প্রফেসর জিন্নাত আলী।।
গাড়ির নাম, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, করদাতার টিআইএন উল্লেখ করে আয়কর নথি পুনঃযাচাইয়ে কর অঞ্চলগুলোতে চিঠি দেয়া হচ্ছে।
টিআইএন অনুযায়ী গাড়ি মালিকের আয়কর ফাইলের তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই করতে চলতি সপ্তাহে সংশ্লিষ্ট কর অঞ্চলগুলোতে চিঠি দেয়া হচ্ছে। কর জরিপ অঞ্চল থেকে চিঠিগুলো পাঠানো হচ্ছে। অবশ্য এ তালিকায় সংসদ সদস্যদের গাড়ি নেই। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় কর জরিপ অঞ্চলের কর কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, সব করদাতাই আমাদের কাছে সম্মানিত। কাউকে অসম্মান করার জন্য নয়; প্রকৃতপক্ষে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, বিলাসবহুল গাড়ির মালিকরা যথাযথভাবে তাদের আয়কর ফাইলে গাড়ির তথ্য দিয়েছেন কি না, সেটা উদ্ঘাটনের জন্য। আয়কর রিটার্নে দেয়া তথ্যের সঙ্গে শুধু গাড়ির তথ্য মিলিয়ে দেখতে কর অঞ্চলগুলোতে চিঠি দেয়া হয়েছে। যদি কেউ তথ্য না দিয়ে থাকে তাহলে আয়কর ফাইল পুনঃনিরীক্ষা করতে বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে প্রথম দফায় বিআরটিএ থেকে ৯৩০টি বিলাসবহুল গাড়ির তথ্য কর জরিপ অঞ্চলকে দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় আরও ৮৯১টি গাড়ির তথ্য দেয়া হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে পাজেরো, লেক্সাস, হ্যারিয়ার, বিএমডব্লিউ, অডি, মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ির তথ্য।
কোম্পানি বা ব্যক্তিগত নামে রেজিস্ট্রেশন করা গাড়ির তথ্য কর অঞ্চলগুলোকে পাঠানো হয়েছে। এসব গাড়ির মালিকের আয়ের উৎস, গাড়ি কেনার অর্থের উৎস, আয়কর ফাইলে গাড়ির তথ্য দেখানো আছে কি না, করদাতার আর কী কী সম্পদ আছে, ওই সম্পদের সঙ্গে কর ফাইলে দেওয়া তথ্য ঠিক আছে কি না, তা যাচাই করা হবে।
এ ছাড়া কোম্পানির ক্ষেত্রে পরিশোধিত মূলধনের কত অংশ গাড়ি কেনায় ব্যয় করা যাবে, তা মানার একটি শর্ত রয়েছে। কোম্পানিগুলো তা মেনেছে কি না, এসব বিষয়ে ওই কোম্পানিরও বিস্তারিত আয়-ব্যয়ের তথ্য নেয়া হবে।
কর জরিপ অঞ্চল থেকে কর অঞ্চলগুলোকে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে, তাতে সুনির্দিষ্টভাবে গাড়ির ব্র্যান্ডের নাম, রেজিস্ট্রেশন নম্বর, যার নামে রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে তার টিআইএন নম্বর উল্লেখ করা হয়েছে। কর অঞ্চলভিত্তিক পৃথক তালিকা করে ওইসব ব্যক্তির কর ফাইল পুনঃযাচাই করতে বলা হয়েছে চিঠিতে।
এনবিআরের কর্মকর্তারা মনে করেন, দামি গাড়ি ব্যবহারকারীদের কর ফাইলে দেওয়া তথ্য অনেক সময় তাদের আয় ও জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে সামঞ্জ্যপূর্ণ হয় না। এ ধরনের গাড়ি ব্যবহারকারীদের যে আয় থাকার কথা, কর ফাঁকি দিতে তা ফাইলে দেখানো হয় না।আবার অনেকে কর ফাঁকি দিতে নিজে গাড়ি না কিনে কোম্পানির নামে গাড়ি কিনে থাকেন। সেখানেও ঘাপলা রয়েছে। ছোটখাটো অনেক প্রতিষ্ঠানের নামে বিলাসবহুল গাড়ির রেজিস্ট্রেশন রয়েছে।
সঠিকভাবে কর নথি যাচাই করা হলে করদাতার প্রকৃত আয়, ব্যয় ও সম্পদের অনেক অজানা তথ্য বেরিয়ে আসবে। আবার অনেক ক্ষেত্রে আয়ের উৎস গোপন রাখতে বিত্তশালীরা নিজেদের কোম্পানির নামে গাড়ি কিনে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন। সেগুলোও যাচাই-বাছাই করা হবে। এতে রাজস্ব আদায় বাড়বে।বর্তমান আয়কর অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ও অবণ্টিত মুনাফার ১০ শতাংশ অর্থ দিয়ে গাড়ি কেনার নিয়ম আছে। এ জন্য ওই কোম্পানিকে কোনো কর দিতে হয় না।
যদি গাড়ির মূল্য এর চেয়ে বেশি হয় তাহলে ৫০ শতাংশ কর দেয়ার নিয়ম আছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, একটি কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১০ কোটি টাকা এবং বছর শেষে অবণ্টিত মুনাফা রয়েছে ২০ লাখ টাকা। তাহলে মোট ১০ কোটি ২০ লাখ টাকার ১০ শতাংশ অর্থাৎ ১ কোটি ২ লাখ টাকা সমমূল্যের গাড়ি কিনতে পারবে। এর জন্য ওই প্রতিষ্ঠানকে কর দিতে হবে না।
এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, এটা ইতিবাচক উদ্যোগ। তবে এটা যাতে হয়রানির হাতিয়ার হয়ে না ওঠে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। তিনি আরও বলেন, শুধু বিলাসবহুল গাড়ির মালিক নয়, দেশে কোটিপতির সংখ্যা হুহু করে বাড়ছে। অনেক বিত্তশালী রয়েছে যারা সঠিকভাবে ট্যাক্স দেন না। তাদের চিহ্নিত করতে হবে। ধারণা করা হয়, দেশের রাজস্ব ঘাটতির মধ্যে এটাও একটি কারণ। বিত্তশালীদের কাছ থেকে যথাযথভাবে ট্যাক্স আদায় করতে পারলে রাজস্ব আদায় বহুগুণ বাড়ানো সম্ভব।