শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৩ জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চালানো হচ্ছে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল

মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা ।। লালমনিরহাট 

৩ জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চালানো হচ্ছে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল। সুচিকিৎসা অনিশ্চিত। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রোগী রেফার্ড করা হচ্ছে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অর্থনৈতিভাবে সচ্ছল রোগীরা নিরুপায় হয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে। দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের রোগীদের অবস্থা তথৈবচ। দেখার যেন কেউ নেই।
হাসপাতালের রোগী ভর্তি রেজিস্ট্রার দেখে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ইনডোরে রোগী ভর্তি হয় প্রায় দেড় থেকে ২ শত জন। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রংপুর রেফার্ড করা হয় গড়ে প্রায় ৪০-৫০ জন। ভর্তিকৃত রোগীদের মধ্যে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দেয়া হয় প্রায় ১ শত ৫০ জনের উপরে। আউটডোরে প্রতিদিন রোগীর আগমন ঘটে প্রায় ৮শত থেকে ১ হাজার জনের উপরে। বিশেষ করে বর্তমানে ডেঙ্গু আতঙ্ক বিরাজ করায় হাসপাতালটিতে রোগীর চাপ বেড়ে গেছে। তাছাড়া ধরলা ব্রিজ নির্মিত হওয়ায় ফুলবাড়ী উপজেলার রোগীরা কুড়িগ্রাম না গিয়ে তারা লালমনিরহাট সদর হাসপাতালেই চিকিৎসা সেবা নেয়ার জন্য ছুটে আসছে। কিন্তু হাসপাতালটিতে চলছে ডাক্তার স্বল্পতা।হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ গোলাম মোহাম্মদের সাথে কথা বললে তিনি তার অসহায়ত্বের কথা জানান।

১০০ শয্যার এ হাসপাতালটিতে মেডিকেল অফিসারের ১৯টি পদের স্থলে ডাক্তার রয়েছে মাত্র ৩ জন। কনসালটেন্ট ১৮টি পদের স্থলে ডাক্তার আছেন মাত্র ৮ জন। তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ গোলাম মোহাম্মদ জানান, মেডিকেল অফিসার ও কনসালটেন্ট-এর চাহিদা পত্র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। তিনি আরও জানান, ‘আমি স্থানীয় মানুষ। আমি চাই, আমার এলাকার মানুষজন সুচিকিৎসা পাক। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ডাক্তার বরাদ্দ না দিলে আমার কি করার আছে। তাই আমার যা আছে তাই দিয়ে আমি আন্তরিকভাবে সেবা দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি’।
সরেজমিন তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে গিয়ে আউটডোর রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার দৃশ্য দেখে তার আন্তরিক প্রচেষ্টার সত্যতা পাওয়া যায়। কিন্তু এভাবে কত দিন? ভর্তিকৃত প্রায় গড়ে দেড়শত রোগীর দেখাশোনা করা ৩ জন ডাক্তার দিয়ে কি সম্ভব? এছাড়া কনসালটেন্ট ১৮ জনের স্থলে মাত্র ৮ জন কেন? বাকি পদগুলোতে কেন পদায়ন করা হয় না? সচেতন লালমনিরহাটবাসী জানতে চায়। স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) ১ জন ডাক্তার সারাদিনে মাত্র ২০ জন রোগীর সুচিকিৎসা দিতে পারে বলে রিকমেন্ডেশন দিয়েছে। সেখানে এ স্বল্প সংখ্যক ডাক্তার দিয়ে আমরা কি সেবা পাচ্ছি তা প্রশ্নের সম্মুখিন।

অপরদিকে হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ক্লিনিকগুলো ভাল ব্যবসা করছে। ক্লিনিক মালিকরা রংপুর অথবা ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হায়ার করে নিয়ে আসছে এবং জেলার সর্বত্র মাইকিং করে রোগী ডেকে আনছে। ফলে রোগী বা রোগীর অভিভাবকদের মোটা অংকের ফিস প্রদান এবং বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার ফিস দিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে এবং প্রয়োজনে ঐ ক্লিনিকেই ভর্তি হয়ে অপারেশন করতে অনেকেই সর্বশান্ত হচ্ছে। এরকম অনেক ভুক্তভোগী রোগী ও রোগীর অভিভাবকরা অভিযোগ করে জানান, সদর হাসপাতালে এখন সিজার করা হয় না। তাই বাধ্য হয়ে ক্লিনিকগুলোতে সিজার করতে তারা অর্থনেতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। হাসপতালের নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ অনেকেই ক্লিনিকগুলোর দালাল হিসেবে কাজ করছে। হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগী এবং তাদের অভিভাবকদের ক্লিনিকে চিকিৎসা নেয়ার জন্য এসব দালালরা নানা ছলছুতায় প্ররোচিত করে থাকে। চিকিৎসা সেবার এ দুরাবস্থার হাত থেকে লালমনিরহাটবাসীকে রক্ষা করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তা ব্যক্তিদের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

জনপ্রিয়

৩ জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চালানো হচ্ছে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল

প্রকাশের সময় : ০৭:৪২:৪৫ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৮ অগাস্ট ২০১৯
মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা ।। লালমনিরহাট 

