বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫, ৫ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ডায়াবেটিস লক্ষণ ও নির্ণয়ের উপায়

রোকনুজ্জামান রিপন ।। 

দেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। এমন কোনো পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে কোনো ডায়াবেটিসের রোগী নেই।এই রোগের অত্যধিক বিস্তারের কারণেই সম্প্রতি এমন ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

মানুষের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ সাধারণত ৩.৩ থেকে ৬.৯ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর <৭.৮ মিলি.মোল/লি। কিন্তু যদি গ্লুকোজের পরিমাণ অভুক্ত অবস্থায় ৭ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর >১১ মিলি.মোল/লি পাওয়া যায়, তবে তার ডায়াবেটিস আছে বলে ধরে নেওয়া হয়।

আইরিশ ইনডিপেনডেন্টের খবরে বলা হয়েছে, যখন আমরা কার্বোহাইড্রেট বা সাধারণ শর্করাজাতীয় খাবার খাই, তখন তা ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত হয়। ইনসুলিন হচ্ছে একধরনের হরমোন। এর কাজ হলো এই গ্লুকোজকে মানুষের দেহের কোষগুলোয় পৌঁছে দেওয়া।

এরপর সেই গ্লুকোজ ব্যবহার করে শরীরের কোষগুলো শক্তি উৎপাদন করে। সেই শক্তি দিয়েই রোজকারের কাজকর্ম করে মানুষ। সুতরাং যখন এই গ্লুকোজ শরীরের কোষে পৌঁছাবে না, তখন স্বাভাবিকভাবেই মানুষের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হবে।

যখন কারও ডায়াবেটিস হয়, তখন ওই মানুষের শরীরে ইনসুলিন হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়। ফলে দেহের কোষে গ্লুকোজ পৌঁছাতে পারে না। এতে করে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। সাধারণত প্রস্রাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত গ্লুকোজ শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এই কারণে ডায়াবেটিস রোগীর ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। যখন প্রস্রাব বেশি হয়, তখন ডায়াবেটিসে ভোগা রোগী তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েন।

অন্যদিকে, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার রোগীর শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ গ্লুকোজ বের হয়ে যায়। এতে করে প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করতে পারে না দেহের কোষগুলো। ফলে রোগী দুর্বলতা অনুভব করেন। রোগী যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন, তবে তার রক্তনালি, স্নায়ু, কিডনি, চোখ ও হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যাসহ নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো
ডায়াবেটিস রোগের সাধারণ কিছু লক্ষণ রয়েছে। আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখলে সহজেই চিহ্নিত করা যায় ডায়াবেটিস। আর যত আগে ডায়াবেটিস চিহ্নিত করা যাবে, তখনই নিতে হবে নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ। ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো হলো:

১. ঘন ঘন পিপাসা লাগা
২. মুখ শুকিয়ে যাওয়া
৩. ঘন ঘন ক্ষুধা লাগা
৪. বার বার প্রস্রাব লাগা
৫. রাতে প্রস্রাবের কারণে ঘুম ভাঙ্গা
৬. ওজন কমতে থাকা
৭. চোখে ঝাপসা দেখা
৮. বমি বমি ভাব হওয়া
৯. মাঝে মাঝে মাথা ব্যথা হওয়া
১০. মিষ্টি খাবারের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাওয়া
১১. একটুতেই উত্তেজিত হওয়া বা মন খারাপ করা
১২. মনসংযোগের অভাব হতে থাকা

অনেক রোগীর ক্ষেত্রে উপরের কোনও লক্ষণই থাকে না। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে এক বা একাধিক লক্ষণ থাকতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে অন্য রোগের চিকিৎসা বা চেক-আপ করার সময়।ডায়াবেটিস নির্ণয়ের উপায়-

১. প্রস্রাব পরীক্ষায় প্রস্রাবে গ্লুকোজের উপস্থিতি
২. রক্ত পরীক্ষায় রক্তের গ্লুকোজ লেভেল বেশি থাকা-
৩. সকালে খালি পেটে ৭.০ মিলিমোল/লিটার বা এর বেশি হলে
৪. র‌্যানডোম ১১.০ মিলিমোল/লিটার বা এর বেশি হলে।

 

 

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

জনপ্রিয়

ডায়াবেটিস লক্ষণ ও নির্ণয়ের উপায়

প্রকাশের সময় : ১০:৪১:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৯ অগাস্ট ২০১৯
রোকনুজ্জামান রিপন ।। 

দেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বাড়ছেই। এমন কোনো পরিবার খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে কোনো ডায়াবেটিসের রোগী নেই।এই রোগের অত্যধিক বিস্তারের কারণেই সম্প্রতি এমন ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।

মানুষের রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ সাধারণত ৩.৩ থেকে ৬.৯ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর <৭.৮ মিলি.মোল/লি। কিন্তু যদি গ্লুকোজের পরিমাণ অভুক্ত অবস্থায় ৭ মিলি.মোল/লি আর খাবার পর >১১ মিলি.মোল/লি পাওয়া যায়, তবে তার ডায়াবেটিস আছে বলে ধরে নেওয়া হয়।

আইরিশ ইনডিপেনডেন্টের খবরে বলা হয়েছে, যখন আমরা কার্বোহাইড্রেট বা সাধারণ শর্করাজাতীয় খাবার খাই, তখন তা ভেঙে গ্লুকোজে পরিণত হয়। ইনসুলিন হচ্ছে একধরনের হরমোন। এর কাজ হলো এই গ্লুকোজকে মানুষের দেহের কোষগুলোয় পৌঁছে দেওয়া।

এরপর সেই গ্লুকোজ ব্যবহার করে শরীরের কোষগুলো শক্তি উৎপাদন করে। সেই শক্তি দিয়েই রোজকারের কাজকর্ম করে মানুষ। সুতরাং যখন এই গ্লুকোজ শরীরের কোষে পৌঁছাবে না, তখন স্বাভাবিকভাবেই মানুষের দৈনন্দিন কাজ ব্যাহত হবে।

যখন কারও ডায়াবেটিস হয়, তখন ওই মানুষের শরীরে ইনসুলিন হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়। ফলে দেহের কোষে গ্লুকোজ পৌঁছাতে পারে না। এতে করে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে যায়। সাধারণত প্রস্রাবের মাধ্যমে অতিরিক্ত গ্লুকোজ শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এই কারণে ডায়াবেটিস রোগীর ঘন ঘন প্রস্রাব হয়। যখন প্রস্রাব বেশি হয়, তখন ডায়াবেটিসে ভোগা রোগী তৃষ্ণার্ত হয়ে পড়েন।

অন্যদিকে, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার রোগীর শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ গ্লুকোজ বের হয়ে যায়। এতে করে প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করতে পারে না দেহের কোষগুলো। ফলে রোগী দুর্বলতা অনুভব করেন। রোগী যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করেন, তবে তার রক্তনালি, স্নায়ু, কিডনি, চোখ ও হৃদ্‌যন্ত্রের সমস্যাসহ নানা ধরনের শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।

ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো
ডায়াবেটিস রোগের সাধারণ কিছু লক্ষণ রয়েছে। আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখলে সহজেই চিহ্নিত করা যায় ডায়াবেটিস। আর যত আগে ডায়াবেটিস চিহ্নিত করা যাবে, তখনই নিতে হবে নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ। ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলো হলো:

১. ঘন ঘন পিপাসা লাগা
২. মুখ শুকিয়ে যাওয়া
৩. ঘন ঘন ক্ষুধা লাগা
৪. বার বার প্রস্রাব লাগা
৫. রাতে প্রস্রাবের কারণে ঘুম ভাঙ্গা
৬. ওজন কমতে থাকা
৭. চোখে ঝাপসা দেখা
৮. বমি বমি ভাব হওয়া
৯. মাঝে মাঝে মাথা ব্যথা হওয়া
১০. মিষ্টি খাবারের প্রতি আকর্ষণ বেড়ে যাওয়া
১১. একটুতেই উত্তেজিত হওয়া বা মন খারাপ করা
১২. মনসংযোগের অভাব হতে থাকা

অনেক রোগীর ক্ষেত্রে উপরের কোনও লক্ষণই থাকে না। আবার কারও কারও ক্ষেত্রে এক বা একাধিক লক্ষণ থাকতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে অন্য রোগের চিকিৎসা বা চেক-আপ করার সময়।ডায়াবেটিস নির্ণয়ের উপায়-

১. প্রস্রাব পরীক্ষায় প্রস্রাবে গ্লুকোজের উপস্থিতি
২. রক্ত পরীক্ষায় রক্তের গ্লুকোজ লেভেল বেশি থাকা-
৩. সকালে খালি পেটে ৭.০ মিলিমোল/লিটার বা এর বেশি হলে
৪. র‌্যানডোম ১১.০ মিলিমোল/লিটার বা এর বেশি হলে।