বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফ্রিজে সবজি ও মশলা ভাল রাখবেন কি ভাবে

রোকনুজ্জামান রিপন ।।

সবজি বা মশলা ছাড়া রান্না অচল! সেগুলিরই যদি মান পড়ে যায় তাহলে তো তার প্রভাব রান্নাতেও পড়বে! তাই রইল সবজি ও মশলা ভাল রাখার কিছু অব্যর্থ টিপস।

আজকের ব্যস্ত লাইফস্টাইলে রোজ বাজার করার সুযোগ হয়ে ওঠে না। তাই ছুটির দিনে অনেকেই লম্বা লিস্ট নিয়ে সারা সপ্তাহের বাজার একদিনেই সেরে ফেলেন। তবে অনেকসময়ই দেখা যায়, ঠিক ভাবে স্টোর না করার ফলে সময়ের আগেই শাক সবজি, ফলমূল শুকিয়ে অথবা নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া ঠিকভাবে না রাখলে রান্নার প্রয়োজনীয় মশলাপাতির স্বাদ আর গন্ধ নষ্ট হয়ে যায়। অতএব বুঝতেই পারছেন, বাজার করার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা। না হলে মাসকাবারি বাজারে আপনার টাকা আর পরিশ্রম দুটোই নষ্ট। তাই এবার থেকে বাজার করার পরই চটপট নিয়ম মেনে গুছিয়ে ফেলুন ফলমূল, শাকসবজি কিংবা মশলাপাতি। আপনার জন্য রইল স্মার্ট স্টোরিং টিপস।
কী করবেন : ফল বা সবজি প্রথমেই বাজার থেকে আনার পরই পরিষ্কার করে ধুয়ে শুকিয়ে নিন। তারপর জ়িপলক ব্যাগে ভরে ফ্রিজে স্টোর করুন, অনেকদিন তাজা থাকবে। লেটুস, পালং শাক স্টোর করার জন্য পরিষ্কার করে প্লাস্টিকের (২০ মাইক্রনের বেশি) ব্যাগে ভরে ফ্রিজে স্টোর করুন। এতে শাকের আর্দ্রতা ও পুষ্টিগুণ দুই বজায় থাকবে এবং সপ্তাহখানেক ফ্রেশ থাকবে। আলু বেশিদিন ভাল রাখার জন্যে আলুর সঙ্গে একটা আপেল ব্যাগে ভরে রাখুন। আলু সহজে পচে যাবে না। লঙ্কাগুঁড়ো, জিরে গুঁড়ো, ধনেগুড়ো শুকনো খোলায় ভেজে এয়ারটাইট কন্টেনারে স্টোর করুন। স্বাদ এবং গন্ধ বেশিদিন থাকবে। পনির কিছুটা ব্যবহার করার পর বাকি অংশ ব্লটিং পেপারে মুড়ে ফ্রিজে রাখুন। এতে পনির সহজে নষ্ট হবে না, আবার নরমও থাকবে। নারকেলের মালা অনেকসময়ই একসঙ্গে পুরোটা লাগে না। অর্ধেক নারকেলের মালা ফ্রিজে রাখার সময় সামান্য নুন মাখিয়ে রাখুন। বেশ কিছুদিন ফ্রেশ থাকবে। আদা-রসুন বাটা বেশি হয়ে গেলে সামান্য নুন ও তেল মিশিয়ে স্টোর করুন। দু’তিন দিন অনায়াসে ব্যবহার করতে পারবেন। রসুনের কোয়া বেশিদিন ভাল রাখতে বাজার থেকে কিনে আনার পর সামান্য সরষের তেল মাখিয়ে ভাল করে রোদে শুকিয়ে নিন। তারপর কাঁচের শিশিতে ভরে রাখুন। কাঁচালঙ্কা বেশি কিনলে প্রায়শই পচে নষ্ট হয়ে যায়। কাঁচালঙ্কা ভাল রাখার একটা সহজ উপায় আছে। লঙ্কা ধুয়ে শুকনো করে বোঁটা ছাড়িয়ে কাঁচের শিশিতে স্টোর করুন। ফ্রিজেও রাখতে পারেন। অনেকদিন ভাল থাকবে। কাঁচালঙ্কার মাঝখান থেকে সামান্য চিরে এতে নুন-হলুদ মাখিয়ে রোদে শুকিয়ে নিয়েও স্টোর করা যায়। কারিপাতা এমনি রেখে দিলে শুকিয়ে যায়, স্বাদও তেমন থাকে না। তাই কারিপাতা সামান্য তেলে মুচমুচে করে ভেজে গুঁড়ো করে এয়ারটাইট বোতলে ভরে রাখুন। এতে বেশিদিন ভালও থাকবে আবার সহজে ব্যবহারও করতে পারবেন। একইরকমভাবে পুদিনাপাতাও রোদে শুকিয়ে স্টোর করতে পারেন।  ঘি অনেকদিন ধরে শিশিতে পড়ে থাকলে, গন্ধ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে একটা প্যানে ঘি ঢেলে চার-পাঁচটা লেবুপাতা দিন। কয়েক মিনিট ফুটিয়ে নামিয়ে রাখুন। ঘি ঠান্ডা হলে লেবু পাতা গুলো তুলে নিয়ে কাচের শিশিতে ঢেলে রেখে দিন। ঘিয়ে সুন্দর গন্ধ হবে।

