তানজীর মহসিন ।।
দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভিন্ন ভিন্ন নামে মরণঘাতি ভায়াগ্রা প্রবেশের পর কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরীর নির্দেশে ভায়াগ্রার দুটি বড় চালান সম্প্রতি ধরা পড়ে। যার একটির নাম ‘ফুড ফ্লেভার ,অন্যটির নাম ‘সোডিয়াম স্টার্চ গ্লাইকোলেট’ নামে আমদানি করা হয়। বাস্তবে এর নাম সিলডেনাফিল সাইট্রেট, যা মূলত ওষুধ উৎপাদনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কিছু বিশেষ যৌন উ ওেজক ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
ইদানীং কিছু কোমল পানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান কোমল পানীয় উৎপাদনে এ জাতীয় কাচামাল ব্যবহার করছে মর্মেও ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে অভিযোগ রয়েছে । এছাড়া মিথ্যা ঘোষণায় আনা পণ্যটি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক যৌন উত্তেজক ওষুধ তৈরিতেও ব্যবহার করা হয় বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।
এই দুটি চালানের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান যথাক্রমে বায়োজিদ এন্টারপ্রাইজ মিটফোর্ড ও রেড গ্রীন ইন্টারন্যাশনাল কলাবাগান ঢাকা।সম্প্রতি বেনাপোলে ভায়াগ্রার এই দুটি চালান ধরা পড়ার পর বিষয়টি উন্মোচিত হয়। এরপর বোনপোল স্থলবন্দরে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। কাষ্টম হাউজে নেওয়া হয়েছে কঠোর নজরদারি।
ভায়াগ্রা চিহ্নিতকরণে দুর্বলতার সুযোগে মিথ্যা ঘোষণায় জীবনবিধ্বংসী পণ্যটি অবাধে দেশে ঢুকে পড়ছে; যা জনস্বাস্থ্যই শুধু নয়, রাজস্ব ব্যবস্থাপনায়ও বড় ধরনের হুমকি ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্থলবন্দরগুলোতে ভায়াগ্রা শনাক্তকরণের দুর্বলতার সুযোগে এ জাতীয় পন্য আসছে এবং বিগত সময়ে কী পরিমাণ ঢুকেছে তা স্পষ্ট নয়। তবে দুটি চালানেই ‘২ হাজার ৭শ ‘কেজি ধরা পড়ায় অনুমেয় যে, এর আগেও বিপুল পরিমাণ ভায়াগ্রা দেশে প্রবেশ করে থাকতে পারে৷ এটি আমদানি হচ্ছে মূলত সোডিয়াম স্টার্চ গ্লাইকোলেট, ফ্লেভার নামে। বাস্তবে এর নাম সিলডেনাফিল সাইট্রেট, যা মূলত ওষুধ উৎপাদনকারী শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কিছু বিশেষ যৌন উওেজক ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া মিথ্যা ঘোষণায় আনা পণ্যটি ইউনানী ও আয়ুর্বেদিক যৌন উত্তেজক ওষুধ তৈরিতেও ব্যবহার করা হয় বলে জানায় সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।
দেশের তরুণ সমাজকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে অপঘোষণায় ভায়াগ্রা আমদানি করা হচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, স্থলবন্দরগুলোতে ভায়াগ্রা শনাক্তকরণে দুর্বলতার কারণে সহজেই এটি দেশে ঢুকতে সক্ষম। আবার যেসব প্রতিষ্ঠানের পরীক্ষা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পণ্য শুল্কায়ন করে খালাস করা হয়, সেসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যেও রয়েছে সমন্বয়হীনতা। এমনকি বুয়েটের মতো একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানও রাসায়নিক পরীক্ষন শেষে সঠিকভাবে ভায়াগ্রা চিহ্নিত করতে পারেনি।
সম্প্রতি উদ্ঘাটিত ভায়াগ্রার চালানটি তেমনি করেই খালাস হয়ে যাচ্ছিল। বিসিএসআইআরের কায়িক পরীক্ষায় চালানটি সোডিয়াম স্টার্চ গ্লাইকোলেট হিসেবে শনাক্ত করা হয়। যা আমদানিকারকের ঘোষনার সাথে হুবুহু মিল রয়েছে। আমদানি নীতি আদেশের বিধান অনুযায়ী আমদানিকৃত খাদ্যদ্রব্যসহ অনেক পণ্যকেই আমদানি পর্যায়ে বিসিএসআইআরে কায়িক পরীক্ষার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে মতে, ভায়াগ্রার চালানটির নমুনা সংগ্রহ করে কাস্টমস এর পক্ষ থেকে পাঠানো হয় বিসিএসআইআর’র রিপোর্টের জন্য।
ভিন্ন ভিন্ন নামে ভায়াগ্রা পণ্যের চালানটি খালাসের প্রাক্কালে বেনাপোলের কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরীর কাছে গোপন সংবাদ আসে যে, ঐ চালানের মাধ্যমে মূলত ভায়াগ্রা পাচার হচ্ছে। তখন খালাস কার্যক্রম স্থগিত করা হয় এবং পুনরায় পণ্যের প্রতিনিধিত্বশীল নমুনা সংগ্রহ করা হয়, যা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের ল্যাবে পাঠালে তাদের পরীক্ষায় সিলডেনাফিল সাইট্রেট বা ভায়াগ্রা হিসেবে শনাক্ত হয়। খুলনা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠালে সেখানেও ভায়াগ্রা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
এ অবস্থায় পণ্য শনাক্তকরণের একটি সমন্বয় সাধনের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ ধরনের অসামঞ্জস্যতা দূর না করলে অবাধে দেশে ভায়াগ্রার আগ্রাসন ঠেকানো যাবে না। যেসব রিপোর্টের ভিত্তিতে ভায়াগ্রা অন্য নামে খালাস হয়ে যাচ্ছিল, সেসব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। নাকি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কোনো অসাধু কর্মকর্তার অবহেলার কারণে দেশের সার্বিক জনস্বাস্থ্য হুমকির মুখে পড়ছে, তা-ও অনুসন্ধানের দাবি করেছে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষ । ইতিমধ্যে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বিসিএস আইআর ্এ চিঠি দিয়ে ব্যখ্যা চাওয়া হয়েছে। কাস্টমস কমিশনারের অভিযোগ যোগসাজসে বিসিএসআইআর‘র অসাধু কর্মকর্তারা রয়েছে। একইসঙ্গে ভবিষ্যতে এ ধরনের চালান যাতে দেশে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য বেনাপোল কাস্টমস হাউসের পক্ষ থেকে কাস্টমস’র ৪৩ টি পয়েন্টে রেডএলার্ট জারি করে সতর্ক করা হয়। সেই উদ্যোগ নেওয়ার দাবি সংশ্লিষ্ট মহল সহ সাধারন জনগনের।
উল্লেখ্য পণ্য চালানটি টেস্টে পাঠানোর আগেই ছেড়ে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে কাস্কটমস কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরীকে হুমকি ধামকী দেওয়া হয়। তাতে ব্যর্থ হয়ে কমিশনার বেলাল হোসেন চৌধুরীকে হয়রানি করতে একটি শক্তিশালী মাফিয়া চক্র মাঠে নেমেছে। বিষয়টি নিয়ে সচেতন মহল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্থক্ষেপ কামনা করেছেন।