সোমবার, ২৮ এপ্রিল ২০২৫, ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বাড়ির আধুনিক ড্রইং রুমের গল্প

অফসরাহ মহসিন ।। 

ব্রাউন আর বেজের মাঝে তুঁতে নীল রঙের রিলিফ। ঠিক তার উপরেই দেওয়ালে টাভানো মিশর থেকে আনা পেন্টিং। বেশ অভিনব দেখতে। ঘরের মেঝের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই কালার স্কিম।

ই এম বাইপাস সংলগ্ন বিশাল বহুতল কমপ্লেক্স। গেটে নিরাপত্তা কর্মীদের কড়া পাহাড়া। সিকিউরিটি চেক ইনের ফর্মালিটি সেরে আমার ফোটোগ্রাফার বন্ধুকে নিয়ে পৌঁছে গেলাম নির্দিষ্ট ঠিকানায়। দরজায় খুলে হাসিমুখে স্বাগত জানালেন কল্পনা মৌলিক। সে হাসি কেঠো নয় বা নিছক ফর্মালিটিও নয়। একেবারে প্রাণখোলা, নিজের লোকেদের দেখলে যেমন হয়। বর্ষীয়ান মানুষটির এই আন্তরিকতায় বুঝে গেলাম সঠিক জায়গাতেই এসেছি। আসলে অন্দরমহলের গল্প তো সেই বাড়ির মানুষজনদের নিয়ে। নিছক ঘর, আসবাব, দেওয়ালে রং দিয়ে তো আর অন্দরমহলের বিচার করা যায় না। অন্তরমহল যেখানে অন্দরমহলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে, সেই বাড়ি সুন্দর। যেখানে ঢুকলে সারাদিনের ধকল, ক্লান্তি উধাও হয়ে যায়, সেই বাড়ি তো আরামের আশ্রয়। যেখানে অনায়াসে চলেফেরা করা যায়, যেখানে কোনও জড়তা নেই, নির্ভার, সেই অন্দরমহলই যথার্থ। আর এই বাড়ি ঠিক তেনই। গড়ে উঠেছে তার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রাকে ঘিরেই। বাড়িতে সদস্য বলতে এখন একজনই। বয়স ৭০ বছরের উপরে হলেও অফুরান প্রাণশক্তি দেখার মতো। বাকি সদস্য দুই মেয়ে। বড় দেবস্মিতা ২৫ বছর ধরে মস্কোনিবাসী। সাংবাদিকতা করেন। ছোট মেয়ে মধুরান্তিকা পেশা সূত্রে থাকেন কুয়ালালামপুরে। ‘‘আমার ছোট মেয়েই এই ফ্ল্যাট করেছে। এ বাড়ি সেই অর্থে ওঁরই। দাঁড়িয়ে থেকে সমস্ত কাজ করিয়েছে।’ জানালেন কল্পনা। প্রথম থেকেই মধুরান্তিকার ইচ্ছে ছিল বাড়ির সাজগোজ হবে একেবারে ক্লাসিক। আর সেই ইচ্ছে একেবারেই বিফলে যানি। অন্দরসাজের দায়িত্ব ইন্টিরিয়র ডিজ়াইনারের থাকলেও, প্রতিটা বিষয় নিয়ে প্রচুর ভাবনাচিন্তা করছেনে মৌলিকরা। বেশ কিছু পুরনো আসবাব ছিল, সেগুলো ফেলে দেওয়ার কোনও মানেই হত না। আসবাব মানে আর নিছকই কাঠের কিছু স্ট্রাকচার নয়, তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে কত সুখস্মৃতি, কত নস্টালজিয়া। কিন্তু নতুন বাড়িতে পুরনো আসবাব কতটা খাপ খাওয়াবে সে বিষয়ে বেশ সন্দেহ ছিল। তবে মুশকিল আসান করেন ইন্টিরিয়র ডিজ়াইনার। পুরনো সবকিছু রেখেও যে অন্দরমহলকে নতুন, আধুনিক রূপ দেওয়া যায়, তা আরও একবার প্রমাণ পেলাম। আর এই ভাবনার জন্যে সাধুবাদ দিতেই হয় মৌলিকদের। আর এই ভাবনার মূল কারিগর মধুরান্তিকা বরাবর বিশ্বাস করেন পুরনো মানেই ফেলনা নয়। আর সেই মেনেই এই অন্দরসাজের পরিকল্পনা।


