বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অসাম্প্রদায়িক চেতনায় এগিয়ে যাবে দেশ: প্রধানমন্ত্রী

মো:ইদ্রিস আলী :-

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে এখন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় আছে। ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠাই আওয়ামী লীগের বড় অর্জন। আমরা চাই অসাম্প্রদায়িক চেতনায় দেশ এগিয়ে যাক, শান্তি ফিরে আসুক। শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই দেশ থেকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও মাদকের মতো সব ব্যাধি নির্মূল করা হবে। বাংলাদেশে শান্তি বজায় থাকবে, সমৃদ্ধি ও উন্নতি হবে এবং দেশের অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে।

সোমবার বিকালে শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান মঠ ও মিশন প্রধান স্বামী পূর্ণাত্মানন্দসহ মিশনের কর্মকর্তারা। এ সময় তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।

স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ তার লেখা বই প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী মন্দিরে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। শেখ হাসিনা বলেন, সব ধর্মের মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেই আরও এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। অসাম্প্রদায়িক চেতনার এই দেশে আমরা ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সবাই এক হয়ে পথ চলি। আমরা সব সময় বলি ধর্ম যার যার উৎসব সবার। আমাদের উৎসবগুলোতে সবাই আমরা এক হয়ে উদযাপন করি। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একটা অর্জন। আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে চলতে শিখেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সব ধর্মাবলম্বীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে বুকের রক্ত বিলিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছে। কাজেই সেই স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা সব সময় চেয়েছি প্রতিটি ধর্মের মানুষ তার নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে, সম্মানের সঙ্গে পালন করবে।

সেই পরিবেশটা সৃষ্টি করা এবং আমরা তা করতে পেরেছি। অন্তত এটুকু বলতে পারি, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন সেই সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, মানুষের আর্থিক সচ্ছলতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের মনে আনন্দ উৎসব আছে বলেই আজ পূজার সংখ্যা বেড়েছে। আমরা সব ধর্মের মানুষ উৎসব পালন করি।

শেখ হাসিনা বলেন, গত ১০ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়, শুধু ঢাকা শহর নয়, প্রতিটি জায়গায় পূজা-পার্বণ চমৎকারভাবে হচ্ছে। আরেকটি উৎসব আমরা করি সেটা হল- পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ। ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষ সবাই সেদিনটি উদযাপন করি। আমরা পহেলা বৈশাখে উৎসব ভাতা দিচ্ছি।

তিনি বলেন, যখন আমাদের ঈদের জামাত হয় তখন হিন্দু সম্প্রদায়ের যুব সমাজ কিন্তু নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে। আবার যখন পূজা-পার্বণ হয় তখন আমাদের মুসলমান যুবকরা সেখানে উপস্থিত থাকে, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে। এই সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশ আমরা সৃষ্টি করতে পারি। সব ধর্মের মূল কথাই হচ্ছে- শান্তি, মানবতা।

সেই লক্ষ্য নিয়েই বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ সেভাবে এগিয়ে যাবে, এটা আমরা বিশ্বাস করি। অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ও পুলিশ প্রধান জাবেদ পাটোয়ারী বক্তব্য দেন।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরে প্রধানমন্ত্রী : রামকৃষ্ণ মিশন থেকে প্রধানমন্ত্রী ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে যান। ঢাকেশ্বরীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার আদর্শ ধারণ করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। যেখানে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সব ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের ধর্ম সমানভাবে পালন করতে পারবে। এজন্য আমরা সব ধর্মের অনুষ্ঠানে সবাই যোগ দিই। তিনি বলেন, প্রতিটি ধর্মের মর্মবাণী একটাই। সেখানে সৌহার্দ্য, সহনশীলতা, সহমর্মিতা, শান্তির কথা বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। বাবা-মা-ভাই হারানোর ব্যথা বুকে নিয়েও কাজ করে যাচ্ছি। অসহায়, ছিন্নমূল মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমার বাবা দেশ স্বাধীন করেছিলেন। স্বাধীন দেশে প্রতিটি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাকে বাঁচতে দেয়নি। মানুষের সুন্দর জীবন পাওয়ার জন্য কাজ করছি। যার সুফল মানুষ পেতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।

এখন বাংলাদেশকে সবাই সম্মানের চোখে দেখে। কেউ কেউ অনুসরণও করতে চায়। এটা অর্জন করতে হয়েছে দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইনশ্ঙ্খৃলা বাহিনী দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, যাতে শান্তিপূর্ণভাবে আপনারা ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে পারেন। কোনোরকম অস্বাভাবিক ঘটনা না ঘটে। সে কারণে ভাগে ভাগে পূজা না করে সম্মিলিতভাবে করলে ভালো হবে। নিরাপত্তা বিধানে সহজ হয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, স্থানীয় এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিম, পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের ত্রাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শ্রী মিলন কান্তি দত্ত, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাবেক এমপি ডা. মোস্তফা জালালসহ আওয়ামী লীগ ও সনাতন ধর্মাবম্বলীর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

অসাম্প্রদায়িক চেতনায় এগিয়ে যাবে দেশ: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশের সময় : ০২:২৭:১৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর ২০১৯
মো:ইদ্রিস আলী :-

