শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

জাপানে নারীদের চশমা পরায় নিষেধাজ্ঞা, সমালোচনার ঝড়

সম্রাট আকবর :=

জাপানের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাজ করার সময় নারী কর্মীদের চশমা পরতে নিষেধ করা হয়েছে – এমন খবর প্রকাশিত হওয়ার পর দেশটির সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। জাপানের বেশ কয়েকটি স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম, কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিবিধ কারণে নারী কর্মীদের চশমা পরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এই খবর খবর প্রকাশ করে।

তাদের মধ্যে কয়েকটি রিটেইল প্রতিষ্ঠান মনে করে, চশমা পরলে দোকানের নারী কর্মীদের মুখভঙ্গি অপেক্ষাকৃত বেশি কঠোর মনে হয়।এর পরই নারীদের কর্মক্ষেত্রে পরিবেশ এবং পোশাক পড়ার রীতির বিষয়ে জাপানের সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা সৃষ্টি হয়।নিপ্পন টিভি নেটওয়ার্ক এবং বিজনেস ইনসাইডার এ বিষয়ে খবর প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন ব্যাবসায়িক ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠান নারীদের চশমা পরার বিষয়টিকে কীভাবে নিয়েছে, তা পর্যালোচনা করার চেষ্টা করেছে তারা।

যেমন, এয়ারলাইনে কর্মরত নারীদের জন্য নিরাপত্তার খাতিরে চশমা পরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আবার বিউটি পার্লার বা প্রসাধন প্রতিষ্ঠানের মত জায়গায় কাজ করা নারীদের জন্য চশমা না ব্যবহারের অজুহাত হলো, চশমা পরলে তারা ঠিকমতো মেক আপ দেখতে পারবে না। তবে এই ধরণের নিষেধাজ্ঞা প্রতিষ্ঠানের নীতির কারণে নেয়া হয়েছে নাকি সামাজিক ধ্যানধারণার ওপর ভিত্তি করে কার্যকর করা হয়েছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কিন্তু কারণ যাই হোক, এ বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

কিয়োটো ইউনিভার্সিটি অব ফরেন স্টাডিজের সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের অধ্যাপক কুমিকো নেমোতো বলেন, জাপানের মানুষ সেকেলে রীতিনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, যে কারণে নারীদের চশমা পরতে উৎসাহ দেয়া হয় না, তা আসলে সম্পূর্ণ অর্থহীন। এটি পুরোই বৈষম্যমূলক একটি বিষয়। নারীরা তাদের কাজে কতটা দক্ষ, তার সাথে কিন্তু এই নিয়মের সম্পর্ক নেই। প্রতিষ্ঠান নারীর বাহ্যিক উপস্থিতির গুরুত্ব দিচ্ছে এবং তাদের দৃষ্টিতে, চশমা পরলে নারীর আবেদন অপেক্ষাকৃত কমে যাবে।

জাপানে সম্প্রতি উঁচু হিল পড়া নিয়েও অনেকটা একই ধরণের বিতর্ক তৈরি হয়েছিল।শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, এমন একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী থাকা অবস্থায় উঁচু হিল পড়তে বাধ্য করা হয়েছিল বলে অভিনেতা ও লেখক উয়ুমি ইশিকাওয়া জাপানে ড্রেস কোডের রীতি বন্ধ করার জন্য একটি গণ আবেদন শুরু করেছিলেন।

ঐ আবেদনের পক্ষের প্রচারণাকারীদের মতে, চাকরির জন্য আবেদন করার সময় নারীদের উঁচু হিল পড়াকে অনেকটা বাধ্যতামূলক মনে করা হয়।সেসময় এ বিষয়ে জাপানের একজন মন্ত্রীর এক মন্তব্যের পর ঐ আন্দোলনের সমর্থকরা আরো ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

ঐ মন্ত্রী বলেছিলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এমন ড্রেস কোড কার্যকর করা ‘প্রয়োজন’ যা উঁচু হিল পরাকে সমর্থন করে।অধ্যাপক নেমোতোর মতে, কর্মক্ষেত্রে নারীদেরকে প্রধানত তাদের বাহ্যিক রূপের মাধ্যমেই যাচাই করা হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর এ ধরণের বৈষম্যমূলক নীতি লক্ষ্য করলে অন্তত তা’ই মনে হয়। সূত্র: বিবিসি বাংলা।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

