বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

দক্ষিণ এশিয়ার সংযোগ ও সৌহার্দ্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ৪ প্রস্তাব

নুরুজ্জামান লিটন :–

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ার বিদ্যমান ভূ-রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় চার দফা প্রস্তাব দিয়েছেন। এর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া সংঘবদ্ধ, বন্ধুত্বপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক অঞ্চল হিসেবে পারস্পরিক বৈশ্বিক কল্যাণে অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে।

বিগত কয়েক দশকে আমরা অনেক মহৎ আঞ্চলিক বিভিন্ন ধারণা ও উদ্যোগ দেখেছি। এগুলোর মধ্যে কিছু সফল হলেও অন্যগুলো সফল হয়নি। আগামী কয়েক দশকের দিকে দৃষ্টি রাখলে আমি মনে করি যে এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু নীতিমালা মেনে চলা উচিত হবে।তিনি বলেন, আমি বলতে চাই যে একটি সংযুক্ত, বন্ধুত্বপূর্ণ ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ অঞ্চল হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়া অন্য অঞ্চলের সঙ্গে সেতুবন্ধ গড়ে তুলতে সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার ভারতের নয়াদিল্লির হোটেল তাজ প্যালেসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ইন্ডিয়া ইকোনমিক সামিটের সমাপনী অধিবেশনে প্রস্তাব (চিন্তা-ভাবনা) দিয়ে বলেন, বিগত দশকগুলোতে আমরা অনেক উচ্চাকাঙ্ক্ষী চিন্তা-ভাবনা ও উদ্যোগ দেখেছি। এর কিছু সফল হয়েছে, অন্যগুলো বাস্তবতায় আসেনি। আমার দৃষ্টিতে আগামী দশকগুলোর জন্য নিম্নোক্ত চিন্তা-ভাবনা অনুসরণ করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, প্রথমত: আমাদের সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সৌহার্দ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়াস চালিয়ে যেতে হবে। সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুর মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। যুগ যুগ ধরে বহুত্ববাদ হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার শক্তি। এর মাধ্যমে আমরা ধর্ম, জাতি ও ভাষাগতভাবে দক্ষিণ এশিয়ার বৈচিত্র্যের উদযাপন করতে পারে। এটি হচ্ছে মৌলিক বিষয়।

দ্বিতীয় প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্রুত প্রবৃদ্ধির সময়ে সমাজে যেন বৈষম্য আরো বেড়ে না যায় তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। সম্পদ হতে হবে অন্তর্ভুক্তমূলক এবং তা তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে।

তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত সম্প্রদায় বা দেশ পেছনে পড়ে থাকবে না। আমাদের যুবকদের আকাঙ্ক্ষা ও চাহিদা অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে।দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও বিনিয়োগের মাধ্যমে অন্যদের হাত ধরতে হবে।সম্প্রদায় ও দেশসমূহের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা হচ্ছে চাবিকাঠি। আমাদের ভ্রান্ত ধারণা থেকে ঊর্ধ্বে উঠতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রবর্তিত ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এ নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ বিশ্ব পরিমণ্ডলে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় অব্যাহত অবদান রেখে চলছে। এ দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে সহায়তা করছে।

তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা ভারতের সঙ্গে গঙ্গা নদীর পানি বণ্টনের সমাধান করেছি। আমরা সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা নির্ধারণ করেছি।শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন ভারতের সঙ্গে আন্তঃনদী নাব্যতা উন্নয়নে কাজ করছে। আমরা ভারত থেকে ইন্টার গ্রিড সংযোগের মাধ্যমে বিদ্যুৎ কিনছি।

আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজের জন্য এ ধরনের সহযোগিতাপূর্ণ সংস্কৃতি প্রয়োজন। অপরদিকে আমাদের বেসরকারি খাত স্বচ্ছ ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে।

চতুর্থ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অবশ্যই বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মাধ্যমে আমাদের ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ন্ত্রণ করব। আমাদের জনগণের স্বার্থে ভারসাম্যপূর্ণ আঞ্চলিক বাস্তবতার আমরা প্রশংসা করব। আমরা স্বল্পমেয়াদি লাভের জন্য দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ বন্ধ করে দিতে পারি না।’

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে আমার বাবা, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির মুক্তি স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়াতে তাদের প্রতি জোরালো আহ্বান জানান।তিনি আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করতেন এবং তাদের ভালোবাসতেন। তিনি উপলব্ধি করেন যে বাংলাদেশের উন্নয়ন বজায় রাখতে হলে তাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফিরে এসে তিনি কলকাতায় ঘোষণা দেন যে প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং আমাদের জনগণের স্বার্থে গঠনমূলক নীতিমালা প্রণয়নে আমরা সহযোগিতা করব।’বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শীপূর্ণ চিন্তা-ভাবনায় অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা বিমসটেক, সার্ক, বিবিআইএন ও বিসিআইএমের মতো আঞ্চলিক সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি।

