শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দাঁত থাকতে দাঁতের যত্ন

রোকনুজ্জামান রিপন ।। 

দাঁত একজন ব্যক্তির খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে একটি। এটি ছাড়া কিংবা এটির অযত্নে নেমে আসতে পারে শারীরিক তথা মানসিক অশান্তি। পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ৩২টি দাঁত লক্ষ করা যায়। এগুলোর সঠিক যত্নের প্রয়োজন। একজন ব্যক্তির ঝকঝকে সুন্দর সুস্থ দাঁতের নির্মল হাসি সবার নজর কাড়ে। তাই, দাঁতের যত্ন অপরিহার্য।

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যে দাঁতগুলো ওঠে তাকে আক্কেল দাঁত বলে থাকি আমরা। এগুলো মিলিয়ে বত্রিশটি দাঁতকে প্রধানত চার ভাগে বিভক্ত করা হয়। সামনের দাঁত দিয়ে কোনো কিছু ছেঁড়া বা কাটা, সামনের পার্শ্ববর্তী সূক্ষ্ম ধারালো দাঁত দিয়ে ভাঙা এবং পেছনের দাঁত দিয়ে খাদ্য চর্বণ- এগুলোই করা হয়। প্রতিনিয়ত দাঁতের সক্রিয় ভূমিকা জানান দিয়ে দেয় যে দাঁতের গুরুত্ব অপরিসীম। শুধু কি খাদ্য চর্বণ, ভাঙা বা কিছু কাটা-ছেঁড়ার জন্য দাঁত প্রয়োজন? না, বরং এগুলোর পাশাপাশি ঠিকভাবে কথা বলা ও মুখের সৌষ্ঠব সৌন্দর্যের জন্যও দাঁত অপরিহার্য।

খাবার খেতে : দেহের আক্ষরিক প্রয়োজনে আহার চূর্ণ-বিচূর্ণে সহায়তা করে দাঁত। সে ক্ষেত্রে এই দাঁতের কোণে সব সময়ই খাদ্যকণা জমে থাকে। এগুলো প্রতিদিন পরিষ্কার প্রয়োজন।

মুখের অবয়ব সৌন্দর্যে :সব দাঁতের উপস্থিতিতে মুখের লালিত্য বা গঠন ফুটে ওঠে। দাঁত ছাড়া হাসি বা চেহারা অনেক সময় উপহাসের পাত্র হয়ে উঠতে হয়। ফলে এখন থেকে আর অবহেলা নয়।

আত্মবিশ্বাসে :  যখন একজন ব্যক্তির মুখে দুর্গন্ধ থাকে না বা চিরল দাঁতের মধুর হাসি দিতে কোনো বাধা থাকে না তখন আত্মবিশ্বাস দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এসব বিবেচনায়, দাঁতের যত্ন বাধ্যতামূলক।

কেন যত্ন নেবেন? একটু অবহেলায় আজকাল মানুষ দাঁত ও মাড়ির রোগে ভুগছেন। এমনকি ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগেও আক্রান্ত হচ্ছেন। মাড়ি ফুলে ওঠা, দাঁতের শিরশির, ব্যথাসহ দেখা দিচ্ছে ব্যাকটেরিয়াজনিত অদ্ভুত রকমের জানা-অজানা রোগের জন্ম।

আবার বন্ধুমহল বা সহকর্মীদের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল মুহূর্তগুলো হয়ে যাচ্ছে ম্লান। নিয়মিত দাঁতের পরিচর্যা না নেয়ার কারণে সুসম্পর্কগুলোর মাঝে দেখা দিচ্ছে নানা প্রতিবন্ধকতা। দাঁতহীন অস্পষ্ট কথা এবং মুখের আকৃতি বিকৃত রূপ সবার কাছে অপ্রিয় পাত্র হয়ে উঠছে। এসব দিক বিবেচনায় দাঁতের যত্নে আর অবহেলা নয়।

ঘরোয়া পরিবেশে যা করা প্রয়োজন : প্রতিদিন আমাদের সবার দু’বার দাঁত ব্রাশ করা উচিত। তবে তা অবশ্যই সকালে খাবারের পর ও রাতে শোয়ার আগে, কেননা এ দু’সময়ের মধ্যে অনেকক্ষণ খাদ্য বিরতি থাকে। তাছাড়া এই খাবারের পর যেন দাঁতের কোণে কোনো খাদ্যকণা জমে না থাকে এ কারণেই মূলত ব্রাশ প্রয়োজন। দাঁতের সুরক্ষায় হালকা গরম পানিতে সামান্য লবণ দিয়ে নিয়মিত কুলকুচি করলে দাঁত ভালো থাকে। শর্করা বা মিষ্টান্ন জাতীয় খাবারের পর দাঁত ভালোভাবে পরিষ্কার রাখা খুবই প্রয়োজন।

