শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৩৯ বছর বয়সে ৩৮ সন্তানের মা এই নারী!

মো: হাফিজুর রহমান ।।

আফ্রিকার উগান্ডায় থাকেন ৩৯ বছরের মারিয়ম নবট্যানজি। একার দায়িত্বে ৩৮ সন্তানের ভরণপোষণ করে চলেছেন। কামপালার উত্তরে ৫০ কিলোমিটার দূরে কফি বাগান দিয়ে ঘেরা একটা ছোট গ্রামে বাস করেন এই স্বামী পরিত্যক্তা। এই নারীর জীবন ছোটবেলা থেকেই কষ্টের। তিন দিন বয়সে তাকে ফেলে রেখে গিয়েছিলেন মা। দাদির কাছেই মারিয়ম বড় হন।

মারিয়মের দাদি ১২ বছর বয়স হলে তাকে এক প্রকার জোর করেই বিয়ে দেন। এর এক বছর পরই মারিয়মের কোলজুড়ে আসে যমজ সন্তান। এতে খুব খুশিও হয়েছিলেন মারিয়ম।এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে। টানা চার বার যমজ সন্তানের জন্ম দেন মারিয়ম। এতদিনে তিনি বুঝতে পারেন কোথাও কোনো সমস্যা হচ্ছে। মারিয়ম চিকিৎসকের কাছে গেলে জানতে পারেন, তার ডিম্বাশয়ের আকার অত্যন্ত বড় এবং তিনি নিজেও ভীষণভাবে ফার্টাইল।

এই অবস্থায় মারিয়মের গর্ভনিয়ন্ত্রণের অপারেশন করা হলে তা প্রাণঘাতীও হতে পারে বলে জানান চিকিৎসক। আরও জানান, কোনও গর্ভনিয়ন্ত্রক ওষুধও তার পক্ষে মারাত্মক হতে পারে।

এ সময় কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না মারিয়ম। এরই মধ্যে ৮ সন্তানের জন্ম দিয়ে ফেলেছেন। স্বামীকে বিষয়টা জানিয়ে মারিয়ম বলেন, বারবার এভাবে একাধিক সন্তানের জন্ম দেওয়াটা বন্ধ হওয়া উচিত। কিন্তু স্বামী তার কথায় মোটেও কর্ণপাত করেননি।

আর এতে চিকিৎসকের আশঙ্কাই সত্যি হয়। পরপর চার বার ত্রিপলেট (এক সঙ্গে তিন সন্তান) এবং পাঁচ বার কোয়াড্রুপলেট (এক সঙ্গে চার সন্তান)-এর জন্ম দেন মারিয়ম। তিনি সব মিলিয়ে ৪২ সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। তবে তাদের মধ্যে বেঁচে রয়েছে ৩৮ জন।

আড়াই বছর আগে শেষবার মা হয়েছিলেন মারিয়ম। সে বারও যমজ সন্তানের জন্ম দেন। এদের মধ্যে একজন মারা যায়। এরপরই তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন স্বামী। এ সময় অন্য এক নারীকে বিয়েও করেন তিনি।

এদিকে, বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পর বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন মারিয়ম। জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়েছিল ভাগ্য। ৩৮ সন্তানকে ভালো শিক্ষা-খাবার কীভাবে দেবেন, সেটাই তাকে চিন্তিত করে তুলেছিল। তবে হাল ছাড়েননি।

তখন তার দাদি সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন। কামপালায় যে বাড়িতে মারিয়মের সংসার এখন, সেটা তাকে করে দিয়েছিলেন দাদি। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। নানা ধরনের কাজ করে সংসার চালান মারিয়ম।

মারিয়ম জানান, পুরো পরিবারের জন্য প্রতিদিন ২৫ কিলোগ্রাম ভুট্টা লাগে। আর্থিক অনটনের জন্য মাছ-মাংস খাওয়া খুব একটা হয় না। বড়রা রান্না এবং ঘরের কাজে মাকে সাহায্য করে। কোন দিন কে কোন কাজ করবে, তার একটা রুটিন করা হয়েছে।

তার ঘরের দেয়ালে সব সন্তানদের ছবি টাঙানো রয়েছে। এদের মধ্যে যারা পড়াশোনা অনেক দূর পর্যন্ত করেছে, তাদের গলায় সোনালী চকচকে মালাও পরিয়েছেন মারিয়ম।

আফ্রিকার পরিবারগুলো তুলনামূলক বড় আকৃতির হয়। উগান্ডাতে প্রতি মহিলার গড় সন্তান সংখ্যা ৫.৬, যা ওই মহাদেশের সর্বোচ্চ। বিশ্ব ব্যাংকের মতে, সারা বিশ্বে নারীদের গড় সন্তান সংখ্যা ২.৪।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

৩৯ বছর বয়সে ৩৮ সন্তানের মা এই নারী!

