যশোর ব্যুরো ॥
চলতি বর্ষা মৌসুমে যশোর পৌরবাসীর জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগের শেষ নেই। পৌরসভার নির্মিত ড্রেনে পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় এ ভোগান্তি বাড়ছে মানুষের। ফলে অন্যান্য মৌসুমের মতো এবারও পানিবন্দি হচ্ছে শহরের নিন্মা ঞ্চলের মানুষ। গত দুইদিনের ভারি বৃষ্টিপাতে জলাবদ্ধতায় নাকাল হতে হয়েছে এসব অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের। পৌরসভার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন পুরোপুরি সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এ সমস্যা কিছুটা ভোগ করতে হবে নাগরিকদের। ১৮৬৪ সালে যশোর পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। সুপ্রাচীন এই শহরে আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি দীর্ঘদিনেও। শহরের পুরনো অংশ তো বটেই, নতুন অংশেও নেই কোনো পরিকল্পনার ছাপ। যে যার ইচ্ছামতো বাড়িঘর, দোকানপাট তৈরি করে রেখেছে। ফলে পানি নিষ্কাশনের সুবিধা এ শহরে খুবই কম। একটু বৃষ্টি হলেই তাই হাঁটুজল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যশোর শহরের পানি নিষ্কাশিত হয় দুটি পথে। শহরের মধ্য ও উত্তরাংশের পানি চলে যায় ভৈরব নদে। আর দক্ষিণাংশের পানি যায় বিলহরিণায়। রাস্তাসহ অপরিকল্পিতভাবে নানা অবকাঠামো নির্মাণের ফলে হরিণার বিল ভরাট হয়ে গেছে অনেকখানি। বিলটি এখন আর শহরের পানি ধারণ করতে পারে না আগের মতো। ভৈরবের পানি ধারণক্ষমতা তুলনামূলক বেশি হলেও অপরিকল্পিত কালভার্ট নির্মাণ, ড্রেন ও পৌরসভার রাস্তা দখলের কারণে শহরের মধ্য ও উত্তরাংশের পানিও ঠিকমতো নিষ্কাশিত হয় না। এছাড়া পৌরসভার ভেতরে সদ্য নির্মিত ড্রেন দিয়ে পুরোপুরি পানিও যাচ্ছে না। কোথাও কোথাও ড্রেন উপচে রাস্তার ওপর ময়লা পানি পড়ছে। এসব পানি ঢুকে পড়ছে শহরের অলিগলিতে বাসা-বাড়িতে। স্থানীয়রা জানান, গত দুইদিনের ভারী বৃষ্টিতে যশোর শহরের বেশকিছু এলাকা পানিতে ডুবে যায়। এর মধ্যে শহরের এমএম কলেজের দক্ষিণ গেট সংলগ্ন সড়কের খড়কী জেমিনের মোড় থেকে দক্ষিণে শাহ আব্দুল করিম সড়কটি পানিতে তলিয়ে যায়। শুক্রবার রাতের মাত্র কয়েক ঘন্টার বৃষ্টিতে এ রাস্তা পানিতে সয়লাব হয়ে যায়। হাঁটু পর্যন্ত পানি জমে যাওয়ায় সড়কটি দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। যা শনিবার দুপুর পর্যন্ত বহাল ছিলো।
ওই এলাকার বাসিন্দা শফিউল আলম জানান, পৌরসভার উদ্যোগে এ অঞ্চলে কিছু অংশে ড্রেনেজ নির্মাণ করা হলেও তা কাজে আসছে না। নির্মাণ করা এসব ড্রেনের সাথে অন্যসব ড্রেনের সংযোগ না থাকায় পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে না। কোথাও কোথাও ড্রেনেজ ব্যবস্থা উঁচু হওয়ায় পানি চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। ফলে এ অঞ্চলের মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। একই অবস্থা শহরে ষষ্ঠিতলা পিটিআই রোড এলাকায়। সামান্য বৃষ্টি হলেই পিটিআই মোড় হতে শহরের টিবি ক্লিনিক মোড় পর্যন্ত পানি জমে যায়। ফলে বৃষ্টি হলেই এই সড়ক দিয়ে পায়ে হেঁটেতো দূরের কথা রিকশা চড়ে যাওয়াও দুস্কর হয়ে পড়ে। ওই এলাকার বাসিন্দা আলিমুর রহমান রানা বলেন, শুক্রবার ভোর রাতের মাত্র দেড় ঘন্টার বৃষ্টিতে পুরো রাস্তায় হাটুপানি জমে যায়। যা শনিবার প্রায় তিন ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী ছিলো। তিনি বলেন, এই সড়কটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অথচ বর্ষা আসলেই প্রতিবছর আমাদের এ সমস্যা ভোগ করতে হয়। পৌরসভা নতুন ড্রেন নির্মাণ করার পর মনে হয়েছিলো পানি সমস্যা কেটে যাবে। কিন্তু তার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং সমস্যা আরও প্রকট হচ্ছে।
শহরের পোস্ট অফিস পাড়ারও ঠিক একই চিত্র। এই এলাকায় ড্রেন নির্মাণ করা হলেও পানি বের হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বৃষ্টি হলেই ড্রেনের পানি উপচে রাস্তায় পড়ে। ড্রেনের ময়লা আর বৃষ্টির পানি একাকার হওয়ায় মানুষের চলাচল দুষ্কর হয়ে পড়ে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এখানকার ড্রেনগুলো দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার করা হয় না। যে কারণে পানি সরতে সমস্যা হয়। পাশেই জণস্বাস্থ্য প্রকৌশল ( পাবলিক হেলথ) অফিসের সামনে সড়কটিতেও পানি জমে একাকার হয়ে যায়। শহরের এ চিত্রের পাশাপাশি শহরের বাইরের নিন্মাঞ্চলের অবস্থা আরও করুন। বিশেষ করে শঙ্করপুর এলাকার বড় একটি অংশ সামান্য বৃষ্টি হলে পানিবন্দি হয়ে পড়ছে মানুষ। নাগরিকরা জানান, পৌরসভার উদ্যোগে ড্রেন নির্মাণ হলেও তা দিয়ে পানি বের হচ্ছে না। যে কারণে নাগরিকদের দুর্ভোগ থেকেই যাচ্ছে। এ বিষয়ে যশোর পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আজমল হোসেন জানান, পৌরসভার উন্নয়নের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে প্রথম দফায় ইউজিআইআইপি-৩ আওতায় ৪৯,৩৭,২৩,৪৮০/= টাকার উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় পৌরসভার অভ্যন্তরে ৩৭টি সড়ক ও ৩২টি ড্রেন উন্নয়ন করা হয়েছে। বাকি সড়ক ও ড্রেনের উন্নয়ন কাজের জন্য সেপ্টেম্বরের দিকে টেন্ডার আহ্বান করা হবে। তিনি বলেন, ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজ চলমান। প্রথম প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। এখন দ্বিতীয় দফা কাজ শুরু হবে।