ডব্লিউইএফ সভাপতি বোর্জে ব্রেন্ডে’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্যানেলিস্ট ছিলেন সিঙ্গাপুরের উপ-প্রধানমন্ত্রী হেং সোয়ি কিট, সেকুইয়া ক্যাপিটাল ইন্ডিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক শৈলেন্দ্র সিং, অ্যাপোলো হসপিটাল এন্টারপ্রাইজের নির্বাহী সহসভাপতি শোবানা কারমিনেনি ও বুকিং ডট কম’র চেয়ারওমেন জিলিয়ান টানস।সঞ্চালকের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে সংযোগ প্রতিষ্ঠার ওপর অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

তার সরকার ১৯৬৫ সালের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া সংযোগগুলো পুনরায় চালুর জন্য চেষ্টা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় এ নিয়ে চিন্তা করি। আমরা এ অঞ্চল এবং এর বাইরের অঞ্চলের মধ্যে সেতুবন্ধ প্রতিষ্ঠা করতে পারি।’তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ এশিয়ান হাইওয়ে ও এশিয়ান রেলওয়ে প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করছে।

দারিদ্র্যকে এ অঞ্চলের অভিন্ন শত্রু অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘আমাদের, এ অঞ্চলের সব দেশের এ হুমকির বিরুদ্ধে একযোগে লড়াই করা উচিত। আমাদের এটি করার সামর্থ্য রয়েছে এবং আমরা নিশ্চয় এটি করব।’প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু এ অঞ্চলের সমৃদ্ধির জন্য সংযোগ বৃদ্ধির গুরুত্ব অনুধাবন করেছিলেন।

রোহিঙ্গা প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দেখা দিয়েছে।বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে দেশ স্বাধীন করেছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরেন।

সিঙ্গাপুরের উপ-প্রধানমন্ত্রী দারিদ্র্য বিমোচন ও সহযোগিতা বিনিময়ের মাধ্যমে এ অঞ্চলকে আরো শক্তিশালী করার জন্য একযোগে কাজ করতে শেখ হাসিনার ধারণার প্রশংসা করেন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

যশোরে বায়েজিদ হত্যা মামলার আরও ২ আসামি গ্রেপ্তার

দক্ষিণ এশিয়ার সংযোগ ও সৌহার্দ্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ৪ প্রস্তাব

প্রকাশের সময় : ১০:৩৮:২৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৪ অক্টোবর ২০১৯
নুরুজ্জামান লিটন :–

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষিণ এশিয়ার বিদ্যমান ভূ-রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় চার দফা প্রস্তাব দিয়েছেন। এর মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়া সংঘবদ্ধ, বন্ধুত্বপূর্ণ ও প্রতিযোগিতামূলক অঞ্চল হিসেবে পারস্পরিক বৈশ্বিক কল্যাণে অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে।

বিগত কয়েক দশকে আমরা অনেক মহৎ আঞ্চলিক বিভিন্ন ধারণা ও উদ্যোগ দেখেছি। এগুলোর মধ্যে কিছু সফল হলেও অন্যগুলো সফল হয়নি। আগামী কয়েক দশকের দিকে দৃষ্টি রাখলে আমি মনে করি যে এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছু নীতিমালা মেনে চলা উচিত হবে।তিনি বলেন, আমি বলতে চাই যে একটি সংযুক্ত, বন্ধুত্বপূর্ণ ও প্রতিযোগিতাপূর্ণ অঞ্চল হওয়ায় দক্ষিণ এশিয়া অন্য অঞ্চলের সঙ্গে সেতুবন্ধ গড়ে তুলতে সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার ভারতের নয়াদিল্লির হোটেল তাজ প্যালেসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ইন্ডিয়া ইকোনমিক সামিটের সমাপনী অধিবেশনে প্রস্তাব (চিন্তা-ভাবনা) দিয়ে বলেন, বিগত দশকগুলোতে আমরা অনেক উচ্চাকাঙ্ক্ষী চিন্তা-ভাবনা ও উদ্যোগ দেখেছি। এর কিছু সফল হয়েছে, অন্যগুলো বাস্তবতায় আসেনি। আমার দৃষ্টিতে আগামী দশকগুলোর জন্য নিম্নোক্ত চিন্তা-ভাবনা অনুসরণ করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, প্রথমত: আমাদের সমাজের প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সৌহার্দ্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়াস চালিয়ে যেতে হবে। সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘুর মানসিকতা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। যুগ যুগ ধরে বহুত্ববাদ হচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার শক্তি। এর মাধ্যমে আমরা ধর্ম, জাতি ও ভাষাগতভাবে দক্ষিণ এশিয়ার বৈচিত্র্যের উদযাপন করতে পারে। এটি হচ্ছে মৌলিক বিষয়।

দ্বিতীয় প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্রুত প্রবৃদ্ধির সময়ে সমাজে যেন বৈষম্য আরো বেড়ে না যায় তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। সম্পদ হতে হবে অন্তর্ভুক্তমূলক এবং তা তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে।

