মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ৬ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সুদানে ক্ষমতার ঐতিহাসিক পালাবদল

তানজীর মহসিন ।। 

সুদানে সেনা শাসকদের সঙ্গে প্রতিবাদকারীদের আজ শনিবার পূর্বনির্ধারিত ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে। বেসামরিক শাসনের দাবিতে আট মাস ধরে চলা রক্তক্ষয়ী উত্তেজনার এই চুক্তির মধ্য দিয়ে অবসান হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

গত ৪ আগস্ট সুদানের অন্তর্বর্তীকালীন মিলিটারি কাউন্সিল ও বিরোধী জোট অ্যালায়েন্স ফর ফ্রিডম অ্যান্ড চেঞ্জের মধ্যে এক চুক্তি হয়। ওই চুক্তি অনুসারেই শনিবার সাংবিধানিক স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। টানা ৩০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর গত এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত হন ওমর আল বশির।

অন্তর্বর্তীকালীন সামরিক সরকার ও বিরোধী জোটের সঙ্গে চুক্তির পেছনে কাজ করে আফ্রিকান ইউনিয়ন ও ইথিওপিয়া। উভয়পক্ষের মধ্যস্ততায় সুদানে আগামীতে বেসামরিক সরকার গঠনে ওই চুক্তি হয়েছিল। আফ্রিকাবিষয়ক বিশ্লেষকদের মতে, সুদানে চুক্তি অনুসারে বেসামরিক সরকার গঠিত হলে, আফ্রিকার ইতিহাসে তা মাইলফলক হতে যাচ্ছে। পাশাপাশি সুদানের আদলে আফ্রিকার সামরিক শাসনের আওতাধীন অন্য দেশগুলোও বেসামরিক সরকারের পথে হাঁটতে পারে। এই চুক্তির ফলে সুদানের ওপর জারি থাকা আফ্রিকান ইউনিয়নের অবরোধ প্রত্যাহার হয়ে যাবে। গত জুনে খার্তুমে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় ওই অবরোধ জারি করা হয়েছিল। আজকের চুক্তির পর আগামীকাল রবিবার সুদানের নতুন বেসামরিক সংখ্যাগরিষ্ঠ অন্তর্বর্তীকালীন কাউন্সিল ঘোষিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণার দুদিন পর এই কাউন্সিল ঘোষিত হওয়ার কথা ছিল। গত বৃহস্পতিবার বিরোধী জোট সাবেক জাতিসংঘ কর্মকর্তা আবদুল্লাহ হামদোককে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করে। আবদুল্লাহ একজন অর্থনীতিবিদ। গত বছর তিনি জাতিসংঘের আফ্রিকাবিষয়ক অর্থনীতিবিষয়ক কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব থেকে অবসর নেন।

চলতি মাসের ২৮ তারিখ নতুন মন্ত্রিসভার নাম ঘোষিত হবে। মন্ত্রিসভার এই মন্ত্রীদের নিয়োগ দেবেন নতুন প্রধানমন্ত্রী। আর আগামী ১ সেপ্টেম্বরে নতুন সার্বভৌম কাউন্সিলের সঙ্গে প্রথমবারের মতো বৈঠকে বসবেন প্রধানমন্ত্রী। অন্তর্বর্তী সরকারের ৩৯ মাস পর দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

আর তত দিন পর্যন্ত সুদানের ৪০ মিলিয়ন জনতাকে শাসন করবে ১১ সদস্যবিশিষ্ট সার্বভৌম কাউন্সিল ও সরকার। যদিও দেশটির স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্বাচিত করবেন কাউন্সিলের সেনাবাহিনীর নির্ধারিত সদস্যরা। এ ছাড়া আইনপ্রণেতাদের যে কমিটি আগামী তিন মাসের মধ্যে গঠিত হবে, তাতে অন্তত ৪০ শতাংশ নারী থাকবে। বলা হচ্ছে, সুদানের আন্দোলনে নারীদের অগ্রণী ভূমিকার কথা মাথায় রেখেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বশিরের আমলে দেশটির বিক্ষোভকারীদের ওপর প্যারামিলিটারি ফোর্স ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যাপক নির্যাতনের অভিযোগ আছে। এই সময়ের মধ্যে এ সংস্থাগুলো সার্বভৌম কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে লন্ডনের চ্যাথাম হাউজের থিংকট্যাংক রোসালিন্ড মার্সডেনের মতে, সুদানের এখনো অনেকটা পথ যাওয়া বাকি। রাষ্ট্রের গভীর থেকে ইসলামপন্থি উগ্র মতাদর্শকে অপসারণ করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়াবে। বর্তমানে সুদানের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই ওই উগ্রপন্থিরা নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছাড়া আছে সেনাসমর্থিত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দেশের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জ।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

জনপ্রিয়

সুদানে ক্ষমতার ঐতিহাসিক পালাবদল

প্রকাশের সময় : ০৬:৪৬:৪৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ অগাস্ট ২০১৯
তানজীর মহসিন ।। 

