শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মন্ত্রী-এমপিদের মস্তিষ্ক পরীক্ষা করা দরকার: রিজভী

 নুরুল ইসলাম ।। 

বাংলাদেশ যখন উন্নত হতে যাচ্ছে, তখন বিদেশ থেকে দেশে ডেঙ্গু এসেছে-পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী। বলেছেন, ‘মন্ত্রীর এহেন বক্তব্য শুনে এগুলোকে ‘টক অব দি সেঞ্চুরি’বলবো নাকি ‘শক অব দি সেঞ্চুরি’বলবো, এ নিয়ে দ্বিধায় আছি। আসলে ডেঙ্গু নয় আওয়ামী লীগের এমপি মন্ত্রীদের মস্তিষ্ক পরীক্ষা করা দরকার। তারা সকালে এক কথা বিকালে আরেক কথা বলছেন।’

শুক্রবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

বৃহস্পতিবার গোপালগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘দেশ যত উন্নত হবে মানুষের সমস্যা তত বাড়বে। যে দেশ যত উন্নত সে দেশে তত রোগের প্রভাব। ডেঙ্গু একটি এলিট শ্রেণির মশা। এ মশা সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, কলকাতা শহরেও দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ যখন উন্নত দেশ হতে যাচ্ছে, তখন বিদেশ থেকে দেশে ডেঙ্গু এসেছে। মানুষের যত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে, তত নানা রোগে আক্রান্ত হবে।’

এর আগে রিজভী আহমেদ ডেঙ্গু নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘ডেঙ্গু বাংলাদেশে আমদানি করেছে আওয়ামী লীগ।’

এডিস মশা আর ডেঙ্গু নিয়ে সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যদের বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘মধ্যরাতের নির্বাচন করে আওয়ামী মন্ত্রিসভায় এডিস মশা বিস্তারের মতো গবুচন্দ্রের মন্ত্রীদেরও বিস্তার ঘটেছে। দেশব্যাপী যেমন এডিস মশার বিস্তারে কোনো বিরতি দেখা যাচ্ছে না, ঠিক তেমনি নবকলরবে গবুচন্দ্র মন্ত্রীদেরও হাসি-তামাশা উদ্রেককারী কথাবার্তারও কমতি দেখা যাচ্ছে না। স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী কোনো ব্যুরো থেকে উল্লিখিত তথ্যসমূহ সংগ্রহ করেছেন তা জানালে দেশবাসীর উপকার হতো। দেশ উন্নত হলে যদি রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায় তাহলে লন্ডন, নিউইয়র্ক, প্যারিস, কোপেনহেগেন ইত্যাদি উন্নত শহরগুলোতে ডেঙ্গুতে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাতো। এহেন মন্ত্রীদের উদ্ভট বোলচালে জনজীবন ডেঙ্গুর মতোই বিপর্যস্ত।’

‘প্রতিমন্ত্রী বোধহয় আসল কথাটি বলতে চেয়েছেন একটু অন্যভাবে যে, উন্নয়নের নামে দুর্নীতির বিপুল পরিমাণ টাকা পকেটস্থ হলেই ডেঙ্গুর মতো প্রাণবিনাশী বালা মসিবত দেশে বিস্তার লাভ করে। মশা নিধনের টাকা লুটেপুটে খেয়েছে মেয়ররা।’

রিজভী বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ে স্ববিরোধী, বিপরীতধর্মী কথাবার্তা, রাতের কথার সঙ্গে সকালের কথার গরমিল, ইত্যাদি এ ধরনের কথা থেকে সিকি-আধুলি ও গোটা মন্ত্রী কেউই কম যাচ্ছেন না। ওবায়দুল কাদের সাহেব কয়েক দিন আগে বলেছেন যে, সবাই ঈদে বাড়ি যাবেন কোনো অসুবিধা নাই। গতকাল আবার বলেছেন-বাড়ি যাবার আগে রক্ত পরীক্ষা করে যাবেন।’

বিবিসিকে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘বিবিসির সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন-এডিস নিয়ে মিডিয়ার বাড়াবাড়িতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। মূলত মেয়র থেকে শুরু করে মন্ত্রীরা এমনকি প্রধানমন্ত্রীও ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের দুঃখ-দুর্দশাসহ বিভিন্ন দুর্যোগে ঠাট্টা মশকরা করছেন। অথচ সারাদেশে হাসপাতালগুলোতে কোনো ঠাঁই নেই। ডেঙ্গু রোগীতে ছেয়ে গেছে সব হাসপাতাল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও রক্ত পরীক্ষা করতে পারছে না রোগীরা।’