এটাও মনে রাখা উচিত, ঘরে বসে দাঁতের সব চিকিৎসা করা যায় না। তাই নিয়মিত দন্ত বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া দরকার। দাঁতের দুর্গন্ধ, দাঁতের কোণে কালো ছাপ বা দাঁতের পাথর পরিষ্কারে কোনো নিজস্ব পদ্ধতি অবলম্বন না করে, কিংবা রাস্তাঘাটে স্বল্প জ্ঞানসম্পন্ন হকারের বুদ্ধিতে পড়ে অকালে দাঁত হারিয়ে বিপদে না পড়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। দাঁত পরিচর্যায় এ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেন্টাল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোজাম্মেল হোসেন রতন বলেন, ‘দাঁত আমাদের সৌন্দর্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই, এ সৌন্দর্যকে ঠিক এবং সুস্থ থাকার জন্য বছরে অন্তত দু’বার দাঁত চেকাপ করা প্রয়োজন।’

বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন : আর দেরি নয়, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালগুলোর ডেন্টাল বিভাগে গিয়ে দেখাতে পারেন আপনার দাঁতের পরিস্থিতি। যারা অফিস কিংবা অন্য কাজের চাপে বেশি ব্যস্ত থাকেন তারা প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের সান্ধ্যকালীন চেম্বারে দেখা করতে পারেন। এখন আমাদের দেশে যথেষ্ট ডাক্তার রয়েছেন যারা দাঁত নিয়ে নানা গবেষণায় নিয়োজিত থেকে বেশ সুনাম অর্জন করেছেন। তাদের উপদেশ অনুযায়ী নিয়মিত দন্ত চিকিৎসায় ফিরে পেতে পারেন রোগমুক্তি, সৌষ্ঠব গঠন ও প্রাণবন্ত হাসি। প্রয়োজনকে একটু বেশি গুরুত্ব দিয়ে আপনার দাঁত করতে পারেন উন্নত।

সতর্কতা : শহরের অলিগলিতে এবং গ্রামাঞ্চলে অনেক ভুয়া চিকিৎসক রয়েছেন যারা দাঁতের চিকিৎসা তো দূরের কথা ভুলভাল ওষুধ দিয়ে ডেকে আনতে পারেন মহাবিপদ। তাই, বুঝে শুনে যাচাই করে আপনার ডাক্তারকে বেছে নিন প্রয়োজনের তাগিদে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

দাঁত থাকতে দাঁতের যত্ন

প্রকাশের সময় : ০৮:১৫:২২ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৭ অগাস্ট ২০১৯
রোকনুজ্জামান রিপন ।। 

দাঁত একজন ব্যক্তির খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে একটি। এটি ছাড়া কিংবা এটির অযত্নে নেমে আসতে পারে শারীরিক তথা মানসিক অশান্তি। পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ৩২টি দাঁত লক্ষ করা যায়। এগুলোর সঠিক যত্নের প্রয়োজন। একজন ব্যক্তির ঝকঝকে সুন্দর সুস্থ দাঁতের নির্মল হাসি সবার নজর কাড়ে। তাই, দাঁতের যত্ন অপরিহার্য।

বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যে দাঁতগুলো ওঠে তাকে আক্কেল দাঁত বলে থাকি আমরা। এগুলো মিলিয়ে বত্রিশটি দাঁতকে প্রধানত চার ভাগে বিভক্ত করা হয়। সামনের দাঁত দিয়ে কোনো কিছু ছেঁড়া বা কাটা, সামনের পার্শ্ববর্তী সূক্ষ্ম ধারালো দাঁত দিয়ে ভাঙা এবং পেছনের দাঁত দিয়ে খাদ্য চর্বণ- এগুলোই করা হয়। প্রতিনিয়ত দাঁতের সক্রিয় ভূমিকা জানান দিয়ে দেয় যে দাঁতের গুরুত্ব অপরিসীম। শুধু কি খাদ্য চর্বণ, ভাঙা বা কিছু কাটা-ছেঁড়ার জন্য দাঁত প্রয়োজন? না, বরং এগুলোর পাশাপাশি ঠিকভাবে কথা বলা ও মুখের সৌষ্ঠব সৌন্দর্যের জন্যও দাঁত অপরিহার্য।

খাবার খেতে : দেহের আক্ষরিক প্রয়োজনে আহার চূর্ণ-বিচূর্ণে সহায়তা করে দাঁত। সে ক্ষেত্রে এই দাঁতের কোণে সব সময়ই খাদ্যকণা জমে থাকে। এগুলো প্রতিদিন পরিষ্কার প্রয়োজন।

মুখের অবয়ব সৌন্দর্যে :সব দাঁতের উপস্থিতিতে মুখের লালিত্য বা গঠন ফুটে ওঠে। দাঁত ছাড়া হাসি বা চেহারা অনেক সময় উপহাসের পাত্র হয়ে উঠতে হয়। ফলে এখন থেকে আর অবহেলা নয়।