প্রায় ১৩০০ স্কোয়ার ফিটের ফ্ল্যাটে তিনটে কামরা। ঢুকেই  বসার জায়গা। বাদামি আপহোলস্টার্ড সোফায় বেজ রঙের পুরু গদি আঁটা।  মাঝে গ্লাস টপ কাঠের সেন্টার টেবল। একদিকে আবার চৌকির আদলে গদি আঁটা বেঁটে টুল । স্টাইল ও আকার দেখে বোঝাই যায় বেশ পুরনো। সামনাসামনি দেওয়ালজোড়া শোপিস ক্যাবিনেট। দুই মেয়ে প্রচুর ঘুরে বড়ায়। দেশে-বিদেশে তাদের অবাধ গতিবিধি। আর যখনই যেখানে যায়, সেখানে থেকেই জিনিস দুড়ে যায় বাড়ির এই সংগ্রহশালায়। নজর কাড়ে  সোফার পাশে রাখা হাঁড়ির আকৃতির ল্যাম্পশেড। ব্রাউন আর বেজের মাঝে তুঁতে নীল রঙের রিলিফ। ঠিক তার উপরেই দেওয়ালে টাভানো মিশর থেকে আনা পেন্টিং। বেশ অভিনব দেখতে। ঘরের মেঝের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই কালার স্কিম। ধূসরের কালার প্যালেটের নান শেড চোখে পড়ে ফ্ল্যাট জুড়ে। রঙের একঘেয়েমি কাটাতে অবশ্য ব্যবহার করা হয়েছে নীলের মধ্যে প্রিন্টেড ব্লাইন্ডস। ভারী সুন্দর লাগে দেখতে। এঅ অন্দরমহলের বিশেষত্ব এখানেই। অযথা ঘর বোঝাই করা জিনি নেই, আসবাবও কম। ঠিক যতটা প্রয়োজন, ততটাই। আসলে অন্দরসাজে পরিমিতিবোধ থাকাটা বেজায় জরুরি। ছিমছাম, বাহুল্যহীন অন্দরমহলের মধ্যে যে প্রাণের পরশ আর ভাললাগার রেশ থাকে, তা সত্যি তুলনাহীন।


ড্রয়িং রুমের সঙ্গেই লাগোয়া খাওয়ার জায়গা। লম্বাটে টেবল ঘিরে সাদা চেয়ার। টেবলের উপরও সাদা প্রিন্টেড টেবলকভার। একদিকের দেওয়ালে কাচের ক্যাবিনেটে ভর্তি ক্রিস্টালের জিনিস। বেশিরভাগই দেবস্মিতার আনা, মস্কো থেকে। বেশ প্রাচীন এবং অন্য ধাঁচের ক্রিস্টাল শো পিসগুলি এখন নাকি মস্কোতেও আর পাওয়া যায়না দানালেন কল্পনা, ক্যাবিনেটের পাশেই স্লিক অ্যান্ড স্মার্ট বার কাউন্টার। প্রচুর সুন্দর সুন্দর গ্লাস সাজানো। এ বাড়িতে বেশিরভাগ আসবাবই কাঠের। তাই আভিজাত্যই আলাদা। ক্যাবিনেটের ঠিক উপরের দেওয়ালে কাঠের ফ্রেমবন্দি আলপনার ছবি। উল্টোদিকের দেওয়ালে দূর্গা মূর্তি। একদিকে আবার টি-কর্নার। কনসিলড ওয়াশিং মেশিনের সামনে সাজানো ছোট টেবলে নানা ধরনের চা, কাপ-সসার রাখা। দুই মেয়েই চা-কফির দারুণ সমঝদার। কলকাতায় থাকলে সকালে উঠেই তাদের চা চাই-ই। মাও ইদানীং এই নেশায় ভালই বুঁদ হয়েছেন।


