বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

লালমনিরহাটে ভুট্টা বীজ কালোবাজারে  কৃষক দিশেহারা

মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাফা : লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ =

লালমনিরহাট গোটা জেলায় এখন পুরোদমে ভুট্টা চাষাবাদ শুরু হয়েছে। বন্যার কারণে তিস্তা নদীর তীরবর্তী জমি গুলোতে আমনের চাষাবাদ না হওয়ায় চরাঞ্চলের কৃষকরা এবার অনেক আগেই ভুট্টার বীজ রোপন করছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরী করে কৃষকদের কাছে অতিরিক্ত দামে বীজ বিক্রি করছে বীজ ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলার প্রধান অর্থকারী ফসল ভুট্টা। এ মৌসুমে জেলার হাজার হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষাবাদ হয়। গত বছর ভুট্টার ভাল দাম পাওয়ায় এবার অনেক কৃষকেই ভুট্টা চাষে নেমে পড়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন বীজ কোম্পানি জেলায় অসংখ্যা বীজ ডিলার নিয়োগও করেছেন। তাদের মাধ্যমে খুচরা ব্যবসায়ীদের মাঝে বীজ বিক্রি করছেন তারা।
বন্যা পরবর্তী লালমনিরহাট জেলায় ভুট্টা বীজের প্রচুর চাহিদা থাকায় বীজ ডিলাররা একটি সিন্ডিকেট তৈরী করছে। তারা ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিধার্রিত দামের চেয়ে দ্বিগুন তিনগুনের চেয়েও অনেক বেশি মুল্যে বীজ খুচরা ব্যবসায়ীদের মাঝে বিক্রি করছে।
এ বীজ ও সার সিন্ডিকেটের তৎপরতা বেশি দেখা যায় জেলার হাতীবান্ধায়। এমন পরিস্থিতিতে অনেক কৃষক ও খুচরা ব্যবসায়ীরা অন্য জেলা থেকে বীজ এনে তারাও এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিক্রি করছে উচ্চ মুল্যে। বিষয়টি বুঝতে পেয়ে বীজ সিন্ডিকেটটি এক জেলার বীজ অন্য জেলায় নিয়ে যাওয়া যাবে না এমন একটি নিয়ম তারা নিজেরা তৈরী করে খুচরা ব্যবসায়ীদের বাঁধা দিচ্ছে। ফলে কৃষকদের নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি মুল্যে ভুট্টা বীজ ক্রয় করতে হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার সকালে জেলার দোয়ানী পুলিশ ফাঁড়ির সহযোগিতায় ওই বীজ সিন্ডিকেটটি নীলফামারী থেকে আসা একটি বীজ চালান আটক করেন। পরে হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুন-উর-রশিদের হস্তক্ষেপে বীজ গুলো ছেড়ে দেয়া হয়।
বড়খাতা এলাকার ব্যবসায়ী লাকু মিয়া জানান, জেলার বীজ ডিলাররা সিন্ডিকেট তৈরী করেছে। তারা নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে বীজ বিক্রি করছে। আমরা অন্য জেলা থেকে কম দামে বীজ এনে বিক্রি করলে সেখানেও তারা আমাদের বাঁধা দেয়া হচ্ছে।
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সামিউল আমিন জানান, মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে আমি যেখানে কম দামে ভালো মানের পণ্য পাবো সেখানেই ক্রয় করবো। এক জেলার বীজ অন্য জেলায় বিক্রি করা যাবে না এমন কোনো নিয়ম নীতি নেই। যদি কেউ বীজ নিয়ে সিন্ডিকেট তৈরী করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
লালমনিরহাট কৃষি কর্মকর্তা বিধু ভুষন রায় জানান, একজন কৃষক যেখানেই ভাল মানের বীজ কম মুল্যে পাবেন তিনি সেখানেই ক্রয় করতে পারবেন। নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি মুল্যে ভুট্টা বীজ ক্রয় করার বিষয়টি তিনি জানতে পেরেছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, বীজ ও সার ক্রয়ে কৃষকরা যাতে কোনো ভাবে প্রতারিত না হয় সে কারণে আমাদের মনিটরিং কমিটি নিয়মিত কাজ করছে। বীজ ও সার নিয়ে কেউ সিন্ডিকেট করার চেষ্টা করলে তা ভেঙ্গে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