আত্মবিশ্বাসে :  যখন একজন ব্যক্তির মুখে দুর্গন্ধ থাকে না বা চিরল দাঁতের মধুর হাসি দিতে কোনো বাধা থাকে না তখন আত্মবিশ্বাস দ্বিগুণ বেড়ে যায়। এসব বিবেচনায়, দাঁতের যত্ন বাধ্যতামূলক।

কেন যত্ন নেবেন? একটু অবহেলায় আজকাল মানুষ দাঁত ও মাড়ির রোগে ভুগছেন। এমনকি ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগেও আক্রান্ত হচ্ছেন। মাড়ি ফুলে ওঠা, দাঁতের শিরশির, ব্যথাসহ দেখা দিচ্ছে ব্যাকটেরিয়াজনিত অদ্ভুত রকমের জানা-অজানা রোগের জন্ম।

আবার বন্ধুমহল বা সহকর্মীদের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল মুহূর্তগুলো হয়ে যাচ্ছে ম্লান। নিয়মিত দাঁতের পরিচর্যা না নেয়ার কারণে সুসম্পর্কগুলোর মাঝে দেখা দিচ্ছে নানা প্রতিবন্ধকতা। দাঁতহীন অস্পষ্ট কথা এবং মুখের আকৃতি বিকৃত রূপ সবার কাছে অপ্রিয় পাত্র হয়ে উঠছে। এসব দিক বিবেচনায় দাঁতের যত্নে আর অবহেলা নয়।

ঘরোয়া পরিবেশে যা করা প্রয়োজন : প্রতিদিন আমাদের সবার দু’বার দাঁত ব্রাশ করা উচিত। তবে তা অবশ্যই সকালে খাবারের পর ও রাতে শোয়ার আগে, কেননা এ দু’সময়ের মধ্যে অনেকক্ষণ খাদ্য বিরতি থাকে। তাছাড়া এই খাবারের পর যেন দাঁতের কোণে কোনো খাদ্যকণা জমে না থাকে এ কারণেই মূলত ব্রাশ প্রয়োজন। দাঁতের সুরক্ষায় হালকা গরম পানিতে সামান্য লবণ দিয়ে নিয়মিত কুলকুচি করলে দাঁত ভালো থাকে। শর্করা বা মিষ্টান্ন জাতীয় খাবারের পর দাঁত ভালোভাবে পরিষ্কার রাখা খুবই প্রয়োজন।

এটাও মনে রাখা উচিত, ঘরে বসে দাঁতের সব চিকিৎসা করা যায় না। তাই নিয়মিত দন্ত বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া দরকার। দাঁতের দুর্গন্ধ, দাঁতের কোণে কালো ছাপ বা দাঁতের পাথর পরিষ্কারে কোনো নিজস্ব পদ্ধতি অবলম্বন না করে, কিংবা রাস্তাঘাটে স্বল্প জ্ঞানসম্পন্ন হকারের বুদ্ধিতে পড়ে অকালে দাঁত হারিয়ে বিপদে না পড়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। দাঁত পরিচর্যায় এ সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেন্টাল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোজাম্মেল হোসেন রতন বলেন, ‘দাঁত আমাদের সৌন্দর্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তাই, এ সৌন্দর্যকে ঠিক এবং সুস্থ থাকার জন্য বছরে অন্তত দু’বার দাঁত চেকাপ করা প্রয়োজন।’

বিশেষজ্ঞদের শরণাপন্ন : আর দেরি নয়, সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালগুলোর ডেন্টাল বিভাগে গিয়ে দেখাতে পারেন আপনার দাঁতের পরিস্থিতি। যারা অফিস কিংবা অন্য কাজের চাপে বেশি ব্যস্ত থাকেন তারা প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের সান্ধ্যকালীন চেম্বারে দেখা করতে পারেন। এখন আমাদের দেশে যথেষ্ট ডাক্তার রয়েছেন যারা দাঁত নিয়ে নানা গবেষণায় নিয়োজিত থেকে বেশ সুনাম অর্জন করেছেন। তাদের উপদেশ অনুযায়ী নিয়মিত দন্ত চিকিৎসায় ফিরে পেতে পারেন রোগমুক্তি, সৌষ্ঠব গঠন ও প্রাণবন্ত হাসি। প্রয়োজনকে একটু বেশি গুরুত্ব দিয়ে আপনার দাঁত করতে পারেন উন্নত।

সতর্কতা : শহরের অলিগলিতে এবং গ্রামাঞ্চলে অনেক ভুয়া চিকিৎসক রয়েছেন যারা দাঁতের চিকিৎসা তো দূরের কথা ভুলভাল ওষুধ দিয়ে ডেকে আনতে পারেন মহাবিপদ। তাই, বুঝে শুনে যাচাই করে আপনার ডাক্তারকে বেছে নিন প্রয়োজনের তাগিদে।