ড্রয়িং এরিয়া ছাড়িয়ে ডানদিকে একটা বেডরুম। আসবাব সামান্য। এ বাড়ির বেশিরভাগ আসবাবই পুরনো। দূর্গাপুরে থাকার সময় থেকেই মৌলিকদের সঙ্গী। বছরখানেক আগে কলকাতায় এই নতুন বাড়িতে আসার পরও তারা রয়ে গেছেন। স্বমহিমায় বিরাজমান বলা য়ায়। ভাল টিকের ফার্নিচার ছিল বলেই ইন্টারিয়ার ডিজ়াইনার সেগুলোকে রিমডেল করে, রেস্টোর করেছেন। নুতন বাড়ির সঙ্গে একেবারেই বেমানান লাগে না, উল্টে আলাদা মাত্রা যোগ করে। নস্টালজিয়ার সুর কল্পনার বেডরুমে। নিজে যেমন পরিপাটি, ঘরেও সেই আমেজ বজায় রেখেছেন। নতুন আর পুরনো আসবাব দিবঅয়ি হাত মিলিয়ে রেযেছে এি ঘরে। একদিকে যেমন দেওয়াল জোড়া আধুনিক ডিজ়াইনের কাবার্ড, অন্যজিকে কল্পানর মায়ের আমলের আলমারিও দারুণভাবে জায়গা করে নিয়েছে। আগেকার দিনের সেলাই মেশিনও চোকে পড়ল। জামলাম ওটা কল্পনার সম্পত্তি। সেলাইের শখ বহুদিনের। আসবাবের সঙ্গে তাল মিনিয়ে ঘরের পরদা, বেডস্প্রেড বাছা হয়েছে। সবই যেন এক সূত্রে গাঁথা। কোনওকিছুই বেখাপ্পা বা বেমানান লাগে না। আর মেয়েদের প্রিয় ঘর? ‘‘ওরা তো পারলে পুরো দিনই স্টাডিতে কাটিয়ে দেয়। ওটাই ওদের আড্ডার ঘর বলতে পার। তাই তো বিশেষ কোনও আসবাব দিয়ে ঘর বোঝাই করেনি।’’ হাসতে হাসতে জানালেন কল্পনা। প্রায় ৩০০০ বই আছে এখানে। আর তা গুছিয়ে রাখার জন্য বিশেষ ভাবে আলমারির, বুক শেল্ফের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুই মেয়েই বইয়ের পোকা। মধুরান্তিকা আবার নিজেও বই লিখিছেন। এই ঘরের সঙ্গে লাগোয়া বারান্দা। বেশ খোলামেলা লাগে। আর এই প্রশস্ততা সারা অন্দরমহল জুড়েই। স্রেফ বাহ্যিক কাঠামোর নয়, এই উদারতা আদতে মৌলিকদের অন্তরমহলের। আর তাই তো এই বাড়ি সত্যি অনন্য, একেবারে মৌলিক।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

জনপ্রিয়

দেশে ফিরলেন প্রধান উপদেষ্টা

বাড়ির আধুনিক ড্রইং রুমের গল্প

প্রকাশের সময় : ০৯:০৩:৩১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ অগাস্ট ২০১৯

অফসরাহ মহসিন ।। 

ব্রাউন আর বেজের মাঝে তুঁতে নীল রঙের রিলিফ। ঠিক তার উপরেই দেওয়ালে টাভানো মিশর থেকে আনা পেন্টিং। বেশ অভিনব দেখতে। ঘরের মেঝের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই কালার স্কিম।

