শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

রাত পোহালেই দুর্গোৎসব।

মো: নুরুল ইসলাম ।।—

রাত পোহালেই দুর্গোৎসব। আনুষ্ঠানিকতার শুরুতে চলছে মুহূর্তের গুণন। প্রতিমায় পড়ছে তুলির শেষ আঁচড়। দম ফেলার ফুরসত নেই শিল্পী ও আয়োজকদের। শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, রমনা কালীমন্দিরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মণ্ডপে একই চিত্র।

রাজধানীতে প্রতিবছর পূজার আয়োজনে থাকে বৈচিত্র্য। আয়োজকদের মধ্যেও থাকে প্রতিযোগিতার মনোভাব। এসব চিন্তা সামনে রেখে চলছে প্রস্তুতি।

রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী রমনা কালীমন্দিরে এবারও দুর্গাপূজায় বৈচিত্র্য আনতে চলছে আয়োজন। পূজা কমিটির সভাপতি উৎপল সাহা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দিনরাত কাজ করতে হচ্ছে। হাজারো ভক্ত আসবেন এখানে। প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে সেভাবেই। এবার প্রায় ২২ ফুট উঁচু শিবমূর্তি স্থাপন করা হবে মন্দিরের পুকুরের মাঝখানে। আলোকসজ্জাও উপভোগ্য করার চেষ্টা চলছে। ছয় দিনব্যাপী অনুষ্ঠান তো রয়েছেই।’

রমনায় প্রতিমা নির্মাণ করছেন যুধিষ্ঠির বৈরাগী। তিনি বলেন, ছয়টি পূজামণ্ডপে প্রতিমা নির্মাণ করছে তাদের সাতজনের একটি দল। দুই মাস ধরে এ কাজ চলছে। এখন শেষ মুহূর্তে কাজের চাপ বেড়েছে। অনেকটা নির্ঘুম রাত কাটছে। বৃহস্পতিবারের (আজ) মধ্যে প্রতিমায় রঙের কাজ শেষে তা আয়োজক সংগঠনকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এরপর পারিশ্রমিক বুঝে নিয়ে প্রিয়জনদের সান্নিধ্য পেতে দীর্ঘ দিন পর বাড়ি ফিরব।

দুর্গাপূজায় রাজধানীর পুরান ঢাকায় বরাবরই থাকে আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। চোখধাঁধানো আলোকসজ্জা আর বৈচিত্র্যময় আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে সেখানে। ছোট পরিসরে অলি-গলিতে তৈরি হচ্ছে প্যান্ডেল। এখানকার বেশ কিছু পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে প্যান্ডেল ও আলোকসজ্জার কাজ প্রায় শেষ। পাশাপাশি প্রতিমা নির্মাণশিল্পীরাও তাদের কাজ গুছিয়ে এনেছেন।

তাঁতীবাজার জগন্নাথ মন্দিরে প্রতিমা নির্মাণ করছেন সাভারের শিমুলিয়ার শিল্পী বলাই পাল। আলাপকালে তিনি জানান, এবার ঢাকা, রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ১৬টি মণ্ডপে প্রতিমা নির্মাণ করছেন তিনি। ১০ জনের একটি দল বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে প্রতিমা নির্মাণ করছেন। কোনো কোনো মণ্ডপে নির্মাণ শেষ হয়েছে। পঞ্চাশোর্ধ্ব এই শিল্পী বলেন, ‘৩৭ বছর ধরে এ পেশায় আছি। কাজের চাপে একটু কষ্ট হলেও অভ্যস্ত হয়ে গেছি।’

শাঁখারীবাজারের পান্নিটোলা এলাকায় প্রতিমা নির্মাণ করছেন সুশীল নন্দী (৬০)। তিনি জানান, আয়োজক সংগঠনের তাড়া রয়েছে। যেভাবেই হোক শুক্রবারের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করতে হবে। তাই সেটিকে সামনে রেখেই আমাদের কাজ চলছে।

ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মণ্ডল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এবার রাজধানীতে ২৩৭টি স্থায়ী, অস্থায়ী মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। আয়োজক সংগঠনের সবার সঙ্গেই আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। নিরাপত্তাব্যবস্থাও জোরদার করা হচ্ছে। আমরা জানতে পেরেছি ইতিমধ্যে প্রায় সব পূজামণ্ডপের প্যান্ডেল, আলোকসজ্জা ও প্রতিমা নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে এসেছে। যেগুলো বাকি থাকবে শুক্রবারের মধ্যে তা শেষ হবে। পাশাপাশি পূজার সার্বিক অবস্থা মনিটর করার জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি মনিটরিং সেল থাকবে।’

আজ দেবীর বোধন

এদিকে আজ বৃহস্পতিবার ‘বোধন’-এর মাধ্যমে শুরু হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। বোধন শব্দের অর্থ ‘জাগরণ’ বা ‘চেতনা’। বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙার জন্য পূজার্চ্চনা করা হবে। আজ সন্ধ্যাকালে পূজা ও দেবী বন্দনায় মেতে উঠবেন তার ভক্তরা। আগামীকাল শুক্রবার হবে মহাষষ্ঠী। ষষ্ঠীতে হবে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

রাত পোহালেই দুর্গোৎসব।

প্রকাশের সময় : ০৮:০০:০৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০১৯
মো: নুরুল ইসলাম ।।—