এছাড়া এক টুকরো সৈন্ধব লবণ ঘিয়ের শিশির মধ্যে রেখে দিলেও ঘি বেশি দিন টাটকা থাকে, স্বাদেরও পরিবর্তন হয় না। সরষের তেলে সাত-আটটা গোটা গোলমরিচ ফেলে দিন। তেল দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকলেও ভাল থাকবে। টোম্যাটো পিউরি বেশি হলে আইস ট্রে-তে রেখে জমিয়ে নিন। তারপর প্লাস্টিকের কৌটোয় ভরে ফ্রিজে রাখুন। জুস বা স্যুপ তৈরির জন্যে ব্যবহার করতে পারবেন। দুধ সময়মতো গরম না করলে অনেক সময় কেটে যায়। দুধের মধ্যে কয়েকফোঁটা সরষের তেল দিলে দুধ যখনই ফোটানো হোক না কেন, কাটবে না। ডিম ভাল রাখতে হলে ফ্রিজে রাখার আগে পাতিলেবুর রস মেশানো জলে ডিমগুলো ডুবিয়ে রাখুন। তারপর স্টোর করুন। একসঙ্গে অনেক মাছ কিনলে খারাপ হয়ে যেতে পারে। কাঁচা মাছ ফ্রিজে স্টোর করবেন না, তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যাবে। মাছ কিনে এনে ভাল করে ধুয়ে লেবুর রস মাখিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিয়ে তেলে ভেজে নিন। তারপর এয়ারটাইট কন্টেনারে ভরে ফ্রিজে স্টোর করুন। মাছ বেশ কিছুদিন ভাল থাকবে। রান্না করা খাবার এয়ারটাইট কন্টেনারে রাখুন। খাবার অবশ্যই  ঢাকা দিয়ে রাখবেন, এতে খাবার নষ্ট হবে না আর ফ্রিজ খুললে গন্ধও বেরবে না। রান্না করার পরই গরম খাবার ফ্রিজে রাখবেন না। ঠান্ডা হয়ে রুম টেম্পারেচারে এলে তবেই ফ্রিজে রাখুন। তবে রান্না করা খাবার দীর্ঘদিন ধরে ফ্রিজে রেখে খাবেন না। বাড়তি খাবার ফ্রিজ থেকে ফেলে দিন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