ই এম বাইপাস সংলগ্ন বিশাল বহুতল কমপ্লেক্স। গেটে নিরাপত্তা কর্মীদের কড়া পাহাড়া। সিকিউরিটি চেক ইনের ফর্মালিটি সেরে আমার ফোটোগ্রাফার বন্ধুকে নিয়ে পৌঁছে গেলাম নির্দিষ্ট ঠিকানায়। দরজায় খুলে হাসিমুখে স্বাগত জানালেন কল্পনা মৌলিক। সে হাসি কেঠো নয় বা নিছক ফর্মালিটিও নয়। একেবারে প্রাণখোলা, নিজের লোকেদের দেখলে যেমন হয়। বর্ষীয়ান মানুষটির এই আন্তরিকতায় বুঝে গেলাম সঠিক জায়গাতেই এসেছি। আসলে অন্দরমহলের গল্প তো সেই বাড়ির মানুষজনদের নিয়ে। নিছক ঘর, আসবাব, দেওয়ালে রং দিয়ে তো আর অন্দরমহলের বিচার করা যায় না। অন্তরমহল যেখানে অন্দরমহলের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে, সেই বাড়ি সুন্দর। যেখানে ঢুকলে সারাদিনের ধকল, ক্লান্তি উধাও হয়ে যায়, সেই বাড়ি তো আরামের আশ্রয়। যেখানে অনায়াসে চলেফেরা করা যায়, যেখানে কোনও জড়তা নেই, নির্ভার, সেই অন্দরমহলই যথার্থ। আর এই বাড়ি ঠিক তেনই। গড়ে উঠেছে তার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রাকে ঘিরেই। বাড়িতে সদস্য বলতে এখন একজনই। বয়স ৭০ বছরের উপরে হলেও অফুরান প্রাণশক্তি দেখার মতো। বাকি সদস্য দুই মেয়ে। বড় দেবস্মিতা ২৫ বছর ধরে মস্কোনিবাসী। সাংবাদিকতা করেন। ছোট মেয়ে মধুরান্তিকা পেশা সূত্রে থাকেন কুয়ালালামপুরে। ‘‘আমার ছোট মেয়েই এই ফ্ল্যাট করেছে। এ বাড়ি সেই অর্থে ওঁরই। দাঁড়িয়ে থেকে সমস্ত কাজ করিয়েছে।’ জানালেন কল্পনা। প্রথম থেকেই মধুরান্তিকার ইচ্ছে ছিল বাড়ির সাজগোজ হবে একেবারে ক্লাসিক। আর সেই ইচ্ছে একেবারেই বিফলে যানি। অন্দরসাজের দায়িত্ব ইন্টিরিয়র ডিজ়াইনারের থাকলেও, প্রতিটা বিষয় নিয়ে প্রচুর ভাবনাচিন্তা করছেনে মৌলিকরা। বেশ কিছু পুরনো আসবাব ছিল, সেগুলো ফেলে দেওয়ার কোনও মানেই হত না। আসবাব মানে আর নিছকই কাঠের কিছু স্ট্রাকচার নয়, তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে কত সুখস্মৃতি, কত নস্টালজিয়া। কিন্তু নতুন বাড়িতে পুরনো আসবাব কতটা খাপ খাওয়াবে সে বিষয়ে বেশ সন্দেহ ছিল। তবে মুশকিল আসান করেন ইন্টিরিয়র ডিজ়াইনার। পুরনো সবকিছু রেখেও যে অন্দরমহলকে নতুন, আধুনিক রূপ দেওয়া যায়, তা আরও একবার প্রমাণ পেলাম। আর এই ভাবনার জন্যে সাধুবাদ দিতেই হয় মৌলিকদের। আর এই ভাবনার মূল কারিগর মধুরান্তিকা বরাবর বিশ্বাস করেন পুরনো মানেই ফেলনা নয়। আর সেই মেনেই এই অন্দরসাজের পরিকল্পনা।


প্রায় ১৩০০ স্কোয়ার ফিটের ফ্ল্যাটে তিনটে কামরা। ঢুকেই  বসার জায়গা। বাদামি আপহোলস্টার্ড সোফায় বেজ রঙের পুরু গদি আঁটা।  মাঝে গ্লাস টপ কাঠের সেন্টার টেবল। একদিকে আবার চৌকির আদলে গদি আঁটা বেঁটে টুল । স্টাইল ও আকার দেখে বোঝাই যায় বেশ পুরনো। সামনাসামনি দেওয়ালজোড়া শোপিস ক্যাবিনেট। দুই মেয়ে প্রচুর ঘুরে বড়ায়। দেশে-বিদেশে তাদের অবাধ গতিবিধি। আর যখনই যেখানে যায়, সেখানে থেকেই জিনিস দুড়ে যায় বাড়ির এই সংগ্রহশালায়। নজর কাড়ে  সোফার পাশে রাখা হাঁড়ির আকৃতির ল্যাম্পশেড। ব্রাউন আর বেজের মাঝে তুঁতে নীল রঙের রিলিফ। ঠিক তার উপরেই দেওয়ালে টাভানো মিশর থেকে আনা পেন্টিং। বেশ অভিনব দেখতে। ঘরের মেঝের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই কালার স্কিম। ধূসরের কালার প্যালেটের নান শেড চোখে পড়ে ফ্ল্যাট জুড়ে। রঙের একঘেয়েমি কাটাতে অবশ্য ব্যবহার করা হয়েছে নীলের মধ্যে প্রিন্টেড ব্লাইন্ডস। ভারী সুন্দর লাগে দেখতে। এঅ অন্দরমহলের বিশেষত্ব এখানেই। অযথা ঘর বোঝাই করা জিনি নেই, আসবাবও কম। ঠিক যতটা প্রয়োজন, ততটাই। আসলে অন্দরসাজে পরিমিতিবোধ থাকাটা বেজায় জরুরি। ছিমছাম, বাহুল্যহীন অন্দরমহলের মধ্যে যে প্রাণের পরশ আর ভাললাগার রেশ থাকে, তা সত্যি তুলনাহীন।