তিনি বলেন, স্বল্পোন্নত সম্প্রদায় বা দেশ পেছনে পড়ে থাকবে না। আমাদের যুবকদের আকাঙ্ক্ষা ও চাহিদা অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে।দক্ষিণ এশিয়ায় আমাদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও বিনিয়োগের মাধ্যমে অন্যদের হাত ধরতে হবে।সম্প্রদায় ও দেশসমূহের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা হচ্ছে চাবিকাঠি। আমাদের ভ্রান্ত ধারণা থেকে ঊর্ধ্বে উঠতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রবর্তিত ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়’ এ নীতি অনুসরণ করে বাংলাদেশ বিশ্ব পরিমণ্ডলে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠায় অব্যাহত অবদান রেখে চলছে। এ দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের সব দেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে সহায়তা করছে।

তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা ভারতের সঙ্গে গঙ্গা নদীর পানি বণ্টনের সমাধান করেছি। আমরা সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা নির্ধারণ করেছি।শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন ভারতের সঙ্গে আন্তঃনদী নাব্যতা উন্নয়নে কাজ করছে। আমরা ভারত থেকে ইন্টার গ্রিড সংযোগের মাধ্যমে বিদ্যুৎ কিনছি।

আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজের জন্য এ ধরনের সহযোগিতাপূর্ণ সংস্কৃতি প্রয়োজন। অপরদিকে আমাদের বেসরকারি খাত স্বচ্ছ ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে পরস্পরের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছে।

চতুর্থ প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অবশ্যই বন্ধুত্ব ও সহযোগিতার মাধ্যমে আমাদের ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতা নিয়ন্ত্রণ করব। আমাদের জনগণের স্বার্থে ভারসাম্যপূর্ণ আঞ্চলিক বাস্তবতার আমরা প্রশংসা করব। আমরা স্বল্পমেয়াদি লাভের জন্য দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থ বন্ধ করে দিতে পারি না।’

তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে আমার বাবা, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির মুক্তি স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়াতে তাদের প্রতি জোরালো আহ্বান জানান।তিনি আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু জনগণের ক্ষমতায় বিশ্বাস করতেন এবং তাদের ভালোবাসতেন। তিনি উপলব্ধি করেন যে বাংলাদেশের উন্নয়ন বজায় রাখতে হলে তাদের প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফিরে এসে তিনি কলকাতায় ঘোষণা দেন যে প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠায় এবং আমাদের জনগণের স্বার্থে গঠনমূলক নীতিমালা প্রণয়নে আমরা সহযোগিতা করব।’বঙ্গবন্ধুর দূরদর্শীপূর্ণ চিন্তা-ভাবনায় অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা বিমসটেক, সার্ক, বিবিআইএন ও বিসিআইএমের মতো আঞ্চলিক সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছি।

ডব্লিউইএফ সভাপতি বোর্জে ব্রেন্ডে’র সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্যানেলিস্ট ছিলেন সিঙ্গাপুরের উপ-প্রধানমন্ত্রী হেং সোয়ি কিট, সেকুইয়া ক্যাপিটাল ইন্ডিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক শৈলেন্দ্র সিং, অ্যাপোলো হসপিটাল এন্টারপ্রাইজের নির্বাহী সহসভাপতি শোবানা কারমিনেনি ও বুকিং ডট কম’র চেয়ারওমেন জিলিয়ান টানস।সঞ্চালকের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও অন্যান্য অঞ্চলের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে সংযোগ প্রতিষ্ঠার ওপর অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

তার সরকার ১৯৬৫ সালের পর বন্ধ হয়ে যাওয়া সংযোগগুলো পুনরায় চালুর জন্য চেষ্টা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় এ নিয়ে চিন্তা করি। আমরা এ অঞ্চল এবং এর বাইরের অঞ্চলের মধ্যে সেতুবন্ধ প্রতিষ্ঠা করতে পারি।’তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ এশিয়ান হাইওয়ে ও এশিয়ান রেলওয়ে প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করছে।

দারিদ্র্যকে এ অঞ্চলের অভিন্ন শত্রু অভিহিত করে তিনি বলেন, ‘আমাদের, এ অঞ্চলের সব দেশের এ হুমকির বিরুদ্ধে একযোগে লড়াই করা উচিত। আমাদের এটি করার সামর্থ্য রয়েছে এবং আমরা নিশ্চয় এটি করব।’প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু এ অঞ্চলের সমৃদ্ধির জন্য সংযোগ বৃদ্ধির গুরুত্ব অনুধাবন করেছিলেন।

রোহিঙ্গা প্রশ্নে শেখ হাসিনা বলেন, বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের জন্য বোঝা হয়ে দেখা দিয়েছে।বঙ্গবন্ধু দেশের মানুষকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করে মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে দেশ স্বাধীন করেছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা মানুষের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করতে বঙ্গবন্ধুর পদাঙ্ক অনুসরণ করে তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরেন।

সিঙ্গাপুরের উপ-প্রধানমন্ত্রী দারিদ্র্য বিমোচন ও সহযোগিতা বিনিময়ের মাধ্যমে এ অঞ্চলকে আরো শক্তিশালী করার জন্য একযোগে কাজ করতে শেখ হাসিনার ধারণার প্রশংসা করেন।