জাপানে নারীদের চশমা পরায় নিষেধাজ্ঞা, সমালোচনার ঝড়

প্রকাশের সময় : ০৭:২৬:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০১৯
সম্রাট আকবর :=

জাপানের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাজ করার সময় নারী কর্মীদের চশমা পরতে নিষেধ করা হয়েছে – এমন খবর প্রকাশিত হওয়ার পর দেশটির সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। জাপানের বেশ কয়েকটি স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম, কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বিবিধ কারণে নারী কর্মীদের চশমা পরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে এই খবর খবর প্রকাশ করে।

তাদের মধ্যে কয়েকটি রিটেইল প্রতিষ্ঠান মনে করে, চশমা পরলে দোকানের নারী কর্মীদের মুখভঙ্গি অপেক্ষাকৃত বেশি কঠোর মনে হয়।এর পরই নারীদের কর্মক্ষেত্রে পরিবেশ এবং পোশাক পড়ার রীতির বিষয়ে জাপানের সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা সৃষ্টি হয়।নিপ্পন টিভি নেটওয়ার্ক এবং বিজনেস ইনসাইডার এ বিষয়ে খবর প্রকাশ করেছে। বিভিন্ন ব্যাবসায়িক ক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠান নারীদের চশমা পরার বিষয়টিকে কীভাবে নিয়েছে, তা পর্যালোচনা করার চেষ্টা করেছে তারা।

যেমন, এয়ারলাইনে কর্মরত নারীদের জন্য নিরাপত্তার খাতিরে চশমা পরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। আবার বিউটি পার্লার বা প্রসাধন প্রতিষ্ঠানের মত জায়গায় কাজ করা নারীদের জন্য চশমা না ব্যবহারের অজুহাত হলো, চশমা পরলে তারা ঠিকমতো মেক আপ দেখতে পারবে না। তবে এই ধরণের নিষেধাজ্ঞা প্রতিষ্ঠানের নীতির কারণে নেয়া হয়েছে নাকি সামাজিক ধ্যানধারণার ওপর ভিত্তি করে কার্যকর করা হয়েছে, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কিন্তু কারণ যাই হোক, এ বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

কিয়োটো ইউনিভার্সিটি অব ফরেন স্টাডিজের সমাজবিজ্ঞান বিষয়ের অধ্যাপক কুমিকো নেমোতো বলেন, জাপানের মানুষ সেকেলে রীতিনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, যে কারণে নারীদের চশমা পরতে উৎসাহ দেয়া হয় না, তা আসলে সম্পূর্ণ অর্থহীন। এটি পুরোই বৈষম্যমূলক একটি বিষয়। নারীরা তাদের কাজে কতটা দক্ষ, তার সাথে কিন্তু এই নিয়মের সম্পর্ক নেই। প্রতিষ্ঠান নারীর বাহ্যিক উপস্থিতির গুরুত্ব দিচ্ছে এবং তাদের দৃষ্টিতে, চশমা পরলে নারীর আবেদন অপেক্ষাকৃত কমে যাবে।

জাপানে সম্প্রতি উঁচু হিল পড়া নিয়েও অনেকটা একই ধরণের বিতর্ক তৈরি হয়েছিল।শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে, এমন একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মী থাকা অবস্থায় উঁচু হিল পড়তে বাধ্য করা হয়েছিল বলে অভিনেতা ও লেখক উয়ুমি ইশিকাওয়া জাপানে ড্রেস কোডের রীতি বন্ধ করার জন্য একটি গণ আবেদন শুরু করেছিলেন।

ঐ আবেদনের পক্ষের প্রচারণাকারীদের মতে, চাকরির জন্য আবেদন করার সময় নারীদের উঁচু হিল পড়াকে অনেকটা বাধ্যতামূলক মনে করা হয়।সেসময় এ বিষয়ে জাপানের একজন মন্ত্রীর এক মন্তব্যের পর ঐ আন্দোলনের সমর্থকরা আরো ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

ঐ মন্ত্রী বলেছিলেন, প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এমন ড্রেস কোড কার্যকর করা ‘প্রয়োজন’ যা উঁচু হিল পরাকে সমর্থন করে।অধ্যাপক নেমোতোর মতে, কর্মক্ষেত্রে নারীদেরকে প্রধানত তাদের বাহ্যিক রূপের মাধ্যমেই যাচাই করা হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর এ ধরণের বৈষম্যমূলক নীতি লক্ষ্য করলে অন্তত তা’ই মনে হয়। সূত্র: বিবিসি বাংলা।