মনিরুল আলম মিশর :=
যশোরে আনসার সদস্য হোসেন আলী তরফদার (৫৭) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে ৭ জনকে আটক এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু ও ২টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। গত দুদিন ঢাকা, মাগুরা ও যশোর সদর থেকে এদের আটক করা হয়।
হত্যাকাণ্ডে জড়িত অভিযোগে আটককৃতরা হলেন যশোর সদর উপজেলার হাশিমপুর এলাকার রাসেল (২৫), আনোয়ার (২৪), হাবিল ওরফে বার্মিজ (২২), বিজয় কুমার বিশ্বাস (২১), সুজন (২৩), সজল হোসেন (২২) ও আলী রাজ বাবু ওরফে ছোট বাবু (২৪)।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জানান, গত ৩০ নভেম্বর হোসেন আলী হত্যাকাণ্ডের পর মামলাটি ১২ ডিসেম্বর ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মামলা তদন্তের দায়িত্ব পান এসআই মফিজুল ইসলাম। এর আগে পুলিশ সদর উপজেলার ফুলবাড়ি গ্রামের আমিনুর রহমান মিঠুকে (৪৬) আটক করে।
মিঠুর দেওয়া তথ্যসহ গোয়েন্দা তথ্য, সন্দিগ্ধদের মোবাইল ফোন ও তথ্যপ্রযুক্তির মাধ্যমে পুলিশ আসামিদের চিহ্নিত করে অভিযান শুরু করে। গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিক ১৩ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ঢাকার ভাসানটেক ও কাফরুল থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আসামি রাসেল (২৫), আনোয়ার (২৪), হাবিল ওরফে বার্মিজ (২২) ও বিজয় কুমার বিশ্বাসকে (২১) আটক করে। ১৪ ডিসেম্বর হাশিমপুর বাজার থেকে আটক করা হয় সুজন ও সজল হোসেনকে। এদিন গভীর রাতে মাগুরার শালিখা উপজেলার আড়পাড়া এলাকা থেকে আটক করা হয় আলী রাজ বাবু ওরফে ছোট বাবুকে। ছোট বাবুর কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও পুলিশ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি মোটরসাইকেল ও আসামিদের ১০টি মোবাইল ফোন জব্দ করেছে।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম আরও জানান, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে তিনটি বিষয় উঠে এসেছে। হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত জুয়েল ও মুন্নার সঙ্গে এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে তার বিরোধ ছিল। বছর দুয়েক আগে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয় মুন্নার পিতা বুলি ও জুয়েলের ভাই বাবলা। জুয়েল ও মুন্নার ধারণা ওই হত্যাকাণ্ডের পেছনে আনসার সদস্য হোসেন আলীর হাত রয়েছে। এছাড়া এলাকায় বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপন নিয়েও আসামিদের সঙ্গে হোসেন আলীর বিরোধ ছিল। এসব কারণে আনসার সদস্য হোসেন আলীকে হত্যা করা হয়েছে।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তৌহিদুল ইসলাম আরও জানান, নিহত আনসার সদস্য আগে পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিল। সাবেক চরমপন্থী এই সদস্য ১৯৯৯ সালে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিমের কাছে আত্মসমর্পণ করে অস্ত্র জমা দিয়ে আনসার ব্যাটালিয়নে যোগ দিয়েছিলেন। তারপরও তার পূর্বের সাথীদের সঙ্গে দূরবর্তী যোগাযোগ ছিল। এই সমস্ত বিষয় এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ভূমিকা রেখেছে।
হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি জুয়েল ও মুন্নার নেতৃত্বে ওই এলাকায় একটি কিশোর অপরাধী গ্যাংও রয়েছে। ১৫ থেকে ২০ সদস্যের এই গ্যাংসহ সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্র এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক বিক্রিসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ড এবং ভাড়াটে খুনি হিসেবেও কাজ করে। প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক সার্কেল) গোলাম রব্বানী জানান, একসময় মুন্নার পিতা বুলি ওই সন্ত্রাসী চক্রকে পরিচালনা করত। এখন এর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে মুন্নার হাতে। পুলিশ মুন্না ও জুয়েলকে আটকের জন্য বেশ কয়েকটি এলাকায় অভিযান পারিচালনা করেছে। অভিযান অব্যাহত রয়েছে। দ্রুতই এদের আটক করে আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সহকারী পুলিশ সুপার শফিকুল ইসলাম, কোতোয়ালি থানার ওসি মনিরুজ্জামান ও ডিবি ওসি মারুফ আহমেদ।