লেখকের সম্পর্কে

Shahriar Hossain

যশোরে বায়েজিদ হত্যা মামলার আরও ২ আসামি গ্রেপ্তার

লালমনিরহাটে ভুট্টা বীজ কালোবাজারে  কৃষক দিশেহারা

প্রকাশের সময় : ০৫:১৩:১৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৯
মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাফা : লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ =

লালমনিরহাট গোটা জেলায় এখন পুরোদমে ভুট্টা চাষাবাদ শুরু হয়েছে। বন্যার কারণে তিস্তা নদীর তীরবর্তী জমি গুলোতে আমনের চাষাবাদ না হওয়ায় চরাঞ্চলের কৃষকরা এবার অনেক আগেই ভুট্টার বীজ রোপন করছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একটি সিন্ডিকেট তৈরী করে কৃষকদের কাছে অতিরিক্ত দামে বীজ বিক্রি করছে বীজ ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, লালমনিরহাট জেলার প্রধান অর্থকারী ফসল ভুট্টা। এ মৌসুমে জেলার হাজার হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষাবাদ হয়। গত বছর ভুট্টার ভাল দাম পাওয়ায় এবার অনেক কৃষকেই ভুট্টা চাষে নেমে পড়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন বীজ কোম্পানি জেলায় অসংখ্যা বীজ ডিলার নিয়োগও করেছেন। তাদের মাধ্যমে খুচরা ব্যবসায়ীদের মাঝে বীজ বিক্রি করছেন তারা।
বন্যা পরবর্তী লালমনিরহাট জেলায় ভুট্টা বীজের প্রচুর চাহিদা থাকায় বীজ ডিলাররা একটি সিন্ডিকেট তৈরী করছে। তারা ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিধার্রিত দামের চেয়ে দ্বিগুন তিনগুনের চেয়েও অনেক বেশি মুল্যে বীজ খুচরা ব্যবসায়ীদের মাঝে বিক্রি করছে।
এ বীজ ও সার সিন্ডিকেটের তৎপরতা বেশি দেখা যায় জেলার হাতীবান্ধায়। এমন পরিস্থিতিতে অনেক কৃষক ও খুচরা ব্যবসায়ীরা অন্য জেলা থেকে বীজ এনে তারাও এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিক্রি করছে উচ্চ মুল্যে। বিষয়টি বুঝতে পেয়ে বীজ সিন্ডিকেটটি এক জেলার বীজ অন্য জেলায় নিয়ে যাওয়া যাবে না এমন একটি নিয়ম তারা নিজেরা তৈরী করে খুচরা ব্যবসায়ীদের বাঁধা দিচ্ছে। ফলে কৃষকদের নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি মুল্যে ভুট্টা বীজ ক্রয় করতে হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার সকালে জেলার দোয়ানী পুলিশ ফাঁড়ির সহযোগিতায় ওই বীজ সিন্ডিকেটটি নীলফামারী থেকে আসা একটি বীজ চালান আটক করেন। পরে হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুন-উর-রশিদের হস্তক্ষেপে বীজ গুলো ছেড়ে দেয়া হয়।
বড়খাতা এলাকার ব্যবসায়ী লাকু মিয়া জানান, জেলার বীজ ডিলাররা সিন্ডিকেট তৈরী করেছে। তারা নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি দামে বীজ বিক্রি করছে। আমরা অন্য জেলা থেকে কম দামে বীজ এনে বিক্রি করলে সেখানেও তারা আমাদের বাঁধা দেয়া হচ্ছে।
হাতীবান্ধা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সামিউল আমিন জানান, মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে আমি যেখানে কম দামে ভালো মানের পণ্য পাবো সেখানেই ক্রয় করবো। এক জেলার বীজ অন্য জেলায় বিক্রি করা যাবে না এমন কোনো নিয়ম নীতি নেই। যদি কেউ বীজ নিয়ে সিন্ডিকেট তৈরী করেন তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
লালমনিরহাট কৃষি কর্মকর্তা বিধু ভুষন রায় জানান, একজন কৃষক যেখানেই ভাল মানের বীজ কম মুল্যে পাবেন তিনি সেখানেই ক্রয় করতে পারবেন। নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশি মুল্যে ভুট্টা বীজ ক্রয় করার বিষয়টি তিনি জানতে পেরেছেন। এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, বীজ ও সার ক্রয়ে কৃষকরা যাতে কোনো ভাবে প্রতারিত না হয় সে কারণে আমাদের মনিটরিং কমিটি নিয়মিত কাজ করছে। বীজ ও সার নিয়ে কেউ সিন্ডিকেট করার চেষ্টা করলে তা ভেঙ্গে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।