আলহাজ্ব হাফিজুর রহমান : স্টাফ রিপোর্টার :=
বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়া জামিন পাবেন বলে আশা করছেন। সম্প্রতি তার সঙ্গে পরিবারের কয়েকজন সদস্য ও দলীয় সাংসদ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে দেখা করতে যান। তাদের সঙ্গে জামিনের বিষয়ে কথা হয়েছে বিএনপিনেত্রীর। তিনি আশা করছেন তার জামিন মিলবে। খালেদার জামিন পাওয়ার আশা শেষ হয়ে যায়নি বলে মনে করছেন তার আইনজীবীরাও। তাদের মতে, সাজা হওয়া দুটি মামলায় জামিন পেলেই কারাগার থেকে মুক্তি পাবেন বিএনপিপ্রধান। দুর্নীতির দুই মামলায় সাজা নিয়ে দুইবছর ধরে কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়া। বিচার চলছে আরো কয়েকটি মামলার। শুরু থেকে আইনজীবীরা দ্রুত তার মুক্তির কথা বলে এলেও এখনো তেমন কোনো লক্ষণ নেই। আর দলের নেতারা আন্দোলনের মাধ্যমে মুক্তির হুঁশিয়ারি দিলেও তেমন কোনো কর্মসূচিও নেই দলটির।
নিয়মিত খালেদা জিয়ার খোঁজ রক্ষাকারী একটি সূত্রে জানা যায়, নেত্রীর মুক্তিতে দলের শীর্ষ নেতারা এবং আইনজীবীরা হতাশায় থাকলেও জামিনের আশা ছাড়ছেন না খোদ বেগম খালেদা জিয়া। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক অঙ্গণে আলোচনা চললেও প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে মোটেও আগ্রহী নন তিনি। বরং এ নিয়ে কথা বলে তার তোপের মুখে পড়েছেন একজন সাংসদ।
সম্প্রতি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন তার পরিবারের এমন কয়েকজনের বরাতে জানা যায়, খালেদা জিয়া তার জামিন হবে বলেই বিশ^াসের কথা জানিয়েছেন। তারা বঙ্গবন্ধু হাসপাতালে খালেদার সঙ্গে দীর্ঘ সময় কথা বলেন। ওই সময় খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে তারা আলোচনা করেন।
চলতি মাসের শুরুর দিকে দলের সাতজন বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে কারা হেফাজতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। এছাড়া তার বোন, ভাই এবং স্বজনরা দুই দফা সম্প্রতি দেখা করেছেন।
দলীয় সংসদ সদস্যদের সঙ্গে আলাপে খালেদা জিয়া জামিনের বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। একজন সাংসদ বলেন, “জামিনের বিষয়ে কথা এলে তিনি বলেন ‘জামিন হবে। ওরা (সরকার) আমাকে কতদিন আর আটকে রাখবে।’ আইনি প্রক্রিয়া তরান্বিত করতে দেখা করতে যাওয়া সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে আইনজীবীদের নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।”
এদিকে তবে ক্রমেই অবনতি হওয়ায় তার শারীরিক অবস্থা সবাইকে চিন্তায় ফেলেছে। যে কোনো সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। পরিবারের সদস্য ও সংসদ সদস্যরা যারা হাসপাতালে দেখে এসেছেন সবারই ভাষ্য, মোটেও ভালো নেই খালেদা জিয়া। তার দুই হাত অনেকটা অবশ হয়ে গেছে। পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াতে পারেন না। এমনকি নিজের খাবারও নিজ হাতে খেতে পারেন না তিনি। চেহারা দেখে তাকে চেনাও কষ্টকর।
নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক একজন সাংসদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সত্যি বলতে কি মস্তিষ্কটাই নেত্রীর (খালেদা জিয়ার) ঠিক আছে। শরীরের বাকি অঙ্গপ্রতঙ্গ স্বাভাবিক নেই। শুধুমাত্র মানসিক জোরে বেঁচে আছেন। হঠাৎ করে তার চেহারা দেখলে চিনবেন না।’
জানা গেছে, নাইকো, গ্যাটকো, বড় পুকুরিয়া কয়লা খনিসহ সুপ্রিম কোর্ট ও নি¤œ আদালত মিলে খালেদার বিরুদ্ধে যেসব মামলা বিচারাধীন তার মধ্যে দ- হওয়া জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট ও জিয়া দাতব্য ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জামিনের অপেক্ষায় তার আইনজীবীরা। এ দুটোতে জামিন হলেই মুক্তি পেতে পারেন তিনি। গতকালও জিয়া চ্যারিটাবল ট্রাস্ট মামলায় জামিন আবেদন করা হয়েছে উচ্চ আদালতে।
গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি ৭৫ বছর বয়সী খালেদা। চিকিৎসার জন্য গত এপ্রিল থেকে তিনি রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে। এখানেই গেল ১১ অক্টোবর সাক্ষাত শেষে খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম জানান, ‘তার (খালেদা) শারীরিক অবস্থা আগের তুলনায় অনেক বেশি খারাপ। নিজ হাতে খাবারও তুলে খেতে পারছেন না। অন্যের সাহায্য ছাড়া দাঁড়াতেও পারেন না।’
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাংসদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘উনি (খালেদা জিয়া) কেমন আছেন তা স্বচক্ষে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। চলতে পারেন না, খেতে পারেন না। সামনে কি হবে আল্লাহ জানেন। দোয়া করা ছাড়া উপায় নেই। মুক্তির তো কোনো লক্ষণ নেই।’
আর জিএম সিরাজ এ বিষয়ে বলেন, ‘নেত্রীর মতো আমরাও আশাবাদী তার মুক্তি হবে। কিন্তু সেটা যত আগে তার জন্য তত ভালো হবে।’
উল্লেখ্য, জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া কারাবন্দি আছেন। পুরান ঢাকায় পুরনো কারাগার থেকে চিকিৎসার জন্য তাকে বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে তিনি এই হাসপাতালের কেবিন ব্লকের ৬২১ নং কেবিনে চিকিৎসাধীন।