রিজভীর দাবি, কেউ কেউ অনেক কষ্ট করে রক্ত পরীক্ষা করেও রিপোর্ট পেতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। যেদিন রিপোর্ট দেয়ার কথা বলা হয়, সেদিন রোগীরা রিপোর্ট পান না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও রিপোর্ট নিয়ে প্রচণ্ড দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ডেঙ্গু রোগী ও তাদের পরিবারকে। আবার হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরেও সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে অসংখ্য শিশুসহ নানা বয়সী মানুষ। হাসপাতালে বেড না পেয়ে মেঝেতে কাতরাচ্ছে শিশুরা। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার কোনো সক্ষমতা নেই এই সরকারের। উন্নয়নের নামে পকেট ভারী করার জন্যই আজকে ডেঙ্গুর মতো এ দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার অক্ষম।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখনো গুরুতর অসুস্থ। বারবার ইনস্যুলিন পরিবর্তন এবং ইনস্যুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি করার পরেও কোনো অবস্থাতেই তার সুগার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। ’

তিনি বলেন, যথাযথ চিকিৎসার বিষয়ে বারবার দাবি করা সত্ত্বেও তাকে উন্নতমানের যন্ত্রপাতি উন্নত দেশের কোনো বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। ব্যথার কারণে রাতে তার ঘুম হচ্ছে না এবং সারাক্ষণ তিনি অস্থির থাকছেন। দেশবাসী দেশনেত্রীর জীবনের পরিণতি নিয়ে এখনো অজানা আতঙ্ক ও শঙ্কার মধ্যে রয়েছে।

রিজভী বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে দেশবাসী এবং বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরকে পবিত্র ঈদুল আজহার প্রাণঢালা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ঈদুল আজহার পূর্বেই মুক্তি দিতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

মন্ত্রী-এমপিদের মস্তিষ্ক পরীক্ষা করা দরকার: রিজভী

প্রকাশের সময় : ০৮:১৪:১৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ অগাস্ট ২০১৯

 নুরুল ইসলাম ।। 

বাংলাদেশ যখন উন্নত হতে যাচ্ছে, তখন বিদেশ থেকে দেশে ডেঙ্গু এসেছে-পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী। বলেছেন, ‘মন্ত্রীর এহেন বক্তব্য শুনে এগুলোকে ‘টক অব দি সেঞ্চুরি’বলবো নাকি ‘শক অব দি সেঞ্চুরি’বলবো, এ নিয়ে দ্বিধায় আছি। আসলে ডেঙ্গু নয় আওয়ামী লীগের এমপি মন্ত্রীদের মস্তিষ্ক পরীক্ষা করা দরকার। তারা সকালে এক কথা বিকালে আরেক কথা বলছেন।’

শুক্রবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

বৃহস্পতিবার গোপালগঞ্জে এক অনুষ্ঠানে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘দেশ যত উন্নত হবে মানুষের সমস্যা তত বাড়বে। যে দেশ যত উন্নত সে দেশে তত রোগের প্রভাব। ডেঙ্গু একটি এলিট শ্রেণির মশা। এ মশা সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, কলকাতা শহরেও দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশ যখন উন্নত দেশ হতে যাচ্ছে, তখন বিদেশ থেকে দেশে ডেঙ্গু এসেছে। মানুষের যত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে, তত নানা রোগে আক্রান্ত হবে।’

এর আগে রিজভী আহমেদ ডেঙ্গু নিয়ে বক্তব্য রাখতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘ডেঙ্গু বাংলাদেশে আমদানি করেছে আওয়ামী লীগ।’

এডিস মশা আর ডেঙ্গু নিয়ে সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যদের বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘মধ্যরাতের নির্বাচন করে আওয়ামী মন্ত্রিসভায় এডিস মশা বিস্তারের মতো গবুচন্দ্রের মন্ত্রীদেরও বিস্তার ঘটেছে। দেশব্যাপী যেমন এডিস মশার বিস্তারে কোনো বিরতি দেখা যাচ্ছে না, ঠিক তেমনি নবকলরবে গবুচন্দ্র মন্ত্রীদেরও হাসি-তামাশা উদ্রেককারী কথাবার্তারও কমতি দেখা যাচ্ছে না। স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী কোনো ব্যুরো থেকে উল্লিখিত তথ্যসমূহ সংগ্রহ করেছেন তা জানালে দেশবাসীর উপকার হতো। দেশ উন্নত হলে যদি রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পায় তাহলে লন্ডন, নিউইয়র্ক, প্যারিস, কোপেনহেগেন ইত্যাদি উন্নত শহরগুলোতে ডেঙ্গুতে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারাতো। এহেন মন্ত্রীদের উদ্ভট বোলচালে জনজীবন ডেঙ্গুর মতোই বিপর্যস্ত।’