রাত পোহালেই দুর্গোৎসব। আনুষ্ঠানিকতার শুরুতে চলছে মুহূর্তের গুণন। প্রতিমায় পড়ছে তুলির শেষ আঁচড়। দম ফেলার ফুরসত নেই শিল্পী ও আয়োজকদের। শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার, রমনা কালীমন্দিরসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মণ্ডপে একই চিত্র।

রাজধানীতে প্রতিবছর পূজার আয়োজনে থাকে বৈচিত্র্য। আয়োজকদের মধ্যেও থাকে প্রতিযোগিতার মনোভাব। এসব চিন্তা সামনে রেখে চলছে প্রস্তুতি।

রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী রমনা কালীমন্দিরে এবারও দুর্গাপূজায় বৈচিত্র্য আনতে চলছে আয়োজন। পূজা কমিটির সভাপতি উৎপল সাহা দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দিনরাত কাজ করতে হচ্ছে। হাজারো ভক্ত আসবেন এখানে। প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে সেভাবেই। এবার প্রায় ২২ ফুট উঁচু শিবমূর্তি স্থাপন করা হবে মন্দিরের পুকুরের মাঝখানে। আলোকসজ্জাও উপভোগ্য করার চেষ্টা চলছে। ছয় দিনব্যাপী অনুষ্ঠান তো রয়েছেই।’

রমনায় প্রতিমা নির্মাণ করছেন যুধিষ্ঠির বৈরাগী। তিনি বলেন, ছয়টি পূজামণ্ডপে প্রতিমা নির্মাণ করছে তাদের সাতজনের একটি দল। দুই মাস ধরে এ কাজ চলছে। এখন শেষ মুহূর্তে কাজের চাপ বেড়েছে। অনেকটা নির্ঘুম রাত কাটছে। বৃহস্পতিবারের (আজ) মধ্যে প্রতিমায় রঙের কাজ শেষে তা আয়োজক সংগঠনকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এরপর পারিশ্রমিক বুঝে নিয়ে প্রিয়জনদের সান্নিধ্য পেতে দীর্ঘ দিন পর বাড়ি ফিরব।

দুর্গাপূজায় রাজধানীর পুরান ঢাকায় বরাবরই থাকে আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন। এবারও এর ব্যতিক্রম নয়। চোখধাঁধানো আলোকসজ্জা আর বৈচিত্র্যময় আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে সেখানে। ছোট পরিসরে অলি-গলিতে তৈরি হচ্ছে প্যান্ডেল। এখানকার বেশ কিছু পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে প্যান্ডেল ও আলোকসজ্জার কাজ প্রায় শেষ। পাশাপাশি প্রতিমা নির্মাণশিল্পীরাও তাদের কাজ গুছিয়ে এনেছেন।

তাঁতীবাজার জগন্নাথ মন্দিরে প্রতিমা নির্মাণ করছেন সাভারের শিমুলিয়ার শিল্পী বলাই পাল। আলাপকালে তিনি জানান, এবার ঢাকা, রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ১৬টি মণ্ডপে প্রতিমা নির্মাণ করছেন তিনি। ১০ জনের একটি দল বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে প্রতিমা নির্মাণ করছেন। কোনো কোনো মণ্ডপে নির্মাণ শেষ হয়েছে। পঞ্চাশোর্ধ্ব এই শিল্পী বলেন, ‘৩৭ বছর ধরে এ পেশায় আছি। কাজের চাপে একটু কষ্ট হলেও অভ্যস্ত হয়ে গেছি।’

শাঁখারীবাজারের পান্নিটোলা এলাকায় প্রতিমা নির্মাণ করছেন সুশীল নন্দী (৬০)। তিনি জানান, আয়োজক সংগঠনের তাড়া রয়েছে। যেভাবেই হোক শুক্রবারের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ করতে হবে। তাই সেটিকে সামনে রেখেই আমাদের কাজ চলছে।

ঢাকা মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোর রঞ্জন মণ্ডল দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘এবার রাজধানীতে ২৩৭টি স্থায়ী, অস্থায়ী মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। আয়োজক সংগঠনের সবার সঙ্গেই আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। নিরাপত্তাব্যবস্থাও জোরদার করা হচ্ছে। আমরা জানতে পেরেছি ইতিমধ্যে প্রায় সব পূজামণ্ডপের প্যান্ডেল, আলোকসজ্জা ও প্রতিমা নির্মাণের কাজ শেষ হয়ে এসেছে। যেগুলো বাকি থাকবে শুক্রবারের মধ্যে তা শেষ হবে। পাশাপাশি পূজার সার্বিক অবস্থা মনিটর করার জন্য সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি মনিটরিং সেল থাকবে।’

আজ দেবীর বোধন

এদিকে আজ বৃহস্পতিবার ‘বোধন’-এর মাধ্যমে শুরু হচ্ছে শারদীয় দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা। বোধন শব্দের অর্থ ‘জাগরণ’ বা ‘চেতনা’। বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙার জন্য পূজার্চ্চনা করা হবে। আজ সন্ধ্যাকালে পূজা ও দেবী বন্দনায় মেতে উঠবেন তার ভক্তরা। আগামীকাল শুক্রবার হবে মহাষষ্ঠী। ষষ্ঠীতে হবে দেবীর আমন্ত্রণ ও অধিবাস।