বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

খেলা ছেড়ে আন্দোলনে সাকিব-তামিমরা

নুরুজ্জামান লিটন :=

পারিশ্রমিকসহ ১১টি দাবি নিয়ে জোট বেঁধেছেন দেশের সব ক্রিকেটার। তাদের দাবি যতদিন না মানা হয় ততদিন ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক কোনো টুর্নামেন্টে অংশ নেবেন না খেলোয়াড়রা। সোমবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলন করে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন সাকিব-তামিমরা।

শুরুতেই নিজেদের দাবি নিয়ে কথা বলেন জাতীয় দলে ‘সাবেক’ হয়ে যাওয়া তারকা ক্রিকেটার নাঈম ইসলাম। দেশের ক্রিকেটে ছক্কা নাঈম হিসেবে খ্যাত এ ক্রিকেটার বলেন, ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) কোনো কার্যক্রম না থাকায় বর্তমান কমিটিকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। কোয়াবের সভাপতি কে হবেন, কখন কিভাবে নির্বাচন হবে তা আমরা প্লেয়াররাই নির্ধারণ করব।

জাতীয় দলের অলরাউন্ডার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদে বলেন, প্রিমিয়ার লিগ আগের মতো করতে হবে। নিজেদের ডিল করতে দিতে হবে। বিগত বছরগুলোতে প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে ক্রিকেটারদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। প্লেয়ারদের একটা পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে দেয়া হয়। আগে আমরা আমাদের ইচ্ছা মতো কোন দলে খেলব কেমন পারিশ্রমিক হবে তা আমরা নির্ধারণ করতে পারতাম। সেই সুযোগ দিতে হবে।

জাতীয় দলের উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম বলেন, এ বছর জানি আলাদাভাবে বিপিএল হচ্ছে। পরের বছর থেকে যেন সেই আগের নিয়মেই বিপিএল হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের চাওয়া হল বিদেশি প্লেয়ারদের যে পারিশ্রমিক দেয়া হয় সে অনুযায়ী লোকাল ক্রিকেটারদের সম্মানি দিতে হবে।

বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেন, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আমাদের যে ম্যাচ ফি ১ লাখ টাকা করে দিতে হবে। আমাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের সেলারি অনেক কম। তাদের সেলারি পঞ্চাশ শতাংশ বাড়াতে হবে। প্লেয়ারদের প্রাকটিস সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে, সেটা জিমনেশিয়াম, ইনডোর মাঠ সব জায়গায়। ১২ মাস কোচ ফিজিও এবং ট্রেনারদের অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে রাখতে হবে। প্রতিটি বিভাগেই ট্রেনিংসের সুযোগ-সুবধিা করে দিতে হবে। আমরা জানি এই সুযোগ-সুবিধাগুলো আজ কালের মধ্যে হবে না। পরিবর্তি টুর্নামেন্ট থেকে যেন হয়।

বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার আরও বলেন, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আমরা যে বল দিয়ে খেলি সেটা আন্তর্জাতিক মানম্পন্ন নয়। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক মানের বল নিতে হবে। বিসিবি ক্রিকেটারদের কাছ থেকে যে ফিটনেস দাবি করছে সে জন্য ডেলি এলাউন্স বাড়াতে হবে। ১৫০০ টাকায় জিম আর সুইমিংপুল আছে এমন হোটেলে থাকা-খাওয়া অসম্ভব। চারদিনের ম্যাচে অনেক কষ্ট হয়। এটা কাভার করতে হলে জিম আর সুইমিংপুল লাগবেই। এসব বিবেচনা করে যে পরিমাণ টাকা দিলে ভালো হয় সেটা করতে হবে।

এ ছাড়া ঢাকার বাইরে রাজশাহী বা চট্টগ্রাম খেলতে গেলে ক্রিকেটারদের মাত্র ২৫০০ টাকা ট্রাভেলস খরচ হিসেবে দেয়া হয়। এই টাকায় ঢাকা থেকে রাজশাহী বা কক্সবাজার যেতে হলে বাস ছাড়া কোনো উপায় নেই। বাসে গিয়ে ভ্রমণ ক্লান্তির মধ্যে ভালো খেলা কখনও সম্ভব না। আমরা যাতায়াত ভাড়া চাই না। ক্রিকেটারদের বিমানের টিকিট দিতে হবে। তাছাড়া প্লেয়াররা যে বাসে মাঠে যায় সেই বাসে যাতে এসি থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

