায়- অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমন লক্ষণ দেখা যায়। প্রথম তিন মাসের মধ্যে ৭০% গর্ভবতী মহিলাদের এমন হতে পারে। গর্ভাবস্থায় বমি অতিরিক্ত হলে তা হাইপারএমেসিস গ্রাভিডেরাম অসুস্থতা। এক্ষেত্রে গর্ভবতীর শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে জল ও লবণ বেরিয়ে যায়। ফলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
৩) পেটের গোলমাল- গ্যাসট্রো রিফ্লাস ডিজিজ/ সেপটিক আলসার ডিজিজ/ নন আলসার ডিসপেপসিয়া- এই ধরনের পাকস্থলি বা ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রদাহ বা অসুখ, প্যানক্রিয়াটিস,অন্ত্রে কোনও বাধার সৃষ্টি হলে, হেপাটাইটিস, ইনফ্লামেটরি বাওয়েল ডিজিজের মতো সমস্যার ক্ষেত্রে গা বমি ভাব হতে পারে।
৪) ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া- কিছু কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়ার ফলে গা বমি ভাব হয়। যেমন এরিথ্রোমাইসিন, টেট্রাসাইক্লিন ওষুধ, ব্যথার ওষুধ, যক্ষ্মা ও ক্যানসারের কেমোথেরাপি, গর্ভনিরোধক বড়ি, গর্ভমোচনকারী ওষুধ, মানসিক রোগের ওষুধে বমির লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এছাড়াও যে কোনও ব্যক্তিরই যে কোনও ধরনের ওষুধে সাইড এফেক্ট হিসাবে গা বমি হতে পারে।
৫) মানসিক কারণ- মানসিক অবসাদ, দুশ্চিন্তায় গা বমি ভাব হয়। মস্তিষ্কে সমস্যার কারণে অনেক সময় খুব গা বমিভাব না হয়ে বমি হয় এবং মাথা যন্ত্রণা হয় সকালের দিকে। আবার কারোর বমির সঙ্গে মাথা ঘোরা বা মাথায় ব্যথা করলে, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে থাকলে, হাঁটতে গেলে রোগী টলে গেলে, মাথা ঘুরে পড়ে গেলে বা অজ্ঞান হয়ে গেলে তা মস্তিষ্কের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
৬) ব্যথা- যে কোনও অসহনীয় যন্ত্রণায় বমির প্রবণতা দেখা দেয়।
৭) কানের সমস্যা-কান ভোঁ ভোঁ করে এবং বমির প্রবনতা দেখা যায়।
৮) নেশার কারণ- অধিকাংশ ক্ষেত্রে যখন কেউ প্রথমবার নেশা করলে বা হঠাৎ বন্ধ করে দিলে বমি ভাব হতে পারে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

বারবার বমি পাওয়া বড় রোগের লক্ষণ হতে পারে

প্রকাশের সময় : ০৮:২৮:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৫ জুলাই ২০১৯
সাজেদুর রহমান ।। 

বমি এমন একটা রোগ যা করার আগে সারা শরীর যেন উথাল-পাতাল করতে থাকে। তবে যাদের এটা ঘনঘন হয়ে থাকে তাঁদের অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন। খাদ্যরসিক বাঙালির বদহজমে গা গুলানোর কষ্ট তো অতি পরিচিত অস্বস্তি। তবে এই বমি ভাব লক্ষণের পিছনে লুকিয়ে থাকতে পারে নানা ধরনের অসুখ। মস্তিষ্কে সিটিজেড (কেমোরিসেপ্টর ট্রিজার জোন) উপস্থিত স্নায়ু দ্বারাই বমি অনুভূতি তৈরি হয়। যখন সিটিজেড অংশে উপস্থিত স্নায়ুগুলি উত্তেজিত হয় তখনই আমরা বমি ভাব অনুভব করি। কি কারণে দেখা যায়- মাথাব্যথা এবং চোখের সমস্যার সঙ্গে গা বমিভাব থাকলে তা চোখের সমস্যা থেকেও হতে পারে। বিশেষত চোখের অভ্যন্তরীণ চাপ বাড়লে এমন সমস্যা হতে পারে।

১) মোশন সিকনেস- এক্ষেত্রে গাড়ি, বাস, ট্রেনে চলন্ত অবস্থায়, পাহাড়ে চড়লে বা নাগরদোলা জাতীয় ঘূর্ণায়মান পরিস্থিতিতে শুধু গা বমি করে তা নয়, অনেক ক্ষেত্রে বমিও হয়। পাহাড়ে বেড়াতে যাওয়ার পথে গা-বমি ভাবের আতঙ্কে কাঁটা হয়ে থাকেন অনেকে। কারও আবার রোজ যাতায়াতের পথে ট্যাক্সি, বাসে উঠলেই শরীরে তোলপাড় শুরু।
২) গর্ভাবস্থায়- অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এমন লক্ষণ দেখা যায়। প্রথম তিন মাসের মধ্যে ৭০% গর্ভবতী মহিলাদের এমন হতে পারে। গর্ভাবস্থায় বমি অতিরিক্ত হলে তা হাইপারএমেসিস গ্রাভিডেরাম অসুস্থতা। এক্ষেত্রে গর্ভবতীর শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণে জল ও লবণ বেরিয়ে যায়। ফলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
৩) পেটের গোলমাল- গ্যাসট্রো রিফ্লাস ডিজিজ/ সেপটিক আলসার ডিজিজ/ নন আলসার ডিসপেপসিয়া- এই ধরনের পাকস্থলি বা ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রদাহ বা অসুখ, প্যানক্রিয়াটিস,অন্ত্রে কোনও বাধার সৃষ্টি হলে, হেপাটাইটিস, ইনফ্লামেটরি বাওয়েল ডিজিজের মতো সমস্যার ক্ষেত্রে গা বমি ভাব হতে পারে।
৪) ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া- কিছু কিছু অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ খাওয়ার ফলে গা বমি ভাব হয়। যেমন এরিথ্রোমাইসিন, টেট্রাসাইক্লিন ওষুধ, ব্যথার ওষুধ, যক্ষ্মা ও ক্যানসারের কেমোথেরাপি, গর্ভনিরোধক বড়ি, গর্ভমোচনকারী ওষুধ, মানসিক রোগের ওষুধে বমির লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এছাড়াও যে কোনও ব্যক্তিরই যে কোনও ধরনের ওষুধে সাইড এফেক্ট হিসাবে গা বমি হতে পারে।
৫) মানসিক কারণ- মানসিক অবসাদ, দুশ্চিন্তায় গা বমি ভাব হয়। মস্তিষ্কে সমস্যার কারণে অনেক সময় খুব গা বমিভাব না হয়ে বমি হয় এবং মাথা যন্ত্রণা হয় সকালের দিকে। আবার কারোর বমির সঙ্গে মাথা ঘোরা বা মাথায় ব্যথা করলে, দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হতে থাকলে, হাঁটতে গেলে রোগী টলে গেলে, মাথা ঘুরে পড়ে গেলে বা অজ্ঞান হয়ে গেলে তা মস্তিষ্কের সমস্যার লক্ষণ হতে পারে।
৬) ব্যথা- যে কোনও অসহনীয় যন্ত্রণায় বমির প্রবণতা দেখা দেয়।
৭) কানের সমস্যা-কান ভোঁ ভোঁ করে এবং বমির প্রবনতা দেখা যায়।
৮) নেশার কারণ- অধিকাংশ ক্ষেত্রে যখন কেউ প্রথমবার নেশা করলে বা হঠাৎ বন্ধ করে দিলে বমি ভাব হতে পারে।