প্রকাশের সময় : ০৯:৫৩:৪৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩১ অগাস্ট ২০১৯
মো: হাফিজুর রহমান ।।

আফ্রিকার উগান্ডায় থাকেন ৩৯ বছরের মারিয়ম নবট্যানজি। একার দায়িত্বে ৩৮ সন্তানের ভরণপোষণ করে চলেছেন। কামপালার উত্তরে ৫০ কিলোমিটার দূরে কফি বাগান দিয়ে ঘেরা একটা ছোট গ্রামে বাস করেন এই স্বামী পরিত্যক্তা। এই নারীর জীবন ছোটবেলা থেকেই কষ্টের। তিন দিন বয়সে তাকে ফেলে রেখে গিয়েছিলেন মা। দাদির কাছেই মারিয়ম বড় হন।

মারিয়মের দাদি ১২ বছর বয়স হলে তাকে এক প্রকার জোর করেই বিয়ে দেন। এর এক বছর পরই মারিয়মের কোলজুড়ে আসে যমজ সন্তান। এতে খুব খুশিও হয়েছিলেন মারিয়ম।এই প্রক্রিয়া চলতে থাকে। টানা চার বার যমজ সন্তানের জন্ম দেন মারিয়ম। এতদিনে তিনি বুঝতে পারেন কোথাও কোনো সমস্যা হচ্ছে। মারিয়ম চিকিৎসকের কাছে গেলে জানতে পারেন, তার ডিম্বাশয়ের আকার অত্যন্ত বড় এবং তিনি নিজেও ভীষণভাবে ফার্টাইল।

এই অবস্থায় মারিয়মের গর্ভনিয়ন্ত্রণের অপারেশন করা হলে তা প্রাণঘাতীও হতে পারে বলে জানান চিকিৎসক। আরও জানান, কোনও গর্ভনিয়ন্ত্রক ওষুধও তার পক্ষে মারাত্মক হতে পারে।

এ সময় কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না মারিয়ম। এরই মধ্যে ৮ সন্তানের জন্ম দিয়ে ফেলেছেন। স্বামীকে বিষয়টা জানিয়ে মারিয়ম বলেন, বারবার এভাবে একাধিক সন্তানের জন্ম দেওয়াটা বন্ধ হওয়া উচিত। কিন্তু স্বামী তার কথায় মোটেও কর্ণপাত করেননি।

আর এতে চিকিৎসকের আশঙ্কাই সত্যি হয়। পরপর চার বার ত্রিপলেট (এক সঙ্গে তিন সন্তান) এবং পাঁচ বার কোয়াড্রুপলেট (এক সঙ্গে চার সন্তান)-এর জন্ম দেন মারিয়ম। তিনি সব মিলিয়ে ৪২ সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। তবে তাদের মধ্যে বেঁচে রয়েছে ৩৮ জন।

আড়াই বছর আগে শেষবার মা হয়েছিলেন মারিয়ম। সে বারও যমজ সন্তানের জন্ম দেন। এদের মধ্যে একজন মারা যায়। এরপরই তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেন স্বামী। এ সময় অন্য এক নারীকে বিয়েও করেন তিনি।

এদিকে, বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার পর বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছিলেন মারিয়ম। জীবনের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড় করিয়েছিল ভাগ্য। ৩৮ সন্তানকে ভালো শিক্ষা-খাবার কীভাবে দেবেন, সেটাই তাকে চিন্তিত করে তুলেছিল। তবে হাল ছাড়েননি।

তখন তার দাদি সাহায্যের হাত বাড়িয়েছিলেন। কামপালায় যে বাড়িতে মারিয়মের সংসার এখন, সেটা তাকে করে দিয়েছিলেন দাদি। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। নানা ধরনের কাজ করে সংসার চালান মারিয়ম।

মারিয়ম জানান, পুরো পরিবারের জন্য প্রতিদিন ২৫ কিলোগ্রাম ভুট্টা লাগে। আর্থিক অনটনের জন্য মাছ-মাংস খাওয়া খুব একটা হয় না। বড়রা রান্না এবং ঘরের কাজে মাকে সাহায্য করে। কোন দিন কে কোন কাজ করবে, তার একটা রুটিন করা হয়েছে।

তার ঘরের দেয়ালে সব সন্তানদের ছবি টাঙানো রয়েছে। এদের মধ্যে যারা পড়াশোনা অনেক দূর পর্যন্ত করেছে, তাদের গলায় সোনালী চকচকে মালাও পরিয়েছেন মারিয়ম।

আফ্রিকার পরিবারগুলো তুলনামূলক বড় আকৃতির হয়। উগান্ডাতে প্রতি মহিলার গড় সন্তান সংখ্যা ৫.৬, যা ওই মহাদেশের সর্বোচ্চ। বিশ্ব ব্যাংকের মতে, সারা বিশ্বে নারীদের গড় সন্তান সংখ্যা ২.৪।