জাতীয় দলে ‘সাবেক’ হয়ে যাওয়া তারকা ক্রিকেটার এনামুল হক জুনিয়র বলেন, জাতীয় দলের চুক্তিবদ্ধ প্লেয়ারদের সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০ জন করতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের চুক্তিবদ্ধ প্লেয়ারদের সংখ্যা অনেক কম। গত তিন বছর ধরে প্লেয়ারদের বেতন বাড়েনি তাদের বেতন বাড়াতে হবে। দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল বলেন, আমরা শুধু ক্রিকেটারদের নিয়ে কথা বলছি না। আপনি যদি গ্রাউন্ডসম্যানের কথা চিন্তা করেন, একজন গ্রাউন্ডসম্যান সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এক মাস পরিশ্রম করে মাত্র ৫ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পায়। এটা খুবই নগণ্য। তাছাড়া দেশীয় কোচদের তেমন মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। বিদেশি একজন কোচ যে পারিশ্রমিক পান সেটা দেশের ২০ জন কোচকেও দেয়া হচ্ছে না। এমনও হয়েছে, সম্প্রতি বাংলাদেশ বিদেশ ট্যুরে দেশীয় কোচের অধীনে খুব ভালো করেছে। অথচ পরের ট্যুরে তাকে আর রাখা হয়নি। আমি কারো নাম উল্লেখ্য করতে চাই না।

তামিম আরও বলেন, আম্পায়ারিংকে প্রপেশনাল হিসেবে নিতে হলে তাকেও ন্যায্য পারিশ্রমিক দিতে হবে। এছাড়া ফিজিও এবং ট্রেনার যারা আছেন তাদেরও যথাযথ সম্মানি দিতে হবে। এখনই আমাদের সেরা সময় দেশীয় কোচিং স্টাফসহ অন্যদের সম্মান জানানোর।

জাতীয় দলের তারকা ওপেনার এনামুল হক বিজয় বলেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে আমরা দুইটা চারদিনের টুর্নামেন্ট খেলে থাকি। আর প্রিমিয়ার লিগে খেলি মাত্র একটা (৫০ ওভারের) টুর্নামেন্ট। সেখানে আরও একটা টুর্নামেন্ট বাড়াতে হবে। আর বিপিএলে আমরা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে একটা টুর্নামেন্ট খেলে থাকি। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আর কোনো টুর্নামেন্ট হয় না। বিপিএলের আগে আমাদের আরও একটা টুর্নামেন্ট খেলা উচিত।

জাতীয় দলের উইকেটকিটার ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান বলেন, ঘরোয়া টুর্নামেন্টের জন্য নির্ধাতির একটা ক্যালেন্ডার থাকতে হবে। এটা থাকলে টুর্নামেন্ট শুরুর আগ থেকেই আমরা প্রস্তুতি নিতে পারব।

জাতীয় দলে ‘সাবেক’ হয়ে যাওয়া ওপেনার জুনায়েদ সিদ্দিকী বলেন, বিপিএল এবং প্রিমিয়ার লিগে আমাদের যে পারিশ্রমিক দেয়ার কথা কিন্তু কিছু ফ্রাঞ্চাইজি এবং ক্লাব তা ঠিক মতো পরিশোধ করছে না। প্রিমিয়ার লিগের গত আসরে সব ক্লাবই প্লেয়ারদের পারিশ্রমিক পরিশোধ করেছে। কিন্তু আমরা যারা ব্রাদার্স ইউনিয়নে খেলেছি তাদের ৪০ শতাশং পারিশ্রমিক এখনও পরিশোধ করা হয়নি। এটা নিয়ে বোর্ডকেও অনেকবার বলা হয়েছে কোনো সমাধান হয়নি। একজন জাতীয় দলের ক্রিকেটার হিসেবে এটা কখনই কামনা করি না।

জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটার ফরহাদ রেজা বলেন, ফ্রঞ্চাইজি লিগ দুটোর বেশি খেলা যাবে না এ নিয়ম তুলে দিতে হবে। সুযোগ থাকলে সবাই খেলবে।

এরপর সাকিব আল হাসান দ্বিতীয় দফায় বলেন, ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়েই যেহেতু অনেক কথা হচ্ছে। সেহেতু বলতে চাই, প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ এবং তৃতীয় বিভাগের খেলার মান আমরা সবাই জানি। পত্র-পত্রিকায়ও অনেক সময় এসেছে, খেলতে যাওয়ার আগেই খেলোয়াড়রা যেনে যায় কোন দল জিতবে আর কোন দল হারবে। এটা আসলে খুবই দুঃখজনক। এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। তার কারণ একটা ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারে অনেক বিষয় থাকে। একটা ভালো প্লেয়ার ভালো বলে সে আউট হতেই পারে। কিন্তু সে যদি একটা বাজে সিদ্ধান্তের কারণে আউট হয় তাহলে সে খেলার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। এতে করে আমাদের ক্রিকেটার তৈরির যে পাইপলাইন আছে তা বন্ধ হয়ে যাবে।