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দেশে এখন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় আছে। ধর্মীয় সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠাই আওয়ামী লীগের বড় অর্জন। আমরা চাই অসাম্প্রদায়িক চেতনায় দেশ এগিয়ে যাক, শান্তি ফিরে আসুক। শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই দেশ থেকে দুর্নীতি, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও মাদকের মতো সব ব্যাধি নির্মূল করা হবে। বাংলাদেশে শান্তি বজায় থাকবে, সমৃদ্ধি ও উন্নতি হবে এবং দেশের অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে।

সোমবার বিকালে শারদীয় দুর্গোৎসব উপলক্ষে রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনে পৌঁছলে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান মঠ ও মিশন প্রধান স্বামী পূর্ণাত্মানন্দসহ মিশনের কর্মকর্তারা। এ সময় তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানো হয়।

স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ তার লেখা বই প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী মন্দিরে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। শেখ হাসিনা বলেন, সব ধর্মের মানুষের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেই আরও এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। অসাম্প্রদায়িক চেতনার এই দেশে আমরা ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষে সবাই এক হয়ে পথ চলি। আমরা সব সময় বলি ধর্ম যার যার উৎসব সবার। আমাদের উৎসবগুলোতে সবাই আমরা এক হয়ে উদযাপন করি। এটাই হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় একটা অর্জন। আমরা অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে চলতে শিখেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সব ধর্মাবলম্বীরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করে বুকের রক্ত বিলিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছে। কাজেই সেই স্বাধীন বাংলাদেশে আমরা সব সময় চেয়েছি প্রতিটি ধর্মের মানুষ তার নিজ নিজ ধর্ম স্বাধীনভাবে, সম্মানের সঙ্গে পালন করবে।

সেই পরিবেশটা সৃষ্টি করা এবং আমরা তা করতে পেরেছি। অন্তত এটুকু বলতে পারি, আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন সেই সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তিনি বলেন, মানুষের আর্থিক সচ্ছলতাও বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের মনে আনন্দ উৎসব আছে বলেই আজ পূজার সংখ্যা বেড়েছে। আমরা সব ধর্মের মানুষ উৎসব পালন করি।

শেখ হাসিনা বলেন, গত ১০ বছর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায়, শুধু ঢাকা শহর নয়, প্রতিটি জায়গায় পূজা-পার্বণ চমৎকারভাবে হচ্ছে। আরেকটি উৎসব আমরা করি সেটা হল- পহেলা বৈশাখ, বাংলা নববর্ষ। ধর্ম, বর্ণ, নির্বিশেষ সবাই সেদিনটি উদযাপন করি। আমরা পহেলা বৈশাখে উৎসব ভাতা দিচ্ছি।

তিনি বলেন, যখন আমাদের ঈদের জামাত হয় তখন হিন্দু সম্প্রদায়ের যুব সমাজ কিন্তু নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে। আবার যখন পূজা-পার্বণ হয় তখন আমাদের মুসলমান যুবকরা সেখানে উপস্থিত থাকে, নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে। এই সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশ আমরা সৃষ্টি করতে পারি। সব ধর্মের মূল কথাই হচ্ছে- শান্তি, মানবতা।

সেই লক্ষ্য নিয়েই বাংলাদেশ গড়ে উঠেছে। বাংলাদেশ সেভাবে এগিয়ে যাবে, এটা আমরা বিশ্বাস করি। অনুষ্ঠানে স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ ও পুলিশ প্রধান জাবেদ পাটোয়ারী বক্তব্য দেন।

ঢাকেশ্বরী মন্দিরে প্রধানমন্ত্রী : রামকৃষ্ণ মিশন থেকে প্রধানমন্ত্রী ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পূজামণ্ডপ পরিদর্শনে যান। ঢাকেশ্বরীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার আদর্শ ধারণ করে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। যেখানে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় সব ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে তাদের ধর্ম সমানভাবে পালন করতে পারবে। এজন্য আমরা সব ধর্মের অনুষ্ঠানে সবাই যোগ দিই। তিনি বলেন, প্রতিটি ধর্মের মর্মবাণী একটাই। সেখানে সৌহার্দ্য, সহনশীলতা, সহমর্মিতা, শান্তির কথা বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। বাবা-মা-ভাই হারানোর ব্যথা বুকে নিয়েও কাজ করে যাচ্ছি। অসহায়, ছিন্নমূল মানুষগুলোর ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আমার বাবা দেশ স্বাধীন করেছিলেন। স্বাধীন দেশে প্রতিটি মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাকে বাঁচতে দেয়নি। মানুষের সুন্দর জীবন পাওয়ার জন্য কাজ করছি। যার সুফল মানুষ পেতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।

এখন বাংলাদেশকে সবাই সম্মানের চোখে দেখে। কেউ কেউ অনুসরণও করতে চায়। এটা অর্জন করতে হয়েছে দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইনশ্ঙ্খৃলা বাহিনী দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, যাতে শান্তিপূর্ণভাবে আপনারা ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে পারেন। কোনোরকম অস্বাভাবিক ঘটনা না ঘটে। সে কারণে ভাগে ভাগে পূজা না করে সম্মিলিতভাবে করলে ভালো হবে। নিরাপত্তা বিধানে সহজ হয়।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, স্থানীয় এমপি হাজী মোহাম্মদ সেলিম, পূজা উদযাপন কমিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের ত্রাণ সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী, পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি শ্রী মিলন কান্তি দত্ত, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, সাবেক এমপি ডা. মোস্তফা জালালসহ আওয়ামী লীগ ও সনাতন ধর্মাবম্বলীর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।