সুদানে সেনা শাসকদের সঙ্গে প্রতিবাদকারীদের আজ শনিবার পূর্বনির্ধারিত ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে। বেসামরিক শাসনের দাবিতে আট মাস ধরে চলা রক্তক্ষয়ী উত্তেজনার এই চুক্তির মধ্য দিয়ে অবসান হতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

গত ৪ আগস্ট সুদানের অন্তর্বর্তীকালীন মিলিটারি কাউন্সিল ও বিরোধী জোট অ্যালায়েন্স ফর ফ্রিডম অ্যান্ড চেঞ্জের মধ্যে এক চুক্তি হয়। ওই চুক্তি অনুসারেই শনিবার সাংবিধানিক স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। টানা ৩০ বছর ক্ষমতায় থাকার পর গত এপ্রিলে ক্ষমতাচ্যুত হন ওমর আল বশির।

অন্তর্বর্তীকালীন সামরিক সরকার ও বিরোধী জোটের সঙ্গে চুক্তির পেছনে কাজ করে আফ্রিকান ইউনিয়ন ও ইথিওপিয়া। উভয়পক্ষের মধ্যস্ততায় সুদানে আগামীতে বেসামরিক সরকার গঠনে ওই চুক্তি হয়েছিল। আফ্রিকাবিষয়ক বিশ্লেষকদের মতে, সুদানে চুক্তি অনুসারে বেসামরিক সরকার গঠিত হলে, আফ্রিকার ইতিহাসে তা মাইলফলক হতে যাচ্ছে। পাশাপাশি সুদানের আদলে আফ্রিকার সামরিক শাসনের আওতাধীন অন্য দেশগুলোও বেসামরিক সরকারের পথে হাঁটতে পারে। এই চুক্তির ফলে সুদানের ওপর জারি থাকা আফ্রিকান ইউনিয়নের অবরোধ প্রত্যাহার হয়ে যাবে। গত জুনে খার্তুমে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় ওই অবরোধ জারি করা হয়েছিল। আজকের চুক্তির পর আগামীকাল রবিবার সুদানের নতুন বেসামরিক সংখ্যাগরিষ্ঠ অন্তর্বর্তীকালীন কাউন্সিল ঘোষিত হবে। প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণার দুদিন পর এই কাউন্সিল ঘোষিত হওয়ার কথা ছিল। গত বৃহস্পতিবার বিরোধী জোট সাবেক জাতিসংঘ কর্মকর্তা আবদুল্লাহ হামদোককে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করে। আবদুল্লাহ একজন অর্থনীতিবিদ। গত বছর তিনি জাতিসংঘের আফ্রিকাবিষয়ক অর্থনীতিবিষয়ক কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালকের দায়িত্ব থেকে অবসর নেন।

চলতি মাসের ২৮ তারিখ নতুন মন্ত্রিসভার নাম ঘোষিত হবে। মন্ত্রিসভার এই মন্ত্রীদের নিয়োগ দেবেন নতুন প্রধানমন্ত্রী। আর আগামী ১ সেপ্টেম্বরে নতুন সার্বভৌম কাউন্সিলের সঙ্গে প্রথমবারের মতো বৈঠকে বসবেন প্রধানমন্ত্রী। অন্তর্বর্তী সরকারের ৩৯ মাস পর দেশটিতে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

আর তত দিন পর্যন্ত সুদানের ৪০ মিলিয়ন জনতাকে শাসন করবে ১১ সদস্যবিশিষ্ট সার্বভৌম কাউন্সিল ও সরকার। যদিও দেশটির স্বরাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্বাচিত করবেন কাউন্সিলের সেনাবাহিনীর নির্ধারিত সদস্যরা। এ ছাড়া আইনপ্রণেতাদের যে কমিটি আগামী তিন মাসের মধ্যে গঠিত হবে, তাতে অন্তত ৪০ শতাংশ নারী থাকবে। বলা হচ্ছে, সুদানের আন্দোলনে নারীদের অগ্রণী ভূমিকার কথা মাথায় রেখেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বশিরের আমলে দেশটির বিক্ষোভকারীদের ওপর প্যারামিলিটারি ফোর্স ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ব্যাপক নির্যাতনের অভিযোগ আছে। এই সময়ের মধ্যে এ সংস্থাগুলো সার্বভৌম কাউন্সিলের নিয়ন্ত্রণে থাকবে। তবে লন্ডনের চ্যাথাম হাউজের থিংকট্যাংক রোসালিন্ড মার্সডেনের মতে, সুদানের এখনো অনেকটা পথ যাওয়া বাকি। রাষ্ট্রের গভীর থেকে ইসলামপন্থি উগ্র মতাদর্শকে অপসারণ করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়াবে। বর্তমানে সুদানের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই ওই উগ্রপন্থিরা নিয়ন্ত্রণ করে। এ ছাড়া আছে সেনাসমর্থিত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে দেশের অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জ।