সাকিব আরও বলেন, মহিলা দলের ক্রিকেটারদের আমরা এখানে অন্তর্ভুক্ত করতে পারিনি। তাদের হয়ত দাবি-দাওয়া আছে। তারা আমাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করলে তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরা হবে। এ ছাড়া অনূর্ধ্ব-১৯ দল যেহেতু বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে তাদের আমরা এখানে অন্তর্ভুক্ত করছি না। বাকি সবাই আমাদের সঙ্গেই আছেন।

সাকিব বলেন, যতদিন পর্যন্ত আমাদের দাবি পূরণ না হবে আমরা আর ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চাচ্ছি না।

আগামী ৩ নভেম্বর ভারতের মাঠে টি-টোয়েন্টি ম্যাচের মধ্য দিয়ে সফরের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে বাংলাদেশের। তার আগে ২৫ অক্টোবর জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের ক্যাম্প শুরু হবে।

ক্রিকেট বোর্ড যদি আপনাদের দাবি না মানে তাহলে কি ক্যাম্পে যোগ দেবেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে সাকিব বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দাবি মেনে নেয়া না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা খেলায় মনোনিবেশ করব না। আমরাও খেলতে চাই। আমরা হয়ত আর দুই তিন বছর জাতীয় দলে খেলব। কিন্তু যারা ভবিষ্যতে আসবে তারা যাতে এসব সমস্যার সম্মুখীন না হয় সে জন্যই আমাদের এ দাবি।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

খেলা ছেড়ে আন্দোলনে সাকিব-তামিমরা

প্রকাশের সময় : ০৮:১৪:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ অক্টোবর ২০১৯
নুরুজ্জামান লিটন :=

পারিশ্রমিকসহ ১১টি দাবি নিয়ে জোট বেঁধেছেন দেশের সব ক্রিকেটার। তাদের দাবি যতদিন না মানা হয় ততদিন ঘরোয়া এবং আন্তর্জাতিক কোনো টুর্নামেন্টে অংশ নেবেন না খেলোয়াড়রা। সোমবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলন করে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন সাকিব-তামিমরা।

শুরুতেই নিজেদের দাবি নিয়ে কথা বলেন জাতীয় দলে ‘সাবেক’ হয়ে যাওয়া তারকা ক্রিকেটার নাঈম ইসলাম। দেশের ক্রিকেটে ছক্কা নাঈম হিসেবে খ্যাত এ ক্রিকেটার বলেন, ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) কোনো কার্যক্রম না থাকায় বর্তমান কমিটিকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। কোয়াবের সভাপতি কে হবেন, কখন কিভাবে নির্বাচন হবে তা আমরা প্লেয়াররাই নির্ধারণ করব।

জাতীয় দলের অলরাউন্ডার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদে বলেন, প্রিমিয়ার লিগ আগের মতো করতে হবে। নিজেদের ডিল করতে দিতে হবে। বিগত বছরগুলোতে প্রিমিয়ার লিগ নিয়ে ক্রিকেটারদের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে। প্লেয়ারদের একটা পারিশ্রমিক নির্ধারণ করে দেয়া হয়। আগে আমরা আমাদের ইচ্ছা মতো কোন দলে খেলব কেমন পারিশ্রমিক হবে তা আমরা নির্ধারণ করতে পারতাম। সেই সুযোগ দিতে হবে।

জাতীয় দলের উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহিম বলেন, এ বছর জানি আলাদাভাবে বিপিএল হচ্ছে। পরের বছর থেকে যেন সেই আগের নিয়মেই বিপিএল হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের চাওয়া হল বিদেশি প্লেয়ারদের যে পারিশ্রমিক দেয়া হয় সে অনুযায়ী লোকাল ক্রিকেটারদের সম্মানি দিতে হবে।

বাংলাদেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান বলেন, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আমাদের যে ম্যাচ ফি ১ লাখ টাকা করে দিতে হবে। আমাদের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের সেলারি অনেক কম। তাদের সেলারি পঞ্চাশ শতাংশ বাড়াতে হবে। প্লেয়ারদের প্রাকটিস সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে হবে, সেটা জিমনেশিয়াম, ইনডোর মাঠ সব জায়গায়। ১২ মাস কোচ ফিজিও এবং ট্রেনারদের অ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে রাখতে হবে। প্রতিটি বিভাগেই ট্রেনিংসের সুযোগ-সুবধিা করে দিতে হবে। আমরা জানি এই সুযোগ-সুবিধাগুলো আজ কালের মধ্যে হবে না। পরিবর্তি টুর্নামেন্ট থেকে যেন হয়।

বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার আরও বলেন, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আমরা যে বল দিয়ে খেলি সেটা আন্তর্জাতিক মানম্পন্ন নয়। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে আন্তর্জাতিক মানের বল নিতে হবে। বিসিবি ক্রিকেটারদের কাছ থেকে যে ফিটনেস দাবি করছে সে জন্য ডেলি এলাউন্স বাড়াতে হবে। ১৫০০ টাকায় জিম আর সুইমিংপুল আছে এমন হোটেলে থাকা-খাওয়া অসম্ভব। চারদিনের ম্যাচে অনেক কষ্ট হয়। এটা কাভার করতে হলে জিম আর সুইমিংপুল লাগবেই। এসব বিবেচনা করে যে পরিমাণ টাকা দিলে ভালো হয় সেটা করতে হবে।

এ ছাড়া ঢাকার বাইরে রাজশাহী বা চট্টগ্রাম খেলতে গেলে ক্রিকেটারদের মাত্র ২৫০০ টাকা ট্রাভেলস খরচ হিসেবে দেয়া হয়। এই টাকায় ঢাকা থেকে রাজশাহী বা কক্সবাজার যেতে হলে বাস ছাড়া কোনো উপায় নেই। বাসে গিয়ে ভ্রমণ ক্লান্তির মধ্যে ভালো খেলা কখনও সম্ভব না। আমরা যাতায়াত ভাড়া চাই না। ক্রিকেটারদের বিমানের টিকিট দিতে হবে। তাছাড়া প্লেয়াররা যে বাসে মাঠে যায় সেই বাসে যাতে এসি থাকে সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

জাতীয় দলে ‘সাবেক’ হয়ে যাওয়া তারকা ক্রিকেটার এনামুল হক জুনিয়র বলেন, জাতীয় দলের চুক্তিবদ্ধ প্লেয়ারদের সংখ্যা বাড়িয়ে ৩০ জন করতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের চুক্তিবদ্ধ প্লেয়ারদের সংখ্যা অনেক কম। গত তিন বছর ধরে প্লেয়ারদের বেতন বাড়েনি তাদের বেতন বাড়াতে হবে। দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল বলেন, আমরা শুধু ক্রিকেটারদের নিয়ে কথা বলছি না। আপনি যদি গ্রাউন্ডসম্যানের কথা চিন্তা করেন, একজন গ্রাউন্ডসম্যান সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এক মাস পরিশ্রম করে মাত্র ৫ হাজার টাকা পারিশ্রমিক পায়। এটা খুবই নগণ্য। তাছাড়া দেশীয় কোচদের তেমন মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। বিদেশি একজন কোচ যে পারিশ্রমিক পান সেটা দেশের ২০ জন কোচকেও দেয়া হচ্ছে না। এমনও হয়েছে, সম্প্রতি বাংলাদেশ বিদেশ ট্যুরে দেশীয় কোচের অধীনে খুব ভালো করেছে। অথচ পরের ট্যুরে তাকে আর রাখা হয়নি। আমি কারো নাম উল্লেখ্য করতে চাই না।

তামিম আরও বলেন, আম্পায়ারিংকে প্রপেশনাল হিসেবে নিতে হলে তাকেও ন্যায্য পারিশ্রমিক দিতে হবে। এছাড়া ফিজিও এবং ট্রেনার যারা আছেন তাদেরও যথাযথ সম্মানি দিতে হবে। এখনই আমাদের সেরা সময় দেশীয় কোচিং স্টাফসহ অন্যদের সম্মান জানানোর।

জাতীয় দলের তারকা ওপেনার এনামুল হক বিজয় বলেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে আমরা দুইটা চারদিনের টুর্নামেন্ট খেলে থাকি। আর প্রিমিয়ার লিগে খেলি মাত্র একটা (৫০ ওভারের) টুর্নামেন্ট। সেখানে আরও একটা টুর্নামেন্ট বাড়াতে হবে। আর বিপিএলে আমরা টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে একটা টুর্নামেন্ট খেলে থাকি। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে আর কোনো টুর্নামেন্ট হয় না। বিপিএলের আগে আমাদের আরও একটা টুর্নামেন্ট খেলা উচিত।