ফ্রিজে সবজি ও মশলা ভাল রাখবেন কি ভাবে

প্রকাশের সময় : ০৯:১৪:৫০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৯ অগাস্ট ২০১৯

রোকনুজ্জামান রিপন ।।

সবজি বা মশলা ছাড়া রান্না অচল! সেগুলিরই যদি মান পড়ে যায় তাহলে তো তার প্রভাব রান্নাতেও পড়বে! তাই রইল সবজি ও মশলা ভাল রাখার কিছু অব্যর্থ টিপস।

আজকের ব্যস্ত লাইফস্টাইলে রোজ বাজার করার সুযোগ হয়ে ওঠে না। তাই ছুটির দিনে অনেকেই লম্বা লিস্ট নিয়ে সারা সপ্তাহের বাজার একদিনেই সেরে ফেলেন। তবে অনেকসময়ই দেখা যায়, ঠিক ভাবে স্টোর না করার ফলে সময়ের আগেই শাক সবজি, ফলমূল শুকিয়ে অথবা নষ্ট হয়ে গেছে। এছাড়া ঠিকভাবে না রাখলে রান্নার প্রয়োজনীয় মশলাপাতির স্বাদ আর গন্ধ নষ্ট হয়ে যায়। অতএব বুঝতেই পারছেন, বাজার করার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা। না হলে মাসকাবারি বাজারে আপনার টাকা আর পরিশ্রম দুটোই নষ্ট। তাই এবার থেকে বাজার করার পরই চটপট নিয়ম মেনে গুছিয়ে ফেলুন ফলমূল, শাকসবজি কিংবা মশলাপাতি। আপনার জন্য রইল স্মার্ট স্টোরিং টিপস।
কী করবেন : ফল বা সবজি প্রথমেই বাজার থেকে আনার পরই পরিষ্কার করে ধুয়ে শুকিয়ে নিন। তারপর জ়িপলক ব্যাগে ভরে ফ্রিজে স্টোর করুন, অনেকদিন তাজা থাকবে। লেটুস, পালং শাক স্টোর করার জন্য পরিষ্কার করে প্লাস্টিকের (২০ মাইক্রনের বেশি) ব্যাগে ভরে ফ্রিজে স্টোর করুন। এতে শাকের আর্দ্রতা ও পুষ্টিগুণ দুই বজায় থাকবে এবং সপ্তাহখানেক ফ্রেশ থাকবে। আলু বেশিদিন ভাল রাখার জন্যে আলুর সঙ্গে একটা আপেল ব্যাগে ভরে রাখুন। আলু সহজে পচে যাবে না। লঙ্কাগুঁড়ো, জিরে গুঁড়ো, ধনেগুড়ো শুকনো খোলায় ভেজে এয়ারটাইট কন্টেনারে স্টোর করুন। স্বাদ এবং গন্ধ বেশিদিন থাকবে। পনির কিছুটা ব্যবহার করার পর বাকি অংশ ব্লটিং পেপারে মুড়ে ফ্রিজে রাখুন। এতে পনির সহজে নষ্ট হবে না, আবার নরমও থাকবে। নারকেলের মালা অনেকসময়ই একসঙ্গে পুরোটা লাগে না। অর্ধেক নারকেলের মালা ফ্রিজে রাখার সময় সামান্য নুন মাখিয়ে রাখুন। বেশ কিছুদিন ফ্রেশ থাকবে। আদা-রসুন বাটা বেশি হয়ে গেলে সামান্য নুন ও তেল মিশিয়ে স্টোর করুন। দু’তিন দিন অনায়াসে ব্যবহার করতে পারবেন। রসুনের কোয়া বেশিদিন ভাল রাখতে বাজার থেকে কিনে আনার পর সামান্য সরষের তেল মাখিয়ে ভাল করে রোদে শুকিয়ে নিন। তারপর কাঁচের শিশিতে ভরে রাখুন। কাঁচালঙ্কা বেশি কিনলে প্রায়শই পচে নষ্ট হয়ে যায়। কাঁচালঙ্কা ভাল রাখার একটা সহজ উপায় আছে। লঙ্কা ধুয়ে শুকনো করে বোঁটা ছাড়িয়ে কাঁচের শিশিতে স্টোর করুন। ফ্রিজেও রাখতে পারেন। অনেকদিন ভাল থাকবে। কাঁচালঙ্কার মাঝখান থেকে সামান্য চিরে এতে নুন-হলুদ মাখিয়ে রোদে শুকিয়ে নিয়েও স্টোর করা যায়। কারিপাতা এমনি রেখে দিলে শুকিয়ে যায়, স্বাদও তেমন থাকে না। তাই কারিপাতা সামান্য তেলে মুচমুচে করে ভেজে গুঁড়ো করে এয়ারটাইট বোতলে ভরে রাখুন। এতে বেশিদিন ভালও থাকবে আবার সহজে ব্যবহারও করতে পারবেন। একইরকমভাবে পুদিনাপাতাও রোদে শুকিয়ে স্টোর করতে পারেন।  ঘি অনেকদিন ধরে শিশিতে পড়ে থাকলে, গন্ধ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে একটা প্যানে ঘি ঢেলে চার-পাঁচটা লেবুপাতা দিন। কয়েক মিনিট ফুটিয়ে নামিয়ে রাখুন। ঘি ঠান্ডা হলে লেবু পাতা গুলো তুলে নিয়ে কাচের শিশিতে ঢেলে রেখে দিন। ঘিয়ে সুন্দর গন্ধ হবে।