‘প্রতিমন্ত্রী বোধহয় আসল কথাটি বলতে চেয়েছেন একটু অন্যভাবে যে, উন্নয়নের নামে দুর্নীতির বিপুল পরিমাণ টাকা পকেটস্থ হলেই ডেঙ্গুর মতো প্রাণবিনাশী বালা মসিবত দেশে বিস্তার লাভ করে। মশা নিধনের টাকা লুটেপুটে খেয়েছে মেয়ররা।’

রিজভী বলেন, ‘ডেঙ্গু নিয়ে স্ববিরোধী, বিপরীতধর্মী কথাবার্তা, রাতের কথার সঙ্গে সকালের কথার গরমিল, ইত্যাদি এ ধরনের কথা থেকে সিকি-আধুলি ও গোটা মন্ত্রী কেউই কম যাচ্ছেন না। ওবায়দুল কাদের সাহেব কয়েক দিন আগে বলেছেন যে, সবাই ঈদে বাড়ি যাবেন কোনো অসুবিধা নাই। গতকাল আবার বলেছেন-বাড়ি যাবার আগে রক্ত পরীক্ষা করে যাবেন।’

বিবিসিকে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘বিবিসির সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন-এডিস নিয়ে মিডিয়ার বাড়াবাড়িতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। মূলত মেয়র থেকে শুরু করে মন্ত্রীরা এমনকি প্রধানমন্ত্রীও ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের দুঃখ-দুর্দশাসহ বিভিন্ন দুর্যোগে ঠাট্টা মশকরা করছেন। অথচ সারাদেশে হাসপাতালগুলোতে কোনো ঠাঁই নেই। ডেঙ্গু রোগীতে ছেয়ে গেছে সব হাসপাতাল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও রক্ত পরীক্ষা করতে পারছে না রোগীরা।’

রিজভীর দাবি, কেউ কেউ অনেক কষ্ট করে রক্ত পরীক্ষা করেও রিপোর্ট পেতে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। যেদিন রিপোর্ট দেয়ার কথা বলা হয়, সেদিন রোগীরা রিপোর্ট পান না। পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও রিপোর্ট নিয়ে প্রচণ্ড দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ডেঙ্গু রোগী ও তাদের পরিবারকে। আবার হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরেও সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে অসংখ্য শিশুসহ নানা বয়সী মানুষ। হাসপাতালে বেড না পেয়ে মেঝেতে কাতরাচ্ছে শিশুরা। পরিস্থিতি সামাল দেয়ার কোনো সক্ষমতা নেই এই সরকারের। উন্নয়নের নামে পকেট ভারী করার জন্যই আজকে ডেঙ্গুর মতো এ দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকার অক্ষম।

খালেদা জিয়ার শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে রিজভী বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখনো গুরুতর অসুস্থ। বারবার ইনস্যুলিন পরিবর্তন এবং ইনস্যুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি করার পরেও কোনো অবস্থাতেই তার সুগার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। ’

তিনি বলেন, যথাযথ চিকিৎসার বিষয়ে বারবার দাবি করা সত্ত্বেও তাকে উন্নতমানের যন্ত্রপাতি উন্নত দেশের কোনো বিশেষায়িত হাসপাতালে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়নি। ব্যথার কারণে রাতে তার ঘুম হচ্ছে না এবং সারাক্ষণ তিনি অস্থির থাকছেন। দেশবাসী দেশনেত্রীর জীবনের পরিণতি নিয়ে এখনো অজানা আতঙ্ক ও শঙ্কার মধ্যে রয়েছে।

রিজভী বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পরিবারের সদস্যদের মাধ্যমে দেশবাসী এবং বিএনপি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদেরকে পবিত্র ঈদুল আজহার প্রাণঢালা শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে ঈদুল আজহার পূর্বেই মুক্তি দিতে হবে।