জাতীয় দলের উইকেটকিটার ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান বলেন, ঘরোয়া টুর্নামেন্টের জন্য নির্ধাতির একটা ক্যালেন্ডার থাকতে হবে। এটা থাকলে টুর্নামেন্ট শুরুর আগ থেকেই আমরা প্রস্তুতি নিতে পারব।

জাতীয় দলে ‘সাবেক’ হয়ে যাওয়া ওপেনার জুনায়েদ সিদ্দিকী বলেন, বিপিএল এবং প্রিমিয়ার লিগে আমাদের যে পারিশ্রমিক দেয়ার কথা কিন্তু কিছু ফ্রাঞ্চাইজি এবং ক্লাব তা ঠিক মতো পরিশোধ করছে না। প্রিমিয়ার লিগের গত আসরে সব ক্লাবই প্লেয়ারদের পারিশ্রমিক পরিশোধ করেছে। কিন্তু আমরা যারা ব্রাদার্স ইউনিয়নে খেলেছি তাদের ৪০ শতাশং পারিশ্রমিক এখনও পরিশোধ করা হয়নি। এটা নিয়ে বোর্ডকেও অনেকবার বলা হয়েছে কোনো সমাধান হয়নি। একজন জাতীয় দলের ক্রিকেটার হিসেবে এটা কখনই কামনা করি না।

জাতীয় দলের তারকা ক্রিকেটার ফরহাদ রেজা বলেন, ফ্রঞ্চাইজি লিগ দুটোর বেশি খেলা যাবে না এ নিয়ম তুলে দিতে হবে। সুযোগ থাকলে সবাই খেলবে।

এরপর সাকিব আল হাসান দ্বিতীয় দফায় বলেন, ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়েই যেহেতু অনেক কথা হচ্ছে। সেহেতু বলতে চাই, প্রথম বিভাগ, দ্বিতীয় বিভাগ এবং তৃতীয় বিভাগের খেলার মান আমরা সবাই জানি। পত্র-পত্রিকায়ও অনেক সময় এসেছে, খেলতে যাওয়ার আগেই খেলোয়াড়রা যেনে যায় কোন দল জিতবে আর কোন দল হারবে। এটা আসলে খুবই দুঃখজনক। এই সমস্যার সমাধান করতে হবে। তার কারণ একটা ক্রিকেটারের ক্যারিয়ারে অনেক বিষয় থাকে। একটা ভালো প্লেয়ার ভালো বলে সে আউট হতেই পারে। কিন্তু সে যদি একটা বাজে সিদ্ধান্তের কারণে আউট হয় তাহলে সে খেলার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। এতে করে আমাদের ক্রিকেটার তৈরির যে পাইপলাইন আছে তা বন্ধ হয়ে যাবে।

সাকিব আরও বলেন, মহিলা দলের ক্রিকেটারদের আমরা এখানে অন্তর্ভুক্ত করতে পারিনি। তাদের হয়ত দাবি-দাওয়া আছে। তারা আমাদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করলে তাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরা হবে। এ ছাড়া অনূর্ধ্ব-১৯ দল যেহেতু বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে তাদের আমরা এখানে অন্তর্ভুক্ত করছি না। বাকি সবাই আমাদের সঙ্গেই আছেন।

সাকিব বলেন, যতদিন পর্যন্ত আমাদের দাবি পূরণ না হবে আমরা আর ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকতে চাচ্ছি না।

আগামী ৩ নভেম্বর ভারতের মাঠে টি-টোয়েন্টি ম্যাচের মধ্য দিয়ে সফরের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে বাংলাদেশের। তার আগে ২৫ অক্টোবর জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের ক্যাম্প শুরু হবে।

ক্রিকেট বোর্ড যদি আপনাদের দাবি না মানে তাহলে কি ক্যাম্পে যোগ দেবেন না? এমন প্রশ্নের জবাবে সাকিব বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দাবি মেনে নেয়া না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা খেলায় মনোনিবেশ করব না। আমরাও খেলতে চাই। আমরা হয়ত আর দুই তিন বছর জাতীয় দলে খেলব। কিন্তু যারা ভবিষ্যতে আসবে তারা যাতে এসব সমস্যার সম্মুখীন না হয় সে জন্যই আমাদের এ দাবি।