ড্রয়িং রুমের সঙ্গেই লাগোয়া খাওয়ার জায়গা। লম্বাটে টেবল ঘিরে সাদা চেয়ার। টেবলের উপরও সাদা প্রিন্টেড টেবলকভার। একদিকের দেওয়ালে কাচের ক্যাবিনেটে ভর্তি ক্রিস্টালের জিনিস। বেশিরভাগই দেবস্মিতার আনা, মস্কো থেকে। বেশ প্রাচীন এবং অন্য ধাঁচের ক্রিস্টাল শো পিসগুলি এখন নাকি মস্কোতেও আর পাওয়া যায়না দানালেন কল্পনা, ক্যাবিনেটের পাশেই স্লিক অ্যান্ড স্মার্ট বার কাউন্টার। প্রচুর সুন্দর সুন্দর গ্লাস সাজানো। এ বাড়িতে বেশিরভাগ আসবাবই কাঠের। তাই আভিজাত্যই আলাদা। ক্যাবিনেটের ঠিক উপরের দেওয়ালে কাঠের ফ্রেমবন্দি আলপনার ছবি। উল্টোদিকের দেওয়ালে দূর্গা মূর্তি। একদিকে আবার টি-কর্নার। কনসিলড ওয়াশিং মেশিনের সামনে সাজানো ছোট টেবলে নানা ধরনের চা, কাপ-সসার রাখা। দুই মেয়েই চা-কফির দারুণ সমঝদার। কলকাতায় থাকলে সকালে উঠেই তাদের চা চাই-ই। মাও ইদানীং এই নেশায় ভালই বুঁদ হয়েছেন।


ড্রয়িং এরিয়া ছাড়িয়ে ডানদিকে একটা বেডরুম। আসবাব সামান্য। এ বাড়ির বেশিরভাগ আসবাবই পুরনো। দূর্গাপুরে থাকার সময় থেকেই মৌলিকদের সঙ্গী। বছরখানেক আগে কলকাতায় এই নতুন বাড়িতে আসার পরও তারা রয়ে গেছেন। স্বমহিমায় বিরাজমান বলা য়ায়। ভাল টিকের ফার্নিচার ছিল বলেই ইন্টারিয়ার ডিজ়াইনার সেগুলোকে রিমডেল করে, রেস্টোর করেছেন। নুতন বাড়ির সঙ্গে একেবারেই বেমানান লাগে না, উল্টে আলাদা মাত্রা যোগ করে। নস্টালজিয়ার সুর কল্পনার বেডরুমে। নিজে যেমন পরিপাটি, ঘরেও সেই আমেজ বজায় রেখেছেন। নতুন আর পুরনো আসবাব দিবঅয়ি হাত মিলিয়ে রেযেছে এি ঘরে। একদিকে যেমন দেওয়াল জোড়া আধুনিক ডিজ়াইনের কাবার্ড, অন্যজিকে কল্পানর মায়ের আমলের আলমারিও দারুণভাবে জায়গা করে নিয়েছে। আগেকার দিনের সেলাই মেশিনও চোকে পড়ল। জামলাম ওটা কল্পনার সম্পত্তি। সেলাইের শখ বহুদিনের। আসবাবের সঙ্গে তাল মিনিয়ে ঘরের পরদা, বেডস্প্রেড বাছা হয়েছে। সবই যেন এক সূত্রে গাঁথা। কোনওকিছুই বেখাপ্পা বা বেমানান লাগে না। আর মেয়েদের প্রিয় ঘর? ‘‘ওরা তো পারলে পুরো দিনই স্টাডিতে কাটিয়ে দেয়। ওটাই ওদের আড্ডার ঘর বলতে পার। তাই তো বিশেষ কোনও আসবাব দিয়ে ঘর বোঝাই করেনি।’’ হাসতে হাসতে জানালেন কল্পনা। প্রায় ৩০০০ বই আছে এখানে। আর তা গুছিয়ে রাখার জন্য বিশেষ ভাবে আলমারির, বুক শেল্ফের ব্যবস্থা করা হয়েছে। দুই মেয়েই বইয়ের পোকা। মধুরান্তিকা আবার নিজেও বই লিখিছেন। এই ঘরের সঙ্গে লাগোয়া বারান্দা। বেশ খোলামেলা লাগে। আর এই প্রশস্ততা সারা অন্দরমহল জুড়েই। স্রেফ বাহ্যিক কাঠামোর নয়, এই উদারতা আদতে মৌলিকদের অন্তরমহলের। আর তাই তো এই বাড়ি সত্যি অনন্য, একেবারে মৌলিক।