রাশেদুর রহমান রাশু ।।
বক্তব্যের শুরুতে জাতির পিতা ও তার পরিবারের সকলের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এবার বিএনপি ১৫ আগস্ট বেগম জিয়ার জন্মদিন পালন করেনি, পরদিন করেছে। জাতীয় শোক দিবসে জন্মদিনের নামে কেককাটা উৎসবের কারণে তারা জনগণের যে ব্যাপক ঘৃণার সম্মুখীন হয়েছে, সেটিই এই পরিবর্তনের কারণ। আমি তাদের অনুরোধ করবো, আপনারা বিএনপিনেত্রীর জন্মদিনটি ঠিক করুন। যে দলের চেয়ারপার্সনের জন্মতারিখ ঠিক নেই, সে দল কিভাবে এগুবে!’
এ সময় বিএনপি মহাসচিবের ‘পাটশিল্প ধ্বংসের জন্য আওয়ামী লীগ দায়ী’ এমন মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘মীর্জা ফখরুলের মিথ্যাচার গোয়েবলসকেও ছাড়িয়ে গেছে। আদমজী জুট মিলস বন্ধ করেছিল বিএনপিই। দেশের পাটকলগুলোও ১৯৯১ ও ২০০১ সালে দুই মেয়াদে খালেদা জিয়া ও বিএনপি বন্ধ করে দেয়। আর আওয়ামী লীগ সরকার পাটকলগুলো শুধু পুনরায় চালুই করেনি, বরং শ্রমিকদেরকে এগুলোর মালিকানারও অংশীদারিত্বও দেয়। ফখরুল সাহেবের মিথ্যাচারে কবরেও গোয়েবলস লজ্জা পাবে বলে মনে হয়।’
‘চামড়াশিল্প নিয়েও বিএনপির রাজনীতি করার অপচেষ্টা সফল হয়নি’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের আমলে চামড়া রপ্তানি ৪০০ মিলিয়ন ডলার থেকে সব মিলে ২ বিলিয়নে উন্নীত হয়েছে। দেশে গত দশ বছরের অর্থনৈতিক উন্নয়নে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির কারণে পশু কোরবানি দ্বিগুণেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে, আগের ৩০-৪০ লক্ষ পশুর জায়গায় এখন প্রায় ১ কোটি পশু কোরবানি হয়। সে তুলনায় ট্যানারির সংখ্যাবৃদ্ধি ঘটেনি, যদিও অনেক চামড়াশিল্প প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা বেড়েছে, কিন্তু পরিবেশবান্ধবতা নিশ্চিত করার বাধ্যবাধকতায় বেশকিছু ট্যানারি বন্ধও হয়ে গেছে।
এবারের ঈদে এ অবস্থারই সুযোগ নিতে চেয়েছিল কিছু মুনাফা লোভীরা। সেকারণেই চামড়ার দরপতন হয়। আর বিএনপি চেয়েছিল এটা নিয়ে অপরাজনীতি করতে। কিন্তু তারা সফল হয়নি, সরকার সিন্ডিকেটের বিষয়টি পূর্ণ তদন্ত করছে।’
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই বাঙালি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে’ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বাঙালিরা কখনো স্বাধীন ছিলাম না। প্রকৃতপক্ষে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই বাঙালি প্রথম একটি জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার মধ্য দিয়ে বাঙালি নিজে নিজেদের শাসন করার অধিকার অর্জন করে। তার আগ পর্যন্ত বাঙালি সবসময় পরের দ্বারা শাসিত হয়েছে। সিরাজউদ্দৌলার জন্য আমরা সবসময় গর্ব করি। তিনি বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব বটে। কিন্তু তিনি তার অন্দরমহলের ভাষা বাঙলা ছিল না। তিনি বাঙালি ছিলেন না। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বেই প্রকৃতপক্ষে বাঙালি স্বাধীনতা অর্জন করে। এ ঐতিহাসিক সত্যকে বুকে ধারণ করা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব।’
তিনি আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পূর্ণ হয়নি কারণ, পলাতক খুনি, বঙ্গবন্ধু হত্যার নেপথ্যের কুশীলব ও সর্বোপরি সেই হত্যার পটভূমি তৈরিকারীদের বিচার এখনো হয়নি। এজন্য একটি কমিশন গঠন করে বিচার সম্পন্ন করা উচিত, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছেও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার উদাহরণ হয়ে থাকবে।’
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাংবাদিক ফোরামের আহবায়ক ও ডিবিসি ২৪ টিভি চ্যানেলের চেয়ারম্যান ইকবাল সোবহান চৌধুরীর সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক প্রকৌশলী আব্দুস সবুর, জাতীয় গণতান্ত্রিক লীগের সভাপতি এম এ জলিল, প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, সাংবাদিক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, রফিকুল ইসলাম রতন, সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল ইসলাম বুলবুল, কুদ্দুস আফ্রাদ, আজিজুল ইসলাম ভুঁইয়া, ওমর ফারুক, মোজাম্মেল হক প্রমুখ সভায় তাদের বক্তব্যে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মের ওপর আলোকপাত করেন।