৩ জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চালানো হচ্ছে ১০০ শয্যা বিশিষ্ট লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল। সুচিকিৎসা অনিশ্চিত। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রোগী রেফার্ড করা হচ্ছে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অর্থনৈতিভাবে সচ্ছল রোগীরা নিরুপায় হয়ে আশ্রয় নিচ্ছেন বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে। দরিদ্র ও স্বল্প আয়ের রোগীদের অবস্থা তথৈবচ। দেখার যেন কেউ নেই।
হাসপাতালের রোগী ভর্তি রেজিস্ট্রার দেখে জানা যায়, প্রতিদিন গড়ে ইনডোরে রোগী ভর্তি হয় প্রায় দেড় থেকে ২ শত জন। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রংপুর রেফার্ড করা হয় গড়ে প্রায় ৪০-৫০ জন। ভর্তিকৃত রোগীদের মধ্যে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দেয়া হয় প্রায় ১ শত ৫০ জনের উপরে। আউটডোরে প্রতিদিন রোগীর আগমন ঘটে প্রায় ৮শত থেকে ১ হাজার জনের উপরে। বিশেষ করে বর্তমানে ডেঙ্গু আতঙ্ক বিরাজ করায় হাসপাতালটিতে রোগীর চাপ বেড়ে গেছে। তাছাড়া ধরলা ব্রিজ নির্মিত হওয়ায় ফুলবাড়ী উপজেলার রোগীরা কুড়িগ্রাম না গিয়ে তারা লালমনিরহাট সদর হাসপাতালেই চিকিৎসা সেবা নেয়ার জন্য ছুটে আসছে। কিন্তু হাসপাতালটিতে চলছে ডাক্তার স্বল্পতা।হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ গোলাম মোহাম্মদের সাথে কথা বললে তিনি তার অসহায়ত্বের কথা জানান।

১০০ শয্যার এ হাসপাতালটিতে মেডিকেল অফিসারের ১৯টি পদের স্থলে ডাক্তার রয়েছে মাত্র ৩ জন। কনসালটেন্ট ১৮টি পদের স্থলে ডাক্তার আছেন মাত্র ৮ জন। তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ গোলাম মোহাম্মদ জানান, মেডিকেল অফিসার ও কনসালটেন্ট-এর চাহিদা পত্র ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট দেয়া হয়েছে। কিন্তু কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। তিনি আরও জানান, ‘আমি স্থানীয় মানুষ। আমি চাই, আমার এলাকার মানুষজন সুচিকিৎসা পাক। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ডাক্তার বরাদ্দ না দিলে আমার কি করার আছে। তাই আমার যা আছে তাই দিয়ে আমি আন্তরিকভাবে সেবা দেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি’।
সরেজমিন তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে গিয়ে আউটডোর রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার দৃশ্য দেখে তার আন্তরিক প্রচেষ্টার সত্যতা পাওয়া যায়। কিন্তু এভাবে কত দিন? ভর্তিকৃত প্রায় গড়ে দেড়শত রোগীর দেখাশোনা করা ৩ জন ডাক্তার দিয়ে কি সম্ভব? এছাড়া কনসালটেন্ট ১৮ জনের স্থলে মাত্র ৮ জন কেন? বাকি পদগুলোতে কেন পদায়ন করা হয় না? সচেতন লালমনিরহাটবাসী জানতে চায়। স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাব্লিউএইচও) ১ জন ডাক্তার সারাদিনে মাত্র ২০ জন রোগীর সুচিকিৎসা দিতে পারে বলে রিকমেন্ডেশন দিয়েছে। সেখানে এ স্বল্প সংখ্যক ডাক্তার দিয়ে আমরা কি সেবা পাচ্ছি তা প্রশ্নের সম্মুখিন।

অপরদিকে হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার না থাকার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ক্লিনিকগুলো ভাল ব্যবসা করছে। ক্লিনিক মালিকরা রংপুর অথবা ঢাকা থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হায়ার করে নিয়ে আসছে এবং জেলার সর্বত্র মাইকিং করে রোগী ডেকে আনছে। ফলে রোগী বা রোগীর অভিভাবকদের মোটা অংকের ফিস প্রদান এবং বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার ফিস দিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে এবং প্রয়োজনে ঐ ক্লিনিকেই ভর্তি হয়ে অপারেশন করতে অনেকেই সর্বশান্ত হচ্ছে। এরকম অনেক ভুক্তভোগী রোগী ও রোগীর অভিভাবকরা অভিযোগ করে জানান, সদর হাসপাতালে এখন সিজার করা হয় না। তাই বাধ্য হয়ে ক্লিনিকগুলোতে সিজার করতে তারা অর্থনেতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। হাসপতালের নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ অনেকেই ক্লিনিকগুলোর দালাল হিসেবে কাজ করছে। হাসপাতালে ভর্তিকৃত রোগী এবং তাদের অভিভাবকদের ক্লিনিকে চিকিৎসা নেয়ার জন্য এসব দালালরা নানা ছলছুতায় প্ররোচিত করে থাকে। চিকিৎসা সেবার এ দুরাবস্থার হাত থেকে লালমনিরহাটবাসীকে রক্ষা করতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্তা ব্যক্তিদের দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।