শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুলের প্রভাবে মণিরামপুরে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

মনিরামপুর ব্যুরো :=

যশোরের মণিরামপুর উপজেলার সব মাঠ জুড়েই রয়েছে সোনালী ফসল পাকা ধান। আর কয়েকদিন গেলেই এই আমন ধানে গোলা ভরবেন কৃষকরা। ফুঁটবে তাদের মুখে হাঁসি। কত আশাইনা ছিল কৃষকদের। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাব এক নিমিষেই সেই স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছে তাদের। জমির ধান শুয়ে পানির নিচে যাওয়ায় তাদের মুখে এখন হতাশার ছাপ। ধান নষ্ট হবার আশঙ্কায় সোনালী স্বপ্ন এখন ফিকে হতে চলেছে তাদের।

ঝড়োবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছেন এখানকার ইটভাটা মালিকরাও। বুলবুলের প্রভাবে সৃষ্ট জড়ো হাওয়া ও দীর্ঘ বৃষ্টিতে উপজেলার প্রায় সব মাঠেই আমন ধান শুয়ে পানিতে তলিয়েছে। ক্ষতির শিকার হয়েছেন তরকারি চাষিরা। ক্ষতি হয়েছে মুসুর ও সরিষার। আর নতুন করে তৈরি করা কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে উপজেলার ৩৯টি ইটভাটা মালিকের মাথায় হাত উঠেছে।

রোববার (১০ নভেম্বর) সকাল থেকে উপজেলার শাহপুর, চালুয়াহাটি, মোবারকপুর, হানুয়ার, খালিয়া, দোঁদাড়িয়া, হরিহরনগর, রোহিতা, স্বরণপুর, পট্টি, কোদলাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকাঘুরে এসব চিত্র চোখে পড়েছে।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে শুক্রবার দুপুর থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত মণিরামপুরে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। আর শনিবার রাতভর বয়েছে জড়ো হাওয়া। এখনও মণিরামপুরের আকাশজুড়ে রয়েছে ঘন মেঘ।

মণিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার মণিরামপুরে ২২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। বাম্পার ফলনও হয়েছে সব মাঠে। কিন্তু দুই দিনের বৃষ্টিতে উপজেলার সব এলাকায় চাষকৃত ধানের শতকরা ১০ ভাগ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। কোন কোন এলাকায় ধান শুয়ে পানির নিচে চলে গেছে। ৫০০ হেক্টরের অধিক জমির মুসুর ও সরিষা চাষে ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া চালুয়াহাটি ইউনিয়নে পাঁচ থেকে সাত হেক্টর জমির কলা বাগান ভেঙেছে। একইসাথে জড়ো হাওয়ায় হরিহরনগরে তিন থেকে চার হেক্টর জমির পেঁপে বাগান ভেঙে নষ্ট হয়েছে।

স্বরণপুর গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আব্দুল গফ্ফার বলেন, দুই বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষ করেছি। এখন সব শুয়ে পানির নিচে চলে গেছে। কি করে সারের দাম শোধ করব,খাব কি! রাজগঞ্জের সরদার ব্রিক্সের ম্যানেজার রুহুল কুদ্দুস জানান, নতুন তৈরি কাঁচা ইট বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে পাঁচ লাখ টাকার অধিক ক্ষতি হয়েছে।

মণিরামপুর উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক বলেন, উপজেলায় ৩৯ টি ইট ভাটার প্রায় সবকয়টিতে দুই সপ্তাহ ধরে নতুন ইট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে ভাটা মালিকরা দুই কোটি টাকারও বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছেন।

মণিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিরক কুমার সরকার বলেন, বুলবুলের প্রভাবে দুই দিনের বৃষ্টিতে আমনধানসহ কলা, পেঁপে, মুসুর ও সরিষা চাষের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ১০ ভাগ ধান মাটিতে শুয়ে গেছে। যদি আর বৃষ্টি না হয় তাহলে পড়ে যাওয়া ধানের কোন ক্ষতি হবে না। সব ইউনিয়নে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সরেজমিন কৃষকদের খোঁজখবর নিচ্ছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুলের প্রভাবে মণিরামপুরে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

প্রকাশের সময় : ০৯:৩৮:০৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০১৯
মনিরামপুর ব্যুরো :=

যশোরের মণিরামপুর উপজেলার সব মাঠ জুড়েই রয়েছে সোনালী ফসল পাকা ধান। আর কয়েকদিন গেলেই এই আমন ধানে গোলা ভরবেন কৃষকরা। ফুঁটবে তাদের মুখে হাঁসি। কত আশাইনা ছিল কৃষকদের। কিন্তু ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাব এক নিমিষেই সেই স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছে তাদের। জমির ধান শুয়ে পানির নিচে যাওয়ায় তাদের মুখে এখন হতাশার ছাপ। ধান নষ্ট হবার আশঙ্কায় সোনালী স্বপ্ন এখন ফিকে হতে চলেছে তাদের।

ঝড়োবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতির শিকার হয়েছেন এখানকার ইটভাটা মালিকরাও। বুলবুলের প্রভাবে সৃষ্ট জড়ো হাওয়া ও দীর্ঘ বৃষ্টিতে উপজেলার প্রায় সব মাঠেই আমন ধান শুয়ে পানিতে তলিয়েছে। ক্ষতির শিকার হয়েছেন তরকারি চাষিরা। ক্ষতি হয়েছে মুসুর ও সরিষার। আর নতুন করে তৈরি করা কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে উপজেলার ৩৯টি ইটভাটা মালিকের মাথায় হাত উঠেছে।

রোববার (১০ নভেম্বর) সকাল থেকে উপজেলার শাহপুর, চালুয়াহাটি, মোবারকপুর, হানুয়ার, খালিয়া, দোঁদাড়িয়া, হরিহরনগর, রোহিতা, স্বরণপুর, পট্টি, কোদলাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকাঘুরে এসব চিত্র চোখে পড়েছে।
ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে শুক্রবার দুপুর থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত মণিরামপুরে থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। আর শনিবার রাতভর বয়েছে জড়ো হাওয়া। এখনও মণিরামপুরের আকাশজুড়ে রয়েছে ঘন মেঘ।

মণিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার মণিরামপুরে ২২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমনের চাষ হয়েছে। বাম্পার ফলনও হয়েছে সব মাঠে। কিন্তু দুই দিনের বৃষ্টিতে উপজেলার সব এলাকায় চাষকৃত ধানের শতকরা ১০ ভাগ মাটিতে শুয়ে পড়েছে। কোন কোন এলাকায় ধান শুয়ে পানির নিচে চলে গেছে। ৫০০ হেক্টরের অধিক জমির মুসুর ও সরিষা চাষে ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া চালুয়াহাটি ইউনিয়নে পাঁচ থেকে সাত হেক্টর জমির কলা বাগান ভেঙেছে। একইসাথে জড়ো হাওয়ায় হরিহরনগরে তিন থেকে চার হেক্টর জমির পেঁপে বাগান ভেঙে নষ্ট হয়েছে।

স্বরণপুর গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আব্দুল গফ্ফার বলেন, দুই বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষ করেছি। এখন সব শুয়ে পানির নিচে চলে গেছে। কি করে সারের দাম শোধ করব,খাব কি! রাজগঞ্জের সরদার ব্রিক্সের ম্যানেজার রুহুল কুদ্দুস জানান, নতুন তৈরি কাঁচা ইট বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে পাঁচ লাখ টাকার অধিক ক্ষতি হয়েছে।

মণিরামপুর উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল খালেক বলেন, উপজেলায় ৩৯ টি ইট ভাটার প্রায় সবকয়টিতে দুই সপ্তাহ ধরে নতুন ইট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে ভাটা মালিকরা দুই কোটি টাকারও বেশি ক্ষতির শিকার হয়েছেন।

মণিরামপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিরক কুমার সরকার বলেন, বুলবুলের প্রভাবে দুই দিনের বৃষ্টিতে আমনধানসহ কলা, পেঁপে, মুসুর ও সরিষা চাষের কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ১০ ভাগ ধান মাটিতে শুয়ে গেছে। যদি আর বৃষ্টি না হয় তাহলে পড়ে যাওয়া ধানের কোন ক্ষতি হবে না। সব ইউনিয়নে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সরেজমিন কৃষকদের খোঁজখবর নিচ্ছেন বলে জানান এই কর্মকর্তা।