এছাড়া এক টুকরো সৈন্ধব লবণ ঘিয়ের শিশির মধ্যে রেখে দিলেও ঘি বেশি দিন টাটকা থাকে, স্বাদেরও পরিবর্তন হয় না। সরষের তেলে সাত-আটটা গোটা গোলমরিচ ফেলে দিন। তেল দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থাকলেও ভাল থাকবে। টোম্যাটো পিউরি বেশি হলে আইস ট্রে-তে রেখে জমিয়ে নিন। তারপর প্লাস্টিকের কৌটোয় ভরে ফ্রিজে রাখুন। জুস বা স্যুপ তৈরির জন্যে ব্যবহার করতে পারবেন। দুধ সময়মতো গরম না করলে অনেক সময় কেটে যায়। দুধের মধ্যে কয়েকফোঁটা সরষের তেল দিলে দুধ যখনই ফোটানো হোক না কেন, কাটবে না। ডিম ভাল রাখতে হলে ফ্রিজে রাখার আগে পাতিলেবুর রস মেশানো জলে ডিমগুলো ডুবিয়ে রাখুন। তারপর স্টোর করুন। একসঙ্গে অনেক মাছ কিনলে খারাপ হয়ে যেতে পারে। কাঁচা মাছ ফ্রিজে স্টোর করবেন না, তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যাবে। মাছ কিনে এনে ভাল করে ধুয়ে লেবুর রস মাখিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিয়ে তেলে ভেজে নিন। তারপর এয়ারটাইট কন্টেনারে ভরে ফ্রিজে স্টোর করুন। মাছ বেশ কিছুদিন ভাল থাকবে। রান্না করা খাবার এয়ারটাইট কন্টেনারে রাখুন। খাবার অবশ্যই  ঢাকা দিয়ে রাখবেন, এতে খাবার নষ্ট হবে না আর ফ্রিজ খুললে গন্ধও বেরবে না। রান্না করার পরই গরম খাবার ফ্রিজে রাখবেন না। ঠান্ডা হয়ে রুম টেম্পারেচারে এলে তবেই ফ্রিজে রাখুন। তবে রান্না করা খাবার দীর্ঘদিন ধরে ফ্রিজে রেখে খাবেন না। বাড়তি খাবার ফ্রিজ